বাচ্চাদের মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করার খাদ্য তালিকা

আমাদের মস্তিষ্ক, শরীরের অন্যান্য অংশের মতো, আমরা যে খাবার খাই তা থেকে পুষ্টি গ্রহন বা শোষণ করে। অতএব, শিশুদের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ভাবে বিকশিত হতে পারে। সাধারণত ৫ (পাঁচ) বছর বয়সের ভেতরেই শিশুর মস্তিষ্কের (ব্রেইন) প্রায় সকল ধরনের গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই বিশেষ করে ৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত শিশুদের খাদ্যযত্নের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার আপনার শিশুর স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে। বাচ্চাদের মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করার জন্য যেসব খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেগুলো সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে খাদ্য তালিকা

ডিম

আপনার সন্তানের সকালের নাস্তার প্লেটে কার্বস, প্রোটিন এবং অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করা উচিত, যা তাদের সারা দিন শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করবে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং অতিরিক্ত বোনাস হিসাবে ডিমের কুসুমে কোলিন থাকে। যা স্মৃতিশক্তি বা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

তেল যুক্ত মাছ

তৈলাক্ত মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড, শরীরের মৌলিক কোষের বিল্ডিং ব্লকের অপরিহার্য উপাদান। স্যামন, ট্রাউট, সার্ডিন, ম্যাকেরেল, টাটকা টুনা এবং হেরিং ইত্যাদি মাছে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। আমাদের দেশের ইলিশ মাছের তেলেও ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে । এই ধরনের মাছ শিশুদের সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন খাওয়ানো উচিত। রিসার্চে দেখা গেছে, যে সকল বাচ্চারা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি গ্রহণ করে, তারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী হয়ে থাকে।

রঙিন সবজি

আজকাল বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজিতে কিছু রঙিন সবজিও দেখা যায়। এই সব রঙিন সবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা মস্তিষ্কের কোষকে সুস্থ রাখতে এবং তাদের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টমেটো, মিষ্টি আলু, পালং শাক, কুমড়া, গাজর, ক্যাপসিকাম এমন ধরনের সবজি যা আপনি আপনার শিশুর খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই রঙিন সবজি গুলো আপনার শিশুর মস্তিস্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে ।

আরও পড়ুনঃ সঠিক নিয়মে পানি পান করছেন তো?

দুধ, দই এবং পনির

দুধ, দই এবং পনির প্রোটিন এবং বি ভিটামিন সমৃদ্ধ। যা মস্তিষ্কের টিস্যু, নিউরোট্রান্সমিটার এবং এনজাইমের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এই সবই মস্তিষ্কের বিকাশ ও গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুধ, দই এবং পনির এই খাবার গুলোতে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও বেশি থাকে। যা আপনার শিশুর শক্তিশালী এবং সুস্থ দাঁত ও হাড়ের গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দইয়ের মতো দুগ্ধজাত পণ্য আয়োডিনের ভালো উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুরা যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন গ্রহণ করে তারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়। যাইহোক, শিশুদের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা তাদের বয়স বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই, ক্রমবর্ধমান শিশুদের প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহন করা উচিত। আপনার শিশু দুধ পছন্দ না করলে চিন্তা করবেন না। তার খাদ্যতালিকায় অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্য (দই, পুডিং) অন্তর্ভুক্ত করুন। যেসব শিশুরা দুধ পছন্দ করে না, তাদের জন্য দই, পুডিং বা প্যানকেক তৈরির সময় আপনি পানির পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করতে পারেন। যার কারণে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টি গুনও বৃদ্ধি পাবে।

ওটস / ওটমিল

ওটমিল এবং ওটস শক্তির চমৎকার প্রাকৃতিক উৎস এবং মস্তিষ্কের জন্য জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা বাচ্চাদের দীর্ঘক্ষন তৃপ্ত রাখে। যার কারণে শিশুরা জাঙ্ক / ফাস্টফুড ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকে। ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স এবং জিঙ্ক। তাই শিশুর সকালের খাদ্যের তালিকায় ওটস/ ওটমিল রাখলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এটির উপরে আপেল, কলা, ব্লুবেরি বা বাদামও ছড়িয়ে শিশুদের সামনে পরিবেশন করতে পারেন যা শিশুদের কাছে খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

বিনজাতীয় খাবার

শিম, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি বিনজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, জটিল শর্করা, ফাইবারসহ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এই ধরনের উপাদান শিশুর মস্তিস্কের জন্য খুবই উপকারী। এই সমস্ত খাবার গুলো শিশুর মানসিক এবং চিন্তাশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বেরিজাতীয় ফল

বেরি বা বেরি জাতীয় ফল (যেমন- স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, চেরি) উপকারী যৌগ দিয়ে ভরা। এগুলিকে অ্যান্থোসায়ানিন বলা হয়। অ্যান্থোসায়ানিন নানাভাবে মস্তিষ্কের উপকার করে। এটি মস্তিষ্কে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে নতুন স্নায়ু কোষ উৎপাদন ও গঠণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাকসবজি

যাইহোক, শিশুদের সবুজ শাকসবজি খাওয়ানো একটি চ্যালেঞ্জের মতো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে এই পুষ্টিকর সবজি শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক, লেটুসে মস্তিষ্ক-রক্ষাকারী বিভিন্ন রকম যৌগ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ফোলেট, ক্যারোটিনয়েডস, ফ্লেভোনয়েডস, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে।

আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

কোকো

কোকো এবং কোকো পণ্যগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কোকো ফ্ল্যাভোনয়েড মস্তিষ্কে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং উপস্থিত বুদ্ধির সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের সৃজনশীল কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে।

কমলা

কমলা একটি জনপ্রিয় সাইট্রাস ফল এবং এগুলোর স্বাদের কারণে শিশুদের কাছে অনেক প্রিয় এই ফল। আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় কমলা অন্তর্ভুক্ত করার কারনে তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। কমলা ফ্লেভোনয়েড সমৃদ্ধ। গবেষণার মতে, ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয় যেমন কমলা এবং কমলার রস মস্তিষ্কে স্নায়ুর কার্যকলাপ এবং রক্ত ​​প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। কমলাতেও রয়েছে ভিটামিন সি, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ, নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন এবং বিকাশের জন্য ভিটামিন সি একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

আয়রনের অভাব, শিশুদের মস্তিস্কের বিকাশ এবং একাডেমিক কর্মক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিশ্চিত করুন যে আপনার সন্তানের খাদ্যে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে যা আপনার শিশুর আয়রনের ঘাটতি রোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে লাল মাংস, পোল্ট্রি পণ্য, সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং পালং শাক।

হোল গ্রেইন বা শস্য জাতীয় খাদ্য

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখার জন্য অনবরত গ্লুকোজ সরবরাহ করা প্রয়োজন, যা শস্য জাতীয় খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও হোল গ্রেইনে ভাইটামিন বি রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রে পুষ্টি সরবরাহ করার পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

চিনাবাদাম ও চিনাবাদামের মাখন

চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। এ ছাড়াও চিনাবাদামে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রের আবরণকে সুরক্ষা প্রদান করে। এ ছাড়া চিনাবাদামে থাকা থায়ামিন মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ কথা

আপনার সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে সামুদ্রিক খাবার, ডিম, বেরি এবং অন্যান্য সহ এই তালিকার খাবার গুলো মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সন্তানের ডায়েটে উপরের তালিকাভুক্ত খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা, তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এবং তাদের সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়তা করবে।

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment