সুস্থ্য থাকার জন্য, একটি সুষম ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন । যাদের ওজন তাদের বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী ভারসাম্যপূর্ণ, তারা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করে । তাই, স্থূলতা কমানো যতটা জরুরি, তেমনই ওজন বাড়ানোও জরুরী ।বর্তমানে মানুষ স্থূলতা কমানোর পরামর্শ দিলেও, কম ওজন বাড়ানোর কথা তেমন কেউ বলে না । কম ওজনের মানুষকে দেখতে অনেক দুর্বল হয়, যা তাদের ব্যক্তিত্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা, ওজন বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব । আজকের আর্টিকেলে আমরা, রোগা মানুষদের ওজন বাড়ানোর জন্য ডায়েট চার্ট নিয়ে এসেছি, যা ঠিকমত অনুসরণ করলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে । সেই সাথে আমরা ওজন বাড়ানোর জন্য আরও কিছু টিপস শেয়ার করব ।
Table of Contents
ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট
খাবার | সময় | কি খাবেন (নিরামিষাশী / আমিষ) |
খাবারের আগে | সকাল ৭টা-৮টা | চিনি দিয়ে ১ কাপ ফুল ফ্যাট দুধ চা । যদি কেউ চা পান না করেন তাহলে বাদাম দুধ পান করুন এবং সাথে ২ টা শুকনো খেজুর । |
প্রাতঃরাশ | সকাল ৮টা-৯টা | সকালের নাস্তায় রুটি এবং ডিম খান । এছাড়াও আপনি ভাত বা খিচুরীও খেতে পারেন |
ব্রাঞ্চ | সকাল ১০টা-১১টা | এক গ্লাস ফুল ফ্যাট মিল্ক শেক অথবা প্রোটিন শেক অথবা ফুল ফ্যাট দইও খেতে পারেন |
মধ্যাহ্নভোজ | 12:30pm-1:30pm | ভাত, সবজি, মশুর ডাল এবং মুরগি/গরু/খাসি/মাছ/ডিম খান । দুপুরের খাবারের সাথে শসা, টমেটো, গাজর বা বাঁধাকপির সালাদ নিন । এছাড়াও খাবার পরে এক বাটি দই খেতে পারেন । |
সন্ধ্যার জলখাবার | বিকাল 5:30-6:30pm | সন্ধ্যার নাস্তায় স্যুপ, নুডলস বা স্যান্ডউইচও (বাড়িতে বানানো) খেতে পারেন । সাথে চিনি দিয়ে ১ কাপ চা |
রাতের খাবার | 8:30pm-9:30pm | দুপুরের খাবারে যে ডায়েট নেওয়া হয়েছিল, রাতেও একইভাবে খাবেন, তবে রাতের খাবারে ভাত কম খাবেন । ভাতের পরিবর্তে রুটিও খেতে পারেন । |
ঘুমানোর আগে | রাত 10:30-11 টা | এক গ্লাস হালকা গরম দুধ পান করুন এবং সাথে ২ টা খেজুর খান । |
আরও পড়ুনঃ পাইলস কি ? পাইলস এর লক্ষণ, কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
ওজন বাড়ানোর আরও কিছু টিপস – ওজন বাড়ানোর অন্যান্য টিপস
1. ক্যালোরি
শরীরের ওজন মূলত নির্ভর করে ক্যালোরির উপর । ওজন কমাতে ক্যালোরি কমানোর প্রয়োজন হয় এবং ওজন বাড়াতে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় । যদি কোন মানুষ কম ওজনের জন্য সমস্যায় থাকেন এবং তিনি তার ওজন বাড়াতে চান, তাহলে তাকে প্রতিদিন ২০০০-২২০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে ।
কি করে :
- আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আলু, ব্রকলি, বাঁধাকপি, গাজর, পালং শাক, কুমড়া এবং বেগুন অন্তর্ভুক্ত করুন ।
- খাদ্যতালিকায় লাল মাংস ( গরু, খাসি ) অন্তর্ভুক্ত করলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় । তবে মনে রাখবেন, এই ধরনের মাংস অতিরিক্ত খাবেন না । কারণ গরু বা খাসির মাংস বেশী খেলে, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- সালাদের সাথে অলিভ অয়েল যোগ করুন । এর ফলে সালাদের স্বাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে, পুষ্টির পরিমাণও বাড়বে ।
- প্রতিদিন দুগ্ধজাত খাবার গ্রহন করুন । এটি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি সরবরাহ করতে সহায়তা করে । প্রতিদিন চর্বি সমৃদ্ধ দুধ এবং দই খাওয়ার চেষ্টা করুন ।
এটি কিভাবে উপকারী:
ক্যালোরি গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় । ক্যালোরি অর্থ হল শক্তি । যখন কোন মানুষ ক্যালোরি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীর প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ পায় । যার ফলে শরীর আগের চেয়ে আরও বেশী সক্রিয় হয়ে ওঠে ।
বিঃদ্রঃ শরীরে ক্যালরি বাড়ানোর নামে ফাস্টফুড খাবেন না । এর ফলে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে ।
2. খাবারের পরিমাণ বাড়ান
সুষম পরিমাণে খাবারের ডোজ বাড়িয়ে ওজন বাড়ানো যায় । এ জন্য প্রতিদিন ৩ বার খাবার গ্রহন করার পরিবর্তে, অল্প পরিমাণে বারে বারে (৬ বার) খাবার খান এবং প্রতিবার ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন । একবারে খুব বেশি পরিমাণে খাবার খেলে, পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয় এবং ওজন বৃদ্ধি হওয়ার পরিবর্তে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে । অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেলে, খাবার হজম ভাল হবে এবং শরীরের ওজনও বৃদ্ধি পাবে ।
কি করো :
- সকালের নাস্তার পরে এক বাটি যে কোন ফল খেতে পারেন । এছাড়াও পিনাট বাটার বা পনির খেতে পারেন ।
- স্ন্যাকস হিসেবে আপনি শুকনো ফল, সেদ্ধ সবজি বা সব্জির স্যান্ডউইচ খেতে পারেন ।
- এছাড়াও কেউ যদি এগুলো ছাড়া অন্য কিছু খেতে পছন্দ করেন, তবে আপনারা সেগুলোও খেতে পারেন, তবে এটি স্বাস্থ্যকর হওয়া উচিত । এছাড়াও, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত ।
এটি কিভাবে উপকারী:
কিছুক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে কিছু খেলে শরীর শক্তি পায় । এর ফলে, ব্যক্তি সর্বদা সক্রিয় থাকে এবং যে কোন কাজ সম্পূর্ণ ক্ষমতার সাথে করতে পারে ( তথ্যসূত্র )। কিন্তু একবারে খুব বেশি খাওয়ার ফলে শরীরে অলসতা তৈরী হয় এবং সেই সাথে খাবার হজমে সমস্যা হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে ।
3. বেশী পরিমাণে প্রোটিন গ্রহন করুন
ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরির পাশাপাশি প্রোটিনেরও প্রয়োজন । প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে পেশীগুলো শক্তিশালী হয় এবং শরীর শক্তি পায় ।
কি করো :
- ডিম, মাছ, মাংস, মসুর ডাল, সিমের বিচি এবং দুগ্ধজাত পণ্য প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসাবে বিবেচিত হয় ।
- টুনা এবং পাঙ্গাস মাছে প্রচুর পরিমাণে তেল থাকে এবং এই মাছগুলো দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে ।
এটি কিভাবে উপকারী:
প্রোটিনে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড, পেশীকে শক্তিশালী করে । অতএব, পেশী শক্তিশালী এবং ওজন বাড়ানোর জন্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার অপরিহার্য ( তথ্যসূত্র )।
4. স্বাস্থ্যকর চর্বি
ওজন বৃদ্ধি করার জন্য সীমিত পরিমাণে চর্বি খাওয়াও প্রয়োজন । পেশী বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করার জন্য স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোন প্রয়োজন । এটি বিপাকীয় হার বাড়াতেও সহায়তা করে থাকে । যার ফলে শরীরের খারাপ চর্বি বার্ন হয় এবং ভাল চর্বি জমা থাকে । পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলি আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে মনে করা হয় । এই ধরনের চর্বি বাদাম, সবুজ শাক সবজি, অ্যাভোকাডো তেল, ফ্ল্যাক্সসিড তেল এবং অন্যান্য বীজের তেলে পাওয়া যায় । এছাড়াও, ওমেগা -3 এবং ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলিও স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন । এই অর্থে, আপনি যদি ওজন বাড়ানোর চিন্তা করেন, তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় ভাল চর্বিযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন ( তথ্যসূত্র )।
5. ওজন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট
কিছু কিছু মানুষ অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে থাকে । এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রয়োজন । তবে যে কোন ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত । কারণ শুধুমাত্র একজন ডাক্তারই সঠিক ভাবে বলতে পারবেন, কী ধরনের সাপ্লিমেন্ট আপনার স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন ।
কি করে :
- বাজারে অনেক রকমের প্রোটিন শেক এবং সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় । এই সাপ্লিমেন্টগুলিকে দুধের সাথে যোগ করে খেতে পারেন । তবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না । কারণ সব সাপ্লিমেন্ট সবার জন্য উপযুক্ত নয় । তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করলে, আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতির পরিবর্তে খারাপ হতে পারে ।
এটি কিভাবে উপকারী:
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করলে, আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সাথে পেশীও শক্তিশালী হবে ।
6. কি খেতে হবে
- সম্পূর্ণ ফ্যাট সহ দুধ
- মটরশুটি, মসুর ডাল এবং অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
- ফল এবং শাকসবজি
- স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং তেল
- খাদ্যশস্য
- ভাল এবং স্বাস্থ্যকর মিষ্টি
- অল্প পরিমাণে চর্বি ছাড়া লাল মাংস (গরু, খাসি)
7. যোগব্যায়াম
নিয়মিত যোগব্যায়াম আমাদের শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে । ওজন কমাতে যেমন যোগব্যায়ামের উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনই যোগব্যায়াম ওজন বাড়াতেও সহায়ক হতে পারে । কেউ যদি ওজন বাড়ানোর জন্য ডায়েট চার্টের সাথে, তার প্রতিদিনের রুটিনে যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করে, তবে সে যোগ ব্যয়াম না করা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি সুবিধা পাবে । যোগব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি শরীরের শক্তির মাত্রাও উন্নত করে । এছাড়াও যোগব্যায়াম পাচনতন্ত্রকেও উন্নত করে, যার ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় । নিচে আমরা কিছু যোগাসনের কথা বলছি, যেগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে, এগুলো আপনার শরীরের ওজন বাড়তে সহায়তা করবে ।
- সর্বাঙ্গাসন: এই যোগাসন বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।
- পবনমুক্তাসন: এতে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে, মেটাবলিজম ভালো হয় এবং গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এর ফলে ক্ষুধা বেশী লাগে ।
- বজ্রাসন: এই যোগাসনটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে । এই আসন অনুশীলন করলে খাবার সহজে হজম হয় । সেই সাথে সারা শরীরের পেশী, বিশেষ করে পা ও কোমরের পেশী মজবুত হয় ।
8. ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করুন
নিচে উল্লিখিত ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে পেশী দ্রুত ডেভেলপ হয় । তবে মনে রাখবেন যে, এই সমস্ত ব্যায়াম শুধুমাত্র একজন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত ।
- টুইস্টেড ক্রাঞ্চ
- লেগ প্রেস
- পা সম্প্রসারণ
- লেগ কার্ল
- বাহু কার্ল
- কাঁধ অসহায়তা
- উপবিষ্ট ডাম্বেল প্রেস
- triceps নিচে ধাক্কা
- বারবেল স্কোয়াট
- টান আপ
- ab রোলার
- ইনলাইন ডাম্বেল প্রেস
- পার্শ্ব পার্শ্বীয় জাতি
- ডাম্বেল ফুসফুস
- ওজন crunches
এটি কিভাবে উপকারী:
এই ব্যায়ামগুলো পেশী সুস্থ জন্য অপরিহার্য । এছাড়াও, এটি বডি মাস ইনডেক্স বাড়াতেও সহায়তা করে । যার ফলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় ( তথ্যসুত্র )।
9. খাবার ও পানীয়ের রেকর্ড রাখুন
যারা ওজন কমায় তারা একটি নোটবুকে লিখে রাখে যে, সারাদিনে তাদের কী খেতে হবে এবং কোন কোন ব্যায়াম করতে হবে ।একইভাবে আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান, তাহলে আপনারও এটি করা উচিত । আপনি প্রতিদিন কখন কী খেয়েছেন, সেটি একটি নোটবুকে লিখুন এবং সপ্তাহের শেষে ওজনের পার্থক্যটিও লিখে রাখুন । এর ফলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, কোন খাবার ওজনকে বেশী প্রভাবিত করছে । এছাড়াও, এই নোটবুকটি দেখে আপনি আপনার ওজন বাড়াতে আরও বেশী অনুপ্রাণিত হবেন ।
10. চাপ উপশম
আমাদের শরীরের বেশীরভাগ সমস্যার মূলে রয়েছে মানসিক চাপ । যখনই কোন ব্যক্তি মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তখন তার শরীরের ওজন কমবেশি হতে পারে । এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে । তাই আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন বাড়াতে চান, তাহলে সবার আগে আপনাকে মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে ।মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে আপনি মেডিটেশন করতে পারেন ।
11. পর্যাপ্ত ঘুম
স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা, আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় । সেই সাথে শরীরকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমও প্রয়োজন । বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ফিট ও সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন । এই ঘুমানোর ফলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় এবং পরের দিন নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা যায় ।
12. নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন
শরীরের ওজন কমানো এবং ওজন বাড়ানো দুটোই বেশ কঠিন । তাই শরীর যতটা সহ্য করতে পারে সেই অনুযায়ী ডায়েট ও ব্যায়াম বাড়ান । কেউ তার সামর্থ্যের বেশি ব্যায়াম করলে, লাভের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে । সেই সাথে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, কারণ শরীরের ওজন ধীরে ধীরে বাড়ানো উচিত । বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তি যদি ৩০ দিন ধরে এই ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট ফলো করেন, তাহলে তার ওজন প্রতি মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি করে বাড়তে পারে । যদি ১ মাস পর, কারো ওজন ২ কেজির থেকে বেশি বেড়ে যায়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে । তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর এবং তার চাহিদা ভিন্ন । তাই সবার উচিত, তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করা । মহিলাদের ক্ষেত্রে ডায়েট চার্ট এবং ওজন বাড়ানোর নিয়ম সামান্য আলাদা হতে পারে ।
আরও পড়ুনঃ পেটের কৃমির লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
শরীরের ওজন কমে যাওয়ার কারণ- ওজন কম হওয়ার কারণ
নারী ও পুরুষ উভয়ের স্বাভাবিক ওজন তাদের বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারণ করা হয় । যদি কারো ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম হয়, তবে এই ধরনের ব্যক্তিদের শরীরের ওজন কম হিসাবে বিবেচনা করা হয় । উদাহরণস্বরূপ- ধরুন একজন মহিলার বয়স ২৬-৩০ এবং তার উচ্চতা ১৪৮-১৫১ সেন্টিমিটারের মধ্যে, তাহলে তার ওজন প্রায় ৪৭ কেজির মত হওয়া উচিত । তবে যদি সেই মহিলার ওজন ৪০ কেজি (১৫%) বা ৩৭ কেজি (২০%) হয়, তবে সেই মহিলার শরীরের ওজন কম আছে বলে ধরে নেওয়া হবে । একজন ৪৭ বছর বয়সী মহিলার BMI (বডি মাস ইনডেক্স) ২০.৬ কেজি/বর্গ মিটার হওয়া উচিত । যদি ওজন কমে, তাহলে বিএমআইও কমে যায় ।
একই সময়ে, যদি একজন পুরুষের বয়স ২৫-৫০ এর মধ্যে হয় এবং উচ্চতা প্রায় ১৭৬ সেন্টিমিটার হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক ওজন প্রায় ৭০ কেজি হওয়া উচিত । কিন্তু যদি ওজন ৬০ কেজি (১৫%) বা ৫৭ কেজি (২০%) হয় তবে তাকে কম ওজন হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।
শরীরের ওজন কমে যাওয়ার কারণ নিচে দেওয়া হল –
- হাইপারথাইরয়েডিজম: ঘাড়ে প্রজাপতির মত আকৃতির একটি গ্রন্থি থাকে, যাকে থাইরয়েড বলে । এটি থেকে নিঃসৃত হরমোন, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে । যদি হাইপারথাইরয়েডিজমে হরমোনের অত্যধিক উৎপাদন হয়, তাহলে বিপাকীয় স্তরের অবনতি হতে থাকে । এর ফলে হৃৎপিণ্ড ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং শরীরের ওজন কমতে থাকে ( তথ্যসূত্র )।
- ক্যান্সার: ক্যান্সার হওয়ার কারণেও শরীরের ওজন কমতে শুরু করে । এছাড়াও, ক্লান্তি, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা হতে পারে ( তথ্যসূত্র ) ।
- যক্ষ্মা: এই রোগে আক্রান্ত হলেও ওজন দ্রুত হ্রাস পায় ( তথ্যসূত্র )। সেই সাথে, কাশি, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং রাতে ঘামের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে । যক্ষ্মাজনিত কারণে যদি কারো শরীরের ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে একদম দেরী না করে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করুন ।
- এইচআইভি এইডস: যারা এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত, তাদের শরীরের ওজনও ধীরে ধীরে কমতে থাকে ( তথ্যসূত্র ) । এইচআইভি পজিটিভ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে । সেই সাথে আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ।
- কিডনি রোগ: কারো যদি মনে হয় বারবার প্রস্রাব আসছে, প্রস্রাব করে আসার পরও প্রস্রাব আসার অনুভূতি হচ্ছে, তাহলে তা কিডনি বিকল হওয়ার লক্ষণ হতে পারে । এর ফলে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস, বমি বমি ভাব, বমি, ক্লান্তি, মুখে অদ্ভুত স্বাদ, ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি এবং শ্বাসে অ্যামোনিয়া গন্ধের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে । সেই সাথে ক্ষুধাও হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে ওজন কমে যায় ।
- ওষুধ: কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ গ্রহন করার ফলে ক্ষুধা কমে যায় ( তথ্যসূত্র )। ক্ষুধা না লাগার কারণে, একজন ব্যক্তি ঠিকমতো খাবার খেতে পারে না, যার কারণে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না । অতএব, কোন ঔষধ গ্রহন করার আগে, সবসময় একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ।
- খাবারে ভারসাম্যহীনতা: যখনই কোন ব্যক্তি, নির্দিষ্ট সময়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন না করেন, তখন তিনি অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা এবং বুলিমিয়া নার্ভোসার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন । এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজনের আশঙ্কা থাকে । এই ধরনের মানুষ তাদের ওজন নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে এবং শরীরের আকৃতির অবনতি নিয়ে চিন্তা করতে থাকে ।
- এনজাইমের অভাব: পরিপাক এনজাইমগুলি পরিপাকতন্ত্রের জন্য এবং পুষ্টি শোষণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।এগুলোর সাহায্যে শারীরিক বিকাশ ঘটে । যখন পাকস্থলীর ভেতরের দেয়াল বা প্রাচীর, সঠিকভাবে হজমকারী এনজাইম ব্যবহার করতে অক্ষম হয়, তখন ওজন কমে যেতে শুরু করে ।
- জেনেটিক: অনেক সময় বংশগত কারণে শরীরের ওজন কম হতে পারে ।
- খারাপ লিভার: লিভার ফেইলিউরের কারণে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না এবং সেই কারণে ওজন কমতে থাকে । এই সমস্যা এড়াতে চাইলে, অ্যালকোহল এবং সিগারেট থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ।
কম ওজনের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা
- দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শরীরের ওজন কম হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে । ইমিউনিটি সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ না করলে, ব্যক্তি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে । আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হলেই স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব দেখা যায় । এছাড়া ক্যান্সারের মতো বিপজ্জনক রোগেরও সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।
- রক্তস্বল্পতা : শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে । এমন অবস্থায় কম ওজনের ব্যক্তি প্রায়ই ক্লান্ত বোধ করেন । সেই ব্যক্তি ঠিকমতো খেতে পারে না, যার কারণে তার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পায় না এবং শরীরে শক্তির অভাব হয় । ফলে শরীরে রক্তের পরিমাণও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং শরীরে রক্তশূন্যতার মতো রোগ দেখা দেয় ।
- প্রজনন সমস্যা: মহিলাদের কম ওজনের কারণে প্রজনন রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে । এটি মেয়েদের মাসিক চক্রকে অনিয়মিত করে এবং মহিলাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে । এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাতের সম্ভাবনাও তৈরি করে । সেই সঙ্গে যেসব পুরুষের ওজন কম তাদের বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যায় পড়তে হতে পারে । যেমন- যৌনমিলনের সময় ব্যথা হতে পারে, শুক্রাণুর মান কমে যেতে পারে এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
- দুর্বল হাড়: অস্টিওপোরোসিসের কারণে, মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই কম ওজনের সমস্যা হতে পারে । হরমোনের পরিবর্তন এবং ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে এমন সমস্যা ঘটে । অস্টিওপোরোসিস হল হাড়ের সাথে সম্পর্কিত একটি রোগ, এর ফলে ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায় ।
শেষ কথা
শরীরের ওজন বাড়ানো খুব বেশী কঠিন কাজ নয় । আপনার যা দরকার তা হল, আপনার লক্ষ্য ঠিক করা এবং এটি অর্জনের জন্য ধৈর্য্য থাকা । সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে ।এর ফলে আপনার শরীরের ওজন বাড়ার পাশাপাশি আপনি সুস্থও থাকবেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান । ধন্যবাদ