ওয়ার্ক আউট করতে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পরছেন? অল্প কিছু দূর দৌড়ানোর পর হাঁপাতে শুরু করেন? দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিক শারীরিক কাজ করতে পারেন না? এসবের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝবেন যে আপনার স্ট্যামিনা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষণ গুলিকে স্ট্যামিনার ঘাটতির লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। স্ট্যামিনার অভাব হলে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, তবে অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের, “স্ট্যামিনা কি এবং কিভাবে স্ট্যামিনা বাড়ানো যায়” এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব ।
Table of Contents
স্ট্যামিনা কি
বাংলাতে স্ট্যামিনা শব্দটির অর্থ হল অভ্যন্তরীণ শক্তি। দীর্ঘক্ষণ ক্লান্ত না হয়ে যেকোনো কাজ করার শারীরিক সক্ষমতাকেই স্ট্যামিনা বলা হয়। আরও সহজ কথায় বলতে গেলে, স্ট্যামিনা হল ক্লান্তি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক যে কোন ধরনের কার্যকলাপ করার এবং চাপ বা অসুস্থতা সহ্য করার শক্তি (তথ্যসূত্র) ।
স্ট্যামিনা বাড়ানোর উপায় – স্ট্যামিনা বৃদ্ধির উপায়
স্ট্যামিনা বাড়ানোর অনেক ধরনের উপায় আছে । এগুলোর মধ্যে আমরা কিছু সহজ ও কার্যকরী ব্যবস্থার কথা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের শেয়ার করব। এগুলোকে অবলম্বন করে আপনারা আপনাদের স্ট্যামিনা বাড়াতে পারবেন –
ক্যাফেইন গ্রহণ করুন
আজ, সারা বিশ্বের মানুষ বিভিন্ন পানীয় এবং খাবারের মাধ্যমে ক্যাফেইন গ্রহণ করছে । ক্যাফেইন, লিপোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের লিপিডগুলিকে ভেঙে দেয়। এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। এর সাথে, শরীর এর্গোজেনিক অর্থাৎ ক্যাফেইন থেকে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ানোর সুবিধাও পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় 6 মিলিগ্রাম ক্যাফেইন স্ট্যামিনাকে উন্নত করতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন এরকম কিছু ব্যায়াম করলে শরীরের স্ট্যামিনা বাড়ানো যায় :
- সহনশীলতা: কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা একজন ব্যক্তির সহনশীলতা বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা, জগিং এবং নাচ। এটি শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন উন্নত করে । এছাড়াও ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
- শক্তি: শক্তির ব্যায়াম শরীরের পেশীকে শক্তিশালী করে। এটি ব্যক্তির স্ট্যামিনাও বাড়াতে পারে। এই ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে ওজন উত্তোলন, পুল আপ এবং পুশ আপ।
- ভারসাম্য: এই ধরনের ব্যায়াম ভারসাম্য তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরের নিচের অংশের ব্যায়ামের মাধ্যমে ভারসাম্য উন্নত করা যেতে পারে । ভারসাম্য অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে এক পায়ে দাঁড়ানো এবং গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত হাঁটা।
- নমনীয়তা : এই ব্যায়ামটি পেশীকে প্রসারিত করতে এবং নমনীয়তা আনতে সাহায্য করে। এ জন্য সাঁতার কাটা, থাই স্ট্রেচ, গোড়ালি স্ট্রেচ করা যেতে পারে।
গান শুনুন
স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে সঙ্গীত বা গান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, সঙ্গীত ব্যায়ামের সময়কাল এবং শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম (তথ্যসূত্র) । আরেকটি গবেষণায় লেখা হয়েছে যে, ব্যায়ামের সময় গান শোনার ফলে শ্বাসকষ্ট কমে যায় (তথ্যসূত্র) । এমন পরিস্থিতিতে স্ট্যামিনা বাড়ানোর উপায় হিসেবে মিউজিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
অশ্বগন্ধা
স্ট্যামিনা বাড়ানোর ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যেও অশ্বগন্ধা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, অশ্বগন্ধা একটি ভেষজ পরিপূরক, যা স্ট্যামিনা উন্নত করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এটি শরীরে শক্তির পরিমাণ বাড়াতে কাজ করে, যা শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করতে সাহায্য করতে পারে (তথ্যসূত্র) । অশ্বগন্ধা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।
আরও পড়ুনঃ সকালে হাটা বা মর্নিং ওয়াকের উপকারিতা
ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান শরীরে নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড নিয়ে আসে। এর ফলে রক্তনালীগুলো সরু হয়ে যেতে পারে। সংকীর্ণ ধমনী হৃৎপিণ্ড, পেশী এবং শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে, যা ব্যায়াম বা কাজকে কঠিন করে তোলে । কেউ ধূমপান করলে তার শরীরকে সুস্থ রাখতে হার্টকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এছাড়া ধূমপান ও সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও ধূমপানের ফলেও কফ উৎপন্ন হয়, যা ফুসফুসের জন্য ভালো নয়। এই সমস্ত কারণগুলি স্ট্যামিনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে (তথ্যসূত্র) ।
শুকনো খেজুর
কয়েকটি শুকনো খেজুর, ২-৩ টি কাজুবাদাম অথবা বাদাম ভাল করে ২৫০ গ্রাম দুধে ফুটিয়ে নিন । এরপর এই মিশ্রণটিতে চিনি অথবা মধু মিশিয়ে সকালে খেয়ে নিন । রাতে ঘুমানোর আগেও যদি এটি পান করতে পারেন।
অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
অ্যালকোহল সেবনের নেতিবাচক প্রভাব গুলোর মধ্যে আপনার স্ট্যামিনা কমে যাওয়া অন্যতম। এর নিয়মিত ব্যবহার আপনার শক্তি হ্রাস করতে পারে, যা স্ট্যামিনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । NCBI-তে প্রকাশিত চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, অ্যালকোহলের অতিরিক্ত মাত্রা রক্ত প্রবাহ এবং প্রোটিন শোষণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে (তথ্যসূত্র) । এই কারণে, এটা বলা যেতে পারে যে অ্যালকোহল পান করলে স্ট্যামিনা দুর্বল হতে পারে।
সোডিয়ামের মাত্রা
শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বজায় রাখা স্ট্যামিনা ভাল রাখার জন্য জরুরী । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, সোডিয়ামের অভাব শারীরিক কার্যকলাপে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ব্যায়ামের সময় শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়াতে হলে শরীরে সঠিক পরিমাণে সোডিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে হবে (তথ্যসুত্র) ।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, স্ট্যামিনা বাড়াতে ঘরোয়া উপায় হিসেবে খাওয়া যেতে পারে । পেশী তৈরি, বিকাশ এবং শক্তিশালী করার জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, প্রোটিন ধীরে ধীরে হজম হয় এবং শরীরকে প্রচুর শক্তি এবং স্ট্যামিনা দেয়। এই কারণে, প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে, একজন ব্যক্তি সারা দিন সক্রিয় বোধ করতে পারেন (তথ্যসূত্র) । তাই আপনার স্ট্যামিনা বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন ।
মেডিটেশন করুন
স্ট্যামিনা বজায় রাখার জন্য শরীরের সাথে সাথে মনের দিকে খেয়াল রাখাও অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমরা বেশিরভাগ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে তেমন কোন গুরুত্ব দেই না। তাই আপনি যখনই সময় পাবেন, তখনই মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। অনলাইনে অনেক মেডিটেশন অ্যাপ রয়েছে যেখানে থেকে আপনি মেডিটেশন করার গাইড লাইন পেয়ে যাবেন। যদি টাকা খরচ না করতে চান, তাহলে ইন্টারনেটে অনেক ফ্রি মেডিটেশনের ভিডিও পাওয়া যায়। সেগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। নিয়মিত মেডিটেশন করলে দেখবেন আপনার স্ট্যামিনা আগের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
স্ট্যামিনা বাড়াতে যা খাবেন
স্ট্যামিনা বাড়ানোর উপায়ের মধ্যে শুধু ব্যায়ামই নয়, শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত। আসলে, শরীরকে প্রচুর শক্তি দেওয়ার পাশাপাশি স্ট্যামিনা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা প্রয়োজন । নিচে জেনে নিন স্ট্যামিনা বাড়ানোর জন্য কোন কোন খাবার গ্রহন করা উচিত ।
- প্রোটিনঃ ব্রকলি, পালংশাক, মাশরুম, ফুলকপি, কেল, হাইসিন্থ, মটর, ওটস, মটরশুটি, কুমড়ার বীজ , বাদাম, চাল, সূর্যমুখীর বীজ , গমের রুটি, তিলের বীজ , চিনাবাদাম, কাজু বাদাম ইত্যাদি।
- ক্যালসিয়ামঃ দুধ, তিলের বীজ, চিয়া বীজ, টোফু, কিডনি বিন এবং বাদাম।
- আয়রনঃ পালং শাক, মসুর ডাল, কুমড়ার বীজ, অ্যাসপারাগাস, সুইস চার্ড, ব্রোকলি, টোফু, তিলের বীজ, সয়াবিন ইত্যাদি
- অন্যান্য খাবারঃ এ ছাড়াও স্ট্যামিনা বাড়াতে তাজা ফল ও শাক সবজি, বাদামি চাল, চর্বিমুক্ত বা কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং পনির খাওয়া যেতে পারে ।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে পাতলা চুল ঘন করবেন
স্ট্যামিনা বাড়ানোর টিপস
কীভাবে স্ট্যামিনা বাড়ানো যায় সেদিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি এই টিপসগুলোও অবলম্বন করা যেতে পারে, যেগুলো নিম্নরূপ।
পানি পান করুন
স্ট্যামিনা বাড়াতে পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি শরীরের সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ব্যায়ামের আগে পানি পান ক্লান্তি কমাতে পারে এবং স্ট্যামিনা বাড়াতে পারে (তথ্যসূত্র) । পর্যাপ্ত শক্তি পেতে এবং ক্লান্তি এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
বিশ্রাম নিন
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া একজন ব্যক্তিকে সতেজ এবং উদ্যমী রাখে। একইভাবে ব্যায়ামের সময় অল্প বিশ্রাম নিলে স্ট্যামিনা বাড়তে পারে। এটি শক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে। এ কারণে একটানা ব্যায়াম না করে কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় ব্যায়াম করুন এবং অন্য কোনো কাজের কারণে ক্লান্তি দেখা দিলে বিশ্রামের পরই পরবর্তী কাজ শুরু করুন ।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
শরীরের স্ট্যামিনা বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন অপরিসীম। এ কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার থেকে কম ঘুম সাধারণত স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে (তথ্যসূত্র) । পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম পায় এবং সেই সাথে আপনার স্ট্যামিনাও বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করুন
আপনার বা আমার নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করা প্রয়োজন । কারণ ওজন কম হওয়া একটি উদ্বেগের বিষয় এবং এটি অপুষ্টি বা কোন রোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যা আপনার স্ট্যামিনাকেও প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত ওজনও সমস্যা তৈরি করে, কারণ স্থূলতা নিজেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং অস্টিওপরোসিসের মত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এই সমস্ত কারণ একজন ব্যক্তির সহনশক্তি দুর্বল করতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
শেষ কথা
একজন সুস্থ মানুষের, কোনো কাজ করতে তেমন ক্লান্তি বা কষ্ট হয় না। কিন্তু যদি আপনার স্ট্যামিনা কম বলে মনে হয়, তবে আজ থেকেই আর্টিকেলে উল্লেখিত প্রতিকারগুলি গ্রহণ করা শুরু করুন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম কীভাবে স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে তা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান
ধন্যবাদ