আমাদের সমাজে যৌনতা এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা সরাসরি বা খোলাখুলি কথা বলতে লজ্জা বোধ করি । আর এই কারণেই যৌনতা সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসা করা হয় না এবং দিন দিন সমস্যাটি বাড়তে থাকে । অনেক বিবাহিত মানুষ এই চিন্তা করেন যে, “ কীভাবে যৌন ক্ষমতা বাড়ানো যায়” ? আর এই কারনে অনেকেই এখন অনলাইনে, ” যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় ” সম্পর্কে সার্চ করে থাকেন । যৌন আকাঙ্ক্ষা বা ক্ষমতার অভাব, দাম্পত্য জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে । যৌন সম্পর্কের উভয় অংশীদারের যৌন ইচ্ছা যদি ভিন্ন হয়, তবে সম্পর্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে । বর্তমানে বাজারে যৌন ইচ্ছা এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় । এবং অনেকেই এই যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ঔষধ গ্রহনও করে থাকেন । কিন্তু এই যৌন শক্তি বাড়ানোর ওষুধগুলো আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । আপনি ওষুধ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে পারবেন । খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে যৌন শক্তি বাড়ানো সম্ভব । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব ।
Table of Contents
লিবিডো কি ?
আপনি কি জানেন লিবিডো কি? লিবিডো অর্থ হল যৌন ইচ্ছা । বর্তমানে অনেক মানুষ কম লিবিডোর সমস্যায় ভুগে থাকেন ।কিন্তু আমাদের সামাজিক পরিস্থিতির কারণে, বেশীরভাগ মানুষ এটা নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না । যার ফলশ্রুতিতে তারা সুস্থ যৌন জীবন উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয় ।
আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আমরা আপনাদের সাথে, কম লিবিডো বা যৌন ইচ্ছা কম হওয়ার কারণ, কীভাবে যৌন ক্ষমতা বাড়ানো যায়, উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী খাদ্য, যৌন শক্তি বাড়াতে ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
যৌন শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষণ – যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ
যৌন শক্তি কমে যাওয়ার লক্ষন নিচে দেওয়া হল –
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বীর্যপাত না হওয়া
- অকাল বীর্যপাত বা দ্রুত বীর্যপাত
- আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম
- সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট না হওয়া
- সহবাসে অক্ষমতা
- যৌন অঙ্গ ঠিক মত শক্ত না হওয়া
আরও পড়ুনঃ ডিম খাওয়ার উপকারিতা, ব্যবহার এবং অসুবিধা
লিবিডোর অভাবের কারণ – যৌন ইচ্ছা কম হওয়ার কারণ
যৌন ইচ্ছা কম হওয়ার পেছনে অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে । যৌন ক্ষমতা কম হওয়ার কিছু কারণ নিচে দেওয়া হল –
মানসিক চাপ – সেক্সড্রাইভে মানসিক চাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যৌন ইচ্ছা না থাকার বা যৌন ইচ্ছা কম হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল মানসিক চাপ । বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রবন্ধে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মানসিক চাপ পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের যৌন ইচ্ছা বা ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে । তাই যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায় হল মানসিক চাপ কমানো । যদিও মানসিক চাপ এড়ানো বা কমানো একটু কঠিন । অনেক কারনেই একজন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং যৌনতার ইচ্ছাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে ।
অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহার – যৌন ইচ্ছার উপর মাদকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল এবং ড্রাগ ব্যবহার, আপনার যৌন জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেই সাথে আপনার যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহন করা বন্ধ করুন । আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনেও পুরুষদের যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে ।
ঘুমের অভাবের কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে
ঘুমের অভাবের কারণে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা লিবিডো বা যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে । ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ নারী ও পুরুষ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম ঘুম পুরুষদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং মহিলাদের জন্য উত্তেজনা এবং প্রচণ্ড উত্তেজনার সমস্যাগুলির সাথে জড়িত ।
রোগের কারণে
কিছু রোগের কারণেও আপনার যৌন শক্তি কমে যেতে পারে । এই রোগগুলির মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, মূত্রনালীর ইনফেকশন, হাই ব্লাড প্রেশার, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, প্রোস্টেট বৃদ্ধি, যৌন রোগ ইত্যাদি। এছাড়া, অতিরিক্ত স্থূলতার কারণেও যৌন শক্তি কমে যেতে পারে ।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিষণ্নতা, হাই ব্লাড প্রেশার এবং অন্যান্য সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ, আপনার যৌন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে বা যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে । এগুলো একজন ব্যক্তির যৌন জীবনকে বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাবিত করতে পারে ।
এমন কিছু সাধারণ ওষুধের মধ্যে রয়েছে স্ট্যাটিন, বিটা-ব্লকার, অ্যান্টিসাইকোটিকস, বেনজোডিয়াজেপাইনস, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এবং অ্যান্টিকনভালসেন্ট । সন্দেহজনক ওষুধ বন্ধ করা বা পরিবর্তন করার কারণে অবস্থার উন্নতি হতে পারে ।
তবে যে কোন ওষুধের ডোজ পরিবর্তন বা বন্ধ করার আগে, আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন ।
হরমোন ভারসাম্যহীনতা
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দুই থেকে তিনগুণ বেশি ।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে যেমন যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন চুল পড়া, হাড় ভাঙা এবং বন্ধ্যাত্ব ।
৪০ এবং ৫০ বছর বয়সের পর থেকে মহিলাদের যৌন ইচ্ছা হ্রাস পেতে শুরু করে ।
টেস্টোস্টেরন হল, পুরুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন । এই হরমোন বেশিরভাগই অণ্ডকোষ থেকে উদ্ভূত হয় । আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা আপনার যৌন জীবনকে প্রভাবিত করে ।
আপনার শরীরে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে আপনার যৌনতার ইচ্ছাও কমে যাবে ।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তাহলে দ্রুত আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন । আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে, আপনি হরমোন সাপ্লিমেন্ট এবং টেস্টোস্টেরন জেল ইউজ করতে পারেন । তবে যে কোন ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহনের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন ।
আরও পড়ুনঃ কোলেস্টেরল কমাতে কী খাবেন আর কী খাবেন না ? কোলেস্টেরল ডায়েট
কিভাবে যৌন শক্তি বাড়ানো যায় – যৌন শক্তি বাড়ানোর উপায়
যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল –
যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর খাবার
কিছু খাবার গ্রহন করার মাধ্যমে, কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনারা আপনাদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন । নিচে যৌন শক্তি বাড়ানোর খাবার সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হল –
তরমুজ – ২০০৮ সালে, টেক্সাস এএন্ডএম-এ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তরমুজের মধ্যে একটি “ভায়াগ্রা প্রভাব” রয়েছে । তরমুজে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপিন এবং সিট্রিন নামে পরিচিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রক্তনালীকে শিথিল করতে সাহায্য করে । আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে আপনার যৌন ক্ষমতা বাড়াতে চান, তাহলে এটি কোনও ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই আপনার বেডরুমে সহায়ক হতে পারে ।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন- প্রতিদিন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন, আমাদের শক্তির স্তর এবং মেজাজকে প্রভাবিত করে, যা যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে । কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা কিছু খাবারে পাওয়া যায় ।
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সুস্বাস্থ্য এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করে । অন্যদিকে জাঙ্ক ফুড এবং স্ট্রিট ফুড আপনার মেটাবলিক সিনড্রোম এবং হৃদরোগকে প্রভাবিত করতে পারে, যা আপনার শারীরিক যৌন ফাংশনের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । এছাড়াও, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা যৌন ইচ্ছা কমাতে পারে ।
ডার্ক চকলেট – ডার্ক চকলেট, যৌন উত্তেজনা বা যৌন ইচ্ছা বাড়াতে সুপারফুডের মতো কাজ করে । ডার্ক চকোলেটে রয়েছে এল-আরজিনিন, যা যৌন উত্তেজনা বাড়াতে সহায়তা করে এবং সেই সাথে আপনার যৌন জীবনকে অনেক বেশী আনন্দময় করে তোলে ।
কালোজিরা – কালোজিরা যৌন শক্তি বাড়ানোর একটি অব্যর্থ উপাদান । কালোজিরাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিংক, ভিটামিন-এ,-বি, -বি২, নিয়াসিন সহ আরো অনেক ধরনের উপাদান রয়েছে । এজন্য নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে, স্পার্ম সংখ্যা এবং স্পার্মের গুনাগুণ বৃদ্ধি পায় ৷ এছাড়াও কালোজিরা যৌনতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
মেথি- মেথি যৌনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার যৌন ইচ্ছা এবং যৌন আনন্দের উন্নতির পাশাপাশি টেস্টোস্টেরনের হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে । এছাড়াও মেথি, শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ।
অশ্বগন্ধা – অশ্বগন্ধা হল যৌন শক্তি বাড়ানোর অন্যতম সেরা উপায় । প্রতিদিন দুধের সাথে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেলে পুরুষের বীর্য শক্তিশালী হয় এবং যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায় । এটি যৌন দুর্বলতা থেকে মুক্তি দিতে খুব ভাল কাজ করে ।
বেশী পরিমাণে পানি পান করুন – পানি একটি ক্লিনজারের মত কাজ করে, অর্থাৎ পানি আপনার শরীর থেকে অমেধ্য এবং বিষাক্ত পদার্থগুলিকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ।
আপনি যদি পানি কম পান করেন, তাহলে অমেধ্য, দূষণকারী এবং টক্সিনগুলি আপনার টিস্যুতে তৈরি হতে থাকবে এবং আপনার শরীরের জৈব রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হবে । আর এগুলো আপনার হরমোন এবং যৌন ক্ষমতাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে । এবং সেই সাথে বীর্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করতে পারে ।
শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকলে বীর্য অতিরিক্ত ঘন হবে এবং এর কারণে শুক্রানুগুলোর সাঁতার কাটতে সমস্যা হতে পারে । বীর্য একটি তরল পদার্থ, তাই আপনার প্রতিদিন বেশি করে পানি পান করা উচিত ।
কলা – কলা ফাইবারের একটি ভালো উৎস । আর কলাতে উপস্থিত থাকা ফাইবার হল দ্রবণীয় ফাইবার । এটি যৌন শক্তি বা যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । এছাড়াও কলায় উপস্থিত ভিটামিন এবং মিনারেল, লিবিডো বা যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি করতে পারে । যৌন শক্তিবর্ধক খাবারের তালিকার শীর্ষ পাঁচের মধ্যে কলা রয়েছে । কলা, আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেওয়ার পাশাপাশি, আপনার কামশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । সুতরাং, যৌন ক্ষমতা বাড়াতে, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা অন্তর্ভুক্ত করুন ।
খেজুর – যৌন ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে, তিন থেকে চারটি খেজুর, কয়েকটি বাদাম এবং দুটি কাজুবাদাম, এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে ঘুমানোর আগে খান । এটি যৌন ইচ্ছা বাড়ায় এবং সেই সাথে যৌন স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে । এইভাবে ৭ দিন খেলেই ভালো ফল পাবেন ।
কলিজা – সেক্স লাইফ বা যৌন জীবন ভালো রাখতে কলিজার গুরুত্ব অপরিসীম । কলিজায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে, যা আমাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে । তাই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনার খাদ্য তালিকায় কলিজা অন্তর্ভুক্ত করুন ।
রসুন – রসুন খাওয়া উভয় লিঙ্গের মানুষের জন্যই ভালো, অর্থাৎ রসুন, নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । রসুন খেলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে রক্ত চলাচলের গতি বৃদ্ধি পায় । এর ফলে আপনার যৌন অঙ্গেও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং এটি আপনার যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে । তবে হাই প্রেশারের রোগীদের রসুন খাওয়া উচিত নয় ।
জাফরানের উপকারিতা – জাফরান একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মসলা । এটি আমাদের মেজাজ ভাল রাখতে, লিবিডো বা যৌন উত্তজনা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে । যৌন শক্তি বাড়াতে জাফরান অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে ।জাফরান একটি প্রাকৃতিক অ্যাফ্রোডিসিয়াক, যা হরমোনকে উদ্দীপিত করে । দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে পান করলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায় । সেইসাথে জাফরান, ইস্ট্রোজেন এব সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়ায় যা মানসিক চাপ কমায় এবং শান্তির অনুভূতি তৈরি করে এবং বিছানায় আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় ।
অ্যাভোকাডো – অ্যাভোকাডোকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে । এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬ এবং পটাসিয়াম, যা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে । এটি সেবনে যৌন ইচ্ছা এবং যৌন শক্তি উভয়ই বৃদ্ধি পায় ।
ডিম – ডিম আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । ডিমে রয়েছে ভিটামিন B5 এবং B6, যা আপনার যৌন জীবনকে উন্নত করতে খুব ভাল কাজ করে । এছাড়াও ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিতে কাজ করে ।শুধু তাই নয়, ডিমে উপস্থিত থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, আমাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডিম হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং সেই সাথে স্ট্রেস কমাতে পারে । আর এই উভয়ই যৌন ইচ্ছা বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে ।
আমলকি – আমলকি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা আমাদের চুল এবং চোখের জন্য উপকারী । এছাড়াও এটি মানুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম । আমলকির গুঁড়ো, মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার সেবন করলে ধীরে ধীরে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
শিলাজিত – ঘুমের সমস্যা, যৌন দুর্বলতা এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে শিলাজিত বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে । যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ হল শিলাজিত । তবে এর আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ।
যোগাসনের মাধ্যমে যৌন শক্তি বৃদ্ধি
আপনি কি জানেন যে, যোগব্যায়াম আপনার যৌন ইচ্ছা এবং আপনার যৌন জীবনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করতে পারে ?২০০৯ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ” নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করা ব্যক্তিদের যৌন জীবন অনেক দিন পর্যন্ত ভাল থাকে, যার মধ্যে রয়েছে লিবিডো, যৌন উত্তেজনা, প্রচণ্ড উত্তেজনা এবং সম্পূর্ণ তৃপ্তি ।
মেডিটেশন – মেডিটেশন, যৌন ইচ্ছা বাড়ানোর একটি সহজ প্রতিকার । যা আপনি, দিনে মাত্র ১০ মিনিট করে অনুশীলন করলে আপনার মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে । আর আপনার মানসিক চাপ কম থাকলে যৌন ইচ্ছাও বৃদ্ধি পাবে । বহু বছর ধরে মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন অনুশীলন করা হচ্ছে । আমরা প্রায় সকলেই বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকি । তাই মানসিক চাপ কমাতে এবং যৌন ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন অল্প কিছু সময় মেডিটেশন করার অভ্যাস করুন ।
পদ্মাসন – পদ্মাসন করলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যা দূর হয় । এর নিয়মিত অনুশীলনের ফলে শরীরের উদ্দীপনা অর্থাৎ যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায় ।
ভদ্রাসন – ভদ্রাসন লিবিডো বা যৌন ইচ্ছা বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে । প্রতিদিন ভদ্রাসন করলে সহবাস করার সময় ধৈর্য ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায় । তাই যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত আসনটি অনুশীলন করলে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে ।
ধনুরাসন – ধনুরাসন নিয়মিত অভ্যাস করলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এটি যৌন ইচ্ছা জাগ্রত করতে এবং যৌন মিলনের সময় বৃদ্ধি করতে সহায়ক । এছাড়াও যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই ধনুরাসন অভ্যাস করা উচিত ।
যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম
আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন যে, ব্যায়াম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভাল । কিন্তু আপনি কি জানেন যে, নিয়মিত ব্যায়াম আপনার যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যায়াম করলে, আপনার যৌন শক্তি, নমনীয়তা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি পায় । আপনার পেশী যত বেশী ঢিলেঢালা এবং নমনীয় থাকবে, আপনি তত বেশী সময় ধরে সেক্স করতে পারবেন ।
হালকা ব্যায়াম – আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন অল্প কিছু পুশ-আপ, সিট-আপ এবং ক্রাঞ্চ করুন । কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের ব্যায়াম, কার্ডিও ব্যায়ামের তুলনায় যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি করতে বেশী সহায়ক । পেশী শক্তিশালী এবং মোটা করার জন্য ভারী ওজন ব্যবহার করা হয় । আর এই ভারী ওজনের ব্যায়াম, শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা লিবিডো বাড়ায় ।
কেজেল ব্যায়াম – কেজেল ব্যায়ামের সময় শরীরের নিচের অংশের পেশি অর্থাৎ পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করা হয়, যার ফলে শরীরের নিচের অংশের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে । কেজেল ব্যায়াম, পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই কাম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । পুরুষদের ক্ষেত্রে, এই ব্যায়াম দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ।
দ্রুত হাঁটা – হার্ভার্ডের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট করে হাঁটা, পুরুষদের ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা ৪১% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম ।
সাঁতার – হার্ভার্ডের আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার মতোই, সপ্তাহে তিন দিন মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য সাঁতার কাটলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায় । আর সাঁতার কাটার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেন, যা কামুকতারও উন্নতি ঘটায় ।
শেষ কথা
বর্তমানে অনেকেই, যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক ঔষধ, জেল এবং স্প্রে ইউজ করে থাকেন । কিন্তু এই ঔষধ, জেল এবং স্প্রে, সাময়িক ভাবে কার্যকর হলেও, এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । এগুলো নিয়মিত ইউজ করার ফলে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন – হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি । তাই এই ধরনের যৌন উত্তেজক ঔষধ, জেল এবং স্প্রে ইউজ করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকুন । এই ধরনের ওষুধ নিয়মিত সেবন করার ফলে আপনি সারা জীবনের জন্য সহবাসে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন ।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর ঘরোয়া কিছু প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেছি । তবে এই ঘরোয়া প্রতিকার গুলো অবলম্বন করার সাথে সাথে একজন যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আপনার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।