যখন ওজন নিয়ন্ত্রণ করা বা কমানোর কথা আসে, তখনই সবার প্রথমে আমাদের মাথায় আসে ডায়েট, ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম এর কথা। কিন্তু এটি বেশীরভাগ মানুষের জন্যই সহজ নয়। তাই আমরা অনেকেই ডায়েটিং এবং ব্যায়াম না করে কীভাবে শরীরের বাড়তি ওজন কমানো যায় সে সম্পর্কে অনেকেই ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন। তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই ডায়েটিং ছাড়া কীভাবে ওজন কমানো যায় তা জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
Table of Contents
ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়
জীবনধারায় ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন করে একজন ব্যক্তি ডায়েটিং এবং ব্যায়াম ছাড়াই শরীরের বাড়তি অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন । আবার এই ধরনের লাইফস্টাইল নিয়মিত অনুসরণ করা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যও প্রয়োজন। তাই ডায়েটিং ছাড়াই ওজন কমানোর কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল –
বেশি করে পানি পান করুন
পানি পানের অনেক উপকারিতার পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে খুব ভাল কাজ করে । মূলত, ওজন কমানোর প্রতিদিনের রুটিনে পানিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে ( তথ্যসূত্র )। সেই সাথে পানি শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে, পানি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি আপনার ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে। পানির এই ক্ষুধা কমানোর প্রভাব শরীরের ক্রমবর্ধমান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে ( তথ্যসূত্র )।
আপনি সারা দিন ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করতে পারেন। তবে সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক বা একটি লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পান করুন। স্বাদের জন্য এর সাথে মধুও যোগ করতে পারেন ( তথ্যসূত্র )। এই কুসুম গরম লেবু পানি আপনার পেটের চর্বি কমাতে খুব ভাল কাজ করবে ।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন ওজন কমাতে খুব ভাল কাজ করে । মূলত, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করলে তা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব করায়, যার কারণে ক্ষুধা কমে যায়। এমন অবস্থায় ব্যক্তি অতিরিক্ত খাবার খেতে পারে না এবং সুষম পরিমাণে খাবার খাওয়ার ফলে ব্যক্তির ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এমন অবস্থায়, শরীরের চর্বি কমাতে, আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে নিম্নলিখিত ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা একটি ভাল অপশন হতে পারে ।
সবুজ শাক-সবজি এবং স্যুপ আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে মটরশুঁটি, মসুর ডাল ইত্যাদি খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় ফলের জুস তৈরি করে পান করতে পারেন। ফলের সালাদও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। লেটুস পাতা এবং সবজির সালাদও (শসা, টমেটো) খাওয়া যেতে পারে। একজন সুস্থ মানুষ নিয়মিত ফল ও বাদাম খেতে পারেন ।
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খান
ব্যায়াম বা ডায়েটিং ছাড়া ওজন কমানোর উপায়গুলির মধ্যে নিয়মিত প্রোটিন গ্রহন করা অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে, NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাদ্য ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে ( তথ্যসূত্র )। বিশেষ করে, সম্ভব হলে সকালের নাস্তায় প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারকে বেশি জায়গা দিন । এমন পরিস্থিতিতে, আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের ভালো উৎস যেমন মাছ, ডিম, সিমের বিচি, মটরশুটি এবং দই কে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন ( তথ্যসূত্র )। এভাবে ডায়েটিং ছাড়াই ওজন কমানোর এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বাড়তে থাকা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা বা কমানো যায়।
সকালের নাস্তায় আপনারা ডিম বা দই জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।আর দুপুরের খাবারে মাছ, সিমের বিচির মতো খাবার খেলে ভাল হয়।
ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে খাবার খান
ডায়েটিং ছাড়া ওজন কমানোর উপায় হিসেবে খাবারের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আসলে, ঘুমানোর ঠিক আগে খাবার খাওয়া ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ । মেলাটোনিনের মাত্রা (ঘুমের হরমোন) বেড়ে যাওয়ার সময় খাবার গ্রহন করলে তা ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে ( তথ্যসূত্র )। তাই এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, ঘুমানোর ঠিক আগে খাবার খেলে শরীরের মেদ বাড়তে পারে। এমন অবস্থায় ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘন্টা ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া ভালো বা খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া উচিত। সেই সাথে রাতে যতটুকু সম্ভব হালকা খাবার গ্রহন করুন। এটি আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে পারে ।
ফাইবার সমৃদ্ধ শাকসবজি দিয়ে তৈরি খাবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খান । রাতে সবজির সাথে খুব বেশি হলে দুটি রুটি গ্রহন করুন।
সকালের নাস্তা নিশ্চিত করুন
সকালের নাস্তা হল দিনের অপরিহার্য খাবার গুলোর মধ্যে একটি। এমন পরিস্থিতিতে, নিয়মিত সকালের নাস্তা করা হতে পারে ক্রমবর্ধমান ওজন কমানোর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর উপায় । সকালের নাস্তা হতে হবে পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ।এটি আপনার শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি, ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। আসলে, সকালে পুষ্টিকর নাস্তা করলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে এবং বারবার ক্ষুধাও অনুভুত হয় না। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি এড়ানো যায় ( তথ্যসূত্র )।
সকালের নাস্তায় ১ গ্লাস তাজা ফলের রস পান করতে পারেন। সেই সাথে ডিম এবং দই খাওয়া যেতে পারে।
ভাল ঘুম এবং মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাবের কারণেও অনেক সময় শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় ( তথ্যসূত্র )। NCBI-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে , ঘুমের সময়কাল একজন ব্যক্তির ওজনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে ( তথ্যসূত্র )। এমতাবস্থায় স্থূলতার সমস্যা এড়াতে বা কমাতে ঘুমের সময়কাল মাথায় রাখা প্রয়োজন। সেই সাথে, মানসিক চাপ কমাতে আপনারা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন ।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান। সকালে এবং সন্ধ্যায় নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করুন।
চিনিযুক্ত পানীয় খাবেন না
কোমল পানীয় এবং সোডাযুক্ত পানীয় খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলুন । আসলে কোমল পানীয় বা সোডা ড্রিংকসে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যার ফলে শরীরের মেদ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতএব, কোমল পানীয় (কোক, সেভেন আপ) গ্রহণ এড়াতে চেষ্টা করুন ( তথ্যসূত্র )। আপনি চাইলে মাঝে মাঝে ডাব বা নারকেলের পানি বা ফলের রস পান করতে পারেন।
পরিমিত পরিমাণে খান
বর্তমানে অনেকেই আছেন যারা খাবার খেতে খেতে টিভি বা অন্য কোনো কাজ শুরু করে দেয়। এমন অবস্থায় খাবার খাওয়ার সময় আপনি কতটুকু খাবার গ্রহন করছেন সেখান থেকে মনোযোগ সরে যায়। এ কারণে অনেক সময় মানুষ কম বা বেশি খাবার গ্রহণ করে, এমনকি তারা এই বিষয়ে সচেতনও হয় না। এমন অবস্থায় মনে রাখবেন যে, যখনই খাবার খান না কেন তখনই খাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন। এর পাশাপাশি অল্প অল্প করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে ওজন বাড়ার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়।
খাওয়ার জন্য যতটা সম্ভব ছোট প্লেট ব্যবহার করুন। একবারে বেশি না খেয়ে বারে বারে খান। মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার চেষ্টা করুন ।
শেষ কথা
আমরা আশা করছি আপনারা আজকের আর্টিকেলে উল্লেখিত ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়গুলি ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। এছাড়াও, ওজন কমাতে আপনার ডায়েটিং করা প্রয়োজন কি না এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই ভালভাবে অবগত থাকতে হবে। তবে এই টিপসগুলো অবলম্বন করে আপনারা আপনাদের শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে পারবেন ।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
ধন্যবাদ