চোখ আমাদের মূল্যবান সম্পদ, তাই এগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন । সামান্য অবহেলার কারণে চোখের বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে এবং ছানি হল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম । ছানির কারণে চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে যায় যার ফলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় । বিশ্বব্যাপী অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হল ছানি । ছানি সাধারণত 50 বছর বা তার বেশী বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায় । সঠিক তথ্য ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা এই চোখে ছানি পরা রোগ থেকে বাঁচতে পারি । এমন অবস্থায় আজকের এই আরটিকেলে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব, ছানি কি ? চোখে ছানি পড়ার কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে । আর্টিকেলে উল্লেখিত ছানি রোগের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো উপকারী এবং নিরাপদ ।
Table of Contents
ছানি কি – চোখের ছানি কি
চোখের ছানিকে ইংরেজিতে ক্যাটারাক্ট বলা হয় । এটি চোখের সাথে সম্পর্কিত একটি খুব কমন রোগ । এ রোগে আক্রান্ত রোগীর চোখের লেন্সে এক ধরনের ঝাপসা ভাব দেখা দেয় । এর কারণ হল মূলত প্রোটিন ক্লাম্প ।
এই প্রোটিন ক্লাম্প তৈরির কারণেই চোখের লেন্স ঝাপসা হয়ে যায়, যার কারণে চোখের মধ্যে যে আলো প্রবেশ করে তা রেটিনায় সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করতে পারে না । ফলস্বরূপ, রোগী বস্তুগুলিকে ঝাপসা দেখতে পান ।
চোখের মধ্যে লেন্স, রেটিনা, কর্নিয়া এবং অপটিক নার্ভ থাকে, যা আমাদেরকে চারপাশের সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে সাহায্য করে । চোখের মধ্যে প্রবেশ করা আলো কর্নিয়ার সাহায্যে পিউপিলে যায় এবং তারপর সেই আলো লেন্সের মাধ্যমে রেটিনার দিকে ফোকাস করে । এর পরে, অপটিক স্নায়ু সেই আলোকে একটি সংকেতে রূপান্তর করে মস্তিষ্কে পাঠায়, আর তখন আপনি সেই বস্তু দেখতে পান । কিন্তু লেন্স ঝাপসা হয়ে যাওয়ার কারণে, চোখের মধ্যে যে আলো প্রবেশ করে তা সম্পূর্ণরূপে রেটিনা বা অপটিক স্নায়ুতে পৌঁছাতে পারে না এবং যার কারণে রোগী বস্তুগুলিকে ঝাপসা দেখতে পান ।
ছানি খুব আস্তে আস্তে বিকশিত হয় । এটি আপনার দৃষ্টি অর্থাৎ দেখার ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় । এই সমস্যা এক বা উভয় চোখেই হতে পারে । তবে এই সমস্যা একসাথে দুই চোখেই হবে এমন টা নয় । এটি শুধুমাত্র আপনার যে কোন এক চোখেও হতে পারে ।
ছানির প্রকারভেদ – ছানি কত প্রকার ?
সাধারণত, ছানির সমস্যা বার্ধক্যের কারণে হয়ে থাকে, তবে এটি শুধুমাত্র বয়সের কারনেই হবে এমন নয় । জিনগত কারণে, চোখে আঘাত বা আরও অন্য কোন কারণেও এ রোগের সমস্যা হতে পারে । ছানি অনেক ধরনের হয়ে থাকে এবং এটি মূলত নির্ভর করে এর ধরন এবং এটি কত দ্রুত বিকাশ করছে তার উপর । তাহলে চলুন ছানির প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক –
- জন্মগত ছানি: এই ধরনের ছানি সাধারণত জন্মের সময় থেকেই থাকে বা শৈশবেই শিশুর চোখে এই ধরনের ছানি পরে ।
- সেকেন্ডারি ছানি: সেকেন্ডারি ছানি সাধারণত ডায়াবেটিস, গ্লুকোমা (চোখের সমস্যা) সার্জারি বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের কারণে হয়ে থাকে ।
- রেডিয়েশান ছানি: ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি পদ্ধতির পরে রেডিয়েশনের কারণে এই ধরনের ছানি দেখা দিতে পারে ।
- আঘাতজনিত ছানি: চোখে যে কোন ধরনের আঘাতের কারণে এই ধরণের ছানি হতে পারে । একে আঘাতমূলক ছানিও বলা হয়ে থাকে ।
- বয়স সম্পর্কিত ছানি: এটি সবচেয়ে সাধারণ বা কমন ছানি । বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে ছানি রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা বয়স সম্পর্কিত ছানি নামে পরিচিত ।
চোখে ছানি পড়ার কারণ – ছানির কারণ
নিম্নলিখিত কারণে চোখে ছানি পড়তে পারে –
- প্রোটিনের কারণে
- চোখে ক্ষত বা আঘাত
- বিকিরণ বা রেডিয়েশান
- বার্ধক্যজনিত কারণে
- স্টেরয়েডের দীর্ঘায়িত ব্যবহার
- ধূমপান
- UV বিকিরণ
- ডায়াবেটিস বা গ্লুকোমা
- দীর্ঘস্থায়ী চোখের রোগ বা সার্জারি
- চোখ ফুলে যাওয়া
- চোখের অস্ত্রোপচার
- অতিরিক্ত মোটা
- জেনেটিক কারণ
- উচ্চ মায়োপিয়া আছে
- মদ্যপান
- হরমন প্রতিস্থাপনের চিকিত্সা
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- কোলেস্টেরল কমাতে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করার ফলে
ছানির লক্ষণ – চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ – ছানির উপসর্গ
চোখে ছানি পড়ার লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হল –
- চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
- রং ফ্যাকাশে দেখা বা রং চিনতে অসুবিধা
- গাড়ির হেডলাইট, বাতি বা সূর্যের আলো উজ্জ্বল দেখাতে পারে
- আলোর চারপাশে একটি আবছা বৃত্ত দেখা দিতে পারে
- রাতে দেখতে অসুবিধা হওয়া
- কোন জিনিস একাধিক দেখা
- ঘন ঘন চশমা বা কন্টাক্ট লেন্সের নম্বর পরিবর্তন করা
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
নোট: উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলি চোখের অন্যান্য সমস্যার কারণেও হতে পারে । যদি এই লক্ষণগুলি দেখতে পান তবে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করান ।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি ? ডায়াবেটিসের লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
ছানি নিরাময়ের ঘরোয়া প্রতিকার
ছানি সাধারণত সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় । তবে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করে আপনার এর ঝুঁকি কমাতে এবং ছানি প্রতিরোধ করতে পারেন । নিচে আমরা ছানি রোগের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করছি –
রসুন – প্রতদিন এক বা দুটি রসুনের কোয়া কাঁচা চিবিয়ে খান । আপনার যদি কাঁচা খেতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারে রসুন যোগ করতে পারেন । ছানির সমস্যায় রসুনের ব্যবহার খুবই উপকারী । রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটি চোখের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা সৃষ্ট প্রভাবগুলি কমিয়ে ছানি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ( তথ্যসুত্র )।
লেবুর রস – এক চা চামচ পানির সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিন । এরপর এতে তুলো ছোট বলের মত করে ভিজিয়ে রাখুন । এরপর বন্ধ চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার উপর সেই ভেজানো তুলোর বল রাখুন এবং এভাবে প্রায় 20 মিনিটের মত রেখে দিন । পরে তুলা তুলে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন । লেবুর ব্যবহার ছানির ক্ষেত্রে উপকারী বলে মনে করা হয় । এতে সাইট্রিক অ্যাসিডের উপস্থিতির কারণে, এর নিয়মিত ব্যবহার চোখের জ্বালাপোড়া এবং অন্যান্য উপসর্গগুলিকেও কমাতে পারে । এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ছানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
গ্রীন টি – এক কাপ পানিতে ১ চা চামচ গ্রিন টি মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । এরপর হালকা গরম অবস্থায় এই চা পান করুন ।আপনি প্রতিদিন এক বা দুইবার গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করতে পারেন । ছানির সমস্যায় গ্রিন টি-এর উপকারিতা প্রমানিত হয়েছে । গ্রীন টি তে EGCG (epigallocatechin-3-gallate) নামক একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চোখের লেন্সকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং ছানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র ) ।
ভিটামিন – ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ । এগুলো আমাদের চোখ কে ছানি থেকে রক্ষা করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চোখের অনেক ধরনের রোগ সেরে যায় । এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে সাইট্রাস জাতীয় ফল, সবুজ শাক-সবজি, দুধ, পনির, ডিম, অ্যাভোকাডো এবং বাদাম । এছাড়াও আপনি যদি চোখের জন্য ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেতে চান, তাহলে অবশ্যই প্রথমে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ।
গাজরের জুস – প্রতিদিন ১ গ্লাস করে গাজরের রস বা জুস পান করুন । গাজরের রস চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে । প্রকৃতপক্ষে, গাজর হল লুটেইন এবং জেক্সানথিনের একটি ভাল উৎস । এই ক্যারোটিনয়েডগুলি আমাদের চোখের লেন্সেও পাওয়া যায় । এর পাশাপাশি, একটি গবেষণা অনুসারে, এই দুটি ক্যারোটিনয়েডই ছানি প্রতিরোধে খুব কার্যকরী । সেই সাথে, এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অক্সিডেটিভ ক্ষতি হ্রাস করে ছানির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র )।
বাদাম – একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে ৫ – ৭ টি বাদাম ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন । পরের দিন সকালে ভেজানো বাদামের খোসা ছাড়িয়ে সেবন করুন । এই পানিতে ভেজানো বাদাম আপনি প্রতিদিন খান । ছানির সমস্যায়ও বাদামের ব্যবহার উপকারী বলে প্রমানিত হয়েছে । গবেষণায় জানা গেছে যে, বাদামে কোএনজাইম Q10 নামক এক ধরনের ভিটামিন রয়েছে । কোএনজাইম Q10 লেন্স এপিথেলিয়াল সেল অ্যাপোপটোসিস থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে যা ছানি সৃষ্টি করে ।এইভাবে, বাদাম আমাদের চোখের যত্নের পাশাপাশি ছানি প্রতিরোধ করতেও সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র )।
পালং শাক – পালং শাকের ১০-১৫ টি পাতা নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে জুস করে প্রতিদিন পান করুন । ছানির সমস্যায় পালং শাক খেলে উপকার পাওয়া যায় । পালং শাকে লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায় এবং আমরা আগেই বলেছি, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য লুটেইন এবং জেক্সানথিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এই উভয় ক্যারোটিনয়েড চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি চোখের ছানি থেকে চোখ রক্ষা করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে ।
ক্যাস্টর অয়েল – প্রতিদিন রাতে এক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল চোখে লাগিয়ে ঘুমান । ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটি আমাদের চোখের অক্সিডেটিভ ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে, যার একটি ইতিবাচক প্রভাব ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । তবে চোখের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করবেন ।
আপেল সিডার ভিনেগার – ১ গ্লাস গরম পানির সাথে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং এক চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে প্রতিদিন একবার করে পান করুন । অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয় । আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত খেলে, তা আমাদের চোখের ক্ষতিগ্রস্ত চোখের লেন্স মেরামত করতে সাহায্য করতে পারে । এছাড়াও, এটি ছানি পড়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সক্ষম ।
অ্যালোভেরা জেল – তাজা অ্যালোভেরা থেকে জেল বের করে নিয়ে কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে হালকা ঠান্ডা করে, চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার উপরে লাগান । এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । ছানির সমস্যায় অ্যালোভেরা খুব উপকারী । একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরাতে উপস্থিত অ্যানথ্রাকুইনোনস, অ্যালো-ইমোডিন এবং ক্রাইসোফ্যানল নামক যৌগগুলির কারণে এটি ছানির সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকরী ।
নারিকেলের পানি – প্রতিদিন নারকেলের পানি বা ডাবের পানি পান করুন । এটা মনে করা হয় যে, নারকেল বা ডাবের পানির ব্যবহার ছানি রোগের একটি কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে । এতে থাকা পুষ্টিগুণ, চোখের তাৎক্ষণিক পুষ্টি যোগাতে সক্ষম । এটি চোখের লেন্সকে পুষ্ট করে ছানি প্রতিরোধে কাজ করে ।
তিসির তেল – খাবার তৈরি করার সময় তাতে তিসির তেল ব্যবহার করুন । তিসির তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা চোখের ছানি চিকিৎসার জন্য সেরা প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি । ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে পাওয়া যায় । এটি ছানি দ্বারা সৃষ্ট চোখের সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে ভাল কাজ করতে পারে, যেমন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন । ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হল একটি চোখের সমস্যা যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয়, এতে ধীরে ধীরে দেখার ক্ষমতা কমে যায় ।
আদা – আধা চা চামচ লেবুর রস এবং আধা চা চামচ আদার রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । তারপর এই মিশ্রণের সাথে এক চামচ পানি মেশান । এবার মিশ্রণটিতে দুটি তুলোর বল ভিজিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপর রাখুন । এভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে মুছে ফেলুন । আপনি চাইলে প্রতিদিন এটি করতে পারেন । এছাড়াও আদা সেবন করা এই সমস্যায় সহায়ক হতে পারে । গবেষণায় দেখা গেছে যে, চোখে ছানি পড়ার অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস । অন্যদিকে আদার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমিয়ে ছানি এবং গ্লুকোমার সমস্যায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করে ।
পেঁয়াজের রস – ১০ গ্রাম পেঁয়াজের রস, ১০ গ্রাম আদার রস, ১০ গ্রাম লেবুর রস এবং ৫০ গ্রাম মধু একসাথে মিশিয়ে একটি পরিষ্কার কাঁচের বোতলে ভরে ঠান্ডা জায়গায় রাখুন । এই মিশ্রণটি এক মাসের জন্য ফ্রিজেও সংরক্ষণ করতে পারেন । এবার এই মিশ্রণ থেকে দুই ফোঁটা নিয়ে আপনার দুই চোখে প্রতিদিন লাগাতে পারেন । গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত পেঁয়াজের রস বা কাঁচা পেয়াজ খেলে চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি হয় । ২০০৯ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অফথালমোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে পেঁয়াজের রস ব্যবহারের মাধ্যমে ছানি প্রতিরোধ করা সম্ভব । সেই সঙ্গে চোখের জন্য আদা, লেবু ও মধুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আর্টিকেলের উপরে অংশে উল্লেখ করেছি ।
অলিভ অয়েল – আপনি খাবার তৈরির সময় এবং সালাদে অলিভ অয়েল যোগ করতে পারেন । আপনি যদি ছানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান অলিভ অয়েল হতে পারে একটি সঠিক অপশন । অলিভ অয়েলে লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক উপাদান থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত চোখ মেরামত করতে সাহায্য করে এবং ছানি থেকে আমাদের চোখকে নিরাপদ রাখতে পারে ।
ছানি জন্য খাদ্য
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে পুষ্টির অভাব হলে চোখে ছানি পড়তে পারে । নীচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হল, যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে বিবেচিত হয়ে আসছে –
1. Lutein এবং Zeaxanthin: ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, কলার্ড গ্রিনস, কর্ন, কেল, কমলা, পেঁপে, পালং শাক এবং ডিম ইত্যাদি।
2. ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: ফ্ল্যাক্সসিড , তিসির তেল, স্যামন মাছ এবং আখরোট ইত্যাদি।
3. ভিটামিন
- ভিটামিন এ: গাজর, আম, লাল মরিচ, রিকোটা পনির (আংশিক-স্কিম), পালং শাক, ছোট মাছ এবং মিষ্টি আলু।
- ভিটামিন সি: ব্রকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, আঙ্গুর, কিউই, কমলা, লাল মরিচ এবং স্ট্রবেরি।
- ভিটামিন ই: বাদাম, ব্রকলি, পিনাট বাটার, পালং শাক, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি।
4. জিঙ্ক: ছোলা, দই ইত্যাদি ।
ছানি রোগ নির্ণয়
চোখের ছানির সমস্যা নির্ণয় করার জন্য, ডাক্তাররা আপনার চোখের অনেক ধরনের পরীক্ষা করেন । যেমন – রেটিনার টেস্ট, স্লিট ল্যাম্প টেস্ট, ভিজুয়াল অ্যাকুইটি টেস্ট ইত্যাদি । ডাক্তার আপনার চোখের চাপ পরিমাপ করতে বিভিন্ন দূরত্ব এবং টোনোমেট্রি থেকে আপনার চোখের দৃষ্টি পরীক্ষা করে । চিকিৎসকেরা চোখের চাপ টেস্ট করার জন্য বাতাসের পাফ ব্যবহার করেন । এছাড়াও, ডাক্তার আপনার চোখের পিউপিলকে বড় করার জন্য ওষুধের কয়েক ফোঁটা চোখের ভেতরে দেন । এর ফলে, আপনার চোখের অপটিক নার্ভ এবং রেটিনা পরীক্ষা করা ডাক্তারের পক্ষে অনেক বেশী সহজ হয় । এছাড়াও, আপনার চোখে কোনো ক্ষত হয়েছে কিনা তাও জানা যায় । ছানির সমস্যা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য, ডাক্তাররা আলোর প্রতি আপনার সংবেদনশীলতা এবং রঙ চেনার ক্ষমতাও টেস্ট করেন । পরীক্ষার পরেই ছানির তীব্রতা বোঝা যায় ।
আরও পড়ুনঃ ব্রণ দূর করার কিছু সহজ উপায়
ছানি চিকিৎসা
আপনার চোখ পরীক্ষা করার পর, আপনার চোখের ছানির অবস্থা বুঝে ডাক্তার চিকিৎসার পদ্ধতি বেছে নেন । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ছানি সারাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ওষুধ বা চোখের ড্রপ বাজারে পাওয়া যায় না । এই রোগের একমাত্র নিরাময় হল অস্ত্রোপচার । সাধারণত, ছানি খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, যার কারণে আপনার চোখের ক্ষতিও খুব ধীরে ধীরে হয় । তাই আপনি অস্ত্রোপচার করার জন্য সময় নিতে পারেন । কিন্তু যদি আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ছানির অস্ত্রোপচার করা উচিত । অনেকক্ষেত্রে, ছানি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে ।
ছানির অস্ত্রোপ্রচারের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা চোখের প্রাকৃতিক লেন্স অপসারণ করে এবং একটি কৃত্রিম লেন্সের মাধ্যমে সেটিকে প্রতিস্থাপন করেন । এই কৃত্রিম লেন্সকে ইন্ট্রা অকুলার লেন্স (IOL) বলা হয় । অস্ত্রোপচারের পরে, আপনার দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয় এবং আপনি পরিষ্কারভাবে সবকিছু দেখতে পারেন । তবে অতিরিক্ত সূক্ষ্ম কাজ করার জন্য আপনার চশমা লাগতে পারে ।
ছানি প্রতিরোধের টিপস – ছানি প্রতিরোধের উপায়
ছানি এড়াতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলুন –
- নিয়মিত আপনার চোখ পরীক্ষা করুন।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
- ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে । অতএব, এটির সঠিকভাবে চিকিৎসা করুন ।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহন করুন
- সানগ্লাস ব্যবহার করুন
- অ্যালকোহল সেবন করবেন না
- হরমোন জাতীয় ঔষধ বর্জন
শেষ কথা
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে, আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, ছানি বিশ্বে অন্ধত্বের একটি অন্যতম প্রধান কারণ । এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল সঠিক তথ্য এবং সচেতনতা, যা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি । আপনি এখন জানেন যে, কি কারণে ছানি হয় এবং এর লক্ষনগুলো কি কি । সেই সাথে আপনি নিশ্চই জেনে গেছেন যে, কীভাবে ঘরে বসে ছানির চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।