শরীর সুস্থ এবং সবল রাখতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন । বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের মাধ্যমে, আমাদের শরীরের এই পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় । এমন অবস্থায়, ডিম আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করতে পারে । ডিম অনেক ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা আমাদের শরীরের, বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে । এই কারণেই, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব । এছাড়াও, ডিমের বিভিন্ন ব্যবহার এবং ডিম খাওয়ার ক্ষতি সম্পর্কিত তথ্যও আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব ।
Table of Contents
ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কেন ?
ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে । এতে প্রধানত প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড (লিনোলিক, ওলিক অ্যাসিড), আয়রন, ফোলেট, ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস এবং সেলেনিয়াম রয়েছে । সেই সাথে ডিমে উপস্থিত ভিটামিন A, ভিটামিন B12 এবং সেলেনিয়াম, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এছাড়াও, ডিমে রয়েছে জেক্সানথিন এবং লুটেইন, যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী । ডিমের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো নিচে আরও বিশদ ভাবে আলোচনা করব ।
ডিমের উপকারিতা – ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম খাওয়ার ফলে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায় । তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন, ডিম সরাসরি কোন শারীরিক সমস্যার নিরাময় নয় । এটি শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ বা রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
ওজন কমাতে – ডিম খাওয়া, শরীরের ওজন কমাতে বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে । প্রোটিন, অনেকটা সময় শরীরে শক্তি ধরে রাখে এবং পেট ভরা রাখে । এর ফলে বারবার খাওয়ার ইচ্ছা হয় না এবং শরীরে ক্যালরি যাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এই প্রক্রিয়াটি ওজন বৃদ্ধির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । ডিম খাওয়ার সাথে সাথে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামকেও আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন ।
হাড় শক্তিশালী করতে – ডিম, আমাদের শরীরের হাড় শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) করা একটি গবেষণায়, কিছু শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতিদিন ডিম খাওয়ানো হয়েছিল । এবং কিছু দিন পরে দেখা যায় যে, প্রতিদিন ডিম খাওয়ার ফলে শিশুদের হাড় অনেক বেশী শক্তিশালী হয়েছে এবং হাড় সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও কিছুটা কমেছে । ডিমে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিনের কারনেই মূলত আমাদের শরীরের হাড় শক্তিশালী হয় ।
চোখের জন্য – প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খাওয়া চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারি । ডিমের মধ্যে জেক্সানথিন এবং লুটেইন নামক পুষ্টি উপাদান থাকে, যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে । ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের কারণে বয়স-সম্পর্কিত অন্ধত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অর্থাৎ বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে । এমন অবস্থায় ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে এবং চোখকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্ত করুন । এছাড়াও, ডিমে উপস্থিত ভিটামিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে ।
মস্তিষ্কের জন্য – ডিম আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও, অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার । ডিমে রয়েছে ভিটামিন-বি১২ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এছাড়াও, ডিমের কুসুমে কোলিন থাকে, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে খুব ভাল কাজ করে (তথ্যসূত্র) । একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তির কোষগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে (তথ্যসূত্র) । এমতাবস্থায় বলা যায় যে, ডিম আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ।
শক্তি বৃদ্ধি – প্রতিদিন সকালে ডিম খাওয়া, সারাদিন শরীরে শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে । ডিমে, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা শরীরের সমস্ত কোষে শক্তি উৎপাদন করতে সহায়তা করে । এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে । তাই সারাদিন শরীরে শক্তি বজায় রাখতে চাইলে, প্রতিদিন সকালে একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন ।
পেশী তৈরি করতে – ডিমের অনেক সুবিধার মধ্যে আরও একটি সুবিধা হল, ডিম পেশী গঠনে সাহায্য করে । ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে । এই পুষ্টি উপাদান শরীরের পেশী গঠন করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । সেই সাথে, নিয়মিত ডিম খেলে পেশী শক্তিশালী হয় । এই কারণে, যারা জিম করে তারা প্রতিদিন জিম করার পরে কয়েকটি করে ডিম খায় ।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে – ডিম, ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এই বিষয়ে করা একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে, ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুমের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিস্ট্য রয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা হলেও সহায়তা করে থাকে । তাই নিয়মিত ডিম খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় । তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন যে, ডিম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এটা ঠিক, তবে এটিকে কোনওভাবেই ক্যান্সারের নিরাময় হিসাবে বিবেচনা করবেন না । কারো যদি ক্যান্সারের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, চিকিৎসা গ্রহন করুন ।
রক্তচাপের জন্য – যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ডিম খাওয়া উপকারী হতে পারে । মূলত, ডিম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । এই সম্পর্কিত একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, ডিমের সাদা অংশের অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ (রক্তচাপ কমানোর) প্রভাব রয়েছে । ডিমের সাদা অংশ রক্তনালীর ভাসোডিলেশন ঘটাতে পারে । তাই এটা বলা যায় যে, ডিমের সাদা অংশ, স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে । তবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ডিমের কুসুম খাওয়া এড়িয়ে চলুন ।
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে – আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ডিম কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমে উপস্থিত ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ এবং সেলেনিয়াম, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । যার ফলে আমরা অনেক ধরনের রোগ থেকে দূরে থাকতে পারি ।
প্রোটিনের ভালো উৎস – ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে । যার ফলে প্রতিদিন ডিম খেলে, আমার শরীরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পায় । আর প্রোটিন, আমাদের শরীরের কোষ মেরামত এবং নতুন কোষ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এছাড়াও, প্রোটিন শিশু, কিশোর এবং গর্ভবতী মহিলাদের বিকাশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই শরীরে প্রোটিন সরবরাহ করতে, আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ডিম অন্তর্ভুক্ত করুন । তবে গর্ভাবস্থায় দিনে কয়টি ডিম খাওয়া উচিত হবে, তা একবার সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নেওয়া উচিত ।
গর্ভাবস্থার জন্য – মহিলাদের গর্ভকালীন সময়েও ডিমের উপকারিতা দেখা যায় । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডিম গর্ভবতী মহিলাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রদান করে এবং অনাগত শিশুকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে ।ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান, ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে (তথ্যসূত্র) । তবে গর্ভকালীন সময়ে ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া উচিত ।
ত্বকের জন্য – ডিম আমাদের ত্বকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী । মূলত, ডিমের সাদা অংশ এবং ডিমের খোসা ত্বকের বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে । এছাড়াও, ডিমের ব্যবহার ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর সমস্যা কমিয়ে বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে ।
চুল এবং নখের জন্য – ডিম, চুল এবং নখের জন্যও অত্যন্ত উপকারী । ডিমের কুসুমে উপস্থিত পানিতে দ্রবণীয় পেপটাইড চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । চুলে ডিম ইউজ করলে, চুল সংক্রান্ত অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এছাড়াও ডিমের ব্যবহার আমাদের নখের জন্য উপকারী । সাধারণত বায়োটিনের (ভিটামিন-এইচ) অভাবের কারণে নখ ভাঙার সমস্যা হয়ে থাকে । এমতাবস্থায় নিয়মিত ডিম খেলে, বায়োটিনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং নখ ভাঙার সমস্যা এড়ানো যায় ।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা, ব্যবহার এবং অসুবিধা
ডিমের পুষ্টি উপাদান – ডিমের পুষ্টির মান
অনেকেই জানতে চেষ্টা করেন যে, ডিমে কী পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে । আর্টিকেলের এই পর্যায়ে ডিমের পুষ্টি উপাদান সম্পকে জেনে নেয়া যাক –
পুষ্টি | প্রতি ১০০ গ্রামে |
শক্তি | 513 কিলোক্যালরি |
প্রোটিন | 6.41 গ্রাম |
মোট লিপিড (চর্বি) | 28.85 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 57.69 গ্রাম |
ফাইবার | 3.2 গ্রাম |
চিনি | 54.49 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম, Ca | 128 মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম, Na | 176 মিলিগ্রাম |
ফ্যাটি অ্যাসিড, মোট স্যাচুরেটেড | 16.03 |
কোলেস্টেরল | 400 মিলিগ্রাম |
ডিমের ব্যবহার – ডিম কীভাবে ব্যবহার করবেন
ডিম বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে । নিচে ডিমের কিছু ব্যবহার দেওয়া হল –
কিভাবে খাবেন :
- ডিম সিদ্ধ করে খেতে পারেন
- ডিম দিয়ে ভুর্জি বানিয়ে খাওয়া যায়
- ডিমের অমলেট তৈরি করে খেতে পারেন
- রুটির সাথে ডিম দিয়ে রুটি-অমলেট হিসেবে খেতে পারেন
- এগ রোল তৈরি করে খেতে পারেন
- ডিমের তরকারি বানিয়ে ভাত বা রুটির সাথে খাওয়া যায়
- কেক তৈরিতে ডিম ব্যবহার করা যেতে পারে
- ডিম বিরিয়ানি বানিয়ে খাওয়া যায়
- ডিম ফ্রাইড রাইস আকারে নেওয়া যেতে পারে
- ডিমের বার্গার তৈরি করা যায়
কখন খাবেন –
- ডিমের তৈরি অমলেট বা ব্রেড অমলেট সকালের ব্রেকফাস্টে খেতে পারেন ।
- সকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম বা জিমের পরে ডিম সেদ্ধ করে খেতে পারেন ।
- এগ ফ্রাইড রাইস, এগ বিরিয়ানি বা ডিমের কারি দুপুরের বা রাতের খাবার হিসেবে খেতে পারেন ।
- এগ রোল সন্ধ্যায় স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন ।
প্রতিদিন কয়টা ডিম খাবেন –
প্রতিদিন কতটা ডিম খাওয়া উচিত, তা নির্ভর করে আপনার বয়স ও স্বাস্থ্যের উপর । ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন একটি বা দুইটি ডিম খেতে দেওয়া উচিত । সেই সাথে, বড়দের ক্ষেত্রেও একটি বা দুইটি ডিম খাওয়া উপকারী । আপনার যদি যাই প্রেশারের সমস্যা থাকে তাহলে ডিমের কুসুম খাওয়া এড়িয়ে চলুন । আপনার শরীরের জন্য কয়টি ডিম খাওয়া ঠিক হবে, তা জানার জন্য একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করতে পারেন ।
ডিমের কুসুম নাকি সাদা অংশ, কোনটি স্বাস্থ্যকর ?
অনেক সময় অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, ডিমের শুধুমাত্র সাদা অংশ খাওয়া উচিত এবং হলুদ অংশ একেবারেই খাওয়া উচিত নয় । আসলে অনেক মানুষ মনে করে যে, ডিমের হলুদ অংশ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় । তাহলে চলুন বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে জেনে নেওয়া যাক –
- ডিমের সাদা অংশ- ডিমের সাদা অংশে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য । আর ডিমের সাদা অংশে কোলেস্টেরল এবং চর্বি না থাকায়, এই সাদা অংশ সব ধরনের মানুষ খেতে পারে ।
- ডিমের কুসুম– ডিমের হলুদ অংশে অর্থাৎ ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল এবং চর্বি বেশি পরিমাণে থাকে । তাই ডিমের কুসুম বা হলুদ অংশ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে । উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ ডিমের কুসুম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় । তাই ডিমের কুসুম সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত । তবে এর অর্থ এই নয় যে, ডিমের কুসুম সব সময় আমাদের শরীরের জন্য অপকারী । ডিমের কুসুমে পেপটাইড থাকে, যা আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । এছাড়াও নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেশারের রোগীদের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম উপকারী ।
ডিম কেনার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?
ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পূর্ণরূপে তখনই পাওয়া যাবে, যখন সঠিক ডিম নির্বাচন করা হবে । এমন অবস্থায়, আপনি যদি জানতে চান যে, ডিম কেনার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত, তাহলে আর্টিকেলের এই অংশে দেওয়া তথ্য আপনার উপকারে আসতে পারে ।
- ডিম কেনার সময় ভাল করে দেখে নেবেন যে, ডিম যেন কোথাও ফাটা না থাকে ।
- সাধারণ আকারের ডিম নির্বাচন করুন ।
- ডিম যদি দীর্ঘদিন ধরে দোকানে রাখা থাকে তাহলে সেই ডিম কিনবেন না ।
- ডিম টাটকা কি না তা জানতে ডিম পানিতে ভিজিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন । ডিম যদি পানিতে ডুবে যায়, তাহলে বুঝবেন যে ডিম তাজা । আর যদি ডিম পানির উপরে ভেসে ওঠে তাহলে বুঝবেন ডিম অনেক দিনের পুড়োনো ।
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের বলব কিভাবে ডিমকে দীর্ঘদিন ভাল রাখা যায় ।
কিভাবে ডিম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করবেন
একসাথে বেশি করে ডিম কেনার সময়, অনেকেই চিন্তা করেন যে, কীভাবে ডিমকে বেশিদিন ভাল রাখা যায় । ডিম অনেকদিন সংরক্ষণ করার উপায় নিচে দেওয়া হল –
- ডিম কখনই এমন জায়গায় রাখবেন না, যেখানে কোন কিছুর ধাক্কা লাগতে পারে ।
- ডিম সবসময় ডিমের ক্রেটে বা ডিম রাখার খাঁচাতে রাখুন ।
- ডিম ফ্রিজে রেখে অনেকদিন পর্যন্ত ভাল রাখতে পারবেন ।
এখন আমরা ডিম খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে বলব ।
ডিমের ক্ষতি – ডিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – ডিম খাওয়ার কিছু অপকারিতা
ডিম খাওয়ার সুবিধা এবং অসুবিধা নির্ভর করে, ডিম কয়টা এবং কীভাবে খাওয়া হচ্ছে তার ওপর । এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিচে আমরা ডিম খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব –
- ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে, তাই এটি বেশি পরিমাণে খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে (তথ্যসূত্র) ।
- ডিম খাওয়ার অসুবিধার মধ্যে অ্যালার্জিও অন্তর্ভুক্ত । অনেক মানুষের মধ্যে ডিম খেলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা যায় । হাসের ডিমের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হওয়ার সমস্যা বেশী দেখা যায় ।
- ডিম সঠিকভাবে রান্না না করে খেলে, বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে (তথ্যসুত্র) ।
- যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তাদের ডিম সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত । ডিম বেশী খেলে এই ধরনের রোগীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন যে, ডিম খেলে কি ধরনের উপকার পাওয়া যায় । একই সাথে ডিম খাওয়ার কিছু অসুবিধা সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন । ডিম আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে । কিন্তু, ডিম কোন রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় নয় । কেউ যদি কোনো ধরনের গুরুতর সমস্যায় (হার্ট, কিডনী, হাই প্রেশার, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি) আক্রান্ত থাকেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডিম খাওয়া উচিত নয় । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।