ঋতুস্রাব, পিরিয়ড বা মাসিক যাই বলা হোক না কেন, এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সব মহিলাকেই যেতে হয় । সেই সাথে পিরিয়ডের সময় ব্যথার সমস্যাও খুব সাধারণ বলে মনে করা হয় । এমন অবস্থায়, অনেক মহিলা এই ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে । এমন পরিস্থিতিতে, আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, যা কার্যকরী এবং সেইসাথে নিরাপদও । এছাড়াও মাসিকের সময় পেটে ব্যথার কারণ, চিকিৎসার পরামর্শসহ, এর উপসর্গ সম্পর্কেও আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব ।
Table of Contents
পিরিয়ডের সময় ব্যথা – পিরিয়ড পেইন – মাসিকের ব্যথা
পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়ার কারণ জানার আগে, পিরিয়ডের সময় ব্যথা কী তা জানা জরুরি । আসলে, ডাক্তারদের ভাষায়, পিরিয়ডের সময় ব্যথার সমস্যাকে ডিসমেনোরিয়া বলা হয় ( তথ্যসূত্র )। এটি ডিসমেনোরিয়া প্রধানত ২ প্রকার । যার মধ্যে প্রথমটি হল প্রাইমারী বা প্রাথমিক ডিসমেনোরিয়া এবং দ্বিতীয়টি হল সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া ।
এই উভয় ধরনের ব্যথার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে । মাসিকের সময়, কিছু মহিলা পিঠে ব্যথা, পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প অনুভব করতে শুরু করে । এই সমস্যা হওয়ার পিছনে নিম্নলিখিত কিছু কারণ থাকতে পারে, যা আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়
পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত পেটে, কোমরে এবং ঊরুতে হয়ে থাকে । কখনো কখনো পেটের ব্যথা কিছু সময় পরপর প্রচণ্ডভাবে কামড়ে ধরে । ব্যথা একেক বার পিরিয়ডের সময়ে একেক রকম হতে পারে । অর্থাৎ কোনো কোনো মাসে হয়তো সামান্য অস্বস্তির ব্যথা অনুভব হয়, আবার কোন কোন মাসে একেবারেই কোনো ব্যথা হয় না । আবার কিছু কিছু সময় প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হতে পারে । এই ব্যথা সাধারনত মাসিক শুরু হওয়ার সময়েই শুরু হয় । তবে কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এই ব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং তা মাসিক চলাকালীন স্থায়ী থাকে । পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।
আরও পড়ুনঃ নাক থেকে ব্ল্যাকহেডস দূর করার উপায়
পিরিয়ড ব্যথার কারণ – পিরিয়ডের সময় ব্যথা কেন হয়
আরটিকেলের এই পর্যায়ে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব মাসিকের সময় ব্যাথা কেন হয় । আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে মাসিকের সময়ের ব্যথা ২ ভাগে বিভক্ত, প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া । এখানে আমরা এর উপর ভিত্তি করেই মাসিকের সময় ব্যথা হওয়ার কারণ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব –
প্রাথমিক ডিসমেনোরিয়া – মাসিকের সময় এই ধরণের ব্যথা সাধারণত শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের আধিক্যের কারণে হয়ে থাকে । প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন হল জরায়ু থেকে উৎপাদিত একটি রাসায়নিক যৌগ, যা একটি হরমোনের মতো কাজ করে । এটি জরায়ুর পেশীতে সংকোচন বাড়ায়, যার ফলে ক্র্যাম্প হতে পারে । এই ধরনের ব্যথা পিরিয়ডের ১ বা ২ দিন আগে থেকে শুরু হয় এবং তা পরবর্তী কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে । আবার কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে । এই ধরনের ব্যথার সমস্যা সাধারণত ঋতুস্রাবের প্রাথমিক পর্যায়ে হয় । এরপর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ধরণের ব্যথা কমে যায় । অনেক সময় সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এই ব্যথা সম্পূর্ণভাবে সেরে যায় ।
সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া – এই ধরনের ব্যথা সাধারণত জরায়ু বা অন্যান্য প্রজনন অঙ্গগুলির সাথে সম্পর্কিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে । উদাহরণস্বরূপ, এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড (Fibroid), পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (Pelvic Inflammatory Disease), এডেনোমায়োসিস (Adenomyosis) । এই ধরনের ব্যথা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সময়ের সাথে কমে যায় ।
- এন্ডোমেট্রিয়োসিস (Endometriosis): এই রোগে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে । মাসিকের সময়ে জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত এসব টিস্যু খসে যাওয়ার কারণে তীব্র ব্যথা হতে পারে । ব্যথার সাথে সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে পারে ।
- ফাইব্রয়েড (Fibroid): এগুলো জরায়ুর পেশির স্তর থেকে জেগে ওঠা এক ধরনের টিউমার যা জরায়ুর ভেতরে অথবা এর চারপাশে সৃষ্টি হয় । এ ধরনের টিউমার সাধারণত ক্যান্সারে রূপ নেয় না । ফাইব্রয়েডের কারণে পিরিয়ডের সময়ে পেটে ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে ।
- পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (Pelvic Inflammatory Disease): Pelvic Inflammatory Disease হল স্ত্রী-প্রজননতন্ত্রের একটি রোগ । জরায়ু, ডিম্বনালী ও ডিম্বাশয়ে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে । এর ফলে এসব অঙ্গে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় ।
- এডেনোমায়োসিস (Adenomyosis): এই রোগে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণের মতো কিছু টিস্যু জরায়ুর প্রাচীরেও জেগে ওঠে । মাসিকের সময়ে জরায়ুর সাথে সাথে জরায়ুর প্রাচীরে গড়ে ওঠা এসব কোষ থেকেও রক্তক্ষরণ হয় । কিন্তু এই রক্ত বাইরে বের হয়ে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না । যার ফলে মাসিকের সময়ে পেটে ব্যথা হয় এবং সেই সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হতে পারে ।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
মাসিকের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল –
হিটিং প্যাড – হিটিং প্যাড অর্থাৎ গরম পানি ভর্তি ব্যাগ । গরম পানি ভর্তি একটি হিটিং প্যাড বা গরম পানি ভর্তি ব্যাগ সেটিকে পেটের নিচের অংশে বা কোমরের নিচে ১০ মিনিট ১০ মিনিট করে রেখে দিন । এছাড়াও, আপনি চাইলে একটি পরিষ্কার কাপড় হালকা গরম জলে ভিজিয়ে ভালো করে চিপে নিয়ে পেট ও কোমরের উপরে রাখতে পারেন । এই কাজটি দিনে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন । হিটিং প্যাড মাসিকের ব্যথা উপশম করতে খুব ভাল কাজ করে । গবেষণায় দেখা গেছে যে হিটিং প্যাডের মাধ্যমে মাসিকের ব্যথা, ক্র্যাম্প কমানো সম্ভব ।
গ্রিন টি – পানির মধ্যে গ্রিন টি পাতা দিয়ে পানি ভাল করে ফুটিয়ে নিন । কিছুক্ষন ফুটিয়ে নিয়ে পানি ফিল্টার করুন । আপনি চাইলে গ্রিন টি ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন । এরপর এর সাথে স্বাদ অনুযায়ী মধু বা চিনি মিশিয়ে পান করুন । এটি মাসিকের সময় দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন । গ্রিন টি এর মধ্যে ব্যথানাশক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটি জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা সম্পর্কিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম । তাই বিশ্বাস করা হয় যে, গ্রিন টি খাওয়া মাসিকের ক্র্যাম্প এবং ব্যথা কমাতে উপকারী হতে পারে ।
আদা – এক টুকরো আদা ১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন । তারপর সেই পানি কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা করে এতে মধু মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন । মাসিকের সময় ব্যথা বেশি হলে দিনে ২ থেকে ৩ বার এভাবে পান করতে পারেন । পিরিয়ডের সময় পেট ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে আদা একটি ভালো এবং কার্যকরী অপশন । আদাতে উপস্থিত অ্যানালজেসিক প্রভাব পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । এই কারণেই পিরিয়ডের সময় ব্যথা নিরাময়ে আদা ব্যবহার উপকারী হতে পারে ।
তুলসী পাতা – এক গ্লাস পানিতে ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । পানি ভালোভাবে ফুটে ওঠার পর তা ছেঁকে নিয়ে তাতে কিছুটা মধু মিশিয়ে পান করুন । পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দিনে দুই থেকে তিনবার এভাবে তুলসী পাতার পানি পান করতে পারেন । মাসিকের পেট ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে তুলসি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে । তুলসীর উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে তুলসী পাতার মধ্যে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ব্যথা উপশম বা দূর করার ক্ষমতা । এই ভিত্তিতে বলা যায় যে, তুলসি পাতা পিরিয়ডের সময় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে ।
মেথি – রাতে ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ মেথির বীজ ভিজিয়ে রাখুন । এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে পান করুন । মাসিকের সমস্যা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করে মাসিক চলাকালীন প্রতিদিন সকালে এই পানি পান করুন । মাসিকের সময় পেটের ব্যথা মেথির মাধ্যমে কমিয়ে রাখা যায় । মেথির ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্যের কারণে তা পিরিয়ড ক্র্যাম্প কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এছাড়াও মেথি মাসিকের সময় হওয়া আরও কিছু সমস্যা যেমন- ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো কমাতেও সাহায্য করে ।
শিলা লবণ বা রক সল্ট – গোসল করার সময় এক বালতি হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে কিছুটা শিলা লবন যোগ করুন । এরপর সেই পানি দিয়ে ভাল করে সময় নিয়ে গোসল করুন । পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২ থেকে ৩ দিন আগে থেকে শুরু করে মাসিক চলাকালীন সময় পর্যন্ত এই পানি দিয়ে প্রতিদিন গোসল করুন । শিলা লবণ বা রক সল্ট ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নামেও পরিচিত । এইভাবে গোসল করার ফলে শিলা লবণ ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়, এবং এটি মাসিকের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে কারণ এর ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এমতাবস্থায় মাসিকের সময় পেট ব্যথার প্রতিকার হিসেবে শিলা লবন ব্যবহার করা যেতে পারে ।
পেঁপে – মাসিকের সময়ে প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেতে পারেন । বাজারে সব সময় পাকা পেঁপে না পেলে কাঁচা পেঁপে খান । পেঁপে আপনি এমনিতেই প্রতিদিন খেতে পারেন, তবে পিরিয়ডের সময় অবশ্যই পেঁপে খাওয়ার চেষ্টা করুন । অনেক সময় মাসিকের সময় সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত না হলে পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং শুরু হতে পারে । এমন অবস্থায়, পেঁপে খেলে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং যার ফলে ব্যথা কমে যায় । এছাড়াও, পেঁপেতে উপস্থিত ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান মাসিকের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি শরীরের পুস্টির ঘাটতি পূরণ করে মাসিকের অন্যান্য উপসর্গগুলো কমাতে সাহায্য করে ।
লেবুর রস – এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে অর্ধেক লেবুর রস এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন । পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য যে সব খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয় তার মধ্যে লেবু অন্যতম । কখনও কখনও ডাক্তাররা মাসিকের ব্যথা কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন । আর লেবুর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে । । এই কারণে বলে যেতে পারে যে, পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে লেবুর রস উপকারী হতে পারে ।
অ্যালোভেরার জুস – ১ গ্লাস পানির সাথে অ্যালোভেরা জেল এবং চিনি মিশিয়ে জুস তৈরি করে পান করুন । মাসিক শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে মাসিক চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন একবার করে অ্যালোভেরার জুস পান করুন । পিরিয়ডের ব্যথা নিরাময়ে অ্যালোভেরার জুস খুব ভাল কাজ করে । অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় কোমর বা পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । আমরা আগেই বলেছি ডাক্তাররা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন । তাই বলা যায় অ্যালোভেরার জুস পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সক্ষম ।
ফুট ম্যাসেজ – অনেক সময় পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানোর জন্য ম্যাসাজ খুব ভাল কাজ করে । পায়ে আকুপ্রেসার পয়েন্ট রয়েছে, যা পিরিয়ড ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করতে পারে । এই আকুপ্রেসার পয়েন্টটি গোড়ালির হাড়ের উপরে অবস্থিত । যদি এই বিন্দুটি আঙুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করা হয়, তাহলে পিরিয়ড ক্র্যাম্পের মতো সমস্যা এবং এগুলোর উপসর্গ যেমন অনিদ্রা এবং মাথা ঘোরা ইত্যাদি থেকে আরাম পাওয়া যায় । এই ধরনের পায়ের ম্যাসেজকে বলা হয় রিফ্লেক্সোলজি ( তথ্যসুত্র ) ।
দারুচিনি – দেড় গ্লাস পানিতে হাফ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে সেই পানি ভাল করে ফুটিয়ে নিন । তারপর এই পানিতে স্বাদ অনুযায়ী মধু মিশিয়ে পান করুন । আপনি চাইলে দারুচিনির গুঁড়ার পরিবর্তে আস্ত দারুচিনিও ইউজ করতে পারেন । এছাড়াও মাসিক অনিয়মিত হলে গরম দুধের সাথে দারুচিনি মিশিয়ে পান করলে মাসিক স্বাভাবিক হয় । মাসিকের সময় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে দারুচিনি অন্যতম একটি ঘরোয়া প্রতিকার । গবেষণা অনুসারে, দারুচিনির প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানোর পাশাপাশি রক্তপাত কমাতেও সাহায্য করে । তবে আপনার যদি দারুচিনির পানি পান করতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি এটি সবজি রান্না করার সময় ইউজ করতে পারেন ।
ল্যাভেন্ডার তেল – ২ চামচ নারকেল তেলের সাথে ৩ ফোটা ল্যাভেন্ডার তেল ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি তলপেটে এবং পিঠে লাগান । মাসিকের সময় এটি দিনে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে । ল্যাভেন্ডার অয়েলে বেদনানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার কারণে এটি মাসিকের ব্যাথা কমাতে বেশ কার্যকর । গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডার অয়েলের ব্যবহার, পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অ্যারোমাথেরাপি হিসাবে কার্যকর হতে পারে ।
পুদিনার তেল – ২ চামচ নারকেল তেলের সাথে ৩ থেকে ৪ ফোটা পুদিনার তেল ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি তলপেটে এবং কোমরে লাগান । পিপারমিন্ট অয়েল বা পুদিনার তেলে মেন্থল থাকে । এটি পিরিয়ডের ব্যথা উপশমের জন্য ম্যাসেজের সময় ব্যবহার করা যেতে পারে ।
ভিটামিন ডি – আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন । আপনি চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও গ্রহন করতে পারেন । ভিটামিন ডি এমন একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, যা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন হরমোনের উৎপাদন কমাতে পারে । এই হরমোনের উচ্চ মাত্রার কারণে পিরিয়ডের সময় ক্র্যাম্প হতে পারে । এই হিসেবে বলা যায়, ভিটামিন-ডি গ্রহণ মাসিকের সময় ব্যথা এবং ক্র্যাম্প কমাতে পারে । আপনি যদি ভিটামিন-ডি ওষুধ না খেতে চান, তাহলে আপনি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন যেমন মাছ, পনির, ডিমের কুসুম এবং কমলার রস ইত্যাদি ।
আরও পড়ুনঃ ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়
মাসিকের সময় ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা, পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করা বেশি উপযুক্ত । সেই সঙ্গে মাসিকের সময় যদি অল্প কিছু বিষয়ের দিকে যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে তা মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে । তাহলে চলুন পিরিয়ডের সময় ব্যথা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক –
- মাসিক, গর্ভাবস্থা, স্তন্যদানকারী মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয় । এই সময়গুলোতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা উচিত ( তথ্যসূত্র )। অনেক সময় সঠিক খাবার না খাওয়ার কারণে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না । এছাড়াও মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শরীর থেকে পুষ্টি বের হয়ে যায় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা পিরিয়ডের সময় ব্যথার কারণ হতে পারে । তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি খাওয়া নিশ্চিত করুন ।
- শাকসবজি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল খান, ফল খেতে ভালো না লাগলে ফলের জুস তৈরি করে পান করুন ।
- পিরিয়ডের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন ।
- এছাড়াও প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় কিছু সময় হাঁটতে পারেন ।
- মাসিকের সময় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, ব্যথা বা ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে । তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা বা টেনশন না করার চেষ্টা করুন ।
- মদ্যপান বা ধূমপান করবেন না ।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে যত্ন নিন এবং কয়েক ঘণ্টা পর পর প্যাড চেঞ্জ করুন ।
- গরম পানি পান করলে মাসিকের সময় ব্যথা কিছুটা উপশম হয় ।
- জাঙ্ক ফুড যেমন ভাজা, মশলাদার বা বহিরাগত খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন ।
- হালকা ম্যাসাজ করুন ।
- অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না ।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
মাসিকের সময় পেটে ব্যথা খুব সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু কখনও কখনও এটি উপেক্ষা করলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে । এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, মাসিকের সময় পিঠে ব্যথা বা মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হলে কখন ডাক্তার দেখানো উচিত । নীচে আমরা আপনাকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি –
- ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করার পরেও যদি ব্যথা না কমে, তবে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত ।
- পিরিয়ড যদি অন্য সময়ের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
- যদি পিরিয়ড সঠিক সময়ে না হয় অথবা ১ বা ২ মাস পরে পরে হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান ।
- পিরিয়ডের সময় যদি জ্বর আসে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।
শেষ কথা
আজকাল পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া প্রায় প্রতিটি মহিলার সমস্যা, তবে উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে মাসিকের সময় ব্যথা অনেকাংশে কমানো সম্ভব । এছাড়াও মাসিকের সময় ব্যথার প্রতিকারগুলো অবলম্বন করার পাশাপাশি সঠিক ডায়েট এবং সঠিক রুটিন মেনে চললে মাসিকের দিনগুলো আপনার জন্য আরামদায়ক হতে পারে । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান । ধন্যবাদ