ডেঙ্গু জ্বর কী ? ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ, যা এডিস ইজিপ্টি নামক এক প্রজাতির মশার মাধ্যমে ছড়ায় । ডেঙ্গুর কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষের মৃত্যু হয় । ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশা কামড়ালে এবং সেই মশা যখন কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে । আর এভাবেই একজন সুস্থ মানুষও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় । এই রোগটি সাধারণত বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশী দেখা যায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, প্রতি বছর ডেঙ্গুর কারণে আনুমানিক ৫00,000 মানুষের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় । বেশিরভাগ ডেঙ্গুর ঘটনা বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায়, যেখানে আমাদের বাংলাদেশ সহ, ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মেক্সিকো, আফ্রিকার কিছু অংশ, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, ডেঙ্গু জ্বর কী ? ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ।

ডেঙ্গু জ্বর কী – ডেঙ্গু জ্বর কাকে বলে

ডেঙ্গু (Dengue) একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মশার কামড়ে ছড়ায় । ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং অল্প পরিমাণে Ae albopictus দ্বারা সংক্রামিত হয় । এই মশা চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার এবং জিকা ভাইরাসেরও প্রধান বাহক ।

ডেঙ্গু জ্বরকে, ব্রেক বোন ফিভারও বলা হয় । কারণ এটি হাড় ভাঙ্গার মতো ব্যথা তৈরি করে এবং এই ব্যাথা কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় । ডেঙ্গু সংক্রমণ, Flaviviridae পরিবারের একটি ভাইরাসের সেরোটাইপের কারণে হয় – DENV-1, DENV-2, DENV-3 (DENV-3) এবং DENV-4 । ডেঙ্গু ভাইরাস ১০ দিনের বেশি বাঁচে না । যখন ডেঙ্গু সংক্রমণ গুরুতর হয়, তখন ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডিএইচএফ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । এর মধ্যে রয়েছে রক্তপাত, ব্লাড প্রেশার হঠাৎ করে কমে যাওয়া, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে । ডিএইচএফকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমও বলা হয়ে থাকে । গুরুতর ক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয় । অন্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই ।শুধুমাত্র এর লক্ষণগুলি চিনতে পারলেই আপনি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন । সিডিসি অনুসারে, বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে ডেঙ্গু খুব সাধারণ রোগ । বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ মানুষ, ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করে । এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশ গুলোতে, গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হল ডেঙ্গু ।

ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকারভেদ

ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার –

  1. সেরোটাইপ – ডি.ই.এন. V. 1 (সেরোটাইপ DENV-1)
  2. সেরোটাইপ – ডি.ই.এন. V. 2 (সেরোটাইপ DENV-2)
  3. সেরোটাইপ – ডি.ই.এন. V. 3 (সেরোটাইপ DENV-3)
  4. সেরোটাইপ – ডি.ই.এন. V. 4 (সেরোটাইপ DENV-4)

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ – ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ নিচে দেওয়া হল –

  • এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপেক্টাস নামে দুটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয় । এই মশাগুলো শুধুমাত্র দিনে কামড়ায় ।
  • ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ প্রকার । এই ভাইরাসগুলো DEN-1, DEN-2, DEN-3, DEN-4 নামে পরিচিত । এর মধ্যে, DEN-1 এবং DEN-3 অনেক বেশী বিপজ্জনক । ‘ডেঙ্গু’ ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয় ।
  • যেহেতু ৪ রকমের ভাইরাসের কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়, তাই একজন ব্যক্তি তার জীবনে ৪ বার পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে । এমনকি যদি সেই ব্যক্তির একবার ডেঙ্গু হয় এবং তার শরীরে ডেঙ্গুর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে । তারপরেও সেই ব্যক্তির, আরও ৩ বার ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
  • ডেঙ্গু সব ধরনের মশার মাধ্যমে ছড়ায় না । ডেঙ্গু শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রজাতির মশার কামড়ের কারণে হয় । যেগুলো মূলত ‘Flaviviridae’ পরিবার এবং ‘Flavivirus’ গণের অংশ ।
আরও পড়ুনঃ পেটের কৃমির লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গুর লক্ষণ – ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ – ডেঙ্গুর উপসর্গ

ডেঙ্গু মৃদু বা গুরুতর দুই ধরণেরই হতে পারে । এমন অবস্থায় এর উপসর্গগুলোও ভিন্নভাবে দেখা যায় । অনেক সময় হালকা ডেঙ্গু হলে কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না, বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। কোন ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষন দেখা যায় না ।আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর হালকা লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে । এই লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রার জ্বর (104° ফারেনহাইট) ছাড়াও নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে –

  • প্রচন্ড মাথাব্যাথা
  • চোখের পিছনে ব্যথা
  • পেশী, হাড় এবং জয়েন্টে ব্যথা
  • বমি
  • বমি বমি ভাব
  • চোখ ব্যাথা
  • চামড়া ফুসকুড়ি
  • ফোলা গ্রন্থি

তবে, গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণজনিত জ্বর বা ডিএইচএফ (ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । এই অবস্থায়, শরীরের রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে । এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে –

  • সাংঘাতিক পেটে ব্যথা
  • অবিরাম বমি
  • দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত
  • প্রস্রাব, মল বা বমিতে রক্ত
  • ত্বকের নিচে রক্তপাত, যা ক্ষতের মতো দেখা যায়
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা
  • ক্লান্তি আনুভব করা
  • বিরক্তি বা অস্থিরতা

নোটঃ রোগীর যদি এই লক্ষণগুলি দেখা যায়, তাহলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করা উচিত ।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ – ডেঙ্গু জ্বর কর প্রকার

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৩ প্রকার –

  • সাধারণ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর – সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় । এতে রোগীর জীবনের কোন ঝুঁকি থাকে না এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় ।
  • ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) – এই ধরনের জ্বরে, রোগীর শরীরে ইন্টারনাল ব্লিডিং বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় । যার কারণে রোগীর নাক, দাঁতের মাড়ি, মলত্যাগ বা বমির সাথে রক্ত ​​আসতে শুরু করে । যদি সময়মতো চিকিৎসা না করানো হয়, তাহলে এই ধরনের জ্বর আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় ।
  • ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS) – এ ধরনের জ্বরে রক্তপাতের সাথে রোগীর অস্থিরতাও অনেক বেড়ে যায় । ব্লাড প্রেশার কমে যায় এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় । অবস্থা আরও বেশী গুরুতর হয়ে উঠলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় (অর্গান ফেইলিউর) এবং এর কারণে রোগীর মৃত্যু হয় ।

ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তার – ডেঙ্গু কীভাবে ছড়ায়

ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত দুটি উপায়ে ছড়ায় –

  • মশা থেকে মানুষে সংক্রমণ এই ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ভাইরাস, মশা থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায় । ভাইরাসটি সংক্রামিত স্ত্রী মশা, অর্থাৎ এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে ছড়ায় । এডিস প্রজাতির অন্যান্য মশাও ভেক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে ।
  • মানুষ থেকে মশার সংক্রমণ – DENV বা ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে । অর্থাৎ যদি স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি মশা, কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায়, তাহলে সেই ব্যাক্তি থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস মশার মধ্যে প্রবেশ করে । এবং পরবর্তীতে ঐ মশা যখন কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন সেই সুস্থ্য ব্যক্তিও ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় । একজন ব্যক্তির, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা যাওয়ার ২ দিন আগে এবং জ্বর ঠিক হয়ে যাওয়ার ২ দিন পর পর্যন্ত মানুষ থেকে মশায় ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটতে পারে ।
  • এটি ছাড়াও দ্বিতীয় স্প্রেডের মধ্যে রয়েছে – এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের থেকে তার শিশুর মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ায় । গর্ভবতী অবস্থায় যখন একজন মায়ের DENV বা ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়, তখন গর্ভের শিশুর অকাল জন্ম, কম ওজন এবং ভ্রূণের সমস্যা হতে পারে ।

নোট – ডেঙ্গু ভাইরাস সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে না ।

ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়

ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত রোগীর লক্ষণ এবং ফিজিক্যাল টেস্টের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয় । আপনার লক্ষণগুলি মূল্যায়ন করার পরে আপনার ডাক্তার নিচে উল্লেখিত টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন –

Complete blood count : এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে শরীরে রক্তের প্লেটলেট পরিমাপ করে । রক্তে প্লেটলেটের পরিমানের উপর নির্ভর করে যে, ডেঙ্গু কতটা গুরুতর হয়ে উঠেছে ।

ডেঙ্গুর জন্য ELISA টেস্ট NS1 Ag : এটি এক ধরণের রক্ত ​​পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন সনাক্ত করা হয় । তবে, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে এই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ দেখাতে পারে । এমতাবস্থায় কারো মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে পরবর্তীতে আবারও এই টেস্ট করাতে হতে পারে ।

পিসিআর টেস্ট (ভাইরাল ডিএনএ সনাক্তকরণের জন্য পিসিআর ) : এই টেস্টটি সংক্রমণের প্রথম ৭ দিনে আরও বেশী কার্যকর হতে পারে, যখন সংক্রমণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও NS1 Ag পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ দেখায় ।

Serum IgG and IgM test : এই টেস্টটি সাধারণত ডেঙ্গুর পরবর্তী পর্যায় এবং বর্তমান অবস্থা জানার জন্য করা হয় । একবার ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম, ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে আইজিজি এবং আইজিএম অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে । এই অ্যান্টিবডিগুলির মাত্রা শরীরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় ।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার ঘরোয়া প্রতিকারডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন দেখা দিলে চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, নিচে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে –

নিম পাতা – নিম পাতার রস পান করলে, রক্তের প্লাটিলেট ও ​​শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । এছাড়াও এটি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকেও উন্নত করে । তাই ডেঙ্গুর চিকিৎসার সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিম পাতার রস খান ।

তুলসী পাতা – ডেঙ্গু জ্বরে তুলসী পাতা খুবই উপকারী ভুমিকা পালন করে । এটি শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন দূর করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে । ৫ থেকে ৭ টি তুলসী পাতা পানিতে সিদ্ধ করে একটি ক্বাথ তৈরি করুন । এরপর এতে এক চিমটি কালো মরিচ মিশিয়ে পান করুন । অথবা চায়ের সাথে তুলসী পাতা দিয়ে পান করতে পারেন ।

পেঁপে এবং পেঁপে পাতা – ডেঙ্গু জ্বরে পেঁপে এবং পেঁপে পাতা খুবই উপকারী । ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেঁপে সেবন করুন । পেঁপে এবং পেঁপে পাতাতে উপস্থিত পুষ্টি ও জৈব যৌগের মিশ্রণ প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়ায় ।

মেথি পাতা – মেথি পাতা জ্বর কমাতে সহায়তা করে এবং শরীরের ব্যথা হলে উপশম দেয় । ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ প্রশমিত করার জন্য, মেথি পাতা অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার ।

কমলা – কমলার রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি, যা ডেঙ্গু ভাইরাসকে ধ্বংস করার জন্য কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এছাড়াও এটি আমাদের ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে ।

বার্লি – বার্লি, রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করে । ডেঙ্গু জ্বরের সময় রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা অনেক কমে যায়, এমন পরিস্থিতিতে, বার্লি খেলে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।

নারকেল পানি বা ডাবের পানি – ডেঙ্গু জ্বরের সময়, নারকেলের পানি বা ডাবের পানি পান করা খুবই উপকারী । এতে উপস্থিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন মিনারেল এবং ইলেক্ট্রোলাইট শরীরকে শক্তিশালী এবং হাইড্রেটেড করতে সহায়তা করে ।

অ্যালোভেরার রস – প্রতিদিন ২ থেকে ৩ চামচ অ্যালোভেরার রস পানিতে মিশিয়ে পান করুন । এর মাধ্যমে অনেক ধরনের রোগ এড়ানো যায় । অ্যালোভেরা ডেঙ্গু জ্বর উপশম করতে সহায়তা করে ।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা – ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা সঠিক চিকিৎসা নেই । জ্বর এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তার অ্যাসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামলর মতো ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দিতে পারেন । শরীরকে সবসময় হাইড্রেটেড রাখা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় । এই ক্ষেত্রে, পরিষ্কার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করা উচিত । কখনও কখনও গুরুতর ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা IV ড্রিপ দিয়ে থাকেন । তবে গুরুতর লক্ষণযুক্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় । গুরুতর ক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তির শিরায় তরল বা ইলেক্ট্রোলাইট সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে, এটি ব্লাডপ্রেশার পর্যবেক্ষণ এবং রোগীর শরীরে রক্ত ​​​​সঞ্চালনের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা হয় । এনএসএআইডি (নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ), যেমন আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । এই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধগুলি রক্ত ​​পাতলা করে, এর ফলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে ।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কী করবেন – ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার নির্দেশিকা

ডেঙ্গু জ্বর হলে নিচে উল্লেখিত নির্দেশিকাগুলো অনুসরন করুন –

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন শুরু করুন ।
  •  বিশ্রাম নিন ।
  •  ঠাণ্ডা পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, গরম পানি পান করুন ।
  •  বাসি খাবার খাবেন না এবং আটার তৈরি খাবার খাবেন না ।
  •  হালকা খাবার খান ।
  •  বেশি মশলাদার বা অতিরিক্ত ভাজা খাবার খাবেন না ।
  •  প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
  •  বাটার মিল্ক, ডাবের পানি, লেবুপানি ইত্যাদি পান করুন ।
  •  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ খাবেন না ।

কিভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায় – ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু ডেঙ্গু নিরাময়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয় নাই, তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে । ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরন করুন –

  • বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না ।
  • পানি সরানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানিতে পেট্রোল বা কেরোসিন তেল ঢেলে দিন ।
  • প্রতিদিন কুলারের পানি খালি করে পরিষ্কার করুন ।
  • পানির ট্যাঙ্ক বন্ধ রাখুন ।
  • মশা এড়িয়ে চলুন ।
  • ঘরের মধ্যে অল আউট বা কয়েল জ্বালিয়ে রাখুন ।
  • কমপক্ষে ১০ শতাংশ ডায়থাইলটোলুয়ামাইড (DEET) এর ঘনত্ব সহ মশা প্রতিরোধী ক্রিম ব্যবহার করুন ।
  • এডিস মশা পরিষ্কার এবং স্থির পানিতে বংশবৃদ্ধি করে । পানির পাত্র বা ট্যাংক সব সময় ঢেকে রাখুন এবং প্রয়োজনে সঠিক জীবাণুনাশক ইউজ করুন । মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা কমাতে এবং পানি জমতে পারে এমন কোনো পাত্র বা জিনিস উল্টো করে রাখুন এবং পৃষ্ঠগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করুন ।
  • সর্বদা ফুল হাতা কাপড় পড়ার চেষ্টা করুন বা যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখুন যাতে মশা কামড়াতে না পারে ।

ডেঙ্গু জ্বরে আপনার ডায়েট – ডেঙ্গু হলে কি খাবেন

ডেঙ্গু জ্বর থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলো খাওয়া উচিত –

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন ।
  • ডেঙ্গুতে উচ্চ জ্বর হওয়ার সাথে সাথে পেটের সমস্যাও হয় । এমন অবস্থায় হালকা ও হজমযোগ্য খাদ্য গ্রহণ করতে হবে । 
  • ডেঙ্গুতে রোগীর মুখ ও গলা দ্রুত শুকিয়ে যায় । তাই রোগীকে স্যুপ, তাজা ফলের জুস ও ডাবের পানি খেতে হবে ।
  • লেবুর শরবত বানিয়ে পান করুন । লেবুর রস প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের ময়লা দূর করে শরীরকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করে ।
  • ভেষজ চা জ্বর কমাতে সহায়তা করে । চায়ের সাথে তুলসী পাতা, আদা এবং এলাচ দিন ।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা গেলে তাজা সবজির রস (যেমন গাজর, শসা ইত্যাদি) পান করতে পারেন । এই সবজিগুলি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে পূর্ণ যা রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
  • ওটমিল খান । এতে উপস্থিত উচ্চ ফাইবার এবং পুষ্টি, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট শক্তি জোগায় ।
  • ডেঙ্গু রোগীর প্রচুর প্রোটিন প্রয়োজন হয় । তাই রোগীকে অবশ্যই দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে ।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, ডেঙ্গু জ্বর কী ? ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, ডেঙ্গু জ্বর কতটা মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে । তাই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষনগুলো দেখার সাথে সাথে, ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অবলম্বন করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । কোন অবস্থাতেই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোকে অবহেলা করবেন না । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment