এমআরআই কি এবং এম আর আই কিভাবে কাজ করে

সাধারণত রোগীর শরীরে কোনো রোগের কারণ ধরা না পড়লে এমআরআই পরীক্ষা করানো হয়। বর্তমান সময়ে প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই রোগের শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শে এমআরআই টেস্ট করানো হয়। কিন্তু এমআরআই সম্পর্কে খুব কম মানুষই ভালোভাবে জানেন। আবার অনেক মানুষ সময়ে সময়ে তাদের এমআরআই টেস্ট করান, যাতে তারা তাদের শরীর সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারেন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে এমআরআই কী , এম আর আই কিভাবে কাজ করে এবং এমআরআই পরীক্ষার সময় কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

এমআরআই এর পূর্ণরূপ কীএমআরআই এর ফুল ফর্ম কি

এমআরআই বা MRI এর পূর্ণরূপ হল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স  ইমেজিং (Magnetic Resonance Imaging) । শরীরের অভ্যন্তরীণ ছবি এমআরআই প্রযুক্তি দ্বারা প্রাপ্ত করা হয়।

এমআরআই কি – এমআরআই পরীক্ষা কি

এমআরআই এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি যাতে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিষ্কার এবং বিস্তারিত ছবি তোলা হয়। একে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স টমোগ্রাফিও বলা হয়।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশে কোন সমস্যা বা রোগ থাকলে আমরা শরীরের ভিতরে তাকিয়ে তা দেখতে পারি না । তাই শরীরের ভিতরে যা সমস্যাই থাকুক না কেন তা আমরা এমআরআই মেশিন দ্বারা তোলা ছবির মাধ্যমে দেখতে পারি। যে কারণে এমআরআই পরীক্ষা করা হয়।

এম আর আই কিভাবে কাজ করে

এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন এমন কী আছে এই মেশিনে যার দ্বারা শরীরের ভেতরের রোগ শনাক্ত করা যায়। আমরা অনেকেই জানি যে, আমাদের শরীরে প্রায় 75% পানি থাকে, অর্থাৎ হাইড্রোজেন এবং প্রোটন। যখনই রোগীকে এই মেশিনের ভিতরে রাখা হয় তখন চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আসা প্রোটনগুলি কাজ করা বন্ধ করার সাথে সাথে এক জায়গায় জড়ো হয়। তখন আমাদের শরীরে উপস্থিত প্রোটন থেকে রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। এর পরে, এই রেডিও তরঙ্গগুলির কারণেই আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি তৈরি হয়। যা দেখেই চিকিৎসক রোগীর রোগ সম্পর্কে বলতে পারেন।

এমআরআই মেশিনের ইতিহাস

চিকিৎসা বিজ্ঞানে MRI Division -টি বৃহৎ রেডিওলোজি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হলেও, এই বিষয়টি এতটাই বিস্তৃত এবং সাধারণ X-Ray ভিত্তিক রেডিওলোজি থেকে এতটাই আলাদা যে, উন্নত বিশ্বের বড় বড় গবেষকরা এটিকে একটি সতন্ত্র বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করেন। রেডিওলোজি বিভাগের অন্যান্য পরীক্ষা বা টেস্ট যেমন, X-Ray / CT / DSA/ Interventional Radiology-এর মত MRI পরীক্ষাতেও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন radiation ব্যবহার করা হয় না।

MRI সম্পর্কে আরও গভীর এবং মৌলিক ধারণা পেতে ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হয়। এমআরআই (Magnetic Resonance Imaging) নামের এই নতুন প্রযুক্তিটির প্রথম ভিত্তি শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ঐ বছরে সুইজারল্যান্ডের পদার্থবিদ Felix Bloch (1905-1983) এবং আমেরিকান পদার্থবিদ Edward Mills Purcell (1912-1997), স্বাধীনভাবে magnetic resonance phenomena আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে এই কাজের জন্য ১৯৫২ সালে পদার্থ বিদ্যায় এই দুইজন একত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭০ সাল পর্যন্ত MRI একটি রাসায়নিক ও ভৌত বিশ্লেষণ এর যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। যা Nuclear magnetic resonance বা NMR নামেও পরিচিত ছিল। আমেরিকার রসায়নবিদ Paul Christian Lauterbur (1992-2007), ১৯৭৩ সালে প্রথম NMR ইমেজ তৈরি করেন, যেটি ছিল একটি টেস্ট টিউব-এর চিত্র।

আর্মেনিয় আমেরিকান চিকিৎসক Dr. Raymond Johnson Damadian ছিলেন প্রথম MRI স্ক্যানিং মেশিনের উদ্ভাবক। মানব শরীরকে স্ক্যান করার করার জন্য NMR-কে নিরাপদে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করে Damadian আজকের পরিচিত এই এমআরআই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।

১৯৭৭ সালের ৩রা জুলাই, ক্যান্সার নির্ণয় করতে Dr. Damadian একজন মানুষের পুরো শরীরের প্রথম স্ক্যানটি সম্পাদন করেছিলেন। এই স্ক্যানটি সম্পন্ন করতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লেগেছিল। ১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ Sir Peter Mansfield দ্বারা echo-planar technique (অতি দ্রুত MRI scanning করার পদ্ধতি) আবিস্কারের পর থেকে পরবর্তী ২০ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক গবেষক এবং বিজ্ঞানী এই এমআরআই মেশিনের খুব দ্রুত উন্নতি সাধন করেন এবং বর্তমান প্রযুক্তিতে নিয়ে আসেন। MRI-কে একটি রোগ নির্ণয়কারী মেশিন হিসেবে আবিস্কার করার জন্য Paul Lauterbur ও Peter Mansfield একত্রে ২০০৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

সাবীর্য় আমেরিকান পদার্থবিদ Nikola Tesla (1856-1943) ১৮৮২ সালে হাঙ্গেরীর বুদাপেস্টে “ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্র” (Rotating Magnetic Field) আবিস্কার করেন। ১৯৫৬ সালে প্রথম Tesla কে চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির একক হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়।

চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি যত বেশি হবে (অর্থাৎ Tesla এর মান যত বেশি হবে), শরীরের পরমাণু থেকে নির্গত radio signals -এর পরিমাণও তত বেশি শক্তিশালী হবে, এর ফলে MRI মেশিন থেকে প্রাপ্ত image এর মানও তত বেশি পরিস্কার হবে।

বিভিন্ন ধরনের MRI scanner আছে, যেমন, Low-Field বা অল্প ক্ষমতা সম্পন্ন MRI scanner হল যে মেশিনের শক্তি 0.3 Tesla এর কম। High-Field বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন MRI স্ক্যানার হল যে মেশিনের শক্তি ১.০ টেসলা থেকে ৩.০ Tesla পর্যন্ত। আর এগুলিকে Supercon MRI স্ক্যানার বলা হয়। 3.0 Tesla থেকে 7.0 Tesla পর্যন্ত MRI স্ক্যানার আছে, তবে সেগুলি শুধু মাত্র গবেষণার কাজে গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়। কারণ এত বেশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিস্টেম মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ বলে এখনো প্রমানিত হয়নি।

আরও পড়ুনঃ ফ্যাটি লিভার কি এবং ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট

এমআরআই মেশিন কত প্রকার

এমআরআই মেশিন প্রধানত তিন প্রকার, 

  • 1 টেসলা 
  • 1.5 টেসলা 
  • 3 টেসলা 

1 টেসলা

টেসলায় এমআরআই মেশিনের শক্তি মাপা হয়। 1 টেসলা মেশিনের শক্তি 0.5 এর কম। এই মেশিনের এমআরআই পরীক্ষা খুব বেশি তথ্যপূর্ণ নয়। অনেক ডাক্তার দাবি করেছেন যে 1 টেসলা মেশিন শরীরের প্রায় 80% তথ্য দেয় ভুল!

1.5 টেসলা

এই মেশিনটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। মেরুদণ্ডের জন্য এই মেশিনটি সঠিক বলে বিবেচিত হলেও অনেক সময় কাঁধ ও মেরুদণ্ডের এমআরআই রিপোর্ট সঠিক দেখায় না। এমন পরিস্থিতিতে তাই রেডিওলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।  

3 টেসলা

এটিকে সর্বোচ্চ মানের এমআরআই মেশিন বলে মনে করা হয়। 3 টেসলা পাওয়ার থাকায় মেশিনটি খুব বেশি শব্দ তৈরি করে না। তাই এই মেশিন রোগীর রোগের সঠিক ফলাফল দিতে সক্ষম। বেশিরভাগ ডাক্তার এই মেশিন দিয়ে এমআরআই পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।

এম আর আই কেন করা হয়

অনেক কারণে এম আর আই টেস্ট করানো হয় । নিচে সেইরকম কিছু কারণ উল্লেখ করা হল –

  • এই এমআরআই টেস্টের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি টিস্যুর অবস্থা জানা সম্ভব
  • ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য এমআরআই স্ক্যান করা হয়
  • শরীরে টিউমার আছে কিনা তা দেখার জন্য এমআরআই টেস্ট করা হয়
  • খেলাধুলার সময় ইনজুরিতে লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে কিনা তা চেক করার জন্য
  • কোন ধরনের দূর্ঘটনার পর মাথায় ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে কিনা জানার জন্যও এমআরআই করা হয়ে থাকে
  • ক্রিটিক্যাল বিভিন্ন রোগে শনাক্ত করার জন্য এই টেস্ট একটি  যুগান্তকারী আবিষ্কার

এমআরআই পরীক্ষা কীভাবে করা হয়

এমআরআই পরিক্ষা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ এর মাধ্যমে আমাদের শরীরের ভেতরটা খুব সহজে দেখা যায় কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া বা অন্য কোনো অঙ্গের ক্ষতি না করে।  এমআরআই পরীক্ষা করার আগে, ডাক্তার দ্বারা রোগীকে অনেক বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়।

পরীক্ষার আগে রোগীর শরীরে কোনো ধাতু থাকা উচিত নয়। কারণ এমআরআই মেশিনে প্রচুর চৌম্বকীয় শক্তি থাকে যা ধাতুকে নিজের দিকে টেনে নিতে পারে।

স্ক্যান করার আগে রোগীর পোশাকও বদলানো হয়। এরপর রোগীকে এমআরআই স্ক্যানিং টেবিলের সামনে শুইয়ে দেওয়া হয়।আর তখনই রোগীকে মেশিনের ভেতরে পাঠানো হয়। 

চৌম্বক ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গ রোগীর অঙ্গের ছবি তুলতে ব্যবহার করা হয়। এই স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে শরীরের ক্ষুদ্রতম রোগও শনাক্ত করা সম্ভব।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পুরো শরীরের এমআরআই পরীক্ষা করানো উচিত নয়। রোগীর এমআরআই পরীক্ষা করানো উচিত শুধুমাত্র যে অংশে সমস্যা আছে সেই অংশের।

এম আর আই কি কি রোগ নির্ণয় করে

এম আর আই হল বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক শক্তিশালী পরীক্ষা, যার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন রোগ বা শরীরের অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করা যায়। 

নিম্নলিখিত রোগ গুলি এম আর আই মেশিনের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় –

  • মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ যেমন (ব্রেইন টিউমার, ইন্টারনাল ব্লিডিং এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য সমস্যা)
  • জয়েন্টের প্রব্লেম (যেমন হাঁটু, কব্জি এবং গোড়ালি ইত্যাদি) 
  • মেরুদণ্ডের সমস্যা ও ক্রিড়া জনিত আঘাত 
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তন ও তলপেটের সমস্যা 
  • হাড় ও মাংসপেশির সমস্যা
  • প্রস্টেট প্রব্লেম 
  • লিভার, পিত্তথলি, ও কিছু আন্ত্রিক রোগ। 
  • রক্ত নালীর অস্বাভাবিকতা।
  • নাক,কান ও গলার সমস্যা। 
  • ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের রোগ। 
  • স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা। 
  • হার্ট, ইন্টারনাল রক্তক্ষরণ এবং ক্যান্সার সহ আরও অনেক ধরনের জটিল রোগ নির্ণয় করা হয় এই এম আর আই মেশিনের সাহায্যে
আরও পড়ুনঃ সাইনোসাইটিস কি? সাইনোসাইটিসের কারণ, লক্ষণ, ঘরোয়া প্রতিকার

বাংলাদেশে এম আর আই খরচ

আমার মত, আপনার মনে এমআরআই পরিক্ষা নিয়ে একটা প্রশ্ন প্রথমেই আসবে যে, এমআরআই এর খরচ কত অর্থাৎ এমআরআই টেস্টের খরচ কত?

বাংলাদেশে MRI করাতে হসপিটাল ভেদে আপনার মোটামুটি ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকার মত খরচ পড়বে। এছাড়াও আরও কিছু অন্যান্য খরচসহ আপনার মোট ৮,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে ।

এমআরআই পরীক্ষার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে

এমআরআই পরীক্ষার সময় নিম্নলিখিত বিষয় গুলো মাথায় রাখা উচিত –

  • এমআরআই পরীক্ষার সময় মাথা পরীক্ষা করা হলে রোগীকে মেশিনের ভেতরে শুয়ে থাকতে হয়। তাই আপনাকে হেলমেট জাতীয় যন্ত্র পরতে বলা হতে পারে।
  • কখনও কখনও আপনাকে এমনকি পরীক্ষার সময় আপনার শ্বাস ধরে রাখতে বলা হতে পারে, যার সময় আপনাকে একেবারে নড়াচড়া করা যাবে না।
  • কখনও কখনও এমআরআই মেশিন উচ্চ শব্দ করে, তাই আপনাকে পরার জন্য একটি এয়ারফোনও দেওয়া হতে পারে।
  • মেশিনের ভেতরে থাকা অবস্থায় কোনো অস্বস্তি বোধ করছেন কি না তা স্পিকারের মাধ্যমে বলতে পারবেন। ডাক্তাররা স্ক্যান শুরু করার প্রথমেই রোগীকে এই তথ্য দিয়ে দেবেন। 
  • আপনি যদি নার্ভাস বোধ করেন, তবে আপনি প্রথমেই ডাক্তার বা হাসপাতালের কর্মীদের বলতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ খাওয়া উচিত। 
  • রোগীর হাতের কাছে একটি সেফটি সুইচ থাকে, শরীর খারাপ লাগলে ঐ সুইচ দিয়ে জানাবেন

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন MRI কি? MRI এর পূর্ণরূপ কি? এমআরআই কত প্রকার, এমআরআই মেশিন কীভাবে কাজ করে? এছাড়াও, এমআরআই পরীক্ষার খরচ কত? আর এমআরআই পরীক্ষার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।

ধন্যবাদ

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment