বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ মানুষ পেট সম্পর্কিত নানাবিধ সমস্যায় ভোগেন । পেট-সম্পর্কিত এই সমস্যাগুলি, মৃদু থেকে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে, যার মধ্যে একটি হল আমাশয় । দেখা গেছে, তথ্যের অভাবে অনেকেই এটাকে সাধারণ ডায়রিয়া হিসেবে মনে করেন । তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনার সাথে, আমাশয় সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব । আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে, আপনারা আমাশয়ের কারণ এবং লক্ষণগুলি সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হবেন ।এছাড়াও, এই আর্টিকেলে আমাশয়ের চিকিৎসা এবং আমাশয়ের ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া হয়েছে । যা আমাশয়ের প্রভাব এবং উপসর্গ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে ।
Table of Contents
আমাশয় কি ?
আমাশয় হল, মানুষের অন্ত্রের একটি সংক্রমণ, যা রক্ত বা শ্লেষ্মাযুক্ত ডায়রিয়া সৃষ্টি করে । আরও সহজ ভাষায় বললে, ডায়রিয়ার মারাত্মক রূপকেই আমাশয় বলা হয় । আমাশয় সাধারণত ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী দ্বারা সংক্রমণের কারণে হয় ।এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মল, পানির মতো বের হয় এবং মলের সঙ্গে রক্ত বের হতে থাকে । শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া এবং এন্টামোইবা হিস্টোলাইটিকা নামক একটি পরজীবীর কারণে এমনটা ঘটে থাকে ( তথ্যসূত্র )। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহন না করলে, এটি মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে ।
আমাশয় কত প্রকার – আমাশয়ের প্রকারভেদ
আমাশয় সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে, যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো –
- ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি – ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি বা ব্যাসিলারি আমাশয় হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের আমাশয় । এই ধরনের আমাশয় শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া কারণে সৃষ্ট হয় । এই কারণে এই ধরনের আমাশয়কে, শিগেলোসিস বলা হয় । এই ব্যাকটেরিয়া দূষিত খাবার, পানি এবং সংক্রামিত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায় ।
- অ্যামিবিক আমাশয় – এটি একটু ভিন্ন ধরনের আমাশয়, যা Entamoeba histolytica নামক পরজীবীর কারণে হয়ে থাকে । এই ধরনের আমাশয় বেশির ভাগই এমন জায়গায় দেখা যায়, যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে । অর্থাৎ আপনি যদি এমন কোনো গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় ভ্রমণ করেন, যেখানে ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই, তাহলে আপনার এই ধরনের আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে । এই পরজীবী দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায় । এই ধরনের এলাকায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪০% মানুষের অ্যামিবিক আমাশয় হয় ।
আমাশয়ের কারণ – আমাশয় কেন হয়
আর্টিকেলের উপরের অংশে আমরা উল্লেখ করেছি, আমাশয়ের প্রধান কারণ হল শিগেলা ব্যাকটেরিয়া এবং Entamoeba histolytica নামক একটি পরজীবী । এই ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীগুলি নিচে উল্লেখিত কারনগুলোর কারণে ছড়িয়ে পড়ে –
- দূষিত পানি
- দূষিত খাবার
- সংক্রামিত ব্যক্তির মল
- সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যোগাযো
চলুন আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমাশয়ের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক ।
আরও পড়ুনঃ পেটের কৃমির লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
আমাশয়ের লক্ষণ – আমাশয়ের উপসর্গ
সাধারণত সংক্রমিত হওয়ার ১ থেক ৩ দিন পরে লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে । তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি দেখা দিতে বেশি সময় নেয়, আবার কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেতে কোন উপসর্গ দেখা যায় না ।
তবে আমাশয় রোগের লক্ষণগুলো, এর প্রকারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে, যা নীচে দেওয়া হল –
ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রির লক্ষণ:
- ডায়রিয়া
- জ্বর
- পেট ব্যথা
- মলের সাথে রক্ত
- পেট ফাঁপা সহ ডায়রিয়া
- বমি বমি ভাব এবং বমি
অ্যামিবিক আমাশয় সাধারণত কোন উপসর্গ সৃষ্টি করে না । তবে সংক্রামিত হওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পরে নিচের সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে ।
অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রির লক্ষণ:
- জ্বর
- ঠান্ডা
- মলের সাথে রক্ত
- পেটে অস্বস্তি
- ওজন কমে যাওয়া
কিছু সময় অ্যামিবিক আমাশয়ের কারণে লিভারের ফোড়ার মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে । এবং লিভারে পুঁজও জমা হতে পারে । তাই ডায়রিয়া, ক্র্যাম্প এবং অন্যান্য উপসর্গগুলি গুরুতর হলে বা এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক না হলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ।
উপরের আমাশয়ের লক্ষণগুলো জানার পর এখন আমাশয়ের ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ।
আমাশয়ের ঘরোয়া প্রতিকার
ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে আমাশয় অনেকটা কমানো যেতে পারে । তাই আমাশয়ের সমস্যা হলে, নীচে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অবলম্বন করা যেতে পারে । তবে মনে রাখবেন যে, এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আমাশয়ের সমস্যার সম্পূর্ণ নিরাময় নয় । গুরুতর ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করা উচিত ।
1. বাটারমিল্ক
উপাদান:
- এক গ্লাস বাটার মিল্ক
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- আমাশয়ের সমস্যা থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন গ্লাস বাটারমিল্ক পান করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
আমাশয় রোগের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বাটারমিল্ক খাওয়া যেতে পারে । একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাটারমিল্ক সেবন আমাশয় উপশম করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )।
2. কাঁচা পেঁপে
উপাদান:
- অর্ধেক কাঁচা পেঁপে
- তিন কাপ পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- পেঁপের খোসা ভালোভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন ।
- তারপরে পানিতে দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করুন ।
- এর পরে, পানি ফিল্টার করে নিয়ে, হালকা ঠান্ডা করে পান করুন ।
- এই পেপের পানি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার পান করুন ।
- এছাড়াও কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ করে খেতে পারেন
এটা কিভাবে উপকারী?
পেঁপে, পেট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । পেঁপে, বদহজম, আমাশয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে । পেঁপেতে, কাইমোপাপাইনের মতো প্রোটিওলাইটিক এনজাইম থাকে, যা অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ । এখানে ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য আমাশয় প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে । এমন পরিস্থিতিতে, এটা বলা যেতে পারে যে, পেঁপে আমাশয়ের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
3. হরিতকী
উপাদান:
- হরিতকি গুঁড়ো চা চামচ
- এক গ্লাস পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- প্রথমে পানি হালকা গরম করুন ।
- তারপর সেই উষ্ণ গরম পানির সাথে হরিতকি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন ।
- আমাশয় উপশম না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণ পান করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
হরিতকি, আমাশয়ের সমস্যা উপশমে খুব ভাল কাজ করে । এছাড়া এটি ডায়রিয়া এবং পেট ফাঁপা রোগের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ।এতে পাওয়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আমাশয় কমাতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র ) । তাই, আমাশয় এবং ডায়রিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসায় হরিতকি ব্যবহার করা যেতে পারে ।
নোট – গর্ভবতী মহিলা, রোগা, দুর্বল এবং বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হরিতকি ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
4. মেথি বীজ
উপাদান:
- এক চা চামচ মেথি বীজ
- এক গ্লাস বাটারমিল্ক
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- প্রথমে মেথি বীজ বা দানা ভালো করে পিষে গুড়ো করে নিন ।
- তারপর তা এক গ্লাস বাটারমিল্কের সাথে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন ।
- আমাশয় উপশম না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ২ বার এই মিশ্রণ পান করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
আমাশয় রোগের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মেথির বীজ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে । NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ ভারতে আমাশয় রোগের চিকিৎসায় মেথির বীজ ব্যবহার করা হয়, যা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে । মেথির বীজে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট আমাশয় থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে ( তথ্যসূত্র )।
আরও পড়ুনঃ পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
5. লেবু
উপাদান:
- অর্ধেক লেবু
- এক গ্লাস পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- পানি সামান্য গরম করে, এর মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন ।
- আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই লেবু পানি পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
আমাশয়ের ঘরোয়া চিকিৎসায় লেবু কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । একটি গবেষণায় জানা গেছে যে লেবু, ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে । লেবুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আমাশয় রোগ কমাতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র )।
6. আপেল সিডার ভিনেগার
উপাদান:
- এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- এক গ্লাস হালকা গরম পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- প্রথমে পানি সামান্য গরম করে নিন ।
- তারপর সেই পানির সাথে ১ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পান করুন ।
- আমাশয়ের সমস্যা ভাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক থেকে দুইবার এই মিশ্রণ পান করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে । মুলত, এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব, ব্যাকটেরিয়াকে দূরে রাখতে এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )। আমরা আগেই জেনেছি যে, আমাশয় রোগের অন্যতম কারণ হল ব্যাকটেরিয়া । তাই বলা যেতে পারে যে, আপেল সিডার ভিনেগার আমাশয়ের চিকিৎসায় কার্যকর ।
7. কালো চা
উপাদান:
- 1/4 চা চামচ কালো চা পাতা
- এক কাপ পানি
- 2 থেকে 4 ফোঁটা লেবুর রস (ঐচ্ছিক)
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- চা পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন।
- তারপর স্বাদের জন্য এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন ।
- আপনি প্রতিদিন দু থেকে ৩ বার এইভাবে চা পান করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
একটি গবেষণা অনুসারে, কালো চা, আমাশয়ের সমস্যা কমাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । প্রকৃতপক্ষে, ব্ল্যাক টি তে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপটিক এবং ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রামক আমাশয়ের চিকিৎসায় কার্যকর ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )।
8. কাঁচা কলা
উপাদান:
- একটি কাঁচা কলা
- আধা কাপ বাটার মিল্ক
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি কাঁচা কলার খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে, ভাল করে চটকিয়ে নিয়ে বাটার মিল্কের সাথে মিশিয়ে নিন ।
- তারপর এই মিশ্রণটি সেবন করুন ।
- আমাশয়ের সমস্যা থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিন একবার করে সেবন করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
কাঁচা কলা আমাশয়ের ক্ষেত্রে উপকারী ভুমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কলা, ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ভুমিকা পালন করে । কলাতে থাকা অদ্রবনীয় ফাইবার, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উভয় ক্ষেত্রেই উপকারী ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )।
9. ক্যামোমাইল চা
উপাদান:
- ১ চা চামচ শুকনো ক্যামোমাইল ফুল
- ১ কাপ পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- শুকনো ক্যামোমাইল ফুল পানিতে ফুটিয়ে নিন ।
- এভাবে প্রায় ১০ মিনিট সিদ্ধ করার পরে, এটি ফিল্টার করুন এবং পান করুন ।
- স্বাদের জন্য এতে সামান্য মধুও যোগ করা যেতে পারে ।
- সমস্যা থাকাকালীন সময়ে দুই থেকে তিনবার এই চা পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ক্যামোমাইল নির্যাস আমাশয়ের পাশাপাশি অনেক ধরনের পেটের সমস্যায় উপকারী ভুমিকা পালন করে, যেমন ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং বদহজম ( তথ্যসূত্র )। এছাড়াও অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যামোমাইল এর অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক (পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ), অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ডায়ারিয়াল (প্রতিরোধকারী) বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য মিলিত হয়ে আমাশয়ের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
10. গাজর
উপাদান:
- দুটি মাঝারি আকারের গাজর
- একটি ছোট বিটরুট
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- উভয় উপাদান খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন।
- এরপর জুসারের মধ্যে দিয়ে গাজর ও বিটরুটের রস বের করে নিয়ে পান করুন ।
- সমস্যা থাকাকালীন সময়ে দিনে একবার করে এই জুস পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
আমাশয় রোগে গাজর খেলে উপকার পাওয়া যায় । একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিটরুটের সাথে গাজর খাওয়া ডায়রিয়া উপশম করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । গাজরের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমাশয় প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্য )।
11. বেলের শরবত
উপাদান:
- একটি পাকা বেল
- পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- প্রথমে একটি পাকা বেলের মধ্যে থেকে পাল্প বের করে পানির সাথে ভাল করে মিশিয়ে শরবত তৈরী করুন ।
- তারপর বেলের শরবত সেবন করুন ।
এটা কিভাবে উপকারী?
বেল ফলটি ডায়রিয়া এবং আমাশয় উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ।
আমাশয়ের জন্য কিছু টিপস
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, কারণ হাইড্রেটেড থাকা হল আমাশয়ের চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ ।
- আপনি পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন বা লেবু চায়ের সাথে পুদিনা পাতা যোগ করে খেতে পারেন । এটি পেটের সংক্রমণের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে ।
- কুসুম গরম পানির সাথে শুকনো আদা গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন ।
- বাটারমিল্কের সাথে জিরা বা শুকনো আদা মিশিয়েও খেতে পারেন ।
- খাবার রান্না করার সময় জায়ফল ব্যবহার করতে পারেন ।
আমাশয় চিকিৎসা
আমাশয় এবং ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করেছে । এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, সেফট্রিয়াক্সোন এবং পিভমেসিলিনাম । এই ওষুধগুলি আমাশয়ের ব্যাকটেরিওলজিক্যাল লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসুত্র )। তবে যে কোন ওষুধ গ্রহনের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন ।
আমাশয় প্রতিরোধের উপায় – আমাশয় প্রতিরোধের টিপস
নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করে আমাশয় প্রতিরোধ করা যেতে পারে-
- সবসময় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করুন ।
- খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন ।
- আপনার চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখুন ।
- বাইরে থেকে আসার পর ভালো করে হাত-পা ধুয়ে পরিষ্কার করুন ।
- নোংরা পরিবেশে বা জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন ।
- মাঝে মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা করান ।
- স্বাস্থ্য সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকুন ।
- বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবেন না ।
শেষ কথা
আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, আমাশয় মূলত কী ধরনের সমস্যা । সেই সাথে এই সমস্যা প্রতিরোধ এবং এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তাও ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছি । আমাশয় থেকে দূরে থাকতে আপনাকে অবশ্যই নিবন্ধে উল্লিখিত সতর্কতাগুলি অনুসরণ করতে হবে । এছাড়াও আমাশয় চিকিৎসার জন্য, আর্টিকেলে উল্লিখিত আমাশয়ের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো আপনাদের সাহায্য করতে পারে । তবে আমাশয়ের সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
আমাশয় কি সংক্রামক বা আমাশয় কি ছোঁয়াচে রোগ ?
হ্যাঁ, আমরা আগেই বলেছি যে, আমাশয় ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী থেকে সৃষ্ট হয় । এই ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী, দূষিত মলের মাধ্যমে এবং সংক্রামিত ব্যক্তির মাধ্যমে একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে ( তথ্যসূত্র )।
আমাশয় কি মৃত্যু ঘটাতে পারে?
হ্যাঁ, সঠিক চিকিৎসার অভাব এবং আমাশয়ের গুরুতর অবস্থা, আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হতে পারে ( তথ্যসূত্র )। তাই লক্ষনগুলো দেখতে পেলে ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করার পাশাপাশি একজন চিকিৎসকের কাজে যাওয়া উচত ।
ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?
ডায়রিয়ায় মল পানির মতো বের হয় এবং আমাশয়ের ক্ষেত্রে পাতলা মলের সাথে রক্ত বের হয় ( তথ্যসূত্র )।
আমাশয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কী খাওয়া উচিত নয়?
চিকিৎসকদের মতে, আমাশয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত খাবারগুলি খাওয়া উচিত নয় –
- দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া উচিত নয় । দুগ্ধজাত দ্রব্যের মধ্যে শুধুমাত্র বাটারমিল্ক এবং ভালভাবে ফেটানো দই খাওয়া যেতে পারে ।
- মিষ্টি
- মশলা জাতীয় খাবার
- আচার
- ভাজা খাবার
- ঠান্ডা পানি
- হিমায়িত খাদ্য