সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী, ডায়রিয়া হল ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ২য় প্রধান কারণ । ডায়রিয়া সাধারণত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয় । ডায়রিয়ার প্রধান লক্ষণগুলি হল, ঘন ঘন মলত্যাগ, বমি বমি ভাব, পেটে খিঁচুনি এবং ডিহাইড্রেশন । বর্ষাকালে ডায়রিয়ার সমস্যা বেশী দেখা যায়, তবে অন্যান্য যে কোন ঋতুতেও এটি হতে পারে । এটি সাধারণত এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং পরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় । তবে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া অনেক ধরনের জটিলতার কারণ হতে পারে । সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে ডিহাইড্রেশনের কারণে জীবন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে । ময়লা ও খারাপ খাবার গ্রহন করার কারণে প্রায়ই মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় । এমন অবস্থায়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি খাবারের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে । তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব ডায়রিয়ায় কী এবং ডায়রিয়া হলে কি ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে । তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়রিয়ার ডায়েট প্ল্যান সম্পর্কে ।
Table of Contents
ডায়রিয়া কি
ডায়রিয়াকে, ডায়ারিয়াও বলা হয়ে থাকে । এটি পরিপাকতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত একটি ব্যাধি বা অসুখ । এই সমস্যা হলে সাধারণত মল পানির মত পাতলা হয়ে যায় । এই রোগ প্রধানত রোটাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট হয় । সালমোনেলা বা ই. কোলাই-এর মতো ব্যাকটেরিয়া থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে । এছাড়াও, হরমোনজনিত সমস্যা, অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে ।
এছাড়াও সঠিক খাবার না খাওয়া এবং শরীরে পুষ্টির অভাবের কারণেও অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে । এই সমস্যা সাধারণত ১ থেকে ৩ দিন স্থায়ী হয়, তবে কিছু পরিস্থিতিতে এই সমস্যা দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়ে থাকে । কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী ডায়রিয়া অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে । দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া যা কমপক্ষে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং তা কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণ হতে পারে । তাই সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়রিয়ার চিকিৎসা করা জরুরী ।
আপনি যদি সঠিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন, রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলেন এবং সব সময় বিশুদ্ধ পানি পান করেন, তাহলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ডায়রিয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায় ।
ডায়রিয়ার প্রকারভেদ – ডায়রিয়া কত প্রকার
ডায়রিয়াকে প্রধানত ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায় । এর মধ্যে রয়েছে –
- তীব্র ডায়রিয়া: এটি ডায়রিয়ার সবচেয়ে নরমাল রূপ । এটি ১ থেকে ২ দিন স্থায়ী হয় এবং সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় ।
- ক্রমাগত ডায়রিয়া: এই ধরনের ডায়রিয়া ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে ।
- দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া: এই ধরনের ডায়রিয়া সাধারণত ৪ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় ।
আরও পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাক কি এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
ডায়রিয়ার কারণ কি – ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
ডায়রিয়ার প্রধান কারণগুলি নিয়ে দেওয়া হল –
- দূষিত পানি পানের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- পাকস্থলীতে সংক্রমণের কারণে এমনটা হতে পারে ।
- এটি ভাইরাল ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে যা, অন্ত্রকে প্রভাবিত করে । এই ধরনের ইনফেকশন, ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস বা অন্ত্রের ফ্লু নামেও পরিচিত ।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও ডায়রিয়া হতে পারে ।
- পরজীবী সংক্রমণের কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে ।
- অন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত কোন রোগের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- শরীরে পানির অভাবের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- ফুড পয়জনিং এর কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- দুর্বল হজম শক্তির কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- অনেক সময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে ।
- ডায়রিয়া রোটাভাইরাস এবং নোরোভাইরাস (উভয় সংক্রামক ভাইরাস সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়) ইনফেকশনের কারণে হয় । যা ছোট শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায় ।
- হরমোন সংক্রান্ত কোনো ধরনের রোগ থাকলে অনিয়মিত মলত্যাগ এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, অ্যাডিসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হরমোন স্টেরয়েডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না । এমন অবস্থায় তাদের ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
- অনেক সময় আমাদের পাচনতন্ত্র খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে । এমন অবস্থাকে malabsorption বলে ।
- অ্যাডেনোভাইরাস (একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণ) দ্বারা ইনফেকশনের কারনে ডায়রিয়া হতে পারে।
- রেডিয়েশন থেরাপির (ক্যান্সারের এক ধরনের চিকিৎসা) কারণে অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে ।
- কোন নির্দিষ্ট ধরণের খাবার হজমের অক্ষমতা, উদাহরণস্বরূপ, অনেকের ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা থাকে না (দুগ্ধজাত পণ্যে উপস্থিত ল্যাকটোজ নামক চিনি হজম করতে অক্ষমতা) । এমন অবস্থায় দুধ বা দুধ থেকে তৈরি যে কোন খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে ।
ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো কি কি – ডায়রিয়ার উপসর্গ
ডায়রিয়ার অনেক ধরনের লক্ষণ রয়েছে । কারণের উপর ভিত্তি করে, আপনার ডায়রিয়ার এক বা একাধিক লক্ষণ থাকতে পারে । ডায়রিয়ার সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হল –
- ঘন ঘন মলত্যাগ
- পানি যুক্ত মল
- বমি বমি ভাব
- পেটে ব্যাথা
- পানিশূন্যতা
- জ্বর
- মলের মধ্যে রক্ত
- ওজন কমে যাওয়া
শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া উপেক্ষা করা গুরুতর হতে পারে । আপনি যদি ঘন ঘন মলত্যাগ, বমি বমি ভাব এবং পেটে ব্যথার সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখতে পান তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন –
- কম প্রস্রাব
- শুষ্ক মুখ
- মাথাব্যথা
- ক্লান্তি
- জ্বর (102° ফারেনহাইটের বেশি)
- মলে রক্ত বা পুঁজ
- কালো মল
- বিরক্তি
- অলসতা, অত্যধিক ঘুম
- মগ্ন চোখ
ডায়রিয়ার জটিলতা কি কি
যদিও ডায়রিয়া কয়েকদিন থেকে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায় । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে যেমন –
ডিহাইড্রেশন – এটি মলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে । ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে –
- গাঢ় রঙের প্রস্রাব ।
- অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া ।
- অত্যধিক তৃষ্ণা ।
- গুরুতর বমি বমি ভাব ।
- ক্রমাগত বমি হওয়া ।
- দ্রুত হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া ।
- মাথাব্যথা ।
- শুষ্ক ত্বক ।
- মাথা ঘোরা
- বিভ্রান্তি ।
- বিরক্তি ।
- শুষ্ক মুখ ।
- ক্লান্তি
- তন্দ্রা
- চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ।
ডিহাইড্রেশন হল একটি মেডিকেল এমারজেন্সি (শিশু বা ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে আরও বেশি) এবং উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে যেকোনও উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে তার পরামশ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করুন ।
- ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা – শরীরে পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে । এই খনিজগুলি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
- কিডনি ফেইলিওর – এটি ঘটে যখন কিডনিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত বা তরল সরবরাহ হয় না ।
- অঙ্গের ক্ষতি – শরীরে পানি ও খনিজ পদার্থের অভাব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতিও হতে পারে ।
কীভাবে ডায়রিয়া নির্ণয় করবেন
এই রোগ নির্ণয় করার জন্য তেমন কোন মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না । এই সমস্যাটি এর লক্ষণগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই সনাক্ত করা যায় । তবে ডায়রিয়া কি কারণে হয়েছে তা নির্ণয় করার জন্য কিন্তু পরীক্ষা করা হয়ে থাকে । ডাক্তার প্রথমে রোগীকে পরীক্ষা করেন এবং রোগীর পূর্বের চিকিৎসা ও ভ্রমণের ইতিহাস নোট করেন ।
ডায়রিয়ার কারণ নির্ধারণ করার জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি একজন ডাক্তার দ্বারা সুপারিশ করা হয়ে থাকে –
- মল পরীক্ষা – রক্ত, পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য রোগীর মলের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তা পরিক্ষা করা হয় ।
- রক্ত পরীক্ষা – এগুলি অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা বা থাইরয়েডের সমস্যা পরীক্ষা করার জন্য করা হয় যা, ডায়রিয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ।
- ফাস্টিং ব্লাড টেস্ট – ফাস্টিং ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয় যে, ফুড পয়জনিং বা খাবারে অ্যালার্জির কারণে আপনার এই সমস্যা হয়েছে না কি ।
- ইমেজিং পরীক্ষা – প্রদাহ বা অন্ত্রের সাথে জড়িত কোনো কাঠামোগত রোগ নির্ণয় করার জন্য এই ইমেজিং পরীক্ষা করা হয় ।
- এন্ডোস্কোপি – এন্ডোস্কোপ হল একটি পাতলা, লম্বা নল, যার এক প্রান্তে ক্যামেরা এবং আলো লাগানো থাকে । উপরের এবং নীচের পরিপাকতন্ত্রের ছবি দেখতে এবং আলসার বা টিউমার বৃদ্ধির মতো কোনো অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করার জন্যে এই এন্ডোস্কোপি পরীক্ষা করা হয় ।
আরও পড়ুনঃ ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়
ডায়রিয়ায় কী খাবেন – ডায়রিয়ার জন্য খাবার
ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পেতে, সঠিক খাবার খাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । নিচে আমরা এমন কিছু খাবারের কথা বলব, যেগুলো খেলে ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে । আসুন বিস্তারিত জেনে নিই ডায়রিয়া হলে কী খাবেন –
স্যালাইন – ডায়রিয়া হলে বারে বারে স্যালাইন খান । বিশেষ করে মলত্যাগ করে আসার পরপরই যতটা সম্ভব স্যালাইন পান করুন । সম্ভব হলে ঘরেই স্যালাইন তৈরি করে খান । অন্যথায় বাজার থেকে ওরস্যালাইন কিনে এনে পান করুন । একবারে যদি আপনি বেশী স্যালাইন পান করতে না পারেন তাহলে এরি বারে বারে পান করুন । বার বার স্যালাইন পান করলে আপনার শরীরের পানি সল্পতা দূর হবে ।
কলা – কলা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক ভাল কাজ করে । আসলে, কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে । তাই, ডায়রিয়ার সময় কলা খাওয়া উপকারী হতে পারে ( তথ্যসূত্র )। অন্যদিকে, কলায় অ্যামাইলেজ-প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে, যা হজম হতে অনেক বেশি সময় নেয় । এর ছোট কণাগুলো অন্ত্রে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে । এর ফলে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় । এই কারণে, কলা ডায়রিয়া প্রোতিরোধী প্রভাব প্রদর্শন করে । এই প্রভাব ডায়রিয়ার উন্নতি করে হজম শক্তি বাড়াতে কাজ করে ।
ওটমিল – ওটমিল ডায়রিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর ভুমিকা পালন করে । বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়ার সময় ওটমিল খাওয়া ভালো । ওটমিল ডায়রিয়া উপশম করতে পারে ( তথ্যসূত্র )। তবে এটি ডায়রিয়া উপশম করতে কীভাবে উপকারী তার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই ।
দই – ডায়রিয়ার সময় দই খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় । এ কারণেই বহুদিন থেকে মানুষ ডায়রিয়ার সময় দই ব্যবহার করে আসছে । আসলে এতে অনেক ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অন্ত্রকে সুস্থ রাখার সাথে সাথে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে । NCBI-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, দইয়ে প্রোবায়োটিক ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া বা ল্যাকটোব্যাসিলি পাওয়া যায় । এই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করা সম্ভব । উপরন্তু, এটি শরীরকে খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে ( তথ্যসূত্র )।
ভাত – সাদা ভাত ডায়রিয়ার সমস্যায় উপকারী ভুমিকা পালন করে । প্রকৃতপক্ষে, চালে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দ্রবণীয় ফাইবার ডায়রিয়ার প্রভাব কমাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসূত্র ) । সেই সাথে ডাইরিয়ায় ভাতের পানি বা ভাতের মাড় পান করা উপকারী ।
রুটি – অনেক বিশেষজ্ঞ, ডায়রিয়ার সমস্যায় রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । মূলত, রুটিতেও চালের মত দ্রবণীয় ফাইবারও পাওয়া যায়, যা ডায়রিয়া উপশম করতে কাজ করে ।
কর্ন ফ্লেক্স – আমরা আগেই বলেছি যে ডায়রিয়ার সমস্যায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো । ডায়রিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য আপনারা কর্ন ফ্লেক্স খেতে পারেন । ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় । এই কারণে, কর্ণ ফ্লেক্স ডায়রিয়ায় উপকারী হিসাবে মনে করা হয় ।
ডায়রিয়ায় কী খাবেন না – ডায়রিয়া হলে কোন খাবার খাবেন না
ডায়রিয়া হলে মশলাদার খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে । একই সাথে, এই সমস্যায়, এমন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা পাকস্থলী এবং হজম প্রক্রিয়া উভয়ই নষ্ট করতে পারে । ডায়রিয়ায় কী খাওয়া উচিত তা জানার পর, এখন আপনারা জানতে পারবেন যে, ডায়রিয়ায় কী খাওয়া উচিত নয় ।
- ভাজা, মুরগির মাংস, ক্রিম এবং চর্বিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে ।
- ডায়রিয়া হলে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । এই সময়ে, পনির, মাখন ইত্যাদি খাওয়াও উচিত নয় । তবে দই খাওয়া যেতে পারে, কারণ দই হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে ভাল কাজ করে ।
- ব্রকলি, মটরশুটি এবং সবুজ শাকসবজির কারণে অ্যাসিডিটি হতে পারে । তাই ডায়রিয়া থাকা অবস্থায় এগুলো এড়িয়ে চলুন ।
ডায়রিয়ার ঘরোয়া প্রতিকার
ডায়রিয়ার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিচে দেওয়া হল –
- ডালিমের খোসা- ডালিমের খোসা শুকিয়ে ভাল করে পিষে নিন । এরপর এতে মধু মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার রোগীকে পান করুন ।
- ডাবের পানি– ডায়ারিয়ার সমস্যা দূর করতে কচি ডাবের পানি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয় ।
- মসুর ডালের পানি- ডায়রিয়ায় ছোট বাচ্চাদের মসুর ডালের পানি পান করাতে হবে । এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে খুব ভাল কাজ করে ।
- পর্যাপ্ত ঘুম – অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে । তাই ডায়রিয়ার সময় শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের পর্যাপ্ত ঘুমানো উচিত।
- মশলাদার বা মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন ।
- হলুদ- হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে । তাই দুধ বা বাটারমিল্কে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করুন ।
- আপেল সাইডার ভিনেগার – আপেল সাইডার ভিনেগার ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম । কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
- পুদিনা চা – পেটের ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি পেট সংক্রান্ত যে কোন রোগে পুদিনা খুবই উপকারী । ডায়রিয়া হলে দিনে ৩ থেকে ৪ বার পুদিনা পাতা দিয়ে চা পান করুন ।
- পুষ্টিকর খাবার খান – ডায়রিয়ার সমস্যা দ্রুত দূর করতে আপনার খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার যুক্ত করুন । যেমন: সবুজ শাকসবজি, মৌসুমি ফলের রস, তাজা ফল ইত্যাদি খান ।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা
ডায়রিয়ার চিকিৎসা আপনার ডায়রিয়ার বর্তমান অবস্থার তীব্রতা, ডিহাইড্রেশন, বয়স, চিকিৎসার ইতিহাস এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে । সাধারণত, ডায়রিয়া থেকে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠার জন্য রোগীর শরীরে তরল প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন । এর জন্য আপনার আরও বেশী বেশী তরল যেমন পানি, স্যালাইন এবং ফলের জুস পান করা উচিত । আরও গুরুতর ক্ষেত্রে, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে স্যালাইন শরীরে সরবরাহ করা হয় । এবং সেই সাথে ওষুধের মাধ্যমে মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয় । ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হলে, ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে সাজেস্ট করতে পারেন । যদি হজম সংক্রান্ত কোনো সমস্যার কারণে ডায়রিয়ার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী আপনাকে ওষুধ সাজেস্ট করবেন।
আরও পড়ুনঃ নাক থেকে ব্ল্যাকহেডস দূর করার উপায়
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার টিপস – ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে –
- পানীয় এবং রান্নার জন্য বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন ।
- ভালো করে রান্না করা, গরম খাবার খান ।
- কাঁচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি, চকোলেট, সোডা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন ।
- ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুবেন ।
- অবশিষ্ট খাবার অবিলম্বে ফ্রিজে রাখুন । কাঁচা ফল ও শাকসবজি খাওয়া এবং রান্না করার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন ।
- খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন ।
- একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খান ।
- খাবার খাওয়ার পর কিছুটা সময় হাঁটার অভ্যাস করুন, যাতে খাবার হজম হয় ।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন করা এড়িয়ে চলুন ।
- শিশুদের ক্ষেত্রে দুই দিনে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৩-৪ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ভাল না হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত ।
- দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত ।
- নোনতা খাবার খাওয়া উচিত ।
- রোটাভাইরাস ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ডায়রিয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায় । এই টিকা শিশুদের (1 বছর) বিভিন্ন মাত্রায় দেওয়া হয় ।
- রাস্তার খাবার এবং বাহিরের পানি হল জীবাণুর প্রধান কেন্দ্র । যা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে । আপনি যদি বাইরে খেতে চান, তাহলে ভাল কোন রেস্টুরেন্টে যান । ভ্রমণের সময় বা বাহিরে পানি পান করার সময় বোতলজাত পানি অথবা ফিল্টার করা পানি পান করুন ।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাদেরকে ডায়রিয়া এবং এর ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বলেছি । আমরা আশা করছি এই নিবন্ধটি পড়ার পরে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, কোন রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে ডায়েট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । রোগ কত দ্রুত নিরাময় হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে অসুস্থতার সময় কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে তার ওপর । তাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাবছেন ডায়রিয়া হলে কী খাবেন, তাহলে আপনারা উপরোক্ত খাবার খেতে পারেন । আর সেই সাথে ডায়রিয়া থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় গুলো মেনে চলুন ।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
ডায়রিয়া সম্পর্কে কিছু কমন প্রশ্ন
প্রশ্নঃ ডায়রিয়ার সময় ডিম খাওয়া যাবে ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সেদ্ধ ডিম ডায়রিয়ার সময় খাওয়া যেতে পারে ।
প্রশ্নঃ ডায়রিয়ায় কোকাকোলা পান করা যাবে ?
উত্তরঃ না, ডায়রিয়ার সময় কার্বনেটেড পানীয় খাওয়া একদম উচিত নয় । আর কোকা-কোলা হল একটি কার্বনেটেড পানীয়, তাই ডায়রিয়ায় কোকাকোলা খাওয়া ঠিক নয় ।
প্রশ্নঃ ডায়রিয়ার সময় আলু খাওয়া কি ভালো?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ডায়রিয়ায় খোসা ছাড়া আলু খাওয়া যেতে পারে ।
প্রশ্নঃ ডায়রিয়ার অবস্থা বেশী গুরুতর হলে কী করবেন?
উত্তরঃ যদিও কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে ডায়রিয়া সেরে যায়, কিন্তু অবস্থা বেশী খারাপ হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
প্রশ্নঃ ডায়রিয়ায় কি ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ এই বিষয়ে পর্যাপ্ত কোন গবেষণা নেই, তবে ডায়রিয়ার সময় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় ।
প্রশ্নঃ লেবু পান কি ডায়রিয়ার জন্য ভালো?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ডায়রিয়ায় লেবু পানি খাওয়া যেতে পারে । এটি পাচনতন্ত্রের উন্নতি করতে সক্ষম ।