শারীরিক ক্লান্তি, মানসিক চাপ, বিষন্নতা, কড়া রোদ, ঘুমের সল্পতা কিংবা বয়স বৃদ্ধি – ইত্যাদি অনেক কারণেই চোখের নিচে কালি বা ডার্ক সার্কেল পরতে দেখা যায়। চোখের নিচের কালচে ভাব আমাদের চেহারার সতেজতা অনেকাংশে নষ্ট করে দেয়। চেহারার সতেজতা নষ্ট করার পাশাপাশি বয়সও অনেক বেশী মনে হয়।
চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। তবে সেগুলোর বেশীরভাগ ক্রিম ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে এইসব ক্রিম ব্যবহার করে সাময়িক উপকার পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চোখের নিচের কালচে ভাব বা ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য আপনার হাতের নাগালে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানই যথেষ্ট। এই উপাদানগুলো সঠিকভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালচে ভাব অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে।
Table of Contents
চোখের নিচে কালি পরে কেন
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে চোখের তলায় কেন কালি পড়ে? আমাদের চোখের নিচের অংশে যে ত্বক রয়েছে তার ঠিক নিচে অনেকগুলো রক্ত-নালী রয়েছে। এই রক্ত নালী গুলো যত বড় হতে থাকে ততই আমাদের চোখের নিচের কালো দাগ বাড়তে থাকে। মানসিক চাপ, অপর্যাপ্ত ঘুম, অত্যাধিক টেনশন ইত্যাদি অনেক কারনে চোখের নিচে দাগ পড়ে। আবার ভাইটামিন বি-৬ এর অভাবেও চোখের নিচের এই কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই চোখের নিচের এই কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে যথেষ্ট পরিমাণে ভাইটামিন বি-৬ বেশী পরিমাণে রয়েছে এমন খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করে চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করা যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করার কিছু প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে –
চোখের নিচের কালো দাগ কিভাবে দূর করবেন
আলুঃ চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে আলু খুব কার্যকরী। আলু ভালোভাবে বেটে বা পেস্ট করে নিয়ে চোখের ওপর ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখের চারপাশ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আলুর এই পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
টমেটো: ডার্ক সার্কেল দূর করতে টমেটো অত্যন্ত উপকারী। এক চা চামচ টমেটোর রস এবং এক চা চামচ লেবুর রস একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে চোখের নিচে লাগাতে হবে। মিশ্রণটি ব্যবহারের দশ মিনিট পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন ২ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে ।
শসার টুকরা: শসাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে। শসা গোল করে কেটে নিয়ে দশ থেকে পনের মিনিট চোখের উপরে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । সপ্তাহে তিন থেকে চার বার ১৫ মিনিট করে ব্যবহার করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
গোলাপ জলঃ গোলাপ জল আমাদের ত্বকের টোনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে থাকে। চোখের নিচে কালো দাগছোপ সমস্যা দূর করতে গোলাপ জল খুব কার্যকর। গোলাপ জল তুলার বলের মাধ্যমে চোখের নিচে লাগাবেন। এর ফলে ডার্ক সার্কেল কমে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার চোখের ক্লান্তিভাবও দূর করতে সহায়তা করবে।
ঠাণ্ডা টি ব্যাগ: টি-ব্যাগ ইউজ করার পর কিছু সময় ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজ থেকে বের করে চোখ বন্ধ করে ১০ মিনিটের জন্য চোখের উপর রেখে দিন। প্রতিদিন ব্যবহার করলে আপনার চোখের নিচের কালো দাগ খুব দ্রুত কমে যাবে।
কাজু বাদামঃ কাজু বাদাম ভালোভাবে বেটে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে চোখের চারপাশে লাগাবেন। নিয়মিত এই প্যাক টি ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ দ্রুত কমে যাবে । এছাড়াও চোখের চারপাশে বাদাম তেল লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করলেও ডার্ক সার্কেল অনেকাংশে কমে যায়।
দুধঃ দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভাইটামিন এ। তুলার বল বা মেকআপ রিমুভ করার প্যাডে সামান্য পরিমাণে কাঁচা দুধ নিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ দিন কাঁচা দুধ চোখের নিচে ব্যবহার করলে ডার্ক সার্কেল ধীরে ধীরে কমে যাবে।
কমলার রসঃ পরিমাণমত কমলার রস এবং দুই ফোঁটা গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে চোখের নিচে লাগান। এই মিশ্রণ টি চোখের কালো দাগ দূর করার সাথে সাথে ত্বক আরও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
বাদাম তেলঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে চোখের চারপাশে বাদাম তেল দিয়ে ভালো ভাবে মালিশ করুন। এতে চোখের কালো দাগ কমে যাওয়ার সাথে সাথে চোখের চামড়াও টানটান হবে।
ভাইটামিন-ইঃ ভাইটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তেল চোখের নিচের কালো ভাব দূর করতে অত্যন্ত ভালো কাজ করে। এই তেল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেস ওয়াশ ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যে চোখের কালচে ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।
পর্যাপ্ত ঘুম দরকারঃ যত কিছুই ব্যবহার করুন না কেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে চোখের নিচের কালচে ভাব বা ডার্ক সার্কেল কখনই দূর হবে না। যাদের ঘুমের প্রবলেম রয়েছে, তাদের চোখের নিচে কালি পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ৭ – ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরী।
ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালচে ভাব দূর করতে যদি ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে প্রোডাক্ট টি ভালো মানের এবং সেই সাথে ওরিজিনাল কিনা তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোন ওষুধ বা মলম কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।