বর্তমানে বেশীরভাগ মানুষ, উচ্চ রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন । অবশ্য এই উদ্বিগ্ন হওয়াটাও স্বাভাবিক, কারণ শরীরে যেকোনো কিছুর ভারসাম্যহীনতার কারণে, শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করে । এর মধ্যে অন্যতম হল কোলেস্টেরল । কোলেস্টেরল বৃদ্ধি নিয়ে খুব কম মানুষই চিন্তা করেন । অনেক কারনেই আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যেমন- সঠিক খাদ্যের অভাব, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ইত্যাদি । এমন পরিস্থিতিতে সঠিক ডায়েট, আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, কোলেস্টেরল কী, কোলেস্টেরল কমাতে কী খাবেন আর কী খাবেন না সে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
Table of Contents
কোলেস্টেরল কী
কোলেস্টেরল হল মোমের মতো এক ধরনের পদার্থ, যা আমাদের রক্তের অভ্যন্তরে পাওয়া যায় । এই কোলেস্টেরল, কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে এবং নতুন কোষ গঠন করতে সহায়তা করে । কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে গেলে তা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে, রক্তনালীতে চর্বি জমা হতে শুরু করে, যা পরে এতটাই বেড়ে যায় যে, তা শরীরে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ।
কোলেস্টেরল কেন বাড়ে
কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সমস্যা জেনেটিক কারণেও হতে পারে । কিন্তু এই সমস্যার প্রধান কারণ হল সঠিক জীবনযাপনের অভাব । সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, আপনি এই রোগটি হওয়া থেকে নিজেকে প্রোটেক্ট করতে পারবেন এবং এটি হওয়ার পরেও সঠিক জীবনযাপন করার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন ।
হাই কোলেস্টেরলের লক্ষণ
হাই কোলেস্টেরল সনাক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই । আপনার শরীরের কিছু টেস্ট করার পরই একজন চিকিৎসক এ বিষয়ে আগাম তথ্য দিতে পারবে । তবে আপনার ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় । যাইহোক, ক্রমাগত বমি বমি ভাব, চোয়াল এবং বাহুতে ব্যথা হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া এবং এ সবের সাথে অতিরিক্ত ঘামের মতো সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত ।
আরও পড়ুনঃ ডিম খাওয়ার উপকারিতা, ব্যবহার এবং অসুবিধা
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে কী হতে পারে ?
শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন । যেমন –
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে গেলে ধমনীতে প্লাক জমতে পারে । এই প্লাক যথেষ্ট বড় হয়ে গেলে, এটি করোনারি ধমনীতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে ।
- হৃদপিন্ডের পেশীতে রক্তের প্রবাহ কমে গেলে, বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে ।
- ধমনীতে তৈরি হওয়া প্লাক, রক্তকে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছাতে বাধা প্রদান করে । এর ফলে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক এবং হার্টের সমস্যা সহ আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে ।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য খাবার
কোলেস্টেরল সম্পর্কে এত কিছু জানার পর আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কোলেস্টেরল কমাতে কী খাবেন? তাই কোলেস্টেরল কমানোর ডায়েট সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –
অ্যাভোকাডো – কোলেস্টেরল কমাতে অ্যাভোকাডোকে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন । অ্যাভোকাডোতে উপস্থিত ফাইটোস্টেরল, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । এটি LDL ( খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সক্ষম (তথ্যসূত্র) । এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি করে অ্যাভোকাডো খাওয়া, ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল, নন-এইচডিএল-সি এবং এলডিএল-পি কমাতে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে । এ কারণেই অ্যাভোকাডোকে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী বা কোলেস্টেরল কমাতে সক্ষম খাবারের মধ্যে গণ্য করা হয় । তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অ্যাভোকেডো অন্তর্ভুক্ত করুন ।
বাদাম – কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বাদাম খুব কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে । আর এই বৈশিষ্ট্যগুলি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । বাদাম ছাড়াও আখরোট, সূর্যমুখী বীজ, সরিষার বীজের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে । এমন পরিস্থিতিতে, এটা বলা যায় যে, সীমিত পরিমাণে এগুলি খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকারী ভুমিকা পালন করে ।
চর্বিযুক্ত মাছ – NCBI এর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া, মানুষের শরীরে HDL-কোলেস্টেরল অর্থাৎ ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এছাড়াও, কোলেস্টেরল কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকরা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড LDL বা ক্ষতিকারক কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায় না, কিন্তু এটি HDL বা ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । এটি রক্ত জমাট বাঁধা এবং প্রদাহের মত সমস্যা থেকে আমাদের হার্টকে রক্ষা করতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে । ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছের মধ্যে রয়েছে টুনা (টিনজাত বা তাজা) মাছ, স্যামন, ইলিশ এবং ম্যাকেরেল । প্রতি সপ্তাহে দুবার এই ধরনের মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় ।
গোটা শস্য – কোলেস্টেরল কমানোর উপায় হিসেবে, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে ।গোটা শস্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে (তথ্যসূত্র) ।NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিদিন ৩০ গ্রাম করে গোটা শস্য খাওয়া, শরীরের মোট কোলেস্টেরল এবং LDL কোলেস্টেরল, উভয়ের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে । এমন অবস্থায় বলা যায় যে, খাবারে গোটা শস্য খাওয়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে । তাই, আপনারা আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ওটমিল, ওটস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন (তথ্যসূত্র) ।
ফল এবং বেরি – প্রায় সব ধরনের ফলে ফ্যাট, সোডিয়াম এবং ক্যালোরি কম থাকার পাশাপাশি কোলেস্টেরলের পরিমানও কম থাকে। ফলকে ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড) এর মতো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের প্রধান উৎস হিসাবে মনে করা হয় । NCBI-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফলের মধ্যে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে । এই পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ফাইবার । আপেল, ডালিম, তরমুজ, আম, আনারস, আঙ্গুর, কমলা, বরই, স্ট্রবেরি, কলা এবং নাশপাতি ফাইবারের ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় । এছাড়াও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেরির উপকারিতা দেখা যায় । গবেষণায় দেখা গেছে, বেরি, বেরির জুস এবং বেরির নির্যাস, সবই মোট এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইড এবং HDL-C কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে । এর ভিত্তিতে, বলা যায় যে, প্রতিদিনের ডায়েটে ফল এবং বেরি অন্তর্ভুক্ত করা, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
ডার্ক চকোলেট – ডার্ক চকোলেট, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী খাবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । কারণ ডার্ক চকোলেটের মধ্যে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা রয়েছে । NCBI-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে যে, অল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ ২ থেকে ১২ সপ্তাহের জন্য ডার্ক চকলেট খাওয়া, LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সক্ষম । অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে ডার্ক চকলেট ১ সপ্তাহ খেলে, HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং LDL এবং HDL কোলেস্টেরলের অনুপাত হ্রাস করে । এর ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে, কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য হিসাবে, ডার্ক চকলেট গ্রহণ উপকারী হতে পারে ।
রসুন – রসুন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । রসুনের মধ্যে অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিয়া বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (তথ্যসূত্র) । এর উপর ভিত্তি করে, রসুনকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর উপায় হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে ।
শাকসবজি – শাকসবজি, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । কোলেস্টেরল কমানোর জন্য খাদ্যের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন শাক সবজি খায়, তাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা, শাক সবজি না খাওয়া মানুষের তুলনায় কম । তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রান্না করা সবজি এবং শাক অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ।মূলত, শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী । শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি আলু, টমেটো, ব্রকলি, গাজর, ভুট্টা, মটর, পালং শাক, কলমি শাক, লাল শাক জাতীয় শাকসবজি খাওয়া, কোলেস্টেরল কমাতে বেশী উপকারী (তথ্যসূত্র) ।
গ্রীন টি – ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টির উপকারিতা যেমন দেখা যায়, তেমনি এর আরও অনেক উপকারিতার মধ্যে আরও একটি হল, গ্রীন টি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম । গ্রিন টি নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় । তবে, ভাল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উপর এর কোন প্রভাব দেখা যায়নি (তথ্যসূত্র) । অন্যদিকে, NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নরমাল চা বা কালো চায়ে, গ্রীন টি এর তুলনায় কম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই কারণে, নরমাল চা কোলেস্টেরলের উপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলে না (তথ্যসূত্র) ।
অলিভ অয়েল – কোলেস্টেরল কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, খাবারে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের উপকারিতা দেখা যায় । CDC-এর মতে, জলপাই তেলে মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই রয়েছে, যা ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । এছাড়াও, জলপাই তেল পলিফেনল সমৃদ্ধ, যা HDL (ভালো কোলেস্টেরল) -কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে সহায়তা করে । এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমাতে পারে (তথ্যসূত্র) । এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, অলিভ অয়েলের ব্যবহার, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর উপায় হতে পারে ।
প্রোটিন – কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, প্রোটিন একটি ভালো পুষ্টি উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় । একটি গবেষণায় ৭০ জন পুরুষ ও মহিলার উপরে, প্রায় ১২ সপ্তাহ ধরে হুই প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছিল । ১২ তম সপ্তাহে গিয়ে দেখা গেছে যে, সেই সমস্ত পুরুষ এবং মহিলার রক্তে মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকটা কমে গেছে । এছাড়াও, সয়া প্রোটিনের ব্যবহারও শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে (তথ্যসূত্র) । এমন পরিস্থিতিতে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া উপকারী প্রমাণিত হতে পারে ।
মশলা – একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কিছু কিছু মশলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-হাইপারকোলেস্টেরলেমিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ । মশলা তে থাকা এই বৈশিষ্ট্যগুলি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-হাইপারকোলেস্টেরলেমিক বৈশিষ্ট্যগুলি, ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা কমিয়ে, ভাল কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এই মশলা গুলোর মধ্যে রয়েছে এলাচের বীজ, লবঙ্গ, ধনে বীজ, মৌরি তেল, মৌরি বীজ, রসুন এবং আদা (তথ্যসূত্র) ।
কোলেস্টেরল বেশি হলে কী খাওয়া উচিত নয়
আর্টিকেলের উপরের অংশে আমরা আলোচনা করছি, কোলেস্টেরল কমাতে কী খাওয়া উচিত । আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব, কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কী খাওয়া উচিত নয় । কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত –
- লবণ গ্রহণ সীমিত করুন: কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে, সীমিত পরিমাণে লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন । দিনে ১ চা চামচের বেশী লবণ খাবেন না । লবণ খাওয়া কমালে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে না, কিন্তু এটি আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে ।
- কোলেস্টেরল বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া সীমিত করুন: প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের কম কোলেস্টেরল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । মাংসে (বিশেষ করে লাল মাংসে) কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি থাকে । এছাড়াও, ডিমের কুসুম, গলদা চিংড়ি এবং দুগ্ধজাত খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি থাকে । তাই এই ধরনের খাবার গুলো এড়িয়ে চলুন । আর যদি খেতেই হয় তাহলে একদম সীমিত পরিমাণে খান ।
- অ্যালকোহল সেবন করবেন না: অ্যালকোহল সেবনের কারণে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে । আর ওজন বৃদ্ধির কারণে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং সেই সাথে HDL এর মাত্রা কমে যেতে পারে । এছাড়াও, অ্যালকোহল সেবনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায় ।
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট সেবন এড়িয়ে চলুন: স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি রয়েছে, এমন খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন । স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে এমন কিছু খাবার হল – পনির, চর্বিযুক্ত মাংস, দুগ্ধজাত খাবার এবং পাম ওয়েল ইত্যাদি । যেসব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে সেগুলো গ্রহন করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ।
- কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার কম খান – কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে । ভাত ও রুটি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ওটস, বার্লি, ভুট্টা ইত্যাদি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন ।
- জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলুন – কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে জাঙ্কফুড এবং স্ট্রিট ফুড সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন । এছাড়াও, তেলে ভাজা যে কোন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । সফট ড্রিঙ্কস, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, কেক, চকলেট, মিষ্টি, প্যাকেট জাত ফলের রস, প্যাকেটজাত খাবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় । তাই এসব খাবার খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বর্জন করুন ।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি ? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার
উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য ডায়েট চার্ট – কোলেস্টেরলের ডায়েট চার্ট
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী খাওয়া উচিত নয় এবং কী খাওয়া উচিত তা বলার পর, এখন আমরা আপনাদের সাথে কোলেস্টেরল কমানোর ডায়েট চার্ট শেয়ার করছি । কোলেস্টেরল কমানোর ডায়েট চার্ট নিচে দেওয়া হল –
খাদ্য | কি পান করতে হবে |
---|---|
আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে | ১ কাপ ফ্যাট মুক্ত দুধ এবং ২ টি বাদাম |
ব্রেকফাস্ট | ১ কাপ খিচুড়ি, সালাদ বা ওটস |
হালকা নাস্তা | ১ টি মাঝারি আকারের কলা, আপেল বা ডালিম |
লাঞ্চ | ১ কাপ সালাদ, ২ টি রুটি, বেশী করে মিক্সড সবজি |
সন্ধ্যার নাস্তা | ১ টি মাঝারি আকারের যে কোনো ফল |
রাতের খাবার | ১ কাপ সালাদ, ২ টি রুটি, মিক্সড সবজি |
ঘুমানোর পূর্বে | ১ কাপ লো ফ্যাট দুধ |
দ্রষ্টব্য: উপরে দেওয়া ডায়েট চার্টটি শুধুমাত্র একটি নমুনা চার্ট । ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে এবং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট পরিবর্তন হতে পারে ।
কোলেস্টেরল কমানোর টিপস – কোলেস্টেরল কমানোর উপায়
কোলেস্টেরল কমাতে ডায়েট চার্ট ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত । নিচে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু টিপস দেওয়া হল –
- অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার কারণে LDL অর্থাৎ ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । তাই আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন ।
- আপনার প্রতিদিনের রুটিনে শারীরিক কার্যকলাপ বা ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করুন । এটি শরীরের কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ।
- হাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এড়িয়ে চলুন এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন ।
- ফাইবার রয়েছে এমন খাবার গ্রহন করুন । ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, শরীরে কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে ।
- ধূমপান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন । ধূমপান রক্তনালীর ক্ষতি করে, ধমনী শক্ত করে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় । তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন ।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কখনও কখনও এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন ।
- একটি ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন কোলেস্টেরলের সমস্যা ও অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে ।তাই প্রতিদিন একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করার চেষ্টা করুন ।
- রেড মিট খাওয়ার পরিবর্তে সপ্তাহে যে কোন একদিন মুরগির মাংস খান । সপ্তাহে দুই দিন ডিম খেতে পারেন । তবে আপনি চাইলে প্রতিদিন মাছ খেতে পারেন ।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে রান্নায় তেলের ব্যবহারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রান্না করার সময় যতটুকু সম্ভব কম তেল ব্যবহার করুন । একবার কোনো তেলে রান্না করার পর সেই তেলে পরবর্তীতে আর কোন রান্না করা থেকে বিরত থাকুন ।
শেষ কথা
রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে । তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের খাবারগুলি বলার পাশাপাশি, কোলেস্টেরল কমানোর বা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি ডায়েট চার্টও শেয়ার করেছি । এ ছাড়া কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কী খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কেও তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন যে, সবার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি এক রকম হয় না, তাই কোলেস্টেরল এড়াতে কী খাবেন এবং কী খাবেন না সে সম্পর্কে একবার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করা উচিত । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।