পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার উপকারিতা

লোকেরা আপনাকে কী ভাববে এই ভয়ে আপনি যদি পুরানো পাত্রে রান্না না করেন বা খাবার না খান, তবে আপনি অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন । যদিও বর্তমানে, তামা বা পিতলের পাত্রে রান্না করা এবং খাবার খাওয়া পুরানো ফ্যাশন বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটি থেকে আপনি অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন । এগুলো আপনার খাবারে পুষ্টির মান যোগ করে । তাই আপনার বাড়িতে যদি তামা বা পিতলের বাসন থাকে, তাহলে স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ব্যবহার করা বাদ দিয়ে দিন । এটি করার ফলে আপনার শরীরের শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলচনা করব ।

পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার উপকারিতা

তামা হলো মানবদেহের জন্য অপরিহার্য একটি মিনারেল । এটা মানুষের শরীরে তৈরি হয় না, বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে এটি গ্রহণ করতে হয় । সামুদ্রিক মাছ, পূর্ণ শস্য, ডাল, বাদাম, চকলেট, আলু, মটরশুটি ও সবুজ পাতাওয়ালা সবজি হলো তামার খুব ভালো উৎস । এছাড়াও পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার ফলে শরীরে তামার অভাব পূরণ হয় । পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার উপকারিতা নিচে দেওয়া হল –

অ্যাজমা রোগীদের জন্য উপকারী – পিতলের পাত্রে খাবার রান্না ও খাওয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে, হাঁপানি রোগীদের উপসর্গ থেকে মুক্তি দেয় ।

রক্ত বাড়ায় – তামা বা পিতলের পাত্রে খাবার রান্না করলে, খাবারে জিঙ্ক নিঃসৃত হয় । যার ফলে রক্ত বিশুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও বেড়ে যায় ।

সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় – তামা বা পিতলের পাত্রে খাবার রাখলে খাবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত গরম থাকে এবং এর ফলে অনেক ধরনের রোগ ও জীবাণু থেকে দূরে থাকা যায় ।

ওজন কমাতে সাহায্য করে – পিতলের পাত্রে খাবার খাওয়া, ওজন কমাতেও সাহায্য করে । দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে, নিয়মিত তামার পাত্রে সংরক্ষিত পানি পান করার অভ্যাস করুন । এটা শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেঙে, তা যথাযথ কাজে লাগাতে সহায়তা করে ।

ক্ষত সারাতে সহায়তা করে – শরীরে হওয়া যে কোনো ধরনের ক্ষত, দ্রুত সারিয়ে তুলতে তামা খুব ভাল কাজ করে । শুধু শরীরের বাইরের ক্ষতই নয়, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতও (বিশেষ করে পাকস্থলির) সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে । একই সাথে তামা, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে ।

বার্ধক্যের ছাপ বিলম্বিত করতে – বয়স বাড়ার সাথে সাথে, চেহারায় পড়া বিভিন্ন ভাঁজ নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না । তামা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিস্ট্য সমৃদ্ধ হওয়ায় এবং কোষ গঠনে সহায়তা করায় তামার পাত্রে পানি পান করলে, শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেরি হয় ।

রোগ প্রতিরোধে – বর্তমানে সারাবিশ্বের মানুষ, যেসব অসুখে বেশি ভোগেন, তার মধ্যে অন্যতম হল হৃদরোগ । তামা এ রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে । আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, তামা ব্লাড প্রেশার ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তের খারাপ কোলস্টেরলের ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কম রাখতেও সাহায্য করে । একই সাথে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এটা সহায়তা করে ।

ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করতে – ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে এর জুড়ি নেই । ই.কয়েল এবং এস.অরিয়াস নামের প্রকৃতিতে পাওয়া দুটি ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী, তার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে তামা । এছাড়াও তামা, ডায়রিয়া এবং জন্ডিস রোগের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে – বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েডের সমস্যা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, শরীরে তামার পরিমাণ কম থাকা । এই তামার সল্পতার কারনে, শরীরে থাইরয়েডের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি- দুটাই হতে পারে ।

অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে – তামায়, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের কারণে সৃষ্ট হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে । এছাড়াও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তামা খুব ভাল কাজ করে ।

ত্বক ভালো রাখতে – আমাদের শরীরে থাকা মেলানিনের প্রধান উপাদান হলো তামা । এই মেলানিন, আমাদের চোখ, চুল ও ত্বকের রং নির্ধারণ করে থাকে । এছাড়াও তামা নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে । এর ফলে আমাদের ত্বক কোমল থাকে ।

রক্তস্বল্পতা মোকাবেলায় – আমাদের শরীরের মধ্যে চলমান অধিকাংশ কার্যক্রমে তামার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । তামা যে শুধু কোষ গঠনেই সহায়তা করে তা কিন্তু নয় । শরীর থেকে আয়রন শোষণ করতেও এটা সহায়তা করে । এর ফলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর হয় ।

হজমের সমস্যা দূর করতে – পেট সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের সমস্যার সমাধান করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে, তামার পাত্রে খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায় । নিয়মিত তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খেলে, হজমের সমস্যা দূর হয় ।

আরও পড়ুনঃ কৈলাস পর্বত, কোন বিজ্ঞানী যার রহস্যকে উদঘাটন করতে পারেনি

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, পিতল ও তামার পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি । এই আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে, তামা বা পিতলের পাত্রে খাবার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী । তাই উপরে উল্লেখিত স্বাস্থ্য উপকারীতাগুলো পাওয়ার জন্য আজ থেকেই তামা বা পিতলের পাত্রে খাবার এবং পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment