কিভাবে পেট ও কোমরের মেদ কমাবেন

বর্তমানে পেট ও কোমরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ অনেকের কাছেই চিন্তার বিষয়। এটি শুধুমাত্র দেখতেই খারাপ নয়, এটি অনেক ধরনের রোগের কারণও হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে পেট ও কোমরের মেদ কমানো যায়। 

আজকে আমরা আপনাদের কিছু কার্যকর ব্যায়াম এবং ডায়েট সম্পর্কে বলব, যা পেট ও কোমরের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এই সমস্ত কাজগুলি কেবল তখনই আপনাদের উপকারে আসবে, যখন আপনারা সেগুলি নিয়মিত করবেন। এক বা দুই দিন করার পর ছেড়ে দিলে এগুলো আপনাদের কোন কাজে আসবে না।

পেটে চর্বি হওয়ার কারণ

পেটে চর্বি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই চর্বি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে আপনারা অনেক ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে পারেন । এখানে আমরা আপনাকে পেটে চর্বি বা মেদ হওয়ার কিছু কারণ সম্পর্কে বলব।

  • জেনেটিক: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরের কিছু চর্বি কোষ জিনগতভাবে বিকশিত হয়। যদি আপনাদের পরিবারের কোন সদস্য এ সমস্যায় ভুগে থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্মও এ সমস্যায় ভুগতে পারে ।
  • দুর্বল হজম প্রক্রিয়া: বয়স বাড়ার সাথে সাথে হজম ব্যবস্থাও দুর্বল হতে শুরু করে। এর সাথে, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমও প্রভাবিত হতে শুরু করে। এই কারণেও, পেটের চর্বিও বাড়তে পারে।
  • হরমোনের পরিবর্তন: সাধারণত বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের হরমোন পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হয়। যখন মহিলারা তাদের জীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে পৌঁছান (প্রায় 40), তখন শরীরের ওজনের তুলনায় চর্বি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও মেনোপজের সময়, ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায় এবং এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেশি হয়ে যায়। এ কারণে কোমরের চারপাশে চর্বি বেড়ে যেতে পারে।
  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তি একের পর এক বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। শরীরের মেদ বেড়ে যাওয়া তার মধ্যে একটি। স্ট্রেস রক্তে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে । কর্টিসল হরমোন শরীরের চর্বির মাত্রা বাড়াতে পারে, যার ফলে চর্বি কোষ বড় হতে পারে। সাধারণত এই অবস্থায় পেটের চারপাশে চর্বি বেড়ে যায় ।
  • অন্যান্য রোগ: কিছু রোগ আছে, যেগুলোর কারণে আপনার পেটের মেদ বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা, থাইরয়েড এবং হার্ট ফেইলিওর এর কারণেও অনেক সময় ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • পেশী ঢিলা হয়ে যাওয়া: পেটের চারপাশের পেশীগুলো ঢিলা হতে শুরু করলে সেই জায়গার চর্বি বাড়তে শুরু করে। তবে, এই বিষয়ে কোন সঠিক গবেষণা পাওয়া যায় না।
  • বসে থাকা এবং কাজ করার অভ্যাস: আধুনিকতার এই যুগে, জীবন এত সহজ হয়ে গেছে যে একজন ব্যক্তি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বা ব্যায়াম করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। সবাই অফিসে বা বাড়িতে বসে বসে তার সমস্ত কাজ করার চেষ্টা করে।আবার ব্যায়ামের জন্য সময় বের করার পরিবর্তে, অনেকেই টিভি দেখতে বা কম্পিউটারে কাজ করতে পছন্দ করেন। যার ফলে শরীরে চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
  • কম প্রোটিন এবং বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহন: কখনও কখনও কাজের চাপে বা মানসিক চাপে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার গ্রহন করি। আবার খাবার গ্রহনের সময় আমরা খেয়াল করি না যে, আমরা খাবার হিসেবে প্রোটিন বেশী গ্রহন করছি নাকি কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট । আর এই কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশী গ্রহন করার কারণে কোমর এবং পেটের চারপাশে চর্বি বাড়তে শুরু করে। আর এই কারণে, বেশী প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য আমাদের শরীরের ওজন কমাতে উপকারী বলে মনে করা হয় ।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে আপনার হলুদ দাঁত সাদা করবেন

পেট এবং কোমরের চর্বি কমানোর ব্যায়াম

অনেক মানুষ তাদের পেট এবং কোমরের চারপাশে বেশি চর্বি থাকার কারণে তাদের পছন্দের পোশাক পরতে পারে না। অনেক সময়, চর্বির কারণে অন্যদের সামনে যেতে হেজিটেশনে ভোগেন। পেটের মেদ কিভাবে কমানো যায় সেই চিন্তায় সবসময় ডুবে থাকেন । এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করা আপনার এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। 

পেট এবং কোমরের চর্বি কমানোর জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়। তাহলে চলুন পেট এবং কোমরের চর্বি কমানোর কিছু ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

দৌড়ানো

নিয়মিত দৌড়ানো, আপনার শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি আপনার পেট এবং কোমরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে । প্রকৃতপক্ষে, দৌড় আপনার হার্টকে ভালভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করে। যার ফলে ধীরে ধীরে মেদ কমতে শুরু করে । প্রথম অবস্থায় মাত্র কয়েক মিটার দৌড়ান এবং তারাহুরা না করে ধীরে ধীরে দৌড়ানোর জায়গা বৃদ্ধি করুন । শরীর যখন এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন দৌড়ানোর গতি ও সময় দুটোই বাড়াতে পারে।

সাঁতার কাটা

সাঁতার কাটা, কোমর ও পেট এর অতিরিক্ত মেদ কমানোর অন্যতম কার্যকরী উপায়। এতে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়। সাঁতার ওজন কমানোর সাথে সাথে শরীরকে আরও ভাল আকারে তৈরি করতে পারে। আপনি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে এক বা দুইবার সাঁতার কাটুন। আপনি যদি আগে কখনও সাঁতার না কেটে থাকেন তবে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আপনার সাঁতার কাটা উচিত।

সাইক্লিং

ভুড়ি কমাতে ব্যায়াম হিসেবে সাইক্লিং করতে পারেন। এটি সর্বোত্তম এবং সহজ কার্ডিও ব্যায়াম (হার্টের জন্য) হিসাবে বিবেচিত হয় । এটি আপনার পা এবং উরুর জন্য একটি ভাল ব্যায়াম। এর সাথে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও ক্যালরি কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী। তাই আপনার পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে নিয়মিত সাইক্লিং করুন ।

হাঁটা

পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে ঘরোয়া উপায়ে হাঁটার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল -সন্ধ্যা কমপক্ষে আধা ঘণ্টা করে হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তত দ্রুত পদক্ষেপে হাটার চেষ্টা করুন। তবে প্রথম অবস্থায় এটি করার চেষ্টা করবেন না, ধীরে ধীরে হাটার গতি বৃদ্ধি করুন। এটিকে পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ উপায় বলে মনে করা হয় ।

সিট-আপ

কোমর এবং পেট এর মেদ কমানোর জন্য সিট আপ ব্যায়াম করুন। এই সহজ ব্যায়ামের মাধ্যমে শুধু পেটের মেদই নয়, বরং শরীরের অন্যান্য অংশের মেদও কমানো যায়। এই অনুশীলনটি আপনার সুবিধামতো সকালে বা সন্ধ্যায় পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য করুন।

সিঁড়ি আরোহণ

পেটের মেদ কমানোর পদক্ষেপের মধ্যে সিঁড়ি আরোহণ এবং অবতরণ অন্তর্ভুক্ত। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা ও নামার মাধ্যমে অতিরিক্ত মেদও কমানো যায়। এই জন্য, বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ওঠা এবং নামা প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় প্রায় 10 মিনিটের জন্য করতে পারেন। এমনকি অফিসে যাওয়ার সময়, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করাও কোমর ও পেট কমানোর ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে । এই কারণে, পেটের চর্বি কমানোর জন্য এটি একটি সহজ ব্যায়াম হিসাবে বিবেচিত হয়।

প্লাঙ্ক

প্ল্যাঙ্ক ব্যায়াম করার মাধ্যমে পেটের চর্বি কমানো যায়। প্লাঙ্ক খুব সহজ একটি ব্যায়াম। এটি করার মাধ্যমে, অতিরিক্ত চর্বি কমানোর পাশাপাশি শরীরের ভারসাম্যও উন্নত করা যায়। এটি করার জন্য, একজনকে পুশআপ করার অবস্থানে আসতে হবে এবং তারপরে পুরো শরীরের ওজন বাহুতে রেখে শরীরকে একটি সরল রেখায় রাখতে হবে (ছবিতে দেখুন)। এই সময়, শুধুমাত্র কনুই এবং পায়ের আঙ্গুলের মাথা মাটিতে থাকবে এবং শরীরের বাকি অংশ বাতাসে থাকবে। এখন যতক্ষণ সম্ভব শরীরকে এই অবস্থায় রাখুন।

ব্যাসিক ক্রাঞ্চ

অ্যাবস তৈরি করতে এবং পেট কমানোর ওয়ার্কআউট হিসেবে ক্রাঞ্চ খুবই জনপ্রিয়। ক্রাঞ্চিং পদ্ধতিটিও অনেক সহজ। এই কারণে, এটি পেটের মেদ কমানোর প্রতিকারের মধ্যে অন্যতম। এটি করার জন্য, প্রথমে আপনারা মাদুরের উপর পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ুন এবং হাঁটু বাকা করুন (ছবির মত)। এখন আপনার কনুই বাকিয়ে ঘাড়ের পিছনে রাখুন। তারপর শ্বাস নেওয়ার সময় শরীরের উপরের অংশটি তোলার চেষ্টা করুন। এর পরে, শ্বাস ছাড়ার সময়, শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন।

শাটারস্টক

স্কোয়াট

সহজে আপনার পেটের মেদ কমানোর জন্য স্কোয়াটই সেরা ব্যায়াম হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। এটি করার জন্য, আপনাকে সরাসরি মাটিতে দাঁড়াতে হবে। এর পরে, হাত সোজা সামনে রেখে, হাঁটু বাকা করতে হবে। এখন কয়েক সেকেন্ড এভাবে থাকুন এবং তারপর শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এটি পেট সমতল করার জন্য মহিলাদের ব্যায়াম হিসাবেও জনপ্রিয় ।

আরও পড়ুনঃ কিটো ডায়েট চার্ট জাহাঙ্গীর কবির

পেটের মেদ কমাতে কী খাবেন

যদি আপনার খাবার তালিকায় খাদ্য ও পানীয় ভারসাম্যপূর্ণ না রাখা হয়, তাহলে ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম যাই করুন না কেন, পেটের মেদ কমানোর ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে কাজ করবে না। এই কারণে, আসুন দেখে নিই পেটের মেদ কমানোর জন্য কি ধরনের খাবার গ্রহন করা উচিত।

  • স্যুপ- আপনি যদি পেটের চর্বি কমাতে চান, তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় স্যুপ অন্তর্ভুক্ত করুন। বিশেষ করে, রাতে এটি খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি হালকা এবং এতে খুব অল্প পরিমাণে ক্যালোরি থাকে , যার কারণে এটি চর্বি বাড়তে দেয় না।
  • ফল – পেট কমানোর প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ফল খাওয়া। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি ফল ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে থাকে। ফলের মধ্যে উপস্থিত ফাইবার চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এই কারণে, আপনার নিয়মিত রুটিনে ফল অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • শাকসবজি- পেটের চর্বি কীভাবে কমানো যায়, এই প্রশ্নটি যদি আপনার জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবজিকে স্থান দিন। শাক সবজি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে ক্যালোরি একদমই কম থাকে। তাই ভাতের পরিমাণ কমিয়ে প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি গ্রহন করুন।
  • গোটা শস্য- খাদ্যে গোটা শস্যকে স্থান দিলে ওজন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গোটা শস্য ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
  • বাদাম – বাদাম, কাজুবাদাম, cashews এবং আখরোট ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। বলা হয়ে থাকে যে, সীমিত পরিমাণে শুকনো ফল দীর্ঘদিন খেলে শরীরে শক্তি থাকে এবং বারবার খাওয়ার ইচ্ছাও নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
  • মটরশুটি – আপনি পেট কমাতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মটরশুঁটি খেতে পারেন। সবুজ মটরশুটি হোক বা মসুর, সবই ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ফাইবার ঘন ঘন ক্ষুধা হ্রাস করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার তাগিদ নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • চর্বিমুক্ত দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য – আপনি যদি দুধ পান করতে পছন্দ করেন তবে ফ্যাট মুক্ত দুধ খাওয়া পেট কমানোর অন্যতম ঘরোয়া প্রতিকার হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চর্বি বিহীন দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যও পেট কমানোর জন্য ভাল কাজ করে।
  • উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার – পেটের চর্বি কীভাবে কমানো যায় সেই প্রশ্নের উত্তর হল উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার। প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে ওটস, চিয়া বীজ, মসুর ডাল, অ্যাভোকাডোস, সয়া মিল্ক ইত্যাদি । অতএব, এটিকে পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

পেটের মেদ কমাতে কী খাবেন না

পেট কমাতে কী খাবেন তা জানার পাশাপাশি কী খাবেন না সে সম্পর্কে জানাটাও অত্যন্ত জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পেটের চর্বি কমানোর জন্য কোন ধরনের খাবার গ্রহন করা যাবে না।

  • চিনি সমৃদ্ধ এবং প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকুন।
  • স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার যেমন ভাত, নুডলস, পাস্তা এবং রুটি ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব কম গ্রহন করুন
  • তামাক, মদ ও সিগারেট ইত্যাদি পরিহার করার চেষ্টা করুন।

পেটের চর্বি কমানোর ডায়েট চার্ট

ব্যায়ামের পাশাপাশি ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখলে খুব দ্রুত চর্বি কমানো সম্ভব। এই কারণে, আপানাদের সুবিধার জন্য ওজন কমানোর একটি নমুনা ডায়েট চার্ট নীচে দেওয়া হল। এটি একদিনের ডায়েট চার্ট। আপনি এটি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।

খাবারের সময় আমাদের কি খাওয়া উচিত
সকালে ঘুম থেকে ওঠা (6:30 থেকে 7:30 এর মধ্যে) সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে একটি লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা লেবুতে চিনি যোগ করবেন না । আর যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা লবণ ছাড়া পান করুন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকালে লেবু পানি পান করলে শরীরের মেদ কমে ।
সকালের নাস্তার আগে (সকাল 7:30 থেকে 8:00 এর মধ্যে) সকালের নাস্তার 15 মিনিট আগে 5-6 টি বাদাম খান। এই বাদামগুলিকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খোসা ছাড়ানোর পরে সেগুলি খান। বাদাম আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। বাদামে রয়েছে ফাইবার, যা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে।
ব্রেকফাস্ট (8:15 থেকে 8:45 এর মধ্যে) ব্রেকফাস্টে আপনারা দুটি রুটি খেতে পারেন, যার সাথে আপনি সবজি খেতে পারেন। অথবা আপনি একটি বাটি ওটস খেতে পারেন। এছাড়াও সাথে কিছু প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।
ব্রাঞ্চ (10:00 এবং 10:30 এর মধ্যে) সকালের নাস্তার পর ১০টার দিকে যেকোনো ফল খেতে পারেন অথবা বিভিন্ন ফলের সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
দুপুরের খাবার (দুপুর 1 টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে) খাওয়ার আগে সবজির সালাদ খান। সালাদ খেলে শরীরে বাড়তি ফাইবার পাওয়া যায়। এরপর দু রুটি অথবা অল্প পরিমাণ ভাতের সাথে মিক্সড সবজি খেতে পারেন। সাথে এক টুকরো মাছ বা মাংস (চর্বি ছাড়া) নিতে পারেন।
বিকালের নাস্তা (বিকাল 03:30 থেকে 04:30 এর মধ্যে) রাতের খাবার আগে, আপনি বিকালে একটি ফল বা ক্রিম ছাড়া এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন। এগুলি ছাড়াও, আপনি গ্রিন টি বা ডাবের পানি পান করতে পারেন।
রাতের খাবার (8:00 টা থেকে 9:00 টার মধ্যে) ডিনার সবসময় হালকা হওয়া উচিত। রাতের খাবারে স্যুপ খেতে পারেন। এর পর সবজির সাথে এক বা দুটি রুটি খেতে পারেন। অথবা আপনি এগুলোর পরিবর্তে এক বাটি ওটস খেতে পারেন। এরপর বাকি রাত পানি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়া যাবে না।

পেটের চর্বি কমানোর টিপস

আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নেয়া যাক পেটের মেদ কমানোর কিছু টিপস। যা অবলম্বন করে আপনারা আপনাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ খুব দ্রুত ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। এটি ভুড়ি কমানোর ঘরোয়া প্রতিকারের মতো কাজ করে।

  • সুষম পরিমাণে খাবার খান: আমরা সাধারনত দিনে তিনবার প্রচুর পরিমাণে খাবার গ্রহন করি। কিন্তু এইভাবে খাবার গ্রহন করলে আমাদের পেটের চর্বি কখনোই কমবে না। এই কারণে ডাক্তাররা প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বিও জমবে না। এই কারণে সুষম পরিমাণে খাবার খাওয়া পেট স্লিম করার কার্যকরী সমাধান হতে পারে।
  • বেশি করে পানি পান করুন : দিনে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তৃষ্ণার্ত হলে বা গলা শুকিয়ে গেলেই পানি পান করা উচিত নয়। নির্দিষ্ট সময় পর পর একটু একটু করে পানি পান করা উচিত। পানি খেলে অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস কমে যায়। এই কারণে, এটি পেট কমানোর একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে বিবেচিত হয়। সম্ভব হলে খাবার গ্রহনের পূর্বে এক গ্লাস পানি পান করুন।
  • সকালের নাস্তা ভুলে যাবেন না: শ্বাস-প্রশ্বাস যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সকালের নাস্তা করাটাও আপনার শরীরের জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করে যে সকালের নাস্তা বাদ দিলে ওজন কমে যাবে, কিন্তু এই ধারনাটি সম্পূর্ণ রূপে ভুল। আসল কথা হল আপনি যদি সকালের নাস্তা না করেন তাহলে আপনার ক্ষুধা বেড়ে যাবে, যার ফলে আপনি বেশী খাবার গ্রহন করে ফেলবেন, যা ওজন বাড়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 
  • গ্রিন – টি : পেটের মেদ কমাতে গ্রিন-টি খুব ভাল কাজ করে । এতে থাকা ক্যাটেচিন, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে। ওজন কমানোর জন্য সারাদিনে অন্তত এক কাপ গ্রিন-টি পান করা উচিত। গবেষণায় আরও দেখা যায় যে অতিরিক্ত ক্যাফিন ব্যবহার ক্যাটেচিনের ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রভাবকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  • পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: কলা এবং কমলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই পেটের চর্বি কমানোর জন্য অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন ।
  • ফল ও শাকসবজি: সারা দিন ফল ও প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি খাওয়া উচিত। এটি ক্ষুধা কমাবে এবং স্থূলতা কমাতেও সাহায্য করবে।
  • ভাল ঘুম: পেটের চর্বি কমানোর পদ্ধতিগুলি তখনই কাজ করে যখন একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ ভাবে ঘুমাতে পারে। প্রত্যেকেরই কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ঘুম আপনার শরীরের ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। 
  • চিনি সমৃদ্ধ এবং ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন : আপনি যদি আপনার পেটের চর্বি কমাতে চান তাহলে চিনি সমৃদ্ধ এবং ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায়, পেটের মেদ কমানোর ব্যবস্থাগুলি আপনাদের কোন কাজেই আসবে না।

পেটের চর্বি কমানো সম্পর্কে কিছু কমন প্রশ্ন

প্রশ্নঃ আপেল সিডার ভিনেগার কি পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে পেটের মেদ কমানো (ভিসারাল অ্যাডিপোসিটি) এবং সেই সাথে ওজন কমানো । এটি পেটের চর্বি কমানোর অন্যতম প্রতিকার হিসাবে বিবেচিত হয়। 

প্রশ্নঃ ব্যায়াম ছাড়া পেটের মেদ কমানো কি সম্ভব?

উত্তরঃ হ্যাঁ, শুধুমাত্র খাবার নিয়ন্ত্রণ করে পেটের মেদ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। কিন্তু, গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেটের চর্বি দ্রুত হ্রাস এবং ভাল ফলাফলের জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। যদিও অনেকে ব্যায়াম করার পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শে পেটের মেদ কমানোর ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে আপনারা যদি চর্বি কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহন করতে চান তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। টিভি, নিউজপেপার বা রাস্তার পাশের বিজ্ঞাপন দেখে উৎফুল্ল হয়ে সেইসব ওষুধ গ্রহন করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকুন।

প্রশ্নঃ পেটের মেদ কমানোর দ্রুততম উপায় কী?

উত্তরঃ পেটের মেদ কমানোর দ্রুততম উপায় হল সুষম খাদ্য গ্রহন, পরিমিত পরিমাণে ঘুম এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে। এগুলোকেই পেটের চর্বি দ্রুত কমানোর অন্যতম উপায় বলে মনে করা হয়। 

প্রশ্নঃ পেটের মেদ কমাতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ কিভাবে কোমরের মেদ কমানো যায় এবং পেটের মেদ কমাতে কত সময় লাগবে, এই ধরনের প্রশ্ন থেকেই যায় অনেকের মনে। ভুড়ি কমাতে কি করতে হবে, আমরা আগেই বলেছি। আপনার পেটের চর্বি কমতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করে, আপনি কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছেন এবং কত সময় ব্যায়াম করছেন তার ওপর। যদি সবকিছু সঠিকভাবে করা হয়, তবে তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চর্বি কিছুটা কমানো যেতে পারে।

প্রশ্নঃ পাতলা মানুষের পেটে চর্বি থাকে কেন?

উত্তরঃ আমরা আগেই বলেছি যে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে পেটের মেদ বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার কারণে পাতলা মানুষের পেটেও মেদ জমতে পারে।

প্রশ্নঃ পেট কমানোর জন্য কি পান করা উচিত?

উত্তরঃ পেটের মেদ কমাতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পানীয় পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন- লেবু বা মধু মিশ্রিত পানি। এগুলি অবশ্যই পেট স্লিম করার কার্যকরী উপায়। তবে এগুলো থেকে কোনও অলৌকিক ঘটনা আশা করবেন না। ব্যায়ামের পাশাপাশি সুষম খাদ্য গ্রহন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওজন কমাতে সাহায্য করে।

প্রশ্নঃ লেবু পানি কি পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত পলিফেনল চর্বি কমাতে সহায়ক বলে বিবেচিত হয় । এ কারণে পেট কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে লেবু ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ কীভাবে ঝটপট মেদ কমানো যায়?

উত্তরঃ দ্রুত স্থূলতা কমাতে, আপনাদের অস্ত্রোপচার পদ্ধতির সাহায্য নিতে হতে পারে। তবে আপনি যদি ঘরোয়া প্রতিকার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তাহলে এর ফলাফল পেতে সময় লাগবে।

নোটঃ আপনারা যদি চর্বি কমানোর জন্য ওষুধ গ্রহন করতে চান তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। টিভি, নিউজপেপার বা রাস্তার পাশের বিজ্ঞাপন দেখে উৎফুল্ল হয়ে সেইসব ওষুধ গ্রহন করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকুন।

শেষ কথা

পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, কোমর এবং পেটের মেদ কমানো এতটাও কঠিন কোন বিষয় নয়। নিয়মিত ব্যায়াম, জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এবং সুষম খাদ্যের মাধ্যমে যে কেউ সহজেই ওজন কমাতে পারে। যা দরকার তা হল সংকল্প, যা ছাড়া মানুষ কিছুই করতে পারে না। হ্যাঁ, যদি কারও ওজন খুব বেশি হয়, তবে এই আর্টিকেলে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলোর পাশাপাশি ডাক্তারের দ্বারা চেকআপ করানোও প্রয়োজন। 

আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।

ধন্যবাদ

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment