বারবার পেটে ব্যথা, ক্ষুধা না লাগা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার মতো সমস্যা থাকলে সতর্ক হতে হবে, কারণ পেট সংক্রান্ত এ ধরনের সমস্যা, পেটে কৃমি থাকার কারণে হতে পারে । কখনও কখনও এই সমস্যা বেশ গুরুতর আকার ধারন করতে পারে । এমন পরিস্থিতিতে, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসতে পারে । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, পেটের কৃমির লক্ষন এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব ।
Table of Contents
কৃমি কত প্রকার
পেটের কৃমি প্রধানত তিন প্রকার –
- রাউন্ডওয়ার্ম
- হুইপওয়ার্ম
- হুকওয়ার্ম
কৃমি কেন হয় – কৃমি হওয়ার কারণ
পেটের কৃমি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে । পেটে কৃমি হওয়ার কিছু কারণ নিচে দেওয়া হল –
- দূষিত পানি পান করা
- অপরিচ্ছন্ন থাকা
- কম রান্না করা মাংস
- দূষিত মাটি, পানি বা মলের সংস্পর্শে আসা
- পায়খানায় যাওয়ার সময় স্যান্ডেল ব্যবহার না করা
কৃমি কেন হয়, এই বিষয় জানার পর এবার আসি পেটের কৃমির লক্ষণ সম্পর্কে ।
অন্ত্রের কৃমির লক্ষণ
পেটে কৃমি বাড়তে শুরু করলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে, যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় উপসর্গ বলি । কৃমি হওয়ার লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হল –
- ডায়রিয়া
- পেট ব্যথা
- গ্যাসের সমস্যা
- বমি বমি ভাব
- পানিশূন্যতা
- ওজন কমে যাওয়া
- শ্লেষ্মার মধ্যে রক্ত
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট অনুভব করা
- অল্প জ্বর
- মলের মধ্যে কৃমি নির্গমন
- শ্বাসকষ্ট
- চামড়া ফুসকুড়ি
পেটের কৃমি হওয়ার কারণ এবং লক্ষন জানার পর, এবার কৃমির দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ।
আরও পড়ুনঃ পাইলস কি ? পাইলস এর লক্ষণ, কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় – কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়
পেটের কৃমি দূর করতে, পেটের কৃমির ঘরোয়া প্রতিকারগুলো প্রাথমিক অবস্থায় গ্রহণ করা যেতে পারে । তবে সমস্যা গুরুতর হলে পেটের কৃমির চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । পেটের কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল –
আপেল সিডার ভিনেগার
উপাদান:
- এক কাপ পানি
- ১ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- ১ টি ছোট লেবু
- মধু (ঐচ্ছিক)
ব্যবহারবিধি:
- পানির সাথে আপেল সিডার ভিনেগার যোগ করুন ।
- এবার লেবুর রস এই মিশ্রনের সাথে মিশিয়ে পান করুন ।
- স্বাদের জন্য এতে অল্প পরিমাণে মধুও যোগ করা যেতে পারে ।
- আপনি এটি দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেট থেকে কৃমি দূর করতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্থেলমিন্টিক প্রভাব রয়েছে, যা পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )।এছাড়াও, আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা শরীরের অনেক ধরণের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে এবং সেইসাথে তাদের বৃদ্ধি রোধ করতেও সহায়তা করে ( তথ্যসূত্র )। এমন পরিস্থিতিতে, এটা চলা যেতে পারে যে, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, পেটে উপস্থিত কৃমি দূর করতে সহায়তা করতে পারে ।
রসুন
উপাদান :
- রসুনের 2-3 কোয়া
ব্যবহারবিধি:
- প্রতিদিন খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন চিবিয়ে খান । যদি কাঁচা রসুন খেতে সমস্যা হয়, তাহলে রসুন বেক করে ব্যবহার করতে পারেন ।
- যদি বেক করে খান তাহলে ২-৩ কোয়ার পরিবর্তে ৬ কোয়া রসুন খান
- মূলত রসুনের পেটের কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বেক করার পর প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়, তাই ৬ কোয়া রসুন খান ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমি দূর করতে রসুন খুব ভাল কাজ করে । NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব রয়েছে, যা পেটের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে ।
লবঙ্গ
উপাদান :
- ২-৩ টি লবঙ্গ
- ১ কাপ পানি
- স্বাদমত মধু
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ পানিতে দুই থেকে তিনটি লবঙ্গ দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন ।
- ৫ মিনিট ফুটানোর পর পানি ছেকে নিন ।
- পানি কিছুটা ঠান্ডা হয়ে গেলে এতে স্বাদমতো একটু মধু যোগ করুন।
- এবার ধীরে ধীরে চায়ের মত করে পান করুন ।
- সপ্তাহে তিন থেকে চারবার এই মিশ্রন পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমি নিরাময়ের জন্য লবঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে । লবঙ্গে ইউজেনল নামক একটি যৌগ রয়েছে যা পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অত্যন্ত কার্যকর । এছাড়াও মধু নিয়ে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মধুতেও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কৃমি দূর করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এর ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে, লবঙ্গের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে পেটের কৃমির উপসর্গ কমে যায় ।
হলুদ
উপাদান :
- হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
- ১ গ্লাস উষ্ণ নারকেল দুধ
ব্যবহারবিধি:
- এক গ্লাস উষ্ণ নারকেল দুধে এক চা চামচ হলুদের গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন ।
- এরপর মিশ্রণটি পান করুন ।
- আপনি ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য প্রতিদিন 1 থেকে 2 বার এই মিশ্রন পান করতে পারেন।
এটা কিভাবে লাভজনক?
হলুদ যে শুধু ত্বকের জন্যই উপকারী তা কিন্তু নয় । ত্বকের পাশাপাশি হলুদ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে উপকারী ।পেটের কৃমি থেকে মুক্তি পেতে হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে । মূলত, হলুদের পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে ( তথ্যসূত্র ) । এছাড়াও, হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক একটি যৌগ, যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ, যা অনেক ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে ( তথ্যসূত্র )। এমন পরিস্থিতিতে এটা বললে ভুল হবে না যে, হলুদ পেটের কৃমি দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কার্যকরী হতে পারে ।
পেঁপে
উপাদান :
- ১ টেবিল চামচ পেঁপের বীজ
- ১ কাপ পেঁপে
- ১ কাপ নারকেল দুধ
ব্যবহারবিধি:
- একটি ব্লেন্ডারে সব উপকরণ নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন ।
- এবার এই মিশ্রণটি তিন দিন পর পর একবার সেবন করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে পেঁপে ব্যবহার করা যেতে পারে । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেঁপের বীজে অ্যানথেলমিন্টিক এবং অ্যান্টি-অ্যামিবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্ত্রের কৃমি দূর করতে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসূত্র )। এর ভিত্তিতে, বলা যেতে পারে যে, পেঁপে সেবনে পেটের কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
আদা
উপাদান :
- ১-২ চা চামচ আদা বাটা
- ১ কাপ পানি
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ পানিতে আদার পেস্ট দিয়ে ৫ মিনিট ধরে ভাল করে ফুটিয়ে নিন ।
- এবার মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে চায়ের মতো করে পান করুন ।
- এই মিশ্রণটি দিনে ২ থেকে ৩ বার পান করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমির সমস্যা দূর করতে আদার ব্যবহার উপকারী হতে পারে । এই সম্পর্কিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদার অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক প্রভাব রয়েছে যা পেটের কৃমি ধ্বংস করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )। এছাড়াও, অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদার মধ্যে থাকা কোলিনার্জিক যৌগ, অ্যান্থেলমিন্টিক প্রভাব প্রদর্শন করে, যা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র )।
নিম
উপাদান :
- ৮-১০ টি নিম পাতা
- প্রয়োজন মত পানি
ব্যবহারবিধি:
- নিম পাতা ভালো করে পিষে নিন ।
- আধা চা চামচ নিম পাতার পেস্ট এক গ্লাস পানি ও মধুর সাথে মিশিয়ে খালি পেটে খান ।
- তিন সপ্তাহ বা পেটের কৃমি দূর না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত এটি সেবন করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমির সমস্যা নিরাময়ের জন্য নিম পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে । প্রকৃতপক্ষে, নিম পাতায় অ্যানথেলমিন্টিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কৃমির বিকাশ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে । এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে এই তথ্য জানা যায় ।
এছাড়াও, অন্য একটি গবেষণায়, অন্ত্রের এক ধরনের রাউন্ডওয়ার্ম অর্থাৎ নিমাটোড থেকে রক্ষা করতেও নিম পাতা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে ( তথ্যসূত্র )। এমন পরিস্থিতিতে নিম পাতার রস খাওয়া পেটের কৃমির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে ।
দারুচিনি গুঁড়া
উপাদান :
- এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া
- ১ গ্লাস গরম পানি
- মধু (ঐচ্ছিক)
ব্যবহারবিধি:
- এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিন ।
- এরপর এই মিশ্রণটি পান করুন ।
- এটি কয়েক দিনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার পান করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পেটের কৃমির সমস্যায়ও দারুচিনি কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । প্রকৃতপক্ষে, এটিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-পরজীবী বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই বৈশিষ্ট্যগুলি পেটে উপস্থিত কৃমি দূর করতে সহায়তা করে ।
ভিটামিন-সি
উপাদান :
- 2000 মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট
ব্যবহারবিধি:
- 2000 মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি দুই থেকে তিন মাত্রায় নিতে হবে।
- এটি নিয়মিত কয়েকদিন ধরে সেবন করতে হবে ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
ভিটামিন-সি আমাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।এছাড়াও, এটি পেটের কৃমি মেরে ফেলার ক্ষমতাও রাখে ( তথ্যসূত্র )। পেটে কৃমির উপস্থিতির কারণে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । তবে ভিটামিন সি বেশি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে । অতএব, এটি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল ।
অ্যালোভেরা
উপাদান :
- ১ কাপ অ্যালোভেরার রস
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ অ্যালোভেরার জুস পান করুন ।
- প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ এই রস পান করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
অ্যালোভেরার জুস পেট থেকে বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত পদার্থের পাশাপাশি কৃমি দূর করতে সাহায্য করে । মূলত, অ্যালোভেরার অ্যান্থেলমিন্টিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কৃমি দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এই সম্পর্কিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার নির্যাস, কৃমি সহ এর ডিম এবং লার্ভা নির্মূল করতে সহায়ক হতে পারে ( তথ্যসূত্র )।
কুমড়োর বীজ
উপাদান :
- ১ কাপ কাঁচা কুমড়ার বীজ
- ১ কাপ নারকেল দুধ
- আধা কাপ পানি
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ কাঁচা কুমড়ার বীজ আধা কাপ পানি এবং ১ কাপ নারকেলের দুধ দিয়ে একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন ।
- এবার এই মিশ্রণটি খালি পেটে পান করুন ।
- সারাদিন নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন ।
- কৃমি চলে না যাওয়া পর্যন্ত বা কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত এটি প্রতিদিন পান করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
কুমড়োর বীজে কিউকারবিটাসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা পেটের ভেতরের কৃমি, বাহিরে বের করে দিতে সাহায্য করে ।কিউকারবিটাসিনের কারণেই কুমড়ার অ্যান্টি-পরজীবী এবং অ্যান্থেলমিন্টিক কার্যকলাপ প্রদর্শন করে, যা পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে ( তথ্যসূত্র )।
টি ট্রি ওয়েল
উপাদান :
- টি ট্রি ওয়েল ১০ থেকে ১২ ফোঁটা
- 30 মিলি নারকেল তেল
ব্যবহারবিধি:
- ৩০ মিলি নারকেল তেলে ১০ থেকে ১২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মেশান ।
- এবার এটি আপনার পেটে হালকা হাতে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন ।
- আপনি এটি সরাসরি আপনার মলদ্বারে প্রয়োগ করুন এবং সারারাত রেখে দিন ।
- আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে এই প্রক্রিয়াটি প্রতিদিন কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
টি ট্রি ওয়েল তার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রভাবের জন্য পরিচিত । আর এই কারণেই এটি পেটে উপস্থিত কৃমিগুলির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে । সেই সাথে, এটিতে অ্যান্টি-পরজীবী বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা কৃমি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসুত্র ) ।
ক্যাস্টর অয়েল
উপাদান :
- ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল
- ১ কাপ গরম পানি
ব্যবহারবিধি:
- এক কাপ হালকা গরম পানিতে ক্যাস্টর অয়েল ভালোভাবে মেশান ।
- এরপর এই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে পান করুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
পেটের কৃমির সমস্যা দূর করতে ক্যাস্টর অয়েল ইউজ করা যেতে পারে । একটি গবেষণা অনুসারে, ক্যাস্টর অয়েলের ফিলারিসাইডাল প্রভাব রয়েছে, যা অন্ত্রের কৃমির বৃদ্ধি রোধ করতে এবং কৃমি থেকে পরিত্রাণ পেতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র ) ।
এছাড়াও এই তেলের রেচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মল সহ পেট থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং বিভিন্ন ধরনের পরজীবী বের করে দিতে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসূত্র )।
নোট: ক্যাস্টর অয়েল খাওয়া যেতে পারে, তবে আমরা পরামর্শ দেব যে, এটি গ্রহন করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
জলপাই পাতা নির্যাস
উপাদান :
- জলপাই পাতার নির্যাস প্রায় 180 মিলিগ্রাম ।
ব্যবহারবিধি:
- এই নির্যাসকে ৩ টি ভাগে ভাগ করুন ।
- এটি দিনে তিনবার পান করুন ।
- কৃমির সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত এটি খেতে থাকুন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
জলপাই পাতার নির্যাসে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডের কারণে এটি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে । একটি সমীক্ষা অনুসারে, জলপাই পাতার নির্যাস লিশম্যানিয়া পরজীবী এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে ।
আঙ্গুর বীজ নির্যাস
উপাদান :
- ৮ – ১২ ফোঁটা আঙ্গুরের বীজের নির্যাস
- ১ গ্লাস পানি
ব্যবহারবিধি:
- এক গ্লাস জলে কয়েক ফোঁটা আঙ্গুরের বীজের নির্যাস যোগ করুন ।
- এরপর ভালো করে মিশিয়ে পান করুন ।
- আপনি প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার এই মিশ্রনটি পান করতে পারেন ।
এটা কিভাবে লাভজনক?
আঙ্গুরের বীজের নির্যাসের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে । উপরন্তু, গবেষণা অনুসারে, আঙ্গুরের বীজের নির্যাস 800 টিরও বেশি ব্যাকটেরিয়া, 100টি ছত্রাক এবং অনেক পরজীবীর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে ( তথ্যসূত্র )। এছাড়াও, আঙ্গুরের বীজে অ্যান্থেলমিন্টিক কার্যকলাপও রয়েছে, যা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসূত্র )।
পেটের কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার পর, এখন জেনে নিন পেটের কৃমির সমস্যায় কী খাবেন আর কী খাবেন না।
অন্ত্রের কৃমির জন্য খাদ্য
পেটে থেকে কৃমি দূর করতে নিচের খাবারগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে –
- পেঁপে
- আনারস
- ডুমুর
- কিউই
- কুমড়া এবং কুমড়া বীজ
- ঝিঙ্গে
পেটে কৃমি হলে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, তা নিচে উল্লেখ করা হল । কৃমির সমস্যা থাকাকালীন নিচে উল্লেখিত খাবার খেলে কৃমির সমস্যা বাড়তে পারে ।
- আভাকাডো
- বাঁধাকপি
- গাজর
- টমেটো
- ক্যাপসিকাম
এছাড়াও, অল্প রান্না করা মাংস, মাছ, ডিম, পানিতে জন্মানো সবজি এবং সাধারণ শাকসবজি ভালোভাবে না ধুয়ে খাওয়া এড়িয়ে চলুন ( তথ্যসূত্র )।
অন্ত্রের কৃমির ঝুঁকি ও জটিলতা
পেটে কৃমির কারণে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে । নিচে কৃমির কয়েকটি ঝুঁকি ও জটিলতা দেওয়া হল –
- অ্যালার্জির সমস্যা ।
- যকৃতের নালীগুলির বাধা
- আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা
- পেটের সমস্যা
- অন্ত্রের রক্তপাত
- পানিশূন্যতা
- দ্রুত ওজন হ্রাস
- ডায়রিয়া সমস্যা
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো পেটের কৃমির চিকিৎসা সম্পর্কে ।
অন্ত্রের কৃমির চিকিৎসা
উপরে উল্লেখিত পেটের কৃমির ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করার পরও যদি সমস্যা না কমে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন । তাহলে আসুন জেনে নিই কিভাবে পেটের কৃমির চিকিৎসা করা হয় –
- পেটের কৃমির চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তার মল ও রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবেন যে, পেটে কৃমি রয়েছে কি না ।এছাড়াও, ডাক্তার এমআরআই বা এন্ডোস্কোপি/কোলোনোস্কোপি এবং অন্যান্য পরীক্ষারও সুপারিশ করতে পারেন ( তথ্যসূত্র ) ।
- এরপর চিকিৎসক যখন নিশ্চিত হবে যে, পেটে কৃমি আছে, তখন চিকিৎসক কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন ।এসব ওষুধ সেবনের ফলে পেটের কৃমি পঙ্গু হয়ে যাবে বা মারা যাবে । আবার অনেক সময় অন্ত্রের কৃমির কারণে কিছু অন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে । যদি এমন কোন সমস্যা পাওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী ওষুধ দেবেন । যদি সমস্যা অনেক বেশী গুরুতর হয়, তাহলে ডাক্তার অস্ত্রোপচারেরও সুপারিশ করতে পারেন ( তথ্যসূত্র )।
- যাদের পেটে গোলকৃমি থাকে, তাদের ৩ মাস চিকিৎসার পরে আবার কৃমির জন্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয় । এ সময় পেটে কৃমির ডিম বা লার্ভা আছে কিনা তা দেখা হয় । পরীক্ষা করার পর যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে আবার ওষুধ দেওয়া হয় ( তথ্যসূত্র )।
- সেই সঙ্গে পেটে যদি হুকওয়ার্ম থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দুই থেকে তিন দিন ওষুধ সেবন করতে হবে । তবে এই সব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে । এছাড়া যদি অন্ত্রের কৃমির কারণে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয় , তাহলে এই অবস্থায় চিকিৎসক আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন ।
শেষ কথা
পেটের কৃমি যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে । তাই আপনার আশেপাশের পরিবেশ এবং নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা একান্ত প্রয়োজন । এছাড়াো হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া এবং স্যান্ডেল পড়ে পায়খানায় যাওয়ার মতো অভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিলে এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় । কারণ আমরা সবাই জানি যে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম । সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও যদি পেটে কৃমি হয়ে থাকে, তাহলে আপনি এই আর্টিকেলে দেওয়া পেটের কৃমির ঘরোয়া প্রতিকার এবং পেটের কৃমির চিকিৎসা অবলম্বন করতে পারেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।