বর্তমান আধুনিক সভ্যতার এই বিশ্বায়নের যুগে সর্বত্র রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার। ভবিষ্যতে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে হলে তথ্য প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার , এর ভাল এবং খারাপ দিক, এই সব কিছু বিশ্লেষণ করে আমাদের আজকের আলোচোনার বিষয় হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা।
Table of Contents
সূচি তালিকা
- ভূমিকা:
- আধুনিক প্রযুক্তির সূচনাকাল:
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি:
- ইতিহাসের পাতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
- বর্তমানের আলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
- তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ:
- দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- তথ্যপ্রযুক্তি ও শাসন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা:
- চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
- গবেষণা ক্ষেত্রে ভূমিকা:
- বিনোদন ও তথ্যপ্রযুক্তি:
- যোগাযোগ বিপ্লব:
- ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা:
- নেতিবাচক প্রভাব:
- উপসংহার:
ভূমিকা:
বর্তমান যুগে যখন বিশ্বায়নের প্রভাব পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্তর থেকে আমাদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে তখন পৃথিবী ব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি সাথে সাথে প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বেড়েছে তথ্য ও যোগাযোগের।
আর এই ক্রমবর্ধমান তথ্য এবং যোগাযোগের অব্যবস্থাপনা দূর করে মানুষের জীবনকে অনেক বেশী সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তথ্য ও প্রযুক্তি। প্রযুক্তি হল বর্তমান যুগে মানুষের তৈরি সেই জাদুকাঠি যার মাধ্যমে মানুষ বহুবার একদিকে যেমন নিজের সমাজ তথা ব্যক্তিগত জীবনকে সহজ এবং উন্নত করে তুলেছে, তেমনই সভ্যতাকে সামনের এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বহুগুণে।
আধুনিক প্রযুক্তির সূচনাকাল:
বর্তমান প্রযুক্তির জন্মলগ্ন বলে ধরা হয় উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের শিল্প বিপ্লবের সময়কে। এই সময় থেকেই জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যাপকহারে শুরু হয়। তবে ই সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রাগত জটিলতা কম থাকার কারনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব তেমনভাবে মানুষের কাছে বোধগম্য হয়নি। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে ততই তথ্য ও প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ বুঝতে শুরু করেছে ।
মোটামুটি বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই পৃথিবী জুড়ে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবজনিত প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হতে থাকে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ধিরে ধিরে বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির জন্ম হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি:
সাধারণভাবে বলতে গেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো এমন এক প্রযুক্তি যা বর্তমান সভ্যতার তথ্য ও যোগাযোগ সংক্রান্ত ব্যাপারে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তার বা ব্যাবহার শুধুমাত্র এই দুটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান আধুনিক যুগে তথ্যকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বলা হয় । আর এই তথ্যের ওপর নির্ভর করেই বিকাশ লাভ করেছে আধুনিক যুগের অনেক ক্ষেত্র।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত সেই সকল তথ্যের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবস্থাপনা তথা বিতরণ করার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইনফর্মেশনাল ম্যানেজমেন্টের কাজ করে থাকে। পৃথিবী ব্যাপী এই মহাযজ্ঞ সম্পাদন করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে কম্পিউটিং, মাইক্রোইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি কিছু বিষয়ের ওপর।
ইতিহাসের পাতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাব বা প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভূত হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সম্ভবত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর থেকেই পৃথিবীর আন্তর্জাতিক এবং আর্থসামাজিক রুপ দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে নিজের দেশকে আরও বেশী শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রকমের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ঢল নেমে যায় ।
তারপর বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্বজুড়ে আরো একবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অল্প কিছু ব্যবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীর পটচিত্র খুব তাড়াতাড়ি বদলে যেতে থাকে। পৃথিবীর দুই পরাশক্তির মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে সারা পৃথিবী জুড়ে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও এক নোংরা প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
আর এই প্রতিযোগিতার ব্যাপক প্রভাব পড়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর। এরপর সত্তরের দশকে বিশ্বে ইন্টারনেট এর আগমন ঘটার সাথে সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একপ্রকার বিপ্লব ঘটে যায়। সেই সময় থেকে খুব দ্রুত গতিতে বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতি ঘটতে থাকে।
বর্তমানের আলোকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সত্তরের দশকেই সর্ব প্রথম তথ্যপ্রযুক্তি শব্দটির ব্যবহার হয়েছিল। বর্তমান সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গতিবিধি, আধুনিক পৃথিবী তথা ব্যক্তিগত জীবনের সর্বস্তরে ছড়িয়ে রয়েছে। আধুনিক শহর কেন্দ্রিক জীবনের সম্ভবত এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি আধিপত্য বিস্তার লাভ করে নি।
সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, জীবনের নানা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একের পর এক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ঘটিয়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রভাবও অনুভূত হচ্ছে ।
তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ:
একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুুগে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আমাদের পৃথিবী পুরোপুরিভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর তাই আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সেইসাথে দেশের মানুষকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির হাইওয়ে খ্যাত সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব উপজেলা গুলোতে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত তথ্য সেবা কেন্দ্র। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলা শহরে দেয়া হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণ ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট । দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিক্ষার্থীদের আরও বেশী জ্ঞান আহরনের লক্ষে চালু করা হয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা বা “ওয়াই ফাই” । দেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলতে সংযুক্ত করা হয়েছে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস নেয়ার সুবিধা। ফলে প্রযুক্তির ব্যাবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উন্নত জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সবখানে। ইন্টারনেট ব্যাবহারের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে অনেক ধরণের জটিল কাজ। অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও আমুল পরিবর্তন এসেছে এই প্রযুক্তির কারনেই ।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট জেনে নেয়া যায়।
- মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো, গ্রহণ, মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যূত বিল পরিশোধ, পানির বিল পরিশোধ ইত্যাদি করা যায়।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই বেশিরভাগ চাকরির আবেদন করা যায় এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যায়।
- অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করে বাস টার্মিনাল বা রেল স্টেশনে না গিয়েই বাস, ট্রেন বা প্লেনের টিকিট ক্রয় করা যায়।
- ইন্টারনেটের সহায়তায় প্রায় সব ধরনের দৈনিক পত্রিকা (যেমনঃ প্রথম আলো, সমকাল, বিডি-নিউজ২৪৭) পড়া যায়।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার পর্যন্ত অর্ডার করা যায়।
- যে কোন ধরণের ই-বুক পড়ার সুবিধা পাওয়া যায়।
- ইন্টারনেটের কল্যাণে আজ ঘরে বসেই দেশে বা বিদেশের খ্যাতনামা ডক্টরদের থেকে পরামর্শ গ্রহন করা যায়
- কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য ঘরে বসেই জেনে নেওয়া যায়।
- ইউটিউব এবং আরও কিছু ওয়েবসাইটের কল্যাণে ঘরে বসেই বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান (যেমনঃ সিনেমা, নাটক ইত্যাদি) উপভোগ করা যায়
তথ্য প্রযুক্তি ও শাসন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা:
বর্তমান আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার প্রধান ধারক বাহক তথা পরিচালক হল তথ্যপ্রযুক্তি। যে পৃথিবীতে তথ্য বা ডেটাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করা হয় সেখানে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা আশ্চর্যকর নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা থেকে শুরু করে জাতীয় শাসন ব্যবস্থাপনা সব কিছুই এখন তথ্য প্রযুক্তির ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল।
এছাড়াও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব ব্যবস্থা যত বেশি করে ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেভাবেই তথ্য প্রযুক্তির উপর আমাদের নির্ভরশীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির মূল কাজই হলো তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণ করা। নিজস্ব এই অনন্য বৈশিষ্টের দ্বারাই তথ্য প্রযুক্তি আধুনিক সকল শাসন সংক্রান্ত সেক্টরকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে। সেজন্য তথ্য প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে কোন সমস্যা ঘটলে যেকোনো সময় শাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে ভেঙে পড়তে পারে।
চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
তথ্য প্রযুক্তির আরও একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শাখা বিস্তার লাভ করেছে চিকিৎসাক্ষেত্রে । তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে অনেক রকম নিত্য নতুন আবিষ্কার বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবরতন নিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে সর্বপ্রথম উল্লেখ করতে হয় রোবোটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত আবিষ্কার ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এইগুলোর ব্যাবহার।
এগুলো প্রয়োগ করার মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ধারণ ও সেই রোগের সমাধান খুব সহজে, দ্রুতগতিতে এবং নির্ভুল ভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে নিত্য নতুন আবিষ্কারগুলো বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্তাকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষাক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রয়োগ করার ফলে বর্তমান শিক্ষাকে অনেক বেশি বাস্তবমুখী এবং যথাযথ করে তোলা সম্ভব হয়েছে।
গবেষণা ক্ষেত্রে ভূমিকা:
আধুনিক যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের গবেষণা সংক্রান্ত ব্যাপারে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহার, গবেষণার পুড়নো নিয়ম ও সমীকরণগুলিকে অতি দ্রুত পরিবর্তন করে দিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির ফলে জ্ঞান আহরনের জন্য এখন আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলার প্রয়োজন হয় না। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরণের বিশ্বমানের গবেষণাপত্র পড়ে ফেলা সম্ভব।
এছাড়াও গবেষণা সংক্রান্ত নানারকম বিষয় যেমন: আবহাওয়ার গতিবিধি নির্ণয়, জলবায়ুর চরিত্র নির্ণয়, ভূ-প্রাকৃতিক বিষয়ে গবেষণা, জরিপ সংক্রান্ত গবেষণা ইত্যাদি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে অত্যন্ত নির্ভুল ও সহজ ভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। সভ্যতার উন্নতির পূর্বশর্তই হলো উন্নত মানের গবেষণা। তাই বর্তমান গবেষণার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে সহজ করে তুলে তথ্যপ্রযুক্তি আসলে পৃথিবীর উন্নতির ক্ষেত্রেই সহায়তা করছে।
বিনোদন ও তথ্যপ্রযুক্তি:
বিনোদন জগতের ক্ষেত্রেও বর্তমান যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক ও বহুমুখী প্রভাব লক্ষ করা যায় । বর্তমান সময়ে বিনোদনের জন্য মানুষকে ঘরের বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরণের বিশ্বমানের বিনোদনের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে।
মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন সকল ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হওয়ার ফলে মানুষের কাছে বিনোদন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজলভ্য ও উপভোগ্য হয়ে উঠছে । তাছাড়া বিনোদনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগের ফলে বিনোদন জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ।
যোগাযোগ বিপ্লব:
যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে যোগাযোগ বলতে, তথ্য আদান প্রদান এবং পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত যোগাযোগ দুটোকেই বোঝানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিবর্তনের ফলে তৈরি হয়েছে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কদিন, ইন্সটাগ্রাম কিংবা ইমেইল এর মত ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা তথ্য আদান-প্রদানকারী মাধ্যমগুলি। এই ধরণের মাধ্যমগুলোকে ব্যাবহার করে মুহুর্তের মধ্যেই যে কোন ধরণের তথ্য সুরক্ষিতভাবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে পরিবহন সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে ।
ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা:
সমাজে সর্বক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটার ফলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে । প্রত্যেক বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরী করছে। আর এদের দ্বারাই বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির কর্মযজ্ঞ নিয়নন্ত্রিত হয়। বিশ্বের অনেক দেশ তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সর্বাধিক কর্মসংস্থান প্রদান করার মতন রেকর্ডও তৈরি করেছে।
নেতিবাচক প্রভাব:
পৃথিবীতে তথ্যপ্রযুক্তির হাজারো ভাল দিক থাকলেও এর অনেক কুফল বা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে একদিকে যেমন সমাজের অকল্পনীয় উন্নতি সাধন করা সম্ভব হচ্ছে, ঠিক তেমনি কিছু মানুষ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করছে।
একদিকে যেমন খুব দ্রুত মূল্যবান যে কোন তথ্য অতি সহজে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে, ঠিক তেমনি এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করেই কিছু অসাধু মানুষ বিশ্বব্যাপী এই সব মূল্যবান তথ্য চুরি করছে। যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে কিছু মানুষ তাদের পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন রকম ভুল তথ্য দিয়ে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং ভুল পথে পরিচালনা করছে। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন ধরণের পর্ণ-গ্রাফি চিত্র বা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক অবক্ষয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন । বর্তমানে কিছু কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যাবহার করে তরুন সমাজ অপসংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছে । তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক শপিং ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, ব্ল্যাক মার্কেটের আধুনিকীকরণও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ রোবটিক্স কী এবং রোবটিক্স সম্পর্কে বিস্তারিত
উপসংহার:
প্রযুক্তি হল বর্তমান মানব সভ্যতার জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ। আর সেই আশীর্বাদের সবচেয়ে বড় উপহার হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি । বর্তমান এই আধুনিক যুগ একদিকে যেমন তথ্য নির্ভর, ঠিক তেমনি প্রযুক্তির উপরও নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ এই দুয়ের অভিনব মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
বহু খারাপ বা নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্বের কথা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বরং সব দিক থেকে আমাদের সকলকে চেষ্টা করতে হবে, কিভাবে তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক দিক গুলোকে বাদ দিয়ে, এর ভালো দিকগুলোর বিস্তার ঘটানো যায় সে ব্যাপারে।
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে “প্রযুক্তির জন্য কিন্তু মানুষ নয়, মানুষের জন্যই প্রযুক্তি“। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বাদ দিয়ে জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যাবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের এই উপহারের অস্তিত্বকে পরিপূর্ণরুপে সার্থক করে তুলতে হবে।
6 thoughts on “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা”