আজকাল প্রায় প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করে । ক্যামেরা সাধারণত, ছবি তোলা, ভিডিও তৈরী, নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রেকর্ড সংরক্ষণ, সাক্ষ্য এবং আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় । বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান অপরাধমূলক কর্মকান্ড এবং অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী । আপনি যদি আপনার বাড়ি, অফিস, সম্পত্তি ইত্যাদি সুরক্ষিত এবং পর্যবেক্ষণ করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই সিসিটিভি (আইপি ক্যামেরা) ক্যামেরা ইনস্টল করতে হবে । বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের কাজের সময় এবং কর্মচারীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে সিসিটিভি ক্যামেরা সিস্টেম ইউজ করছে । বর্তমানে, ট্রাফিক পুলিশও সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করে লাল বাতি জাম্পিং এবং অতিরিক্ত গতিতে চলমান গাড়ি শনাক্ত করছে । যাইহোক, স্মার্টফোনের ক্যামেরা, ডিএসএলআর ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরার মতো অনেক ধরণের ক্যামেরা রয়েছে । কিন্তু আমরা যখন cctv ক্যামেরার কথা বলব, তখন এনালগ এবং আইপি ক্যামেরার কথা চলে আসে । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, আইপি ক্যামেরা কী, এটি কীভাবে কাজ করে, আইপি ক্যামেরার সুবিধা – অসুবিধা এবং কীভাবে এটি অ্যানালগ ক্যামেরা থেকে আলাদা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
Table of Contents
IP Camera এর পূর্ণরূপ কি
IP ক্যামেরার পূর্ণরূপ হল Internet Protocol camera বা ইন্টারনেট প্রোটোকল ক্যামেরা । এই ধরনের ক্যামেরাকে ইন্টারনেট ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ক্যামেরাও বলা হয়ে থাকে ।
একটি আইপি ক্যামেরা বা নেটওয়ার্ক ক্যামেরা হল এমন ধরনের ক্যামেরা, যা সরাসরি আপনার নেটওয়ার্ক রাউটারে প্লাগ করা যায় এবং ডেটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দূরবর্তী যে কোন অবস্থান থেকে নিরাপদে ভিডিও ফুটেজ দেখার অনুমতি দেয় ।
প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমন প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে, তেমনি আধুনিক প্রযুক্তি ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ক্যামেরা প্রতিনিয়ত বাজারে আসছে । তারই ধারাবাহিকতায় পূর্বের এনালগ সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে বর্তমানে আইপি ক্যামেরা তৈরী হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত আইপি ক্যামেরার নতুন নতুন ভার্শন তৈরি হচ্ছে । বর্তমানে এই আইপি ক্যামেরা অনেক কাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ।
আইপি ক্যামেরা কি
একটি আইপি ক্যামেরা ( Internet Protocol Camera ) হল, এক ধরনের ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা, যা একটি আইপি নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় এবং গ্রহণ করে ।
একটি আইপি ক্যামেরা, ভিডিও সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে এবং নেটওয়ার্ক বায়ারের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডারে (NVR) ভিডিও ডেটা সেন্ড করে । আপনি নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার ছাড়াও আইপি ক্যামেরা ইউজ করতে পারবেন । আপনি আইপি ক্যামেরাকে, সরাসরি নেটওয়ার্ক সুইচ বা রাউটারের সাথে সংযুক্ত করতে পারেন ।
NVR এর মাধ্যমে আপনি ক্যামেরার ফুটেজ খুব সহজেই রেকর্ড করতে পারবেন এবং আপনার যত দিন ইচ্ছা সেই রেকরদক্রিত ভিডিও সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন । আইপি ক্যামেরা NVR সহ এবং NVR ছাড়া উভয় ভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে ।
আইপি ক্যামেরা ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকে, যার ফলে আপনি সারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে, এই ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে পারবেন । আপনি এই ক্যামেরাটিকে আপনার স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের সাথেও কানেক্ট করতে পারেন এবং এর পরে আপনি যে কোন জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ক্যামেরাটির লাইভ ফুটেজ দেখতে পারবেন ।
আরও সহজ ভাষায় বললে, আইপি ক্যামেরা হল এমন এক ধরনের ক্যামেরা, যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং আপনি যখনই চান তখনই আপনার স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে এটি অ্যাক্সেস করতে পারেন ।
আইপি ক্যামেরার ইতিহাস
প্রথম কেন্দ্রীভূত আইপি ক্যামেরাটি ১৯৯৬ সালে অ্যাক্সিস কমিউনিকেশনস দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল । একে বলা হত Axis Neteye 200 । এটি ক্যামেরার ইন্টারনাল একটি কাস্টম ওয়েব সার্ভার ব্যবহার করেছে । ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে, কোম্পানিটি তাদের ক্যামেরা চালানোর জন্য এমবেডেড লিনাক্স ইউজ করা শুরু করে । Axis, “VAPIX” নামে তার লো-লেভেল API-এর জন্য ডকুমেন্টেশনও প্রকাশ করে, যা HTTP এবং রিয়েল টাইম স্ট্রিমিং প্রোটোকল (RTSP)-এর ওপেন স্ট্যান্ডার্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় । এই উন্মুক্ত আর্কিটেকচারটি থার্ড পার্টি সফটওয়্যার নির্মাতাদের সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা এবং রেকর্ডিং সফটওয়্যার বিকাশে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল । প্রথম বিকেন্দ্রীভূত ( Decentralized ) আইপি ক্যামেরাটি ১৯৯৯ সালে মোবোটিক্স দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল । ক্যামেরার লিনাক্স সিস্টেমে ভিডিও, অ্যালার্ম এবং রেকর্ডিং ম্যানেজমেন্ট ফাংশন রয়েছে, এইভাবে ক্যামেরা সিস্টেমে রেকর্ডিং ইভেন্ট বা ভিডিও পরিচালনা করার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয় না । Intellio দ্বারা ২০০৫ সালে অনবোর্ড ভিডিও কনটেন্ট অ্যানালিটিক্স (VCA) সহ প্রথম আইপি ক্যামেরা প্রকাশিত হয়েছিল । এই ক্যামেরাটি বিভিন্ন ইভেন্ট শনাক্ত করতে সক্ষম ছিল, যেমন কোন নির্দিষ্ট বস্তু । পরবর্তীতে, আইপি ক্যামেরা ধীরে ধীরে আপডেট হতে হতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে ।
আইপি ক্যামেরার ব্যবহার
আইপি ক্যামেরা সাধারণত নজরদারির (Surveillance) জন্য ব্যবহার করা হয় । এটি নিরাপত্তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে ।
আপনি যদি কোনো দোকানের মালিক হন এবং আপনি মাঝে মাঝে দোকানের বাইরে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার দোকানে আইপি ক্যামেরা ইনস্টল করতে পারেন এবং আপনি যখনই চান, তখনই আপনার কাছে থাকা যেকোনো ডিভাইস (ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ) এর মাধ্যমে আপনার দোকানের লাইভ ফুটেজ দেখতে পারেন ।
এটি করার মাধ্যমে আপনি আপনার দোকানের কর্মীদের এবং আপনার গ্রাহকদের ট্র্যাক করতে পারেন । লাইভ ফুটেজ দেখা ছাড়াও, এই ক্যামেরাটির সমস্ত ফুটেজ রেকর্ড করতে পারবেন, যা আপনি পরে যে কোন প্রয়োজনে দেখতে পারবেন ।
রেকর্ডিংয়ের সুবিধা হল যে, আজ যদি আপনার দোকানে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে ( যেমন – চুরি, ডাকাতি ), তাহলে আপনি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারবেন যে কী ঘটেছে এবং কারা এটি করেছে ।
আপনি এই ধরনের ক্যামেরা যে কোনও জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন যেমন – হাসপাতালে, বাড়িতে, হোটেলে, অফিসে, স্কুল এবং কলেজে ইত্যাদি । বর্তমান সময়ে এই ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন এবং সঠিক ।
যদি আপনি আপনার বাড়ি, দোকান বা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ রাখতে চান, তাহলে আপনার অবশ্যই আইপি ক্যামেরা ব্যবহার করা উচিত ।
আইপি ক্যামেরা ইনস্টলেশন
আইপি ক্যামেরা ইন্সটল করার জন্য নিচে উল্লেখিত জিনিসগুলি প্রয়োজন হবে ।
- আইপি ক্যামেরা
- নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার (NVR)
- Cat-6 নেটওয়ার্ক ক্যাবল
- স্টোরেজ ডিভাইস (হার্ড-ডিস্ক)
- নেটওয়ার্ক সুইচ
- ডিসপ্লে ডিভাইস বা মনিটরিং ডিভাইস ( এলইডি টিভি বা মনিটর )
- RJ-45 Connector
প্রথমে একটি বায়ার ক্লিপের সাহায্যে দেওয়ালে Cat-6 নেটওয়ার্ক ক্যাবল সেট করুন । এরপর ড্রিল মেশিনের সাহায্যে ছিদ্র করে আইপি ক্যামেরা দেয়ালে বা সিলিংয়ে, যেখানে আপনার প্রয়োজন সেখানে লাগান । তারপর আপনি একটি স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে দেয়ালে আইপি ক্যামেরা সেট করুন ।
এখন ক্যাট-6 নেটওয়ার্ক ক্যাবলের এক প্রান্তে ক্রিমিং টুলের সাহায্যে RJ45 কানেক্টর লাগান । একইভাবে নেটওয়ার্ক ক্যাবলের অন্য প্রান্তেও RJ 45 কানেক্টর লাগান । এখন RJ 45 কানেক্টরটি IP ক্যামেরার নেটওয়ার্ক পোর্টে প্লাগ করুন এবং অন্য প্রান্তের RJ 45 কানেক্টরটি, Poe সুইচ বা রাউটারের সাথে সংযুক্ত করুন ।
এরপর নেটওয়ার্ক প্যাচ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডারে Poe সুইচ কানেক্ট করতে পারেন । LED টিভি বা মনিটরের সাহায্যে লাইভ সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে HDMI কেবলের সাহায্যে NBR-কে মনিটরের সাথে সংযুক্ত করতে পারেন ।
আরও পড়ুনঃ রোবোট কি ? রোবট কিভাবে কাজ করে ?
কেন আইপি ক্যামেরা বেছে নেবেন
একটি আইপি ক্যামেরা আপনাকে আপনার লোকাল কম্পিউটারে এবং NVR (নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার) ছাড়াই দূরবর্তী যে কোন জায়গা থেকে লাইভ ভিডিও ফুটেজ দেখার সুবিধা দেয় । এই ক্যামেরাগুলি ইনস্টল করা এবং কনফিগার করা একদম সহজ এবং যে কোনও জায়গায় ইন্সটল করা যায় ।
আইপি ক্যামেরার সুবিধা কি
আইপি ক্যামেরার সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হল –
অ্যাক্সেসযোগ্যতা: – আপনি যদি ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকেন, তাহলে আপনি যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গা থেকে আপনার আইপি ক্যামেরা অ্যাক্সেস করতে পারবেন । আইপি ক্যামেরা, এর ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটে কানেক্টেড যে কোনো কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস থেকে তাদের লাইভ ভিডিও দেখার সুযোগ দেয় ।
ভালো ভিডিও কোয়ালিটি – আইপি ক্যামেরা 4K রেজুলেশন পর্যন্ত ভিডিও সাপোর্ট করে । যার কারণে এই ক্যামেরাগুলোর ভিডিও কোয়ালিটি খুব ভালো । এছাড়াও আপনি অন্য ক্যামেরার মতো, বিভিন্ন রেজুলেশনের আইপি ক্যামেরা বাজারে পাবেন । আপনি যত ভালো রেজুলেশনের ক্যামেরা নিবেন, আপনার ভিডিও কোয়ালিটির মান তত ভালো হবে ।
স্টোরেজ : এর কোন নিজস্ব ডিস্ক বা টেপ নেই । আইপি ক্যামেরার সমস্ত ফুটেজ লোকাল এবং ডিজিটাল দুইভাবেই সংরক্ষণ করা যায় । আপনি চাইলে আপনার হার্ড ড্রাইভের মধ্যে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করতে পারেন অথবা আপনি ক্লাউডেও এর ভিডিও সংরক্ষণ করতে পারেন । ক্লাউডে ভিডিও সংরক্ষণ করার ফিচারটি আইপি ক্যামেরাকে অনেক বেশী জনপ্রিয় করে তুলেছে ।
ভিডিও শেয়ারিং : আপনি যে কোন ডিভাইস থেকে লাইভ ফুটেজ দেখার পাশাপাশি, আপনি সেই ভিডিওটি বিশ্বের যে কোনো স্থানে পাঠাতে পারবেন ।
কম রক্ষণাবেক্ষণ : আইপি ক্যামেরার রক্ষনাবেক্ষন খরচ অনেক কম । একটি আইপি ভিডিও মনিটরিং সিস্টেম, Time-lapse video equipment, tapes, cataloging ইত্যাদির প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহারকারীর খরচ কমিয়ে দেয় ।
নমনীয়তা : প্রতিটি অ্যানালগ ক্যামেরা সরাসরি ডিভিআর-এর সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে । কিন্তু আইপি ক্যামেরাগুলি (যেগুলি একই সাধারণ এলাকায়) একই সুইচের সাথে সংযুক্ত করা যেতে পারে যা NVR (নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার) এর সাথে একটি কেবল দ্বারা কানেক্টেড থাকে । এছাড়াও আপনি আপনার ক্যামেরার ভলিউম এবং মনিটরিং এলাকা আরও বাড়াতে সুইচ থেকে সুইচ সংযোগ করতে পারেন । এটি সিস্টেম সেট আপ করার সময় ক্যাবলের পরিমাণ হ্রাস করে এবং আরও ক্যামেরাকে নির্বিঘ্নে কানেক্ট করার অনুমতি দেয় ।
PoE সুইচ : আইপি ভিডিও মনিটরিং সিস্টেম, একটি PoE (পাওয়ার ওভার ইথারনেট) সুইচ ব্যবহার করে, যা Cat-5 বা Cat-6 ক্যাবলের মাধ্যমে ক্যামেরা থেকে সিগন্যাল ড্রাইভ করার পাশাপাশি, ক্যামেরাগুলিকে পাওয়ার সাপ্লাই দেয় । যার কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা দূর হয় ।
আইপি ক্যামেরার অসুবিধা
- ব্যয়বহুল – একটি আইপি ক্যামেরা, একটি এনালগ ক্যামেরার চেয়ে ব্যয়বহুল ।
- স্টোরেজ – আইপি ক্যামেরা হল হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা, যার কারণে এই ক্যামেরার ভিডিও কোয়ালিটি খুবই ভালো এবং ভালো ভিডিও কোয়ালিটির কারণে এই ভিডিওগুলোর ফাইলের সাইজ অনেক বড়, যার কারণে এই ভিডিও ফাইলগুলো স্টোর করতে বেশি স্টোরেজ স্পেস প্রয়োজন হয় । .
- ব্যবহার করা কঠিন – আইপি ক্যামেরাগুলি কিছুটা জটিল যার কারণে সেগুলি ব্যবহার করা তুলনামূলক । কিছু কিছু আইপি ক্যামেরার ইনস্টলেশন প্রসেসও বেশ জটিল । তবে এগুলো খুব বেশী জটিল নয় । কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকলে এগুলো ব্যবহার করতে খুব একটা সমস্যা হবে না ।
আইপি ক্যামেরা হ্যাকিং থেকে রক্ষা করার উপায়
যেহেতু আইপি ক্যামেরা ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকে, তাই এটি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে । বিভিন্ন ভাবে আইপি ক্যামেরা হ্যাক হতে পারে যেমন – ফিজিক্যাল টেম্পারিং, ফিশিং বা স্ক্যামিং, ম্যালওয়্যার, পাসওয়ার্ড ক্র্যাকিং ইত্যাদি । তাই আইপি ক্যামেরা হ্যাকিং থেকে রক্ষা করার জন্য নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে ।
- পাসওয়ার্ড প্রোটেকশান
- ডায়নামিক আইপি ঠিকানা ইউজ করুন
- সবকিছু আপডেট রাখুন
- প্রতিটি আইপি ক্যামেরা সরাসরি ওয়্যারিং
- কখনোই আনভেটেড সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন না
- আইপি ক্যামেরা সিস্টেমে অ্যাক্সেস সীমিত করুন
- সুরক্ষিত নজরদারি ক্যামেরা বসানো
আইপি ক্যামেরা এবং এইচডি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য
এইচডি ক্যামেরা
ডিজিটাল ক্যামেরা হল এনালগ ক্যামেরার একটি উন্নত ভার্শন । যা 720 পিক্সেল থেকে 1920 পিক্সেল পর্যন্ত ফুল এইচডি ভিডিও সাপোর্ট করে । ডিভিআর অর্থাৎ ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারে ডিজিটাল ক্যামেরা ইনস্টল করা হয় ।
এই ধরনের ক্যামেরা দূরবর্তী কোন স্থান থেকে অ্যাক্সেস করা যায় না । বরং সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার অ্যাক্সেস করা হয়।বাজারে 2 মেগাপিক্সেল থেকে 8 মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ডিজিটাল ক্যামেরা পাওয়া যায় ।
আইপি ক্যামেরা
নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডারে (NVR) আইপি ক্যামেরা কানেক্ট করা হয় । একটি আইপি ক্যামেরা, ইন্টারনেট প্রোটোকলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে । আইপি অ্যাড্রেসের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে রিমোট অ্যাকসেসের মাধ্যমে আইপি ক্যামেরাগুলোতে অনলাইনে অ্যাক্সেস করা যায় । প্রতিটি আইপি ক্যামেরার আলাদা আলাদা আইপি এড্রেস রয়েছে । IP ক্যামেরা Full HD ভিডিও এবং 4K ভিডিও সাপোর্ট করে ।
আইপি ক্যামেরায় আপনি ভিডিওটি বেশ কয়েকবার জুম করে দেখতে পারেন, কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরায় এটি হয় না । ডিজিটাল ক্যামেরার চেয়ে আইপি ক্যামেরার দাম কিছুটা বেশি । বাজারে 2 মেগাপিক্সেল থেকে শুরু করে 12 মেগাপিক্সেল পর্যন্ত আইপি ক্যামেরা পাওয়া যায় ।
আইপি ক্যামেরা এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য
বর্তমানে বাজারে উপলব্ধ সিকিউরিটি ক্যামেরার মধ্যে রয়েছে, সিসিটিভি এবং আইপি ক্যামেরা । যদিও প্রতিটি তাদের নিজস্ব জায়গায় অত্যন্ত কার্যকর, দুটির ডিজাইন, ইনস্টলেশন, সুরক্ষা এবং আরও অনেক কিছুতে ভিন্নতা রয়েছে । তাই আপনার জন্য কোন সিস্টেমটি প্রয়োজন সেটি জানার জন্য এই দুই ধরণের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরী । নিচে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং আইপি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হল –
আইপি সিকিউরিটি ক্যামেরা | সিসিটিভি সিকিউরিটি ক্যামেরা |
সংযোগের জন্য বেতার না হলে ইথারনেট Cat5e বা Cat6 কেবল ব্যবহার করে | সংযোগের জন্য টুইস্টেড পেয়ার, RG59, বা RG6 সমাক্ষ তারগুলি ব্যবহার করে |
সেলুলার, Wi-Fi, বা LAN ব্যবহার করতে পারে | শুধুমাত্র একটি তারযুক্ত সংযোগ ব্যবহার করতে পারেন |
ইথারনেট তারের উপর শক্তি ব্যবহার করতে পারেন | প্যারালাল তারের দ্বারা চালিত করা যাবে |
একটি NVR এ পাঠানোর আগে ভিডিও ফুটেজ অভ্যন্তরীণভাবে প্রক্রিয়া করে | শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ ক্যাপচার করে এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি DVR-এ পাঠায় |
অভ্যন্তরীণ ফুটেজ সংরক্ষণ করতে পারেন | অভ্যন্তরীণ ফুটেজ সংরক্ষণ করা যাবে না |
শ্রমের অভাবের কারণে ইনস্টলেশন সস্তা | অত্যধিক শ্রমের প্রয়োজনের কারণে ইনস্টলেশন সাধারণত ব্যয়বহুল |
গতি সনাক্তকরণ, ভিডিও বিশ্লেষণ, এবং অন্যান্য বিভিন্ন ফিচার সহ উন্নত ক্ষমতা | কম আলোর পরিবেশে উন্নত ক্ষমতা এবং টেকসই বাহ্যিক নকশা |
ডিজিটাল ডেটা ব্যবহার এবং স্থানান্তর করে | অ্যানালগ ডেটা ব্যবহার করে এবং স্থানান্তর করে |
শেষ কথা
আজকের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে, বর্তমান সময়ে আইপি ক্যামেরার গুরুত্ব কতটুকু । তাই আপনি আপনার বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, দোকান বা এমন কোন জায়গা থাকে যেখানে আপনি সর্বদা নজর রাখতে চান এবং যেখানে আপনার নিরাপত্তা প্রয়োজন, তাহলে আপনি সেখানে আইপি ক্যামেরা সেট করতে পারেন এবং আপনি যখনই চান সেখাঙ্কার লাইভ ফুটেজ দেখতে পারেন ।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের, আইপি ক্যামেরা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন ।