প্রযুক্তির এই যুগে, মানুষের মধ্যে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । বর্তমানে আমাদের ফোন থেকে শুরু করে মেশিন পর্যন্ত, সবই স্মার্ট হয়ে গেছে । আর এই তালিকায় স্মার্টওয়াচের নামও রয়েছে, যা তরুণদের মধ্যে অনেক বেশী জনপ্রিয় । আপনিও নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সময়ে স্মার্টওয়াচ সম্পর্কে শুনেছেন বা পড়েছেন । স্মার্টওয়াচ হল একটি আধুনিক যুগের ঘড়ি, যা মানুষের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে । আপনারা সবাই বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি সম্পর্কে জানেন, যেমন- দেয়াল ঘড়ি, হাত ঘড়ি, অ্যালার্ম ঘড়ি, স্টপওয়াচ ইত্যাদি । কিন্তু এই ঘড়িগুলোকে স্মার্ট বলার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল এর আকর্ষণীয় সব ফিচার, যা এই ঘড়িগুলোকে স্মার্ট করে তোলে । কিন্তু আপনি কি জানেন, এই স্মার্টওয়াচ কী? আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, স্মার্টওয়াচ কি, স্মার্টওয়াচের ধরন, বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ।
Table of Contents
স্মার্টওয়াচ কি – স্মার্ট ঘড়ি কি
স্মার্টওয়াচ হল একটি ডিজিটাল পোর্টেবল ডিভাইস, যা কম্পিউটারের মতোই স্মার্ট এবং হাতে পরার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ।আরও সহজভাবে বললে, স্মার্টওয়াচ হল এক ধরনের ডিজিটাল ঘড়ি, যা স্মার্টফোনের মতো কাজ করে ।
স্মার্টফোনের মতো, প্রয়জনীয় ফিচার এবং প্রযুক্তি থাকার কারণে এটিকে স্মার্টওয়াচ বলা হয় । এটি আপনার হাতে বাঁধা এক ধরনের ছোট কম্পিউটার । প্রথম দিকের স্মার্টওয়াচ গুলোতে নরমাল গ্লাস থাকত, আর বর্তমানের স্মার্টওয়াচগুলোতে টাচ স্ক্রিন থাকে । সহজ ভাষায় বলতে গেলে, স্মার্টওয়াচ হল, টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে সহ একটি মোবাইল ডিভাইস, যা হাতের কব্জিতে পরার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে । বিডিস্টল থেকে স্মার্টওয়াচের দাম জেনে আপনার কাংক্ষিত মানের পণ্যটি কিনতে পারবেন সূলভমূল্যে ।
স্মার্টওয়াচগুলো পুরানো হাত ঘড়ি বা নরমাল হাত ঘড়ি থেকে অনেক আলাদা । কারণ এর ফিচার এবং সুবিধা, সাধারণ ঘড়ির তুলনায় অনেক বেশি ।
ব্যবহারকারীর সুবিধার জন্য, এই আধুনিক ডিজিটাল ঘড়ি অর্থাৎ স্মার্টওয়াচে একটি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে থাকে এবং এটি মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে সহজেই স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করা যায় । স্মার্টফোন এবং স্মার্টওয়াচ একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করার পরে, এটি ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে ।
স্মার্টফোনের মতো, স্মার্টওয়াচেও টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, নেভিগেশন সিস্টেম, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার, হার্টরেট মনিটরিং, জিপিএস, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ইত্যাদির মতো অনেক বৈশিষ্ট্য থাকে, যা ব্যবহারকারীর জন্য খুবই উপযোগী এবং উপকারী ।
এছাড়াও এতে আরও অনেক ধরনের স্মার্ট ফিচার এবং প্রোগ্রাম থাকে, যা সাধারণ ঘড়িতে একেবারেই নেই । স্মার্টওয়াচের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলোর মধ্যে একটি হল, নির্দিষ্ট সময় পর পর এটি আপনাকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপডেট করবে এবং আপনি, মোবাইল ফোন স্পর্শ না করেই বা পকেট থেকে ফোন না বের করেই, বিভিন্ন নোটিফিকেশন দেখতে পাবেন ।
আরও পড়ুনঃ আইপি ক্যামেরা কি ? আইপি ক্যামেরা ইনস্টলেশন
স্মার্টওয়াচ কত প্রকার – স্মার্টওয়াচের প্রকারভেদ
আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে স্মার্টওয়াচ কী । এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক, স্মার্টওয়াচের ধরন সম্পর্কে । আপনি নিশ্চই জানেন যে, স্মার্টওয়াচগুলিতে অনেক ধরনের উন্নত বৈশিষ্ট্য থাকে । আর এই ফিচার বা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে স্মার্টওয়াচকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায় ।
1. ক্লাসিক স্মার্টওয়াচ – ক্লাসিক স্মার্টওয়াচগুলোর ডিজাইন খুব সাধারণ । এটি দেখতে অনেকটা পুরানো ঘড়িগুলির মত, যেখানে শুধুমাত্র কিছু আধুনিক ফিচার যুক্ত করা হয় । এই ধরনের স্মার্টওয়াচ দামে সস্তা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ।
2. ইনডিপেন্ডেন্ট স্মার্টওয়াচ – এই ধরনের স্মার্টওয়াচকে স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করার কোন প্রয়োজন হয় না । কারণ, এই ধরনের স্মার্টওয়াচ নিজেই এর সমস্ত কাজ করতে সক্ষম । এই স্মার্টওয়াচে আপনি, কল বা মেসেজ করার জন্য সিম কার্ড ইউজ করতে পারবেন । অনেক ইনডিপেন্ডেন্ট স্মার্টওয়াচে ফিটনেস ট্র্যাকিং, হার্ট রেট মনিটরিং এবং জিপিএস নেভিগেশনের মতো আধুনিক ফিচার যুক্ত করা হয় । এই ধরনের স্মার্টওয়াচের ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব ভাল থাকে, যার ফলে অনেক দিন পর্যন্ত চার্জ করার প্রয়োজন হয় না ।
3. হাইব্রিড স্মার্টওয়াচ – হাইব্রিড স্মার্টওয়াচে, আধুনিক বিভিন্ন ফিচার থাকে এবং এটির ডিজাইন অনেক স্টাইলিশ করে তৈরি করা হয় । এই ধরনের স্মার্টওয়াচে আপনি, ব্লুটুথ কানেকশন ফিচার দেখতে পাবেন । যার সাহায্যে আপনি এটিকে যে কোন ব্লুটুথ ডিভাইস বা ফোনের সাথে সংযুক্ত করতে পারবেন । এটিতে ফিটনেস এক্টিভিটি ট্র্যাক করার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে । অনেক হাইব্রিড স্মার্টওয়াচ, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাপোর্ট করে । এর ফলে আপনি ভয়েসের মাধ্যমে আপনার ঘড়িকে নির্দেশনা দিতে পারবেন ।
4. পার্টনার স্মার্টওয়াচ – এই স্মার্টওয়াচগুলির ডিজাইন খুব স্টাইলিশ এবং আধুনিক বিভিন্ন ফিচার থাকে । আপনি এই স্মার্টওয়াচটিকে আপনার স্মার্ট ফোনের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন এবং আপনার স্মার্ট ঘড়ির সাহায্যে ফোনের কল, মেসেজ এবং বিভিন্ন নোটিফিকেশন পরিচালনা করতে পারবেন ৷ এই স্মার্টওয়াচগুলিতে ফিটনেস ট্র্যাকিং, হার্টবিট মনিটরিং এবং ব্লাড প্রেশার মেজারমেন্টের মত ফিচার গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে ।
5. ফিটনেস স্মার্টওয়াচ – এই ধরনের স্মার্টওয়াচগুলো, ফিটনেস ট্র্যাকার হিসেবে কাজ করে । এটি আপনার সার্বক্ষণিক গতিবিধি ট্র্যাক করে । এই স্মার্টওয়াচে, আপনি কত ধাপ হাঁটছেন, কত দূরত্ব অতিক্রম করেছেন ইত্যাদি পরিমাপ করার ফিচার দেওয়া হয়েছে । অনেক ফিটনেস স্মার্টওয়াচে সিম কার্ড ব্যবহার করার অপশন দেওয়া হয় । এগুলো ব্যবহার করা একদম সহজ এবং যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা জিম করেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী ।
স্মার্টওয়াচের বিবর্তন – স্মার্টওয়াচের হিস্টোরি
১৯৭২ সালে, হ্যামিল্টন ঘড়ি কোম্পানি এবং electro/DATA Inc প্রথম ডিজিটাল ঘড়ি তৈরি করে, যা ছিল একটি LED প্রোটোটাইপ । আর এর নাম দেওয়া হয়েছিল Pulser । এই ঘড়ির ব্যবহারকারীকে সময় দেখার জন্য একটি বোতাম টিপতে হত ।
এর পরে, ১৯৮০ সালে, জাপানি SEIKO কোম্পানি, T001 নামে একটি ঘড়ি তৈরি করে এবং এটির সাথে DATA 2000, RC1000 এবং সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত ঘড়ি RC-20 যার 8 বিট, Z 80 মাইক্রোপ্রসেসর এবং 2KB RAM এবং 8KB ছিল মেমোরি |
১৯৯৪ সালে, মাইক্রোসফট কোম্পানি, টাইম ডেটা লিঙ্ক নামে একটি ঘড়ি তৈরী করে, যা একটি কম্পিউটার থেকে ডেটা ডাউনলোড করতে সক্ষম ছিল ।
১৯৯৪ সালে পাইওনিয়ার প্রথম লিনাক্স স্মার্ট ওয়াচ তৈরি করে ।
১৯৯৯ সালে স্যামসাং এবং অ্যান্ড্রয়েড, যৌথভাবে প্রথম এমন ঘড়ি তৈরি করে যা কল করতে সক্ষম ছিল । আর এই ঘড়িটির নাম দেওয়া হয়েছিল SPH WP10 ।
২০০১ সালে আইবিএম কোম্পানি, ওয়াচ প্যাড 1.5 তৈরি করেছিল । যাতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ছিল এবং এটি লিনাক্স 2.2 অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করত । এছাড়াও এই ঘড়িতে ব্লুটুথ, ৮ মেগাবাইট র্যাম এবং ১৬ মেগাবাইট ফ্ল্যাশ মেমরি ছিল । এই ঘড়িটি সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ঘড়ি ছিল ।
ওমেট কোম্পানি ২০১৩ সালে, প্রথম ইনডিপেন্ডেন্ট স্মার্ট ঘড়ি তৈরি করেছিল । যেটিতে ব্লুটুথ এবং কল করার পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলোও স্বাধীনভাবে রান করা যেত ।
আর এভাবেই, স্মার্টওয়াচ প্রতিনিয়ত বিকশিত হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে ।
স্মার্টওয়াচের বৈশিষ্ট্য
স্মার্টফোনের পর স্মার্টওয়াচ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে । প্রযুক্তির যুগে এটি আমুল পরিবর্তন এনেছে, যেখানে হাতে বাধা একটি ঘরির সাহায্যে, মানুষের সাথে কথা বলা, মেসেজিং, ফাইল শেয়ারিং, প্রতিদিনের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করা, ই-মেইল করা ইত্যাদি সম্ভব হয়েছে ।
প্রত্যেকটি স্মার্টওয়াচে কিছু কমন ফিচার এবং কিছু ইউনিক ফিচার বা বৈশিষ্ট্য থাকে । স্মার্ট ওয়াচের কিছু বিশেষ এবং কমন বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হল –
- সময় দেখা – ঘড়ি যতই স্মার্ট হোক না কেন, এটির প্রথম এবং প্রধান কাজ হল সময় দেখানো । যাইহোক, একটি ঘড়িতে যদি সময় দেখা না যায়, তাহলে সেটিকে ঘড়ি বলা যাবে না । তাই স্মার্ট ওয়াচের প্রধান ফিচার হল সময় দেখানো ।
- আক্টিভিটি ট্র্যাকার – স্মার্টওয়াচের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার । যা, আপনাকে আপনার শারীরিক বিভিন্ন কার্যকলাপ ট্র্যাক এবং মনিটরিং করতে সহায়তা করে ।
- জিপিএস সিস্টেম – কিছু কিছু স্মার্টওয়াচে জিপিএস ফিচার দেওয়া হয় । এর সাহায্যে আপনি আপনার বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন । এছাড়াও যে কোনও জায়গা খুঁজে বের করতে পারবেন এবং সেখানে সহজে পৌঁছানোর দিকনির্দেশনা পাবেন ।
- অ্যাপ্লিকেশন – স্মার্টফোনের মতো এতেও অনেক ধরনের অ্যাপ থাকে, যা আপনার বিভিন্ন কাজকে সহজ করে দেয় ।
- ব্যাটারি লাইফ – বর্তমান সময়ের স্মার্টওয়াচগুলোর ব্যাটারির ব্যাকআপ বেশ ভালো । কিছু কিছু স্মার্টওয়াচের ব্যাটারী, একবার চার্জ দিলে তা ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় (সাধারণ ভাবে ব্যবহার করলে) ।
- রিমোট মিউজিক কন্ট্রোল – এটিকে আপনার স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করে গান, ভিডিও ইত্যাদি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ।
- রিয়েল টাইম নোটিফিকেশন – স্মার্টফোনে আসা নোটিফিকেশনগুলো আপনার স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে দেখতে পারবেন । এর ফলে নোটিফিকেশন এলে, পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করার কোন দরকার হবে না । এই কাজটি আপনার হাতে থাকা স্মার্টওয়াচের মাধ্যমেই করতে পারবেন ।
- ব্লুটুথ – স্মার্টওয়াচে ব্লুটুথও রয়েছে । যার সাহায্যে ফাইল শেয়ার করা যায়, ব্লুটুথ হেডফোন সংযুক্ত করা যায় এবং এর মাধ্যমে স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করা যায় ।
- ফিটনেস প্রোগ্রাম – কিছু কিছু স্মার্টওয়াচে বিভিন্ন ধরনের ফিটনেস ফিচার থাকে । এটিকে সাধারনত স্পোর্টস মোড বলা হয় । এর মধ্যে রয়েছে, ট্রেডমিল, আউটডোর রানিং, সুইমিং, অন ফুট, ওয়াকিং ইত্যাদি । এই সমস্ত ফিচারগুলো মর্নিং ওয়াক, ব্যায়াম বা জিম করার সময় অনেক কাজ আসে ।
- ভয়েস রেকর্ড – এছাড়াও আপনি, স্মার্টওয়াচে ভয়েস রেকর্ডের ফিচার পাবেন, যার সাহায্যে আপনি ভয়েস রেকর্ড করতে পারবেন ।যখন আপনাকে দ্রুত কোন কিছু রেকর্ড করতে হবে এবং আপনার হাতে, পকেট থেকে ফোন বের করার সময় নেই, তখন এই ফিচারটি খুব কাজে লাগে ।
- ওয়াটারপ্রুফ – স্মার্টওয়াচ পানিতে ভিজলেও কোন সমস্যা হয় না এবং পানির নিচেও সহজেই ব্যবহার করা যায় । এই বৈশিষ্ট্যটি বেশীরভাগ স্মার্টওয়াচেই পাওয়া যায় ।
- কলিং এবং মেসেজিং – কিছু কিছু স্মার্টওয়াচে কলিং এবং মেসেজিং ফিচার থাকে । এর সাহায্যে আপনি আপনার স্মার্টওয়াচ থেকেই কল রিসিভ করতে পারবেন এবং কথা বলতে পারবেন ।
- Wi-Fi সংযোগ – বেশী দামের স্মার্টওয়াচগুলোতে Wi-Fi ফিচার থাকে, যার সাহায্যে আপনি আপনার স্মার্টওয়াচকে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট করে নেট ইউজ করতে পারবেন ।
- স্মার্টওয়াচ আপনার ব্যক্তিগত সহকারী – স্মার্টওয়াচ আপনার ব্যক্তিগত সহকারীর মত কাজ করে । আপনি স্মার্টওয়াচে যে কোন কিছুর রিমাইন্ডার সেট করতে পারবেন । তারপর এটি আপনাকে কিছু সময় পর পর আপনার কাজের কথা মনে করিয়ে দেবে ।
স্মার্টওয়াচের অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মানুষের জন্য খুব দরকারী । দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন, যেমন- ব্যায়ামের সময়, অফিসে, গাড়ি বা বাইক চালানোর সময়, পার্টির সময়, পড়াশোনার সময়, সাঁতার কাটা বা খেলাধুলা করার সময় ।
আমরা আপনাদের আরও একটি কথা বলে রাখি যে, স্মার্টওয়াচের বৈশিষ্ট্য বা ফিচারগুলো, যে কোনও স্মার্ট ব্যান্ড বা ফিটনেস ব্যান্ডের তুলনায় অনেক আলাদা ।
আরও পড়ুনঃ ড্রোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে ?
স্মার্ট ঘড়ি কিভাবে কাজ করে – স্মার্টওয়াচ কিভাবে কাজ করে
সব ধরনের স্মার্ট ঘড়িতে একটি অপারেটিং সিস্টেম থাকে ৷ এই সব স্মার্ট ঘড়ি সাধারণত টাচ স্ক্রিন । এই স্মার্টওয়াচগুলো আমাদের স্মার্ট ফোনের মতোই কাজ করে । ব্যবহারকারী টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে ঘড়িকে নির্দেশনা দেয়, যা ঘড়ির অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা কার্যকর করা হয় । এই ঘড়িগুলো ব্যাটারির সাহায্যে নিজেকে অন রাখে ।
স্মার্টওয়াচ কিভাবে ব্যবহার করবেন ?
বর্তমান সময়ের প্রায় সব স্মার্টওয়াচগুলিতে আপনি একটি টাচ স্ক্রিন পাবেন, যার সাহায্যে আপনি স্মার্টওয়াচকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন । যেকোনো স্মার্টওয়াচকে সঠিকভাবে ইউজ করার জন্য, প্রথমে এটিকে আপনার স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করতে হবে ।
স্মার্টওয়াচটিকে ফোনের সাথে কানেক্ট করার জন্য, গুগল প্লে-স্টোর থেকে আপনার স্মার্টওয়াচের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে । আপনার স্মার্ট ওয়াচের জন্য কোন অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে, তা আপনি স্মার্টওয়াচের ইউজার ম্যানুয়াল থেকে জানতে পারবেন ।
আপনি যেভাবে ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই কানেক্ট করেন, ঠিক একইভাবে আপনাকে অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টওয়াচটিকে ফোনের সাথে কানেক্ট করতে হবে এবং এই কাজটি আপনারা খুব সহজেই করতে পারবেন ।
যে কোন স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করা খুবই সহজ, কারণ এর UI (ইউজার ইন্টারফেস) খুবই সাধারণ এবং অনেকটা মোবাইলের মত । তাই আপনি, ফোন ব্যবহার করার মতো করে স্মার্টওয়াচটিও ব্যবহার করতে পারবেন ।
আপনি যদি স্মার্টওয়াচ অপারেট করতে না জানেন বা স্মার্টওয়াচ অপারেট করতে কোন সমস্যা হয়, তাহলে ইউটিউবে আপনার স্মার্টওয়াচের ব্র্যান্ডের নাম লিখে সার্চ করুন । তাহলে আপনি সেই স্মার্টওয়াচ রিলেটেড ভিডিও পাবেন এবং সেগুলো দেখে আপনি খুব সহজেই আপনার স্মার্টওয়াচ অপারেট করতে পারবেন ।
স্মার্টওয়াচ দিয়ে কি কি কাজ করা যায়?
স্মার্টওয়াচগুলিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে, যার ফলে এর কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । তবে, বর্তমান সময়ের স্মার্টওয়াচের সাহায্যে নিচে উল্লেখিত কাজগুলো করা যেতে পারে –
- রক্তচাপ পরীক্ষা – যদি আপনাকে মাঝে মধ্যেই আপনার ব্লাডপ্রেশার চেক করতে হয়, তবে আপনি একটি স্মার্টওয়াচ কিনতে পারেন । কারণ, স্মার্টওয়াচের সাহায্যে আপনি ব্লাডপ্রেশার চেক করতে পারবেন ।
- ওজন – বর্তমান সময়ের কিছু কিছু স্মার্টওয়াচে দেওয়া ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্যে আপনার ওজন মাপতে পারবেন । তবে এই বৈশিষ্ট্যটি খুব কম স্মার্টওয়াচেই পাওয়া যায় । এই বৈশিষ্ট্যটি সাধারণত দামী স্মার্টওয়াচগুলোতে দেওয়া হয় ।
- ধাপ গণনা – স্মার্টওয়াচে লাগানো ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্যে, আপনারা আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ট্র্যাক করতে পারবেন । স্মার্টওয়াচের এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনি সারাদিনে কতগুলো পদক্ষেপ বা ধাপ দিয়েছেন ।
- ঘুমের সময় পরিমাপ – স্মার্টওয়াচের সাহায্যে, আপনি কতক্ষন ঘুমিয়েছেন তা জানতে পারবেন ।
- হার্টবিট পরিমাপ – আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এই স্মার্টওয়াচের সাহায্যে আপনি সময় দেখার পাশাপাশি আপনার হার্ট রেটও মনিটর করতে পারবেন ।
আমার কোন স্মার্টওয়াচ কেনা উচিত?
ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচ গুলোর দাম বেশী হওয়ার কারণে, আমরা অনেকেই লোকাল স্মার্টওয়াচ কিনে থাকি । কিন্তু এই স্মার্টওয়াচ গুলোর ফিচার অনেক কম থাকে । আবার ফিচার থাকলেও সেগুলোর একুরেসি ঠিক থাকে না । এই ননব্র্যান্ডের স্মার্টঘড়িগুলোর ব্যাটারী ব্যাকআপ খুব খারাপ । এছাড়াও এই স্মার্টওয়াচগুলো অল্প কিছুদিন ব্যবহার করার পর থেকেই স্লো হতে শুরু করে, এমনকি নষ্টও হয়ে যেতে পারে । এমন পরিস্থিতিতে, একটু বেশী দাম দিয়ে হলেও, আপনাদের একটি ভালো ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম স্মার্টওয়াচ কেনা উচিত ।
আমরা বাজারে অনেক থার্ড পার্টি স্মার্টওয়াচ দেখতে পাই, যেগুলোর দাম অনেক কম । কিন্তু কেনার পর আমরা আমাদের ভুলটা বুঝতে পারি । তাই স্মার্টওয়াচ কেনার আগে কিছু বিষয় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে, যেমন – স্মার্টওয়াচটি কোন কোম্পানির, ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন, স্মার্টওয়াচে কী কী ফিচার রয়েছে, স্মার্টওয়াচটি ওয়াটারপ্রুফ কি না ইত্যাদি । যে কোন স্মার্টওয়াচ কেনার আগে, সেই স্মার্টওয়াচ সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করুন এবং তথ্য নিন ।
স্মার্টওয়াচ এর সুবিধা
স্মার্টওয়াচ একটি খুব দরকারী গ্যাজেট, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে । স্মার্টওয়াচের কিছু সুবিধা নিচে দেওয়া হল –
- স্মার্টওয়াচে ফিটনেস ট্র্যাকিং, ব্লাড প্রেশার চেক এবং হার্ট রেট পর্যবেক্ষণের মত বৈশিষ্ট্য রয়েছে । যার দ্বারা আপনি আপনার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারেন ।
- আপনি স্মার্টওয়াচে রিমাইন্ডার সেট করতে পারেন, যার ফলে এটি আপনাকে কিছু সময় পরে পরে আপনার কাজ সম্পর্কে মনে করিয়ে দেবে । এটি আপনার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্টের মতো কাজ করে । উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি রিমাইন্ডার সেট করতে পারেন যে “আমাকে রাত ১০ টার সময় ওষুধ খেতে হবে ।”
- স্মার্টওয়াচের সাহায্যে, আপনি আপনার ফোন স্পর্শ না করে বা পকেট থেকে ফোন বের না করেই, যে কাউকে কল বা মেসেজ করতে পারবেন । আবার কল রিসিভ বা কল কেটেও দিতে পারবেন ।
- আপনি স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে আপনার ফোনে আসা সমস্ত নোটিফিকেশন দেখতে পাবেন ।
- আপনি আপনার স্মার্টওয়াচ থেকে আপনার ফোনে বাজানো গান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, অর্থাৎ গান চেঞ্জ, গানের ভলিউম বাড়ানো কমানো ইত্যাদি করতে পারবেন ।
এগুলো হল স্মার্টওয়াচের কিছু সুবিধা । আপনি যখন একটি স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করবেন, তখন আপনার অবশ্যই এর উপযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী । আপনি যদি ইতিমধ্যেই একটি স্মার্টওয়াচ ইউজ করে থাকেন, তাহলে কমেন্ট করে স্মার্টওয়াচ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানান ।
স্মার্টওয়াচ কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরণের স্মার্টওয়াচ রয়েছে এবং সেগুলির বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এমন অবস্থায়, ভালো স্মার্টওয়াচ বেছে নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে । আপনার এই সমস্যা দূর করতে, স্মার্টওয়াচ কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরী, যা আপনাদের সঠিক স্মার্টওয়াচ বেছে নিতে সহায়তা করবে ।
ব্যাটারি লাইফ – স্মার্টওয়াচের ক্ষেত্রে ব্যাটারি লাইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । অনেক স্মার্টওয়াচ ১০ থেকে ২০ দিন ব্যাটারি লাইফ অফার করে এবং কিছু কিছু স্মার্টওয়াচ ১ বা ২ দিন পরেই চার্জ করতে হয় । তাই স্মার্টওয়াচ কেনার আগে, সেই স্মার্ট ওয়াচের ব্যাটারী ব্যাকআপ কতটুকু তা জেনে নিন । আর সেই স্মার্টওয়াচটি বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন, যেটিতে বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ থাকে এবং আপনার চাহিদা মেটাতে পারে ।
কার্যকারিতা – সব স্মার্টওয়াচের বিভিন্ন ধরনের ফাংশন বা ফিচার রয়েছে । তাই, আপনি যখন একটি স্মার্টওয়াচ কিনবেন, তখন আপনি দেখে নেবেন যে, সেই স্মার্টওয়াচে কি কি ফিচার রয়েছে এবং সেই ফিচার গুলো কতটুকু একুরেট রেজাল্ট দিচ্ছে ।
ওয়াটার প্রুফ – আপনি যদি আপনার স্মার্টওয়াচটি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে চান বা সাঁতার কাটতে চান, তাহলে আপনার স্মার্ট ঘড়িটি ওয়াটার প্রুফ হওয়া জরুরী । এমন অবস্থায় স্মার্টওয়াচ কেনার আগে জেনে নিন, ঘরিটি ওয়াটারপ্রুফ কি না ।
স্মার্টফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না – আপনি যে স্মার্টওয়াচটি কিনতে চাচ্ছেন, তা আপনার স্মার্টফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা চেক করে নিন । যদি আপনার স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচ একে অপরকে সাপোর্ট না করে, তাহলে আপনি আপনার স্মার্টওয়াচটি সঠিকভাবে ইউজ করতে পারবেন না । তাই একটি স্মার্টওয়াচ কেনার আগে, সবকিছু ভালোভাবে চেক করে নিন । তবে বর্তমানের স্মার্টওয়াচগুলো প্রায় সব ধরনের স্মার্টফোনেই সাপোর্ট করে ।
ডিজাইন ও লুক – উন্নত ফিচার থাকার পাশাপাশি, আপনার স্মার্টওয়াচের ডিজাইন এবং লুক ভালো হওয়া প্রয়োজন । তবে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে । কারণ, আপনি কোন রঙ এবং ডিজাইনের ঘড়ি পড়তে পছন্দ করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে ।
ডিসপ্লে – আপনি ভিন্ন ভিন্ন স্মার্টওয়াচে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখতে পাবেন । তবে যে কোন স্মার্টওয়াচের ক্ষেত্রে ডিসপ্লে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ স্মার্টফোনের ডিসপ্লের উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে, যেমন- টাচ রেসপন্স, ব্রাইটনেস ইত্যাদি । বর্তমানে অ্যামুলেড প্যানেল ডিসপ্লে সহ স্মার্টওয়াচ বেশী জনপ্রিয় ৷ সেই সাথে স্ক্রিনের সাইজও একটি বড় বড় বিষয় ।
তাই আপনি যখন একটি স্মার্টওয়াচ কেনার চিন্তা করবেন, তখন এই সমস্ত বিষয়গুলোর দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন । কারণ একটি স্মার্টওয়াচ ভবিষ্যতে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠতে চলেছে ।
উপসংহার
স্মার্টওয়াচ হল বর্তমান সময়ের একটি প্রয়োজনীয় গ্যাজেট, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হতে পারে । স্মার্টওয়াচের সাহায্যে আপনি আপনার ফোনে যে কাজগুলি করেন, তার অনেক কিছুই করতে পারবেন ৷ আমরা আশা করছি, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা, স্মার্টওয়াচ কী তা বুঝতে পেরেছেন । এছাড়াও আমরা, স্মার্টওয়াচের বৈশিষ্ট্য এবং স্মার্টওয়াচ কেনার আগে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা দরকার সে বিষয়ে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।