ডোমেইন কি ? ডোমেইন কিভাবে কাজ করে

আপনারা প্রায় সবাই ডোমেইন শব্দটি শুনেছেন । কিন্তু আপনি কি জানেন ডোমেইন কি? আর ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন কেন গুরুত্বপূর্ণ ? যখন কেউ একটি নতুন ব্লগ শুরু করে, তখন প্রায় সবার মধ্যেই এই প্রশ্নগুলো আসে । কারণ প্রথম অবস্থায় বেশিরভাগ ব্লগারই ব্লগিং এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না ।আপনি যদি একজন ব্লগার হন বা নতুন ওয়েবসাইট ওপেন করতে চান এবং ডোমেইন সম্পর্কে আপনার ধারণা কম থাকে, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসতে পারে । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, ডোমেইন কি এবং ডোমেইন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

ডোমেইন কি

ডোমেইন নেম হল ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইটের পরিচয়, যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইটকে আইডেন্টিফাই করতে পারি । ঠিক যেমন প্রতিটি মানুষের আলাদা একটি নাম থাকে এবং সেই নামের মাধ্যমে আমরা সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করি । একইভাবে প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটকে তার ডোমেইন নেমের মাধ্যমে আইডেন্টিফাই করা হয় ।

যখন আমরা গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে, যে কোন কিছু লিখে সার্চ করি, তখন আমরা অনেকগুলো ওয়েবসাইট দেখতে পাই এবং সেই ওয়েবসাইট গুলো www.example.com, www.example.org এইভাবে দেখা যায় । এই example.com, example.org এগুলোকেই ডোমেইন নাম বলা হয় । যেমন – Facebook.com, Google.com, Yahoo.com ইত্যাদি । এই সবগুলোই ডোমেইনের নাম ।

আসুন আমরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে এই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি । আপনি যদি আপনার পাশের বাজারে একটি রেস্টুরেন্ট খুলতে চান, তাহলে আপনি অবশ্যই সেই রেস্টুরেন্টের কিছু একটা নাম রাখবেন । যে নামের মাধ্যমে সবাই আপনার রেস্টুরেন্টকে চিনবে । যেমন –  XYZ রেস্টুরেন্ট, ABC হোটেল ইত্যাদি ।

একইভাবে ইন্টারনেটে যখন আমরা কোন তথ্য শেয়ার করতে চাই অথবা কোনো পণ্য, পরিষেবা সেল করতে চাই, তখন আমাদের একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয় । এবং প্রতিটি ওয়েবসাইটের অবশ্যই কোন না কোন নাম থাকে । ওয়েবসাইট বা ব্লগের এই নামকেই ডোমেইন নেম বলা হয় । যে কোন ইউজার এই ডোমেইন নেম সার্চ করে সহজেই আপনার ওয়েবসাইটে পৌঁছাতে পারবে ।

ডোমেইন নাম হল আমাদের ওয়েবসাইটের অনলাইন পরিচয় । আমরা একবার যে ডোমেইন কিনব, সেই ডোমেইন নেমের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কেউ সেই ডোমেইন কিনতে পারবে না । ধরুন আমাদের এই ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম হল  bdtechtuner.com  এই ডোমেইন নামটি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আর কেউ কিনতে পারবে না । মানে প্রতিটি ডোমেইনের নাম ইউনিক অর্থাৎ দুটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম কখনই এক হবে না ।

প্রতি বছর ডোমেইনের নাম রিনিউ করতে হয় । আপনি চাইলে একেবারে ৪ থেকে ৫ বছরের জন্য একটি ডোমেইন নাম কিনে নিতে পারেন । আপনি যদি সময়মত ডোমেইন নাম রিনিউ না করেন, তাহলে অন্য যে কেউ আপনার ডোমেইন নাম কিনে নিতে পারে ।

DNS কি

DNS এর পূর্ণরূপ হল ডোমেইন নেম সিস্টেম । ডিএনএস এর মেইন কাজ হল ডোমেইন নেম কে IP এড্রেসে রূপান্তর করা । আমরা সাধারণত যেকোন ওয়েবসাইট তার ডোমেইন নাম দিয়ে ওপেন করি । এর জন্য, ওয়েব ব্রাউজারে গিয়ে, আমরা এড্রেস বারে কাঙ্ক্ষিত ডোমেইন নাম লিখে সার্চ করি ।

এই জায়গা থেকে DNS বা ডোমেইন নেম সিস্টেম তার কাজ শুরু করে । DNS সেই নামটিকে একটি IP এড্রেসে রূপান্তর করে, যা তার সার্ভারে নির্দেশিত হয় । এখন ডোমেইন নেম সিস্টেমের কারণে, নির্দেশিত আইপি এড্রেস সেই সার্ভার থেকে সমস্ত ডেটা নিয়ে আসে এবং ইউজারের সামনে উপস্থাপন করে ।

ডোমেইন নামের ইতিহাস

ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) হল ইন্টারনেট জুড়ে ব্যবহৃত একটি নেমিং কনভেনশন বা নামকরনের রীতি । এই সিস্টেমটি ডোমেইন নামকে, আইপি এড্রেসে রূপান্তর করে সিস্টেমটিকে তার স্ট্রাকচার প্রদান করে । ডিএনএস সিস্টেমটি ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে মিঃ পল মোকাপেট্রিস, একটি ডেডিকেটেড এবং ডিস্ট্রিবিউটেড ডিরেক্টরি সার্ভিস হিসাবে তৈরি করেছিলেন । এটি এইভাবে তৈরি করা হয়েছিল, কারণ রেজিস্ট্রিতে একটি সিঙ্গেল হোস্ট নাম ব্যবহার করার চেষ্টা করা প্রায় অসম্ভব ছিল ।

১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে ৬ টি নতুন হাই লেভেল ডোমেইন উপলব্ধ হয় । সেগুলো হল .com .org .net .edu .gov এবং .mil ।

১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ সর্বপ্রথম .com ডোমেইনটি রেজিস্টার করা হয়েছিল । এটি ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সিম্বলিক্স ইনক নামে একটি কম্পিউটার কোম্পানিতে রেজিস্টার করা হয়েছিল । আর এই ডোমেইনটির নাম ছিল symbolics.com ।

প্রথম ১০ টি নিবন্ধিত ডোমেইনের নাম নিচে দেওয়া হল –

১৫ মার্চ, ১৯৮৫ – symbolics.com

২৪ এপ্রিল, ১৯৮৫ – bbn.com

২৪ মে, ১৯৮৫ – think.com

১১ জুলাই, ১৯৮৫ – mcc.com

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫ – dec.com

৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ – northrop.com

৯ জানুয়ারী, ১৯৮৬ – xerox.com

১৭ জানুয়ারী, ১৯৮৬ – sri.com

৩ মার্চ, ১৯৮৬ – hp.com

৫ মার্চ, ১৯৮৬ – bellcore.com

১৯৮৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারীর আগে পর্যন্ত, শুধুমাত্র এআরপিএ নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস সহ সংস্থাগুলোর ডোমেইন নেম রেজিস্টেশনের অনুমতি ছিল । ১৯৮৬ সালে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ৷

১৯৯৫ সালের আগে পর্যন্ত বিনামুল্যে ডোমেইন নাম রেজিস্টার করা যেত । ১৯৯৫ সালে ২ বছরের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ডোমেইনের দাম ১০০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয়েছিল ।

১৯৯৬ সালে, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে পরিচিত ডোমেইন google.com রেজিস্টার হয় । গুগলের
অফিসিয়াল রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ছিল ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ।

১৯৯৭ সাল নাগাদ, তিনটি অক্ষর দিয়ে যতগুলো মিনিংফুল .com ডোমেইন নাম হয় তার প্রায় সবই রেজিস্টার করা হয়েছিল । এই ডোমেইন নামগুলোর দাম বর্তমানে এক মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে ।

১৯৯৮ সালে, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্লিনটনের অনুরোধে, মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ডিএনএসকে বেসরকারীকরণের একটি প্রস্তাব জারি করে, যা প্রাথমিকভাবে মার্কিন সরকারের অধীনে ছিল । নথিটি, বাজারে কম্পিটিশান বৃদ্ধি এবং বৃহত্তর ইন্টারন্যাশনাল পারটিসিপেন্টদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল । ১৯৯৮ সালের ৩০ জুলাই গ্রিন পেপার নামে পরিচিত একটি নথি তৈরি করা হয়েছিল, যার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল একটি প্রাইভেট নন প্রফিট অর্গানাইজেশনের কাছে । এই নথিতে, ইন্টারনেট ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) এর টেকনিক্যাল সিস্টেম উন্নত করার উপায়গুলি তুলে ধরা হয়েছিল । বিশেষত, এটি সেই প্রসেসকে বর্ণনা করে, যার মাধ্যমে ফেডারেল সরকার, ইন্টারনেট DNS-এর সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা একটি বেসরকারি নন প্রফিট কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে ।

ইন্টারনেট সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমালোচনার পর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NTIA) ১৯৯৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শ্বেতপত্রের খসড়া তৈরি করে । আর এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৯৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ICANN অর্থাৎ ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস এর জন্ম হয়েছিল ।

১৯৯৮ সালেই জার্মানির রেজেনসবার্গে ইন্টারনেটএক্স প্রতিষ্ঠিত হয় । যা বর্তমানে প্রায় 3.8 মিলিয়নেরও বেশি ডোমেইন পরিচালনা করে এবং ১০০০ টিরও বেশি TLDs অফার করে ৷ এটি একটি স্বীকৃত ICANN রেজিস্ট্রার এবং .ltda এবং .srl ডোমেইনের রেজিস্ট্রি ।

সেডো, বিশ্বের বৃহত্তম ডোমেইন ডিস্ট্রিবিউশান নেটওয়ার্ক, যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সদর দপ্তর কোলন (জার্মানি) এবং বোস্টন (USA) । বর্তমানে Sedo তে বিক্রয়ের জন্য 19 মিলিয়নেরও বেশি ডোমেইন নাম এবং পাঁচ মিলিয়ন পার্ক করা ডোমেইন নাম সহ বিশ্বব্যাপী এর প্রায় ২ মিলিয়ন গ্রাহক রয়েছে ।

২০০০ সালের ১৫ আগস্ট ৭ টি নতুন জিটিএলডি ডোমেইন সাধারণ নিবন্ধনের জন্য প্রস্তাব করা হয় । ICANN, ২০০০ সালের ১৬ নভেম্বর .aero, .biz, .coop, .info, .museum, .name এই ৭ টি জেনেরিক TLD চালু করার ঘোষণা দেয় ।

২০০৪ সালে আরও কিছু নতুন জিটিএলডি চালু করা হয় । সেগুলো হল  .asia, .cat, .jobs, .mobi, .tel, .travel ইত্যাদি ।

ICANN নতুন gTLDs প্রয়োগের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা শুরু করে ৷ এই নির্দেশিকাটি পরবর্তী বছরগুলিতে বেশ কয়েকবার আপডেট করা হয়েছে ।

২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর, ৭ টি নতুন জিটিএলডি সানরাইজ ফেজে প্রবেশ করে । সেগুলো হল .bike, .guru, .holdings, .plumbing, .clothing, .single, .ventures.

২০১২ সালের এপ্রিল মাসে, মিস্টার মাইক মান নামে একজন ডোমেইন নাম স্পেকুলেটর, ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ১৪৯৬২ টি ডোমেইন নাম রেজিস্টার করেন ।

২০১৩ সালের ১৫ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে, ICANN47- এ, ইউজারদের তাদের নিজস্ব ভাষায় ইন্টারনেট সার্ফ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রথম চারটি নথিতে সিগনেচার করা হয়েছিল ৷

২০১৩ সালে, চার অক্ষর দিয়ে যতগুলো মিনিংফুল .com ডোমেইন নাম হয় তার প্রায় সবই রেজিস্টার করা হয়েছিল । এর মোট সংখ্যা দাঁড়ায় 456,976 । এছাড়াও ২০১৩ সালেই নতুন জিটিএলডি প্রোগ্রাম বাস্তবে পরিণত হতে শুরু করে । ইতিমধ্যে উপলব্ধ টিএলডি ছাড়াও, আরও ১০০ টিরও বেশী নতুন জিটিএলডি যোগ করা হয়, এর ফলে নতুন নতুন ডোমেইন নাম রেজিস্টারের সুযোগ বেড়ে যায় ।

২০১৮ সালে ১০০০ টিরও বেশি নতুন জিটিএলডি উপলব্ধ হয়

২০১৯ সালে DNJournal তাদের ডোমেইন voice.com নগদ 30 মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নগদ বিক্রির খবর প্রচার করে । এই ডোমেইনটি একটি ব্লকচেইন কোম্পানি তাদের “ভয়েস” নামক একটি নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য কিনেছিল ।

কেন একটি ডোমেইন নাম গুরুত্বপূর্ণ

কোন ওয়েবসাইটের ঠিকানা আমরা যে ভাবে দেখি, কিন্তু সেটি সেই আকারে থাকে না । উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি ইউটিউবে প্রবেশ করতে চাই, তাহলে আমরা আমাদের ব্রাউজারের এড্রেস বারে youtube.com টাইপ করি । কিন্তু বাস্তবে ইউটিউবের এড্রেস এমন নয় । ইন্টারনেটে প্রতিটি ওয়েবসাইটের সংখ্যা আকারে একটি এড্রেস থাকে, যাকে IP ঠিকানা বা আইপি এড্রেস বলা হয় । এটি অনেকটা এরকম কিছু – 128.241.41.23 । এখন আপনারা চিন্তা করে দেখুন যে, এই ধরনের এড্রেস অর্থাৎ আইপি এড্রেস মনে রাখা কতটা কঠিন ? আর খুব চেষ্টা করলে আমরা সর্বচ্চ ৫ থেকে ১০ টি আইপি এড্রেস মুখস্ত রাখতে পারব । কিন্তু এরকম শত শত এড্রেস মনে রাখা অসম্ভব ।

তাই ওয়েবসাইটের এড্রেস সংখ্যাসূচক ফর্ম থেকে ওয়ার্ড ফর্মে পরিবর্তন করা হয়েছে । যাতে এটি পড়তে এবং সেই সাথে মনে রাখা সহজ হয় । একইভাবে, ওয়েব-এড্রেস সহজ করার জন্য একটি ডোমেইন নাম প্রয়োজন । এজন্য একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগের একটি ডোমেইন থাকা নাম প্রয়োজন ।

ডোমেইন এর গুরুত্ব কি

যেকোনো ওয়েবসাইটের জন্য এর ডোমেইন নাম অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ । প্রথমত, ডোমেইন নামের সাহায্যে সেই ওয়েবসাইটের এড্রেস মনে রাখা আমাদের জন্য সহজ হয় । একবার আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি এবং সেই ওয়েবসাইট যদি আমাদের পছন্দ হয়, তাহলে আমরা সেই ওয়েবসাইটের ঠিকানা মনে রাখি । এছাড়াও, একটি ছোট, ইউনিক এবং সহজে মনে রাখার মতো ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনতে অনেক বেশী সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে । এছাড়াও, একটি ভাল ডোমেইন নেমের কারণে, একটি ওয়েবসাইট দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে ।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি ওয়েবসাইটের এড্রেস হল example.technology.com.bd, যা অনেক বেশী লম্বা । আর লম্বা হওয়ার কারণে এই ডোমেইন নেম টি মনে রাখা কঠিন । কিন্তু যদি এই ওয়েবসাইটটির নাম example.com হয় তাহলে আপনি খুব সহজেই এটিকে মনে রাখতে পারবেন । মনে রাখবেন,  ছোট, ইউনিক এবং সহজে মনে রাখার মত ডোমেইন নাম আপনার ওয়েবসাইটটি জনপ্রিয় করে তুলতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে ।

ডোমেইন কিভাবে কাজ করে

চলুন আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক, ডোমেইন নেম কিভাবে কাজ –

প্রতিটি ওয়েবসাইটের ডেটা একটি সিঙ্গেল সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়, যাকে বলা হয় হোস্টিং । যখন কোন ডোমেইন, সার্ভারের সাথে কানেক্টেড থাকে, তখন ডোমেইন নামটি সার্ভারের আইপির সাথে সংযুক্ত হয় । যখন কোনো ব্যবহারকারী তার ডিভাইসের ব্রাউজারের এড্রেস বারে কোন নির্দিষ্ট ডোমেইন নাম লিখে এন্টার প্রেস করে, তখন সেই ডোমেইনের সাথে যুক্ত সার্ভারে সংরক্ষিত থাকা ডেটা, ইউজারের কাছে দৃশ্যমান হয় ।

আরও সহজ ভাষায় বললে, যখন আমরা একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করি, তখন আমরা সেই ওয়েবসাইটের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডেটা, ছবি এবং ভিডিও আপলোড করি, যা সেই ওয়েবসাইটের হোস্টিং সার্ভারে জমা হয় । যেখানে সেই হোস্টিং সার্ভার, সেই ওয়েবসাইটকে একটি নির্দিষ্ট আইপি এড্রেস প্রদান করে । যার মাধ্যমে সার্ভার এটি আইডেন্টিফাই করে । যখন কোন ব্যবহারকারী সার্চ বারে ডোমেইন নাম টাইপ করে, তখন ডোমেইন নামটি দ্রুত তার আইপি এড্রেসে রূপান্তরিত হয়, এবং যা সার্ভার দ্বারা অনুমোদিত হয় । এরপর সার্ভার সেই ওয়েবসাইটে উপলব্ধ সমস্ত ডেটা সেই ইউজারের সামনে ওয়েব পেজ আকারে প্রদর্শন করে ।

ডোমেইন কত প্রকার

ইন্টারনেটে অনেক ধরনের ডোমেইন নেম রয়েছে । কিন্তু আজ আমি আপনাদের সেই সব ডোমেইন সম্পর্কে বলব যে গুলো সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়

TLD – টপ লেভেল ডোমেইন

TLD বা টপ লেভেল ডোমেইন, ডোমেইন এক্সটেনশন নামেও পরিচিত । এটি ডোমেইনের নামের শেষ অংশ । অর্থাৎ ডটের পরের অংশ । টপ লেভেল ডোমেইন এক্সটেনশনের সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার ওয়েবসাইটকে র‍্যাঙ্ক করতে পারবেন । গুগল সার্চ ইঞ্জিনও টপ লেভেল ডোমেইনকে বেশি গুরুত্ব দেয় ।

কিছু TLD এক্সটেনশনের তালিকা নিচে দেওয়া হল –

  • .com (বাণিজ্যিক)
  • .org (সংস্থা)
  • .net (নেটওয়ার্ক)
  • gov (সরকার)
  • .edu (শিক্ষা)
  • .biz (ব্যবসা)
  • .info (তথ্য)

যেমন – Google.com , Facebook.com

সিসিটিএলডি – কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেন

এই ধরনের ডোমেইন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট দেশের জন্য ব্যবহার করা হয় । যেকোনো দেশের দুই অক্ষরের ISO কোডের উপর ভিত্তি করে এর নামকরণ করা হয় । কিছু সিসিটিএলডি ডোমেইনের তালিকা নিচে দেওয়া হল –

  • .bd: বাংলাদেশ
  • .in:  ভারত
  • .pk: পাকিস্তান
  • .ch:  সুইজারল্যান্ড
  • .cn:  চীন
  • .ru:  রাশিয়া
  • .br:  ব্রাজিল

সাবডোমেইন

সাবডোমেইন হল আপনার মেইন ডোমেইন নামের একটি ছোট অংশ । সাবডোমেইন কেনার প্রয়োজন হয় না । আপনি যদি কোনো টপ লেভেল ডোমেইন কিনে থাকেন, তাহলে আপনি সহজেই সেটি থেকে সাবডোমেইন তৈরি করতে পারবেন । ধরুন এখানে আমার মেইন ডোমেইনের নাম bdtechtuner.com এবং আমি যদি চাই এটি থেকে bangla.bdtechtuner.com নামে একটি সাবডোমেইন ক্রিয়েট করব, তাহলে আমি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এটি করতে পারব ।

কিভাবে একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করবেন

আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে, আমাদের ওয়েবসাইট বা অনলাইন বিজনেসের ব্র্যান্ডিং করার জন্য ডোমেইন নাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ । তাই একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখা উচিত ।

  • ডোমেইন নাম সবসময় ছোট এবং মনে রাখা সহজ, এমন নাম হওয়া উচিত । যাতে সবাই খুব সহজেই আপনার ডোমেইনের নাম মনে রাখতে পারে ।
  • সর্বদা আপনার নিশের সাথে রিলেটেড ডোমেইন নাম নির্বাচন করা উচিত ।
  • সর্বদা একটি টপ-লেভেল ডোমেইন কিনুন ।
  • একটি ইউনিক ডোমেইন নাম নির্বাচন করুন, যা যে কোন মানুষ সহজেই উচ্চারন করতে পারে ।
  • আপনি যদি আপনার সাইটের ডোমেইন নামে, আপনার  কীওয়ার্ড ইউজ করেন,  তাহলে এটি আপনার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট হতে পারে ।
  • আপনার ডোমেইন নামে কখনই চিহ্ন এবং সংখ্যা রাখবেন না ।

ডোমেইন কোথায় কিনবেন – কোথা থেকে ডোমেইন কিনবেন

যাইহোক, বর্তমানে অনলাইনে অনেক ডোমেইন রেজিস্ট্রার ওয়েবসাইট আছে, যেখান থেকে আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের জন্য ডোমেইন কিনতে পারেন । কিন্তু এখানে আমরা আপনাদের বিশ্বের সেরা কিছু ডোমেইন রেজিস্ট্রার ওয়েবসাইট সম্পর্কে বলব । কারণ এই ওয়েবসাইটগুলি ডোমেন পার্কিংয়ের জন্য সেরা :-

  1. GoDaddy.com
  2. Hostinger.com
  3. Dreamhost.com
  4. NameCheap.com
  5. Hostgator.com

বিশ্বের বেশিরভাগ ব্লগার এবং ওয়েব সাইট ডিজাইনার ডোমেইন কেনার জন্য এই ওয়েবসাইটগুলি ইউজ করেন । যদিও এগুলোর ডোমেইন এর রেট একটু বেশী । কিন্তু সেটা তাদের খ্যাতি, জনপ্রিয়তা ও সেবার মানের কারণে । তাদের কাস্টমার সেবা খুব ভাল এবং দ্রুত । আপনি যদি কোনও ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন তবে এখানে আপনি ২৪ ঘন্টা তাদের কাস্টমার সহায়তা পাবেন ।ভালো সার্ভিস পাওয়ার জন্য যদি একটু বেশি টাকা দিতে হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই । এছাড়াও এদের সিকিউরিটি ব্যবস্থা অনেক উন্নত মানের এবং সেই সাথে তারা অনেক বিশ্বস্ত । আপনারা ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট থেকে কম দামে ডোমেইন কিনতে পারবেন, কিন্তু দেখা যাবে কিছুদিন পরে আপনার ডোমেইনটি আর কাজ করছে না । আর আপনি যে ওয়েবসাইট থেকে ডোমেইন কিনেছেন সেখান থেকেও আপনাকে কোন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে না । তাই ডোমেইন কেনার সময়, কম টাকার কথা চিন্তা না করে বিশ্বস্ত জায়গা থেকে ডোমেইন কেনা উচিত ।

শেষ কথা

আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে, একটি ওয়েবসাইট তৈরিতে ডোমেইন নেম কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই একটি ডোমেইন কেনার আগে সুন্দর এবং সহজ একটি নাম সিলেক্ট করুন এবং সেই সাথে ট্রাস্টেড কোন ডোমেইন সার্ভিস প্রোভাইডারের থেকে ডোমেইন কিনুন । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । আরটিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান । ধন্যবাদ

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment