কিভাবে পাতলা চুল ঘন করবেন

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা অনেক ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও, আমরা আসলে চুলের মৌলিক চাহিদা বুঝতে পারি না। তাই, আমরা যদি নিয়মিত সঠিক উপায়ে আমাদের চুলের যত্ন নেই, তাহলে স্বাস্থ্যকর, ঝলমলে এবং ঘন চুল পেতে আমাদের এত পরিশ্রম করতে হবে না । তবে আমরা ঘরোয়া প্রতিকারের চেয়ে চুলের জন্য বাজারে থাকা বিভিন্ন পণ্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হই। এই কারণেই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে কিভাবে পাতলা চুল ঘন করবেন সেই সম্পর্কে বলব। এর সাথে আমরা চুল পড়ার কারণ সম্পর্কেও তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।

চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণ – চুল পাতলা হয় কেন

চুল পাতলা হওয়ার অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে, যা আমরা এখানে বিস্তারিতভাবে আপনাদের সাথে আলোচনা করব –

প্রোটিন ও পুষ্টির অভাব: চুল মজবুত করার জন্য প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে চুলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই বিষয়ে গবেষণাটি NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে চুল পড়তে শুরু করে যার ফলে চুল পাতলা হয়ে যায় ( তথ্যসূত্র )। একই সঙ্গে আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে , পুষ্টির ঘাটতিও চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভিটামিন ও মিনারেলের সঠিক মাত্রা চুল পড়ার সমস্যা কমাতে পারে। এর পাশাপাশি চুল পড়া রোধে কোন ভিটামিন এবং মিনারেল গ্রহণে সাহায্য করতে পারে তাও জানা জরুরি। চুলের বৃদ্ধির জন্য কোন পুষ্টি উপাদানগুলি প্রয়োজনীয়, আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে সেগুলো সম্পর্কে বলব।

মানসিক চাপ: চুল পড়ার পেছনে মানসিক চাপকেও একটি কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আসলে মানসিক চাপের কারণে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ইঁদুরের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ট্রেসের কারণে, চুলের ফলিকলগুলিতে ক্ষতিকারক প্রভাব পরে যার কারণে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় (তথ্যসূত্র)। মাথার ত্বকের প্রায় এক থেকে তিন চতুর্থাংশ চুল শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে ঝরে পড়তে পারে। এই ধরনের চুল পড়াকে বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (তথ্যসূত্র) ।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: হরমোনের ভারসাম্যহীন্তার কারণেও আপনার চুল ঝরে যেতে পারে । এটি প্রথমে মেনোপজের কারণে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হতে পারে । এছাড়াও, প্রসবের পরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও চুল পড়তে পারে (তথ্যসূত্র) । মেনোপজ বা প্রসবের কারণে চুল পড়া প্রায়ই 6 মাস থেকে 2 বছর পর কমতে পারে। এছাড়া PCOD এর সমস্যার কারণেও চুল পাতলা হতে পারে।

রক্তের স্বল্পতা: শরীরে রক্তস্বল্পতাকে অ্যানিমিয়া বলা হয় এবং এর কারণে আয়রনের অভাবও হতে পারে (তথ্যসূত্র) । চুলের বৃদ্ধিতে রক্ত ​​সরবরাহ সহায়ক হতে পারে। একই সময়ে, শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট রক্তাল্পতা চুল পাতলা এবং ক্ষতির প্রধান কারণ হতে পারে (তথ্যসূত্র) । বর্তমানে, এই বিষয়ে আরও গবেষণা করা হচ্ছে।

থাইরয়েডের কারণে: থাইরয়েডের সমস্যাও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। চুলের বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাইরয়েড হরমোন অপরিহার্য। হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন উত্পাদন করছে না) বা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থিটি খুব বেশি হরমোন উত্পাদন করে) এর অবস্থা দেখা দিলে চুল পড়া শুরু হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।

চিকিৎসা অবস্থার কারনে: কিছু চিকিৎসার কারণেও চুল পরে যেতে পারে এবং আপনার চুলের ক্ষতি করতে পারে। তাদের মধ্যে একটি হল Alopecia Areata। এটি একটি অটোইমিউন রোগ। এই রোগটি ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা সাধারণত আপনার শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি চুলের ফলিকলে আক্রমণ করে। চুলের ফলিকল হল ত্বকের সেই অংশ যেখান থেকে চুল গজায় (তথ্যসূত্র) । এ ছাড়া হার্টের সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো রোগ থাকলেও চুল পাতলা হওয়া বা পড়া শুরু হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।

সন্তান প্রসবের কারণে: প্রসবের পরের সময়কেও চুল পড়ার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু মহিলা প্রসবের পরে চুল পড়ার অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে এ বিষয়ে আরও গবেষণা করা দরকার (তথ্যসূত্র) ।

দূষণ: দূষণ শুধুমাত্র অ্যালার্জি এবং হাঁপানির মতো রোগের কারণ নয়, চুল পড়ার কারণও হতে পারে। দূষণের কারণে মাথার ত্বকে লাল ফুসকুড়ি, চুলকানি, চুল দুর্বল হয়ে যাওয়া, চুলের গোড়ায় ব্যথা এবং খুশকির সমস্যা হতে পারে । পরবর্তীতে, এই সমস্যার কারণে, অ্যালোপেসিয়া দেখা দেয়, অর্থাৎ, মাথার ত্বক থেকে চুল পড়তে শুরু করে (তথ্যসূত্র) ।

জেনেটিক: বংশ পরম্পরায় যদি পরিবারে টাক পড়ার সমস্যা থেকে থাকে , তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও চুল পড়া এবং টাক পড়ার মতো সমস্যায় পড়তে হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।

রাসায়নিক সমৃদ্ধ পণ্য: বাজারে চুল সোজা করা, কালার করা এবং স্টাইল করার জন্য অনেক ধরণের পণ্য পাওয়া যায়, এতে উপস্থিত কেমিক্যাল চুলের ক্ষতি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে চুলে প্রোটিন সমৃদ্ধ স্তর রয়েছে, যার মধ্যে 18-মিথিলিসোসায়ানিক অ্যাসিড (18-MEA) এবং ফ্রি লিপিড রয়েছে। 18-MEA হাইড্রোফোবিসিটি ধরে রাখতে সাহায্য করে অর্থাৎ চুলের এক ধরনের আর্দ্রতা। বিভিন্ন প্রসাধনীতে থাকা রাসায়নিক এই আর্দ্রতা শোষণ করে যার কারণে চুল দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে (তথ্যসূত্র) ।

চুলের স্টাইল করার সরঞ্জাম: চুলের স্টাইল করার সরঞ্জামগুলিও চুলের দুর্বলতা এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই বিষয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে রাসায়নিক-যুক্ত পণ্য এবং তাপ উৎপন্ন করে এমন স্টাইলিং সরঞ্জামগুলির বারবার ব্যবহার ফলিকলগুলির ক্ষতি করতে পারে। ফলিকলগুলির ক্ষতির কারণে চুল পড়ে যায় এবং চুল পাতলা হয়ে যায় । 

আরও পড়ুনঃ থ্যালাসেমিয়া কি এবং এর লক্ষণ ও প্রতিকার

চুল ঘন করার উপায় – চুল ঘন করার ঘরোয়া পদ্ধতি

এমন অনেক উপায় আছে, যা ব্যবহার করে ঘরে বসেই চুল কিছুটা ঘন করা যায়। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কতটা কার্যকর, এটি প্রতিটি ব্যক্তির সমস্যার উপর নির্ভর করে।

মেথি বীজ

মেথি বীজ থেকে তৈরি তেল অনেক ধরনের চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে উপকারী ভুমিকা পালন করে, যার মধ্যে একটি হল চুল পড়া। এই বিষয়ে করা গবেষণা অনুসারে, মেথির বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রোটিন এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা চুল পাতলা হওয়া, ঝরা এবং টাক পড়া সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা আরও নিশ্চিত করেছে যে, মেথির বীজে পাওয়া লেসিথিন নামক একটি যৌগ চুলকে ময়শ্চারাইজ করার পাশাপাশি চুলকে মজবুত করতে পারে। এটি খুশকির সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) ।

নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা মেথি তেল মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। মনে রাখবেন চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এর পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত। এটি ঘুমানোর আগে চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। গোসলের সময় মেথির তেল শ্যাম্পুতে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

ডিম

এটা বিশ্বাস করা হয় যে চুলে ডিম ব্যবহার করার ফলে চুল মজবুত হয়, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং চুলের ক্ষতির সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই বিষয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডিমের কুসুমে থাকা দ্রবণীয় পেপটাইড যৌগ চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি চুল পড়া রোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করে এবং টাকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে (তথ্যসূত্র) ।

গোসলের আগে অলিভ অয়েল দিয়ে ডিম ফেটিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে চুলে ব্যবহার করুন। ডিমের কুসুম ও অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও অ্যালোভেরার সঙ্গে ডিম ব্যবহার করলেও চুলের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

আমলা

চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধ করার জন্য আমলাকে আয়ুর্বেদে সেরা হেয়ার টনিক হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আমলা তেল এবং এটি থেকে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার শুধুমাত্র চুলের বৃদ্ধিই বাড়ায় না, বরং চুলকে মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করে (তথ্যসূত্র) । আমলা পাউডার নারকেল বা অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে চুলে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। পানিতে আমলা ও শিকাকাই মিশিয়ে তৈরি পেস্ট চুলে লাগাতে পারেন। চুলে পেস্ট লাগিয়ে শুকানোর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। হেয়ার মাস্ক হিসেবে ডিমের সঙ্গেও আমলা পাউডার ব্যবহার করতে পারেন । শুধু তাই নয়, চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেহেদির পাশাপাশি আমলা পাউডারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

জবা ফুল এবং নারকেল তেল

চুল ঘন করতে জবা ফুল এবং নারকেল তেল খুব উপকারী। জবা ফুলে উপস্থিত ভিটামিন-সি চুলের ফলিকল মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে চুল ঘন ও মজবুত হয় ( তথ্যসূত্র )। একই সময়ে, নারকেল তেল চুলের গভীরে গিয়ে চুলের স্তরকে পুষ্ট করতে সাহায্য করে । কয়েক ফোঁটা জবা ফুলের তেল এবং নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়া গোসলের আগেও উভয় তেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নারকেল তেলের সাথে জবা ফুলের তেল রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করতে পারেন।

পেঁয়াজ

পেঁয়াজ চুলকে মজবুত ও ঘন করতে খুব ভাল কাজ করে। এই বিষয়ে মানুষের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেঁয়াজের সরাসরি ব্যবহার নতুন চুলের বৃদ্ধিতে উপকারী ভুমিকা পালন করে এবং চুল ঘন করতে কাজ করে ( তথ্যসূত্র )। তবে, এই গবেষণায় পরিষ্কার করা হয়নি যে, পেঁয়াজের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি চুল ঘন করতে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে উপকারী। কয়েক ফোঁটা পেঁয়াজের রস সরাসরি চুলে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও হেয়ার মাস্ক হিসেবে পেঁয়াজের রস ও নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। গোসলের ১ ঘণ্টা আগে পেঁয়াজের পাশাপাশি লেবুর রসও চুলে লাগাতে পারেন।

ক্যাস্টর অয়েল

চুল ঘন ও মজবুত করতেও ক্যাস্টর অয়েল খুব উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যাস্টর অয়েলে রিসিনোলিক অ্যাসিড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা চুলে হিউমেক্ট্যান্ট (আর্দ্রতা ধরে রাখার) এবং ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করতে পারে। এটি চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি চুল ঘন করতে উপকারী ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )। তবে কারো যদি তৈলাক্ত স্ক্যাল্প বা খুশকির সমস্যা থাকে তবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করবেন না। গোসলের আগে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করুন। এটি বাদাম তেলের সাথে মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এটি নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ এবং তা কমানোর ঘরোয়া প্রতিকার

পাতলা চুল ঘন ও সুন্দর করার কিছু টিপস

পাতলা চুল ঘন ও সুন্দর করতে ঘরোয়া উপায় ছাড়াও কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করতে পারেন। চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং চুল ঘন করার জন্য কিছু দরকারী টিপস নিচে দেওয়া হল –

স্কাল্প ম্যাসেজঃ মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে চুলের বৃদ্ধি বাড়ানো যায়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ম্যাসাজ করার জন্য নারকেল তেল বা যেকোনো কেমিক্যালমুক্ত তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তেল লাগানোর দুই-তিন ঘণ্টা পর বা সারারাত চুলে তেল রেখে হালকা শ্যাম্পু করুন। আসলে, মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করার ফলে ডার্মাল প্যাপিলা কোষে (লোমকূপের নিচের কোষ) স্ট্রেচিং ফোর্স থেকে এর ভিতরের সাবকুটেনিয়াস টিস্যুতে পরিবর্তন ঘটে। এছাড়াও, এটি মানসিক চাপও কমায়, যার কারণে চুল ঘন হয়ে যায় ( তথ্যসূত্র )।

কেমিক্যাল-মুক্ত চুলের পণ্য ব্যবহার করুনঃ বাজারে এমন অনেক পণ্য রয়েছে যা ঘন চুলের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই উপাদানগুলো কতটা কার্যকর তা বলা যাবে না, তবে এতে উপস্থিত ক্ষতিকারক রাসায়নিক চুল শুষ্ক করার পাশাপাশি চুলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু, রাসায়নিক চিকিৎসা চুলের ক্ষতি করে ( তথ্যসূত্র )। এই ক্ষেত্রে, পেপারমিন্ট অয়েল, অ্যালোভেরা বা জলপাইয়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করতে পারেন ।

চুল সঠিকভাবে ধুয়ে নিনঃ চুল ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি চুলের বৃদ্ধি এবং ঘন করতে সাহায্য করতে পারে। হ্যাঁ, খুব কমই কেউ ভেবেছিলেন যে সঠিক উপায়ে চুল পরিষ্কার রাখলে মাথার ত্বক সুস্থ রাখার পাশাপাশি চুল মজবুত ও বৃদ্ধির উন্নতি ঘটতে পারে।এছাড়াও, চুল পরিষ্কার করা খুশকি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস এবং এটোপিক ডার্মাটাইটিস এর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ।

চুল ধোয়া বা পরিষ্কার করার সময় শুধু দুটি নিয়ম মনে রাখবেন। প্রথমত- প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করবেন না। এই কারণে, চুল প্রাকৃতিক তেল তৈরি করতে অক্ষম, যা আমাদের চুলকে পুষ্টি দেয়। দ্বিতীয়ত, গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া এড়িয়ে চলুন। গরম পানি চুলকে শুষ্ক, প্রাণহীন ও ভঙ্গুর করে তোলে।

প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকানঃ প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকানো সবসময়ই ভালো বলে মনে করা হয়। চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুড়িয়ে পানি শুকিয়ে নিন। তারপর কিছুক্ষণ পর খোলা রেখে দিন। ঘন ঘন হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহার, শ্যাম্পু করা এবং শুকানো চুলের উপরিভাগের ক্ষতি করে। এর ফলে চুল দুর্বল এবং শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই স্বাভাবিকভাবেই চুল শুকানো উচিত। প্রাকৃতিকভাবে চুল শুকিয়ে গেলে চুলের কোনো ক্ষতি হয় না। এর কারণে চুল ভেঙ্গে যায় না এবং শুষ্কও হয় না ( তথ্যসূত্র )।

চুল হাইড্রেটেড রাখুনঃ চুলকে সুস্থ রাখতে এবং ভেঙে যাওয়া রোধ করতে চুলকে ভালোভাবে কন্ডিশন করা প্রয়োজন। চুল ধোয়ার পর সবসময় কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এর কারণে চুল বেশি জট বাধে না এবং চুল নরম থাকে। চুল শুষ্ক এবং ঝরঝরে হওয়া থেকে বাঁচাতে, আপনি চুলে ক্রিম, সিরাম বা তেল লাগাতে পারেন ।

সঠিকভাবে চিরুনি ব্যবহার করুনঃ মনে রাখবেন ঘন চুল পেতে প্লাস্টিক এবং ধাতব চুলের ব্রাশ ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও, ভেজা চুল কখনই আঁচড়াবেন না। একটি প্রশস্ত দাঁতযুক্ত চিরুনি ব্যবহার করে আলতোভাবে চুল আঁচড়ান। এছাড়াও চুল আঁচড়ানোর সময় অতিরিক্ত চিরুনি এবং চুল টানা থেকে বিরত থাকুন। চুল হালকাভাবে আঁচড়ান, কারণ জোরে আঁচড়ানোর ফলে চুল ভেঙে যেতে পারে । তাই চুল পড়া রোধ করতে এবং ঘন চুল পেতে চিরুনি করার সময় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

হিট স্টাইলিং টুলের ব্যবহার কম করুনঃ ঘন ঘন হিট স্টাইলিং সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে চুল শুষ্ক, দুর্বল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অতএব, হয় ব্লো ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার এবং কার্লিং আয়রন এর মতো তাপ স্টাইলিং সরঞ্জামগুলির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন বা কমিয়ে দিন । এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক স্টাইলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিয়মিত বিরতিতে চুল ছাঁটাঃ সময়ে সময়ে চুল ট্রিম করতে থাকুন। এর ফলে চুল পড়া কম হয় এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। ট্রিমিং চুলের খারাপ অংশ কেটে ফেলে এবং যার ফলে চুলকে আরও বেশী সুন্দর দেখায়।

মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুনঃ উপরের আমরা বলেছি যে, মানসিক চাপ চুল পরার অন্যতম একটি কারণ । এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করেও চুল পড়া রোধ করা যায়। তাই স্ট্রেস কমানো সবসময়ই চুল ঘন করার টিপসের অন্তর্ভুক্ত। মানসিক শান্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নয়, তাই টেনশন কম করার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ এড়াতে যোগব্যায়াম এবং ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়াও, ইতিবাচক মানুষের সাথে কথা বলেও কিছুটা মানসিক চাপ কমাতে পারবেন।

খাওয়ার উপর মনোযোগ দিনঃ আমরা আগেই বলেছি যে পুষ্টির অভাবেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘন চুলের জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। প্রোটিন, ভিটামিন (বি এবং সি), জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, আয়রন, বায়োটিন এবং ম্যাগনেসিয়াম চুলের জন্য অপরিহার্য। এগুলো চুলের বৃদ্ধির সাথে সাথে এর গুণমান বজায় রাখতেও সাহায্য করে ।

আরও পড়ুনঃ চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

প্রশ্নঃ ঘন চুলের জন্য বাজার থেকে কেনা পণ্যের চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদান কি ভালো বিকল্প?

উত্তরঃ হ্যাঁ, বাজার থেকে কেনা পণ্যগুলিতে রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে, যা চুলের ক্ষতি করতে পারে । তাই প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা একটি ভাল অপশন হতে পারে।

প্রশ্নঃ কিভাবে এক মাসে চুল ঘন করবেন?

উত্তরঃ উপরে উল্লিখিত চুল ঘন করার টিপস এবং কৌশলগুলি অনুসরণ করে আকর্ষণীয় এবং ঘন চুল অর্জন করা যেতে পারে । তবে মনে রাখবেন, যে কোনও চিকিৎসা সম্পূর্ণ কার্যকর হতে কমপক্ষে 6 মাস সময় লাগতে পারে।

প্রশ্নঃ আমি কিভাবে রাতারাতি ঘন চুল পেতে পারি?

উত্তরঃ ঘন চুল রাতারাতি অর্জন করা যাবে না। হ্যাঁ, উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া প্রতিকার এবং টিপস মেনে চললে অল্প সময়েই ঘন চুল পাওয়া সম্ভব।

প্রশ্নঃ আমার চুল এত পাতলা কেন?

উত্তরঃ চুল পাতলা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। দূষণ, পুষ্টির অভাব, রক্তের অভাব ইত্যাদির কথা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি।

প্রশ্নঃ ঘন চুলের জন্য আমার কি খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ ঘন চুলের জন্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে  । তারপরও যদি সমস্যা না যায়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করাই ভালো।

প্রশ্নঃ কিভাবে 10 দিনে চুল ঘন করবেন?

উত্তরঃ 10 দিনের মধ্যে চুল ঘন হয় না। এটি মূলত চুলের যত্ন এবং গুণমানের উপর নির্ভর করে। উপরে উল্লিখিত চুল ঘন করার পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি দ্রুত ঘন চুল পেতে পারেন।

শেষ কথা

উপরের দেখানো ঘরোয়া প্রতিকারগুলি, চুল পড়া রোধ করতে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে খুব ভাল কাজ করে। এখানে আমরা চুল পড়া থেকে শুরু করে চুলের বৃদ্ধির যাবতীয় তথ্য দিয়েছি। চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে দুর্বল চুলকে মজবুত করা যায়। তবে চুল পড়ার সমস্যা যদি খুব গুরুতর হয় অর্থাৎ অ্যালোপেসিয়ার মতো সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ পরামর্শ করুন।

আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।

ধন্যবাদ ।

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment