প্রথাগত স্যাটেলাইট টিভি বা কেবল টিভির পাশাপাশি আমরা এখন আরও একটি টিভি এর কথা শুনে থাকি আর সেটা হল আইপিটিভি / IPTV । এখনও বাংলাদেশে আইপিটিভি এর প্রচলন ব্যপকভাবে শুরু না হলেও বিশ্বের অনেক দেশে স্যাটেলাইট বা কেবল টিভির থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় এই আইপিটিভি। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা জেনে নেই নতুন প্রযুক্তির টেলিভিশন আইপিটিভি সম্পর্কে ।
Table of Contents
নতুন প্রযুক্তির টেলিভিশন আইপিটিভি কি ?
আইপিটিভি মানে ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন। এছাড়াও এটিকে অনেকে ওয়েব টিভিও বলে থাকে। আপনি যদি আইপিটিভি সম্পর্কে না জেনে থাকেন তবে এখনই পরিষেবাটির সাথে পরিচিত হয়ে নিন। সাধারনত আমাদের দেশে স্যাটেলাইট বা কেবল অপটিক্সের মাধ্যমে টেলিভিশন পরিষেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ইন্টারনেট প্রোটোকল ব্যবহার করে যে টেলিভিশন সেবা প্রদান করা হয় তাকেই মুলত আইপিটিভি বলে। Netflix, Hulu এবং VOD হল আইপিটিভি এর কিছু উদাহরণ। মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে আইপি টিভির জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইপিটিভি এর সুবিধা
আইপিটিভি ব্যবহারের কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হল –
- এইচডি ও ফোরকে রেজ্যুলেশনে টিভি দেখা যাবে
- স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, পিসি এবং টিভি যে কোন ডিভাইসে আইপিটিভি উপভোগ করতে পারবেন
- অল্প ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে হাই কোয়ালিটির লাইভ স্ট্রিমিং দেখতে পারবেন
- আপনি আপনার ইচ্ছমত সময়ে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন
- আপনি আপনার ইচ্ছামত চ্যানেল নির্বাচন করতে পারবেন এবং শুধু সেই চ্যানেল গুলোর জন্যই বিল পে করবেন।
- ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন
- ভয়েস ওভার আইপি এবং টেলিফোন পরিষেবা
আইপিটিভি ব্যবহারের অসুবিধা
- IPTV ইউজ করার জন্য হাইস্পিড ইন্টারনেট থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
- নরমাল টেলিভিশন এর থেকে IPTV এর হ্যান্ডলিং খরচ (Handling Cost) অনেকটাই বেশি।
আইপিটিভি যে সব সেবা প্রদান করে
আইপিটিভি যে সব সেবা প্রদান করে তার মধ্যে অন্যতম হল ভিওডি (VOD) বা ভিডিও অন ডিম্যান্ড সেবা। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স বা এই ধরনের সেবা গুলো মুলত ভিওডি এর অন্তর্ভুক্ত। এতে মুভি, ওয়েব সিরিজ, নাটক, গান, টিভি সিরিয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আলাদা আলাদা প্লে লিস্ট আকারে দেয়া থাকে। এখানে গ্রাহক তার পছন্দ অনুযায়ী যখন যেটা ইচ্ছা দেখে নিতে পারেন।
আরেক রকমের আইপিটিভি পরিসেবার মধ্যে আছে দেশে প্রচলিত এন্টারপ্রাইজ ক্যাবল টিভি চ্যানেলগুলো। অর্থাৎ এটিএন বাংলা, গাজী টিভি, মাই টিভি, স্টার প্লাস, সনি ম্যাক্স, স্টার জলসা, স্টার স্পোটর্স, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ইত্যাদি চ্যানেল দেখানো ।
আইপিটিভি সংযোগের এর জন্য যা যা প্রয়োজন হবে
ডিসের ক্যাবলের মাধ্যমে যেভাবে টিভি দেখা হয় এখানেও বিষয়টি খুব একটা আলাদা কিছু নয়। আইপি টিভির ক্ষেত্রেও অপারেটররা ক্যাবল টিভির অপারেটরদের মতোই কানেকশন দিয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ক্যাবলের মাধ্যমে আইপি টিভির সার্ভিস পাওয়া যাবে। এজন্য প্রয়োজন হবে ৫ থেকে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট কানেকশন। এর মাধ্যমে এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে (বাফারিং ছাড়া) দেখা যাবে। ইন্টারনেট টিভি অথবা স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ক্যাবল সরাসরি টিভিতে কানেক্ট করতে হবে। আর সাধারণ টিভির ক্ষেত্রে একটি সেট-টপ বক্স এর প্রয়োজন পরবে। এই সেট-টপ বক্স এর কাজ হল ইন্টারনেট থেকে আসা অডিও এবং ভিডিওকে ডিকোড করে টিভিতে প্রদর্শন করা। এই সেট-টপ বক্স আইপি টিভি অপারেটরদের কাছে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও কম্পিউটারেও এই আইপি টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র অপারেটরের কানেকশন থাকলেই আপনি আইপি টিভি উপভোগ করতে পারবেন।
আইপি টিভির দাম
আমাদের মধ্যে অনেকেই টিভি কেনার আগে ভাবতে থাকেন যে, কত ইঞ্চি টিভি কিনবেন, সেই টিভির দাম কেমন হবে এবং কোন টিভি কিনলে ভালো হবে ইত্যাদি । আসলে টিভি কিনার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় আসা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার । এমন অবস্থায়, স্মার্ট টিভি এবং আন্ড্রয়েড টিভির দাম জানতে বিডিস্টল এর ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন । স্মার্ট টিভি এবং আন্ড্রয়েড টিভির দাম বিডিস্টল এর বিভিন্ন শো-রুমের সাথে তুলনা করে নিতে পারবেন ।
আইপিটিভি যেভাবে কাজ করে
আপনাদের অনেকেরই হয়ত মনে আছে একটা সময় ছিল যখন আমরা টিভি দেখার জন্য বাড়ির ছাদে বা বাড়ির বাহিরে উচু করে (সাধারনত বাঁশের সাথে) অ্যান্টেনা লাগানো হত। এই অ্যান্টেনার সাথে একটি চ্যাপ্টা ক্যাবল বা তারের মাধ্যমে টিভির সংযোগ করা হতো । অ্যান্টেনা বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে চেক করে একটা নির্দিষ্ট দিকে রাখা হতো যার মাধ্যমে রেডিও সিগন্যাল এসে টিভিতে অডিও এবং ভিডিও চলতো। এর মাধ্যমে বিশেষ করে বিটিভি দেখা যেতো। পরে ডিস অ্যান্টেনা এলো এবং ওই সময়ে বেশ দামি এই ডিস অ্যান্টেনায় অল্প কিছু বিদেশী চ্যানেল দেখা যেতো।
টিভি স্টেশন থেকে অনুষ্ঠান বেতার তরঙ্গে পরিণত করে অ্যান্টেনার মাধ্যমে বাতাসে ছেড়ে দেয়া হতো। আমাদের বাসার বাহিরে বা ছাদে থাকা অ্যান্টেনা সেই তরঙ্গ রিসিভ করে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তরিত করে টিভিতে দিয়ে দিতো। টিভি আবার সেই সিগন্যালকে ডিকোড করে অডিও-ভিডিওতে রূপান্তর করে আমাদের দেখাতো।
আইপি টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে একই সময়ে অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করে এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে পাঠানো হয়ে থাকে। আর যে কোন অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রেখে অথবা চ্যানেলের আগের কোন অনুষ্ঠান দেখতে হলে সেটি বেশ ভাল ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার থেকে দেখতে হয়।
সার্ভারে অনুষ্ঠান গুলোর ডিজিটাল ফরম্যাট স্টোর করা থাকে। আইপি টিভি প্রথমে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এরপর সার্ভার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে টিভিতে
অডিও ভিডিও সেন্ড করে। স্মার্টটিভিতে তা সরাসরি দেখা যায় কিন্তু স্মার্টটিভি না হলে সেট-টপ বক্স এর প্রয়োজন পরে। এই বক্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসা অডিও-ভিডিও ডেটা গুলোকে রিসিভ করে পরবর্তীতে তা ডিকোড করে টিভিতে চলার জন্য উপযুক্ত করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।
শেষ কথা
যদিও বর্তমানে আইপি টিভি একেবারে আধুনিক প্রযুক্তি, কিন্তু এর চাহিদা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে ।কারণ বর্তমানে মোবাইলের মধ্যেও ইন্টারনেট টেলিভিশন ধুকে পরেছে। ইন্টারনেটের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট টিভিরও অগ্রগতি ঘটবে বলেই আমরা আশা রাখি, তবে বাংলাদেশে আইপি টিভির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেট স্পীড বৃদ্ধি করতে হবে, কানেকশনের পিং রেসপন্স টাইম কমিয়ে আনতে হবে এবং সেই সাথে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে আনতে হবে, তবেই এই দেশে নতুন প্রযুক্তির টেলিভিশন আইপিটিভি জন্য ভবিষ্যৎ তৈরি হতে পারে।