পানির আরেক নাম জীবন, এই কথাটি আমরা প্রায় সকলেই জানি। কিন্তু সঠিক নিয়মে পানি পান না করলে এই পানিই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এইটা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। আজকের আর্টিকেলে চলুন জেনে নেই সঠিক নিয়মে পানি পান করার পদ্ধতি সম্পর্কে।
তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানির কোনও বিকল্প নেই। একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন কতটুকু পানির প্রয়োজন তা নির্ভর করে সে কোন আবহাওয়ায় রয়েছে, তার কাজের পরিমাণ, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। আমাদের মাথা বা মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে রয়েছে থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসা কেন্দ্র, যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে আমাদের কখন পানি পান করা প্রয়োজন। পানি পানের উপর জাপানের সিকনেস এসােসিয়েশন দ্বারা প্রকাশ করা এক নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, যদি আপনি সঠিক নিয়ম মেনে নিয়মিত পানি গ্রহণ করেন তবে অনেক ধরনের দুরারোগ্য এবং কঠিন রােগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন-
- মাথা ব্যাথা, রক্তশূন্যতা, প্যারালাইসিস, ব্লাড-পেসার বা উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত মেদ-ভূড়ি, রিইউনিটিজম, পালপিটেশন ইত্যাদি
- এজমা, কফ, শ্বাস কষ্ট, টিবি
- লিভার এবং প্রস্রাবের ন্সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত রােগসমূহ
- আমাশয়, পাইলস, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, বহুমুত্র রোগ
- চোখের বিভিন্ন রােগ
- মহিলাদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা, লিকোজিয়া, জরায়ুর ক্যানসার
- নাক, কান এবং গলার সঙ্গে সম্পর্কিত রােগসমূহ ইত্যাদি।
পানি পান করার সময় সাধারণত যে বিষয় গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সেগুলো হল-
১. আমাদের দেশের মতো গরম আবহাওয়ার দেশে মোটামুটি মাপের পরিশ্রমের কাজ করলে একজন মানুষের দিনে সাধারনত দুই থেকে চার লিটার পানি পান করার প্রয়োজন হয়। তবে এটি নির্ভর করে সেই ব্যক্তির শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার পরিমাণের ওপর।
২. আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পানি পান করার সময় একেবারে অনেক পরিমাণ পানি পান করে থাকেন এবং এই বেশী পরিমাণ পানি পান করতে গিয়ে পানি প্রায় গিলে গিলে খান। এইভাবে পানি পান করার কারনে শরীরের ভিতরে হঠাৎ করে চাপ অনেক বেড়ে যায়, যার ফলে আমাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সব সময় অল্প অল্প করে ধীরে ধীরে পানি পান করতে হবে।
৩. আমাদের যখন জ্বর হয় তখন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতেও প্রচুর পানি পান করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে তিন থেকে চার গ্লাস পানি পান করলে এ ধরনের সমস্যায় খুব ভাল উপকার পাওয়া যায়। কিছু ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাবার পরে বেশি বেশি করে পানি পান করা উচিত, যাতে তা দ্রুত আমদের শরীর থেকে নিষ্কাশিত হ্যে যেতে পারে।
৪. মনের ভুলেও কখনো দাঁড়িয়ে পানি পান করবেন না। কারণ এমনটা করার কারনে শরীরের ভিতর পানির ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে জয়েন্টে পানি জমে আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আপনারা যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সব সময় অবশ্যই বসে পানি পান করবেন।
৫. সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে পানি পান করলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক টক্সিক উপাদান আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এর ফলে অনেক ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এই কারণেই তো ভোরে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে কম পক্ষে ২ কাপ পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। গবেষণায় প্রমানিত যে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত পানি পানের অভ্যাস করলে কিডনি এবং ইনটেস্টাইনের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
৬. চিকিৎসকদের মতে খাবারের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে এবং খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পরে পানি পান করা উচিত। এমনটা না করলে হজমের জন্য সহায়ক পাচক রসের কার্যক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে খাবার হজম ঠিক মতো না হাওয়ার দরুন বদ-হজম এবং পেটে গ্যাসের মতো সমস্যা তৈরি হয়।
৭. ভারী যে কোন রকমের কাজকর্ম অথবা শারীরিক ব্যায়াম করার পরে কমপক্ষে তিন থেকে চার গ্লাস পানি পান করতে হবে।
৮. তাড়াতাড়ি করে কখনোই পানি পান করবেন না অথবা জোড় করে কখনোই বেশি পানি পান করার দরকার নেই। আপনার পিপাসাই আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার কোন সময় কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন।
৯. শরীরে পানির পরিমাণ কমতে থাকলে অনেক ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন ধরুন প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া, সেই সাথে ঠোঁট এবং গলা শুকিয়ে যাওয়া। এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয় গুলোতে যত সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, ততই আমাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে সঠিক নিয়মে পানি পান করার গুরুত্ব কতটুকু । তাই মহান সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি এই পানি সঠিক নিয়ম মেনে পান করুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।