গ্রিন টি এর উপকারিতা

যখন ফিটনেস এবং স্বাস্থ্যের কথা আসে, তখন গ্রিন টি এর উপকারিতা অনস্বীকার্য। গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে, বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর উপর বেশ কিছু গবেষণায় এর ঔষধি গুণাবলীও উন্মোচিত হয়েছে, যা আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব। এই প্রবন্ধে গ্রিন টি এর উপকারের পাশাপাশি, গ্রিন টি এর ব্যবহার এবং এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্যও শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়াও, গ্রিন টি এর কিছু অপকারিতা আর্টিকেলের শেষে বলা হয়েছে।

Table of Contents

গ্রিন টি কি

সবুজ চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার আগে আমরা ‘গ্রিন টি কী’ সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নেই। সবুজ চা বা গ্রিন টি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia sinensis) উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হয়। এই গাছের পাতা শুধুমাত্র সবুজ চা নয়, অন্যান্য ধরনের চা যেমন কালো চা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সবুজ চা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। যদিও সবুজ চা এবং কালো চা একই উদ্ভিদ থেকে এসেছে, কিন্তু এই দুই ধরনের চা তৈরির পদ্ধতি ভিন্ন। সবুজ চা উৎপাদনের জন্য, তাজা পাতা তোলার পরপরই বাষ্প করা হয়, যাতে সবুজ চা সঠিকভাবে তৈরি করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি health-promoting প্রাকৃতিক পলিফেনল সংরক্ষণ করে । একই সময়ে, কালো এবং ওলং চায়ের তুলনায় এতে বেশি ক্যাটেচিন পাওয়া যায়, যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।

গ্রিন টি কত প্রকার

বাজারে অনেক ধরণের গ্রিন টি পাওয়া যায়, তবে সেগুলি সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। অতএব, নীচে আমরা কিছু ধরণের গ্রিন টি সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছি।

  • জেসমিন গ্রিন-টি
  • মরক্কোর মিন্ট গ্রিন-টি
  • লাভ মাচা গ্রিন-টি
  • ড্রাগন ওয়েল গ্রিন-টি
  • হাজিছা গ্রিন-টি
  • কুকিচা গ্রিন-টি
  • সেনচা গ্রিন-টি
  • Gyokuro গ্রিন-টি
  • বিলোচন গ্রিন-টি
  • ম্যাচা গ্রিন টি
আরও পড়ুনঃ কিভাবে পেট ও কোমরের মেদ কমাবেন

গ্রিন টি এর উপকারিতা

সবুজ চা বা গ্রিন টি এর অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এটি স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এর পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করতে পারে । সবুজ চায়ের উপকারিতা অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বক ও চুলের জন্যও কার্যকর । সবুজ চায়ের উপকারিতা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন-টি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। NCBI এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি খাওয়ার ফলে মেদ অক্সিডেসন (ফ্যাট বার্ন) বেশী পরিমাণে হয়, যার ফলে আপনার শরীরে জমে থাকা চর্বি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অপ্রদিকে অন্য একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, গ্রিন টিতে ক্যাটেচিন এবং ক্যাফিন রয়েছে যা ওজন কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ।

তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, শুধু গ্রিন টি পান করেই আপনি আপনার শরীরে জমে থাকা মেদ বা চর্বি ঝড়িয়ে ফেলবেন, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম ।

মস্তিষ্কের জন্য সবুজ চা পান করার উপকারিতা

নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়া আপনার মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী। এই বিষয়ে করা একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, সবুজ চা উদ্বেগ কমানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে থাকে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে এই সমস্ত সুবিধার পিছনে রয়েছে সবুজ ক্যাফিন এবং এল-থিয়েনিন (এক ধরণের রাসায়নিক) এর মিলিত প্রভাব । এই ক্ষেত্রে, এটি সুষম পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।

মুখের স্বাস্থ্যের জন্য গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়া মুখের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে। এটি খেলে মুখের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গ্রীন টি ক্যাটেচিন, পি. জিঙ্গিভালিস এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন প্রিভোটেলা ইন্টারমিডিয়া এবং প্রিভোটেলা নিগ্রেসেন্স বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে । এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া মুখের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এর পাশাপাশি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন-টি ব্যাকটেরিয়া প্লেক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে পারে। গ্রিন-টি-তে উপস্থিত পলিফেনল মুখের মধ্যে প্লাক জমা হওয়া রোধ করতে অ্যান্টি-প্ল্যাক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। গ্রিন-টি দিয়ে মুখ ধোয়া খুবই উপকারী, তবে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডায়াবেটিসের জন্য গ্রীন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি পানের উপকারিতা এর মধ্যে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে, জাপানে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন এক কাপ গ্রীন টি পান করেন, তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন ছয় বা তার বেশি কাপ সবুজ চা পান করে তাদের টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি 33% কম থাকে [তথ্যসুত্র]।

উপরন্তু, ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে সবুজ চা খাওয়ার ফলে ইনসুলিন sensitivity বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ ইনসুলিন কার্যকরভাবে রক্তের গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করে । একই সময়ে, এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের (যখন কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেয় না, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়) এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি) থেকে রক্ষা করতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গ্রিন টি-তে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।

কোলেস্টেরল কমাতে গ্রিন-টি এর উপকারিতা

হার্ভার্ড মেডিকেলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রিন টি বা সবুজ চা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় । বর্তমানে বেশিরভাগ গবেষণা করা হয়েছে ক্যাটেচিন (সবুজ চায়ে উপস্থিত পলিফেনল) ধারণকারী ক্যাপসুলের উপর। এটি কীভাবে সরাসরি উপকারী হবে সে সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিন টি এর উপকারিতা

আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিন টি কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে [তথ্যসুত্র]। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, এটি শরীরকে ফ্রি রেডিক্যালস থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে । 

আলঝেইমার্সের জন্য সবুজ চায়ের উপকারিতা

গ্রীন টি অনেক ধরনের মানসিক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে [তথ্যসুত্র] । আলঝেইমার্স সেই রোগগুলির মধ্যে একটি। এই রোগের কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি দিন দিন দুর্বল হতে থাকে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, এই রোগ প্রতিরোধে সবুজ চা খাওয়া যেতে পারে । এতে উপস্থিত পলিফেনল, epigallocatechin-3-gallate এই কাজে উপকার করতে পারে। এই বিষয় নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টি এর উপকারিতা

ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রিন টি তে থাকা পলিফেনল (ক্যাটিচিন) ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী হল EGCG (epigallocatechin-3-gallate)। এটি ফ্রি র‍্যাডিকেলের সাথে লড়াই করতে পারে এবং কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। গ্রিন টিতে উপস্থিত পলিফেনল ইমিউনিটি সিস্টেমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে ।

একই সময়ে, প্রাণীদের উপর করা আরেকটি গবেষণা অনুসারে, সবুজ চা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি (ফুসফুস, ত্বক, স্তন, লিভার, পেট এবং অন্ত্র) থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, গ্রিন-টি ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। এর চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। এই জন্য, সঠিক চিকিৎসা প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, ঘরোয়া প্রতিকার শুধুমাত্র ক্যান্সারের উপসর্গ থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি পান করার উপকারিতা

গ্রিন টি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। আসলে, এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সবুজ চা রক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম । অন্য দিকে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূল শরীরের অধিকারী প্রাপ্তবয়স্কদের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কেউ যদি এটি প্রথমবার সেবন করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া কারো যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকে তাহলে গ্রিন টি খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বা হজমের সমস্যা কমাতে গ্রীন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়া গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার (পেট বা হজমের সমস্যা) এর জন্যও উপকারী হিসেবে মনে করা হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টিতে উপস্থিত ক্যাটেচিনগুলি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে ভালভাবে শোষিত হয় এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করতে দৈনন্দিন জীবনে গ্রিন টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে ।

হাড়ের জন্য গ্রিন টি পান করার উপকারিতা

নিয়মিত গ্রিন টি পান করা হাড়ের জন্য উপকারী । সবুজ চায়ে উপস্থিত সক্রিয় জৈব যৌগের কারণে এটি হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে গ্রিন টি, হাড়ের খনিজ ঘনত্বের উন্নতি করে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, এটি অস্টিওক্লাস্টিক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস করে অস্টিওব্লাস্টিক ক্রিয়াকলাপ বা হাড় গঠনের প্রক্রিয়া উন্নত করতে পারে  [তথ্যসুত্র] । 

ইঁদুরের উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি পলিফেনল প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে পারে। এই মুহুর্তে, বেশিরভাগ ফলাফল প্রাণীদের উপর করা গবেষণার উপর ভিত্তি করে, মানুষের উপর এর প্রভাব জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

দীর্ঘজীবনের জন্য সবুজ চায়ের উপকারিতা

গ্রিন টি-এর উপকারিতা অনেক, দীর্ঘায়ুও সেই উপকারের মধ্যে অন্যতম [তথ্যসুত্র]। গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অনেক রোগ থেকে আমাদের শরিরকে রক্ষা করতে পারে। যেমন আমরা উপরে উল্লেখ করেছি, গ্রিন টি হাড়ের সমস্যা, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে আমেরিকার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্যাফেইন সেবনের ফলেও অনেক শারীরিক সমস্যা হতে পারে। গবেষণার তথ্য অনুসারে, ক্যাফিনের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায় । এর ভিত্তিতে গ্রিন-টি আয়ু বাড়াতে সহায়ক কি না, তা এই মুহূর্তে পরিষ্কার করে বলা কঠিন। তবে এটি বলা যেতে পারে যে, গ্রিন টি এর ব্যবহার বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আমাদের আয়ু কিছুটা হলেও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

হার্ট ভাল রাখতে গ্রিন টি এর উপকারিতা

হার্ভার্ড মেডিকেলের রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রিন-টি হার্টের জন্য উপকারী । এটি নিয়মিত পান করার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। 40,530 জন জাপানি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন পাঁচ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি 26 শতাংশ কমে যায়।।অন্যদিকে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনগুলি atherosclerosis এর মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে ।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি পান করার উপকারিতা

প্রাণীদের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন-টিতে উপস্থিত পলিফেনল উপাদানগুলি এন্টিডিপ্রেসেন্ট প্রভাব তৈরি করে ( তথ্যসুত্র )। এর এন্টিডিপ্রেসেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি চাপের পরিস্থিতিতে ভাল কাজ করে। অন্যদিকে, গ্রিন টিতে উপস্থিত ক্যাফিনও মানসিক চাপের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কম ক্যাফিনযুক্ত গ্রিন টি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ।

ত্বকের যত্নে গ্রিন টি এর উপকারিতা

আমাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি গ্রিন টি ত্বকের জন্যও উপকারী। প্রাণীদের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় যে, গ্রিন টি এর নির্যাস গ্রহণ বা ব্যবহার ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির কারণে হওয়া ত্বকের টিউমারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এটিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা অ্যান্টিক্যান্সারের মতো কাজ করে। 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেসে ইজিসিজির প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব দেখা গেছে যখন এটি ইঁদুরের ত্বকে ব্যবহার করা হয়েছিল। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

কিভাবে ব্যবহার করে

  • একটি গ্রিন টি ব্যাগ এক চতুর্থাংশ কাপ ঠান্ডা জলে প্রায় পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
  • এরপর টি ব্যাগটি বের করে গ্রিন টি ওয়াটারে দুই চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে নিন।
  • এবার ঘুমানোর আগে তুলোর সাহায্যে এই গ্রিন টি মিশ্রিত পানি ব্যবহার করে মুখ পরিষ্কার করুন।
  • অবশিষ্ট পানি পরবর্তী ব্যবহারের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

চুলের যত্নে গ্রিন টি এর উপকারিতা

গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি চুলের জন্য উপকারী । ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড সায়েন্স (লস অ্যাঞ্জেলেস) এর একটি গবেষণায়, যখন ইঁদুরের উপর গ্রিন টি পলিফেনল নির্যাস দেওয়া হয়েছিল, তখন এগুলোর চুলের পুনঃবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। চুলের জন্য গ্রিন টি নিচের পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন।

কিভাবে ব্যবহার করে

  • আধা লিটার পানিতে তিন থেকে চারটি গ্রিন-টি ব্যাগ রাখুন।
  • পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর গ্রিন টি-ব্যাগগুলো বের করে নিন।
  • শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করার পরে গ্রিন টি পানি দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • এই প্রক্রিয়া সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করুন।
আরও পড়ুনঃ কানের ব্যথার কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

গ্রিন টি এর পুষ্টি উপাদান

আমরা আপনাদের জানার সুবিধার্থে গ্রিন টি তে উপস্থিত পুষ্টির তালিকা নিচে শেয়ার করছি [তথ্যসুত্র]।

উপাদান পরিমান
পানি 99.93 গ্রাম
শক্তি 1 কেসিএল
প্রোটিন 0.22 গ্রাম
আয়রন 0.02 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম 1 মি.গ্রা
পটাসিয়াম 8 মিলিগ্রাম
সোডিয়াম 1 মি.গ্রা
দস্তা 0.01 মিলিগ্রাম
তামা 0.004 মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ 0.184 মিলিগ্রাম
থায়ামিন 0.007 মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন 0.058 মিলিগ্রাম
নিয়াসিন 0.03 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৬ 0.005 মিলিগ্রাম
ক্যাফিন 12 মিলিগ্রাম

গ্রিন টি এর উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানার পর এখন আমরা আপনাদের জানাব কিভাবে গ্রিন টি তৈরি করতে হয়।গ্রিন টি তৈরির পদ্ধতিটি খুবই সহজ এবং আর্টিকেলের এই অংশে আমরা এটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।

গ্রিন টি বানানোর নিয়ম

গ্রিন টি বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। গ্রিন টি তৈরি করার জন্য নিচের পদ্ধতি অনুসরন করুন –

পাতাযুক্ত গ্রিন টি বানানোর রেসিপি

প্রয়জনীয় উপাদান

  • 1 চা চামচ সবুজ চা পাতা
  • চা – ছাঁকনি
  • এক কাপ গরম পানি
  • সামান্য পরিমাণে মধু বা চিনি

কিভাবে বানাবেন

  • প্রথমে কাপের উপরে একটি চা ছাঁকনি রাখুন।
  • এবার এই ছাঁকনিতে সবুজ চা পাতা দিয়ে ওপর থেকে গরম পানি ঢালুন।
  • তারপর চামচের সাহায্যে সবুজ চা পাতা সামান্য চেপে দিন।
  • পাতাগুলি খুব বেশি চাপবেন না, অন্যথায় চা তেতো হয়ে যেতে পারে।
  • এরপর চা এর সামান্য পরিমাণে মধু বা চিনি যোগ করে পান করুন

টি ব্যাগ দিয়ে গ্রিন টি বানানোর পদ্ধতি

প্রয়জনীয় উপাদান

  • গ্রিন টি ব্যাগ
  • এক কাপ গরম পানি
  • সামান্য পরিমাণে মধু বা চিনি

কিভাবে বানাবেন

  • একটি গ্রিন-টি ব্যাগ, এক কাপ গরম পানিতে এক থেকে দুই মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
  • এরপর টি ব্যাগটি সরিয়ে ফেলুন।
  • তারপর এর সাথে সামান্য মধু বা চিনি মিশিয়ে গ্রহন করুন।

গুঁড়ো গ্রিন টি রেসিপি

প্রয়জনীয় উপাদান

  • আধা বা এক চা চামচ গ্রিন-টি পাউডার
  • এক কাপ গরম পানি
  • এক চামচ মধু বা চিনি

কিভাবে বানাবেন

  • একটি পাত্রে ভালমত পানি ফুটিয়ে নিন।
  • এবার এতে আধা বা এক চা চামচ গ্রিন-টি পাউডার যোগ করুন।
  • তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পানিতে দ্রবীভূত হতে দিন।
  • এরপর একটি চা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন।
  • তারপর এতে মধু বা চিনি যোগ করে পান করুন।

কখন গ্রিন টি পান করবেন

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে কখন গ্রিন টি পান করা উচিত? তবে আমরা এখানে গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় সম্পর্কে কথা বললেও এ সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে বলা যেতে পারে যে, সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের পর গ্রিন টি পানের সময়টা ভালো হতে পারে। খালি পেটে গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ তা করলে পেটের সমস্যা হতে পারে। রাতে গ্রিন টি পান না করাই ভাল হবে, কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে, যা আপনার রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । এছাড়াও, প্রতিটি ব্যক্তির শরীরের সক্ষমতা এক রকম নয়, তাই খাওয়ার সময় এবং পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

গ্রিন টি এর অপকারিতা

গ্রিন টি-এর উপকারিতা অনেক, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিছু অসুবিধা তৈরি হতে পারে। গ্রিন টি এর কিছু অপকারিতা নিচে দেওয়া হল-

  • অনেক সময় গ্রিন টি খেলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং লিভারের সমস্যা হতে পারে।
  • গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন থাকে, তাই অতিরিক্ত সেবনে অনিদ্রা, মাথাব্যথা, কাঁপুনি এবং উদ্বেগের মতো সমস্যা হতে পারে।
  • গ্রিন টি-তে ট্যানিক অ্যাসিড নামক উপাদান থাকে, যার কারণে দাঁতে দাগ পড়তে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এটিতে ক্যাফেইন রয়েছে এবং গর্ভাবস্থায় 300 মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভাবস্থার সময়কালকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।

শেষ কথা

গ্রিন টি এর উপকারিতা জানার পর আপনারা যদি এখনও এটিকে আপনাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত না করে থাকেন, তাহলে যে কোনও সময় এটি পান করা শুরু করতে পারেন। তবে, অতিরিক্ত সেবনের কারণে গ্রিন টি এর অসুবিধাও রয়েছে, তাই একজন ব্যক্তির উচিত তার স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সীমিত পরিমাণে এটি গ্রহন করা। এর পাশাপাশি আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, গ্রিন টি পানের উপকারিতা উপরোক্ত সমস্যার প্রভাব কিছুটা কমাতে সাহায্য করে, তবে গ্রিন টি কোনো রোগের চিকিৎসা নয়। 

আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।

ধন্যবাদ

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment