মাথার চুলের কারণে যে কোন মানুষের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন ধরণের কাজের চাপ, ধুলা-মাটি, দূষণ ও কেমিক্যালসমৃদ্ধ হেয়ার প্রোডাক্ট মাথার চুলকে নষ্ট করে ফেলে। এমন অবস্থায় আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন ? তাই আমরা আজকের এই আর্টিকেলে এমন কিছু চুলের যত্নের টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করব যা ব্যবহার করা যেমন সহজ, ঠিক তেমনি আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
Table of Contents
চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়
আপনি যদি ভেবে থাকেন কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন, তাহলে এর জন্য পার্লারে যাওয়ার কোন দরকার নেই। ঘরে বসেও আপনারা খুব সহজেই এই কাজটি করতে পারবেন। এখানে আমরা এমন কিছু চুলের যত্নের ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলব, যা ইতিমধ্যেই চুলের যত্নে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
নোট : নিচে উল্লিখিত কোনো উপাদানে যদি কারো অ্যালার্জি থেকে থাকে, তাহলে সেই উপদান এড়িয়ে চলুন এবং অন্য টিপস অবলম্বন করুন।
চুলের তেল
চুলের যত্নে তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী। নিচে আমরা এমন কিছু তেলের কথা বলছি, যেগুলো চুলের জন্য ভালো বলে বিবেচিত ।
- অলিভ অয়েল : অলিভ তেল অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। চুল সংক্রান্ত অনেক সমস্যায় এই তেলের ব্যবহার উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। এই সম্পর্কিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে অলিভ অয়েল চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুলের ক্ষতি রোধ করতে উপকারী ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসুত্র)।
- নারকেল তেল : নারকেল তেল চুলের জন্য উপকারী । এটি চুলকে হাইড্রেট করার পাশাপাশি এতে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ও মিনারেল চুলের পুষ্টিতে কাজ করে থাকে। এটি চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ( তথ্যসুত্র)।
- বাদাম তেল : বাদাম তেল ব্যবহার করা চুলের জন্য খুব ভালো। মূলত, বাদাম তেল হল ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভাল উৎস এবং ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী বলে মনে করা হয় ( তথ্যসুত্র )।
কন্ডিশনার এবং ডিম
প্রক্রিয়া নং-1
প্রয়োজনীয় উপাদান :
- দুইটা ডিম
- দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- সামান্য পানি (ঐচ্ছিক)
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- ২ টি ডিম ভেঙ্গে তার হলুদ অংশটি (কুসুম) আলাদা বাটিতে রাখুন।
- এবার তাতে অলিভ অয়েল মেশান ।
- প্রয়োজনে এতে সামান্য পানি যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে পারেন।
- তারপর এই প্যাক বা মিশ্রণটি ব্রাশের সাহায্যে চুলে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে দিন।
- এরপর ঠান্ডা পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
কখন ব্যবহার করবেন :
সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি আপনার চুলে ব্যবহার করুন।
প্রক্রিয়া নং-2
উপাদান :
- দুইটা ডিম
- চার টেবিল চামচ মেয়োনিজ
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- একটি পাত্রে এই দুটি উপাদান একসাথে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে এর মধ্যে সামান্য পরিমাণে অলিভ অয়েল যোগ করতে পারেন।
- এরপর ব্রাশের সাহায্যে এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগান ।
- প্রায় ৩০ মিনিট এভাবে রেখে দেওয়ার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং পরে সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন, যাতে চুল থেকে ডিমের গন্ধ দূর হয়ে যায়।
কখন ব্যবহার করবেন :
সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি আপনার চুলে ব্যবহার করুন।
প্রক্রিয়া নং-3
উপাদান :
- আধা কাপ ডিম
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- পুরো ডিম ভালোভাবে মিশিয়ে আপনার চুলে লাগান। ডিম আধা কাপ যদি আপনার চুলের জন্য কম হয়ে যায় তাহলে বেশি করে নিতে পারেন।
- এটি প্রায় 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপরে প্রথমে পানি এবং পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কখন ব্যবহার করবেন :
এটি মাসে একবার আপনার চুলে ব্যবহার করুন।
এটা কিভাবে উপকারী ?
ডিম চুলে অলৌকিকভাবে কাজ করে। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং ফলিক অ্যাসিড ( তথ্যসুত্র ) । এই সমস্ত খনিজ এবং ভিটামিন চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয় । এছাড়াও, অলিভ অয়েলে উপস্থিত থাকা ইমোলিয়েন্ট এবং তৈলাক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, এটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসাবে ব্যবহার করা যায় ( তথ্যসুত্র )। শুধু তাই নয়, এতে উপস্থিত ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য চুলকে আর্দ্রতা দিতে সক্ষম। সেই সাথে ঘরে তৈরি করা মেয়োনিজ চুলের শক্তি জোগাতে কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে তেল এবং প্রোটিন রয়েছে, যা চুলকে ভালোভাবে ময়শ্চারাইজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনঃ পেটের মেদ কমানোর ১০টি ঘরোয়া উপায়
ক্ষতিগ্রস্থ চুল – মধু এবং অলিভ অয়েল
উপাদান :
- মধু- ২ চামচ
- অলিভ অয়েল- ২ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- প্রথমে এই দুটি উপাদান একসাথে করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
- এরপর এই মিশ্রণটি হাতে নিয়ে ভাল করে মাথায় ম্যাসাজ করুন।
- প্রায় 20 মিনিট এইভাবে ম্যাসাজ করুন, এরপরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালকরে ধুয়ে ফেলুন।
- এছাড়াও আপনি এই মিশ্রণটি হালকা গরম করে আপনার চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন।
এটা কিভাবে উপকারী ?
মধু এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রণ চুল ভাঙ্গা রোধ করতে খুব সহায়ক । মূলত, অলিভ অয়েলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রাইগ্লিসারাইড, টোকোফেরল, ক্যারোটিনয়েড এবং স্কোয়ালিন, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চুলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। এটিতে হাইড্রেট করার ক্ষমতাও রয়েছে ( তথ্যসুত্র)। এছাড়াও মধু চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
লেবু এবং অলিভ অয়েল
উপাদান :
- ২ টেবিল চামচ লেবুর রস
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- একটি পাত্রে লেবু এবং অলিভ অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মেশান
- এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে আপনার মাথার ত্বকে অর্থাৎ চুলের গোঁড়ায় হাতের মাধ্যমে ম্যাসাজ করুন।
- প্রায় 20 মিনিট পর প্রথমে পানি এবং পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এটা কিভাবে উপকারী ?
খুশকির কারণে মাথার চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । আসলে, লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, যা ম্যালাসেজিয়া ফারফার নামক ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। এই ছত্রাক সাধারনত খুশকির কারণ হয় ( তথ্যসুত্র )। এটি মাথার চুলকানি থেকেও উপশম দিয়ে থাকে। এছাড়াও, লেবুর সাথে অলিভ অয়েলের মিশ্রণ ব্যবহার চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে ( তথ্যসুত্র )।
অ্যাভোকাডো
উপাদান :
- একটি পাকা অ্যাভোকাডো
- দই- এক কাপ
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- প্রথমে অ্যাভোকাডো কেটে এর মধ্যে থেকে বীজ বের করে নিন।
- এরপর ভালো করে বেটে নিয়ে তাতে দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগান এবং 40-45 মিনিটের জন্য এইভাবে রেখে দিন।
- এর পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান।
এটা কিভাবে উপকারী ?
অ্যাভোকাডো ঝরঝরে চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী বলে প্রমানিত। আসলে, অ্যাভোকাডো চুলের কন্ডিশনার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ( তথ্যসুত্র )। এটি চুলকে নরম রাখতে এবং জট পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে চুলের কন্ডিশনিংয়েও দই অত্যন্ত কার্যকরী । এটি চুলকে নরম ও সুস্থ রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ( তথ্যসুত্র )।
বিয়ার এবং ডিম
উপাদান :
- ফ্ল্যাট বিয়ার
- অ্যাভোকাডো তেল এক চামচ
- ডিম একটি
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- একটি পাত্রে সমস্ত উপাদানগুলো নিয়ে ভালভাবে মেশান।
- এবার এই মিশ্রণটি প্রথমে চুলের গোড়ায় লাগান। এরপরে সমস্ত চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
- এটি মাথায় এবং চুলের গোঁড়ায় ভালোভাবে লাগানো হয়ে গেলে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
- প্রায় 30 মিনিট অপেক্ষা করুন, এরপর আপনার চুল শ্যাম্পু করুন এবং তারপর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
এটা কিভাবে উপকারী ?
মূলত, বিয়ার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ( তথ্যসুত্র )। একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, চুলের যত্নে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। এটি চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে । একই সময়ে, ডিম ক্ষতিগ্রস্ত চুল পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে ( তথ্যসুত্র )।
অ্যালোভেরা
উপাদান :
- পেঁয়াজ – তিন থেকে চারটি
- অ্যালোভেরা জেল- ১ চা চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- প্রথমে তিন থেকে চারটি পেঁয়াজ নিয়ে ব্লেন্ডারে ভাল করে পিষে নিয়ে একটি সুতির কাপড়ে রেখে ছেঁকে নিন, যাতে এর রস বেরিয়ে আসে।
- এবার এতে অ্যালোভেরা জেল ভাল করে মিশিয়ে নিন।
- এরপর এই মিশ্রণটি সমস্ত চুলে এবং মাথায় ম্যাসাজ করুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই মিশ্রণটি সারা চুলে লাগানো হয়।
- প্রায় এক ঘণ্টা চুল এভাবে রেখে অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে পরে কন্ডিশনার লাগান।
এটা কিভাবে উপকারী ?
চুলের যত্নের সেরা টিপসের তালিকায় অ্যালোভেরা রয়েছে। এটি চুল ভাঙ্গা প্রতিরোধে ব্যবহার করুন। এতে উপস্থিত এনজাইমগুলি মাথার ত্বককে রক্ষা করতে সক্ষম এবং সেই সাথে চুল পড়া রোধ করতে পারে ( তথ্যসুত্র )। একই সময়ে, পেঁয়াজের রস চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ( তথ্যসুত্র )।
আরও পড়ুনঃ হাঁপানির কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
ব্রাউন সুগার
উপাদান :
- ব্রাউন সুগার- দুই চামচ
- লেবুর রস- দুই চামচ
- জোজোবা তেল- দুই চামচ
- লবণ – এক চা চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন :
- একটি পাত্রে ব্রাউন সুগার এবং লবণ একসাথে মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে জোজোবা তেল ও লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে নিন।
- এরপর এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগানোর পর ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এটা কিভাবে উপকারী ?
ব্রাউন সুগার খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে, চুলে খুশকির কারণ হিসেবে ম্যালাসেজিয়া ফুরফুর নামক একটি ছত্রাক বলে মনে করা হয় । ব্রাউন সুগারের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য এই ধরনের ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। এই ভিত্তিতে, এটা বিশ্বাস করা যেতে পারে যে ব্রাউন সুগার খুশকি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
শ্যাম্পু
চুল লম্বা, ঘন ও সুস্থ রাখতে হলে সেগুলো পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও চুলের যত্ন ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের চুলের জন্য বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু রয়েছে। তাই শ্যাম্পু বাছাই করার সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।
- শুষ্ক চুলের জন্য : শুস্ক চুলের জন্য শ্যাম্পু এমন হওয়া উচিত, যা চুলকে ময়েশ্চারাইজ করবে এবং সেই সাথে নরম করবে। এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না যা মাথার ত্বকে উপস্থিত প্রাকৃতিক তেল শুকিয়ে ফেলবে। এটি চুলকে আরও শুষ্ক ও প্রাণহীন করে তুলবে। শুষ্ক চুলের জন্য শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নিন এতে অ্যাভোকাডো, নারকেল, আরগান বা আঙ্গুরের তেল আছে কিনা। এছাড়াও, শুকনো চুলে শ্যাম্পু করার পরে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- তৈলাক্ত চুলের জন্য : এই ধরনের চুলের জন্য, এমন শ্যাম্পু কখনোই কিনবেন না, যা ময়েশ্চারাইজিং এবং কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে। তৈলাক্ত চুলে আর ময়েশ্চারাইজিং করার প্রয়োজন পরে না। তৈলাক্ত চুলে খুশকি একটি নরমাল সমস্যা। তাই, কেটোকোনাজল, সেলেনিয়াম সালফাইড এবং সাইক্লোপিরোক্স ওলামাইন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু বেছে নিন। লেবু যুক্ত শ্যাম্পুও এ ধরনের চুলের জন্য ভালো কাজ করে।
- সাধারণ চুলের জন্য : এই ধরনের চুলগুলো শুষ্ক বা তৈলাক্ত নয়, তাই এই ধরনের চুলের জন্য যেকোনো ধরনের সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই শ্যাম্পু যেন ভেষজ এবং অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের হয়।
চুলের যত্নে কি খাওয়া উচিত
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা এমন কিছু খাবার সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, যেগুলো শুষ্ক, প্রাণহীন ও তৈলাক্ত চুলের জন্য প্রয়োজনীয়। এই খাবারগুলিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে, আপনি চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ব্যবস্থা করতে পারবেন । আপনার চুল যদি পুরোপুরি ঠিক থাকে, তাহলেও আপনারা এই খাবার গুলো গ্রহন করতে পারেন।
তৈলাক্ত চুলের জন্য
- ভিটামিন-এ : ভিটামিন-এ চুল ও শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শরীরে সিবামের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। সিবাম, আমাদের শরীর এবং মাথার ত্বকে ঘাম এবং তেল তৈরি করে থাকে। ভিটামিন-এ মাছ, মুরগির মাংস, ফলমূল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলি চুলকে লম্বা এবং ঘন করার সাথে সাথে চুলের চকচকে ভাব বৃদ্ধি করতে পারে।
- জিঙ্ক : আমাদের শরীর এবং চুল উভয়ের জন্যই জিঙ্ক একটি দরকারী উপাদান। জিঙ্ক যুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে সিবামের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব । বাজারে অনেক ধরনের জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট সহজেই পাওয়া যায়। এ ছাড়াও মাছ, শুকনো ফল, শস্যদানা ও লেবুতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে। ওটসকে জিঙ্কের অন্যতম উৎস হিসেবে মনে করা হয়।
শুষ্ক চুল জন্য
- আয়রন : চুলের ফলিকল বাড়াতে এবং চুল মজবুত করতে আয়রন যুক্ত খাবার গ্রহন করা উচিত ( তথ্যসুত্র )। যেমন, পালং শাক, খেজুর, কারি পাতা এবং ডালিম ইত্যাদিতে আয়রন রয়েছে।
- ভিটামিন-ডি : ভিটামিন-ডি চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুল শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় ( তথ্যসুত্র )। এছাড়াও, সয়া পানীয়, দই ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্টও ব্যবহার করতে পারেন।
- ওমেগা-৩ : আপনি যদি নরম ও নমনীয় চুল চান, তাহলে আপনার খাবার তালিকায় ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না ( তথ্যসুত্র )। স্যামন এবং ম্যাকেরেলের মতো মাছে ওমেগা-3 বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়াও সবুজ শাক, আখরোট, চিয়া বীজ ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ পাওয়া যায় ।
- বায়োটিন (ভিটামিন-বি৮) : চুল মজবুত করার জন্য বায়োটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়োটিন ফ্যাটি অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট এবং অ্যামিনো অ্যাসিড বিপাক করতে সাহায্য করে। বায়োটিনের অভাবে আপনার চুল পড়তে পারে। এমনকি মাথার চুলের সাথে সাথে ভ্রু ও চোখের পাতার চুলও পড়ে যেতে পারে। এই কারণে, বায়োটিনযুক্ত খাবার গ্রহন করা উচিত। যার মধ্যে রয়েছে ডিমের কুসুম, ওটস, পালং শাক, দুধ, মাশরুম এবং ভাত ইত্যাদি।
কিছু চুলের যত্নের টিপস
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য আরও কিছু টিপস নিচে দেওয়া হল –
- তেল মালিশ : প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার তেল দিয়ে মাথা ম্যাসাজ করুন। মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় এবং সেই সাথে শুষ্কতা দূর হয়। উপরন্তু, চুল লম্বা এবং ঘন হওয়ার সাথে সাথে গোঁড়া থেকে শক্তিশালী হয়। মাথায় মালিশ করার জন্য নারকেল, জলপাই, বাদাম বা ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন।
- দূষণ থেকে সুরক্ষা : চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য দূষণ থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। দূষণের কারণে মাথার ত্বকে সংক্রমণ, চুলকানি বা খুশকির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এর কারণে চুল গোঁড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই চুলকে দূষণ থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
- ট্রিমিং : চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য মাঝে মাঝে চুল ট্রিম করাও প্রয়োজন। এতে চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও চুলের জট পড়ার সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া পায়।
- চুলে কেমিক্যাল যুক্ত পন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন : নতুন ফ্যাশন অনুসরণ করতে গিয়ে অথবা চুলে নতুন স্টাইল তৈরি করার জন্য আমরা অনেক কেমিক্যাল সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করে থাকি। এর কারণে চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে, চুল দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই, চুলের জন্য সব সময় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- চুলে গরম পানি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন : অনেকেই চুল ধোয়া বা পরিষ্কার করার জন্য গরম পানি ব্যবহার করেন, যা করা একবারেই উচিত নয়। গরম পানি ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। এর কারণে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে যায়। তাই চুল ধোয়া বা পরিষ্কার করার জন্য সবসময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন।
- চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন : আমাদের মধ্যে অনেকেই শ্যাম্পু করার পরে সরাসরি মাথার ত্বকে কন্ডিশনার ব্যবহার করে, কিন্তু এটি করা উচিত নয়। কন্ডিশনার সবসময় চুলে লাগাতে হবে, মাথার ত্বকে নয়। তারপর দুই থেকে তিন মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- প্রতিদিন চুল ধোয়া এড়িয়ে চলুন : অনেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন চুল ধুয়ে থাকেন, কিন্তু প্রতিদিন চুল ধোয়ার ফলে আপনার মাথার ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল দূর হয়ে যেতে পারে। এছাড়া চুলের আর্দ্রতাও নষ্ট হয়। এর ফলে অনেক সময় চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়।
- হেয়ার ড্রায়ারের বদলে এভাবে চুল শুকান : চুলে শ্যাম্পু করার পরে তোয়ালে দিয়ে ঘষে অথবা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকানোর পরিবর্তে চুল সাধারণভাবে শুকিয়ে নিন। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার ফলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি খুব প্রয়োজন না হয় তাহলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। মাইক্রোফাইবার তোয়ালে চুল শুকাতে ব্যবহার করতে পারেন। এটি অন্যান্য তোয়ালেগুলির তুলনায় চুলে কম ঘর্ষণ তৈরি করে, যার ফলে আপনার চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- ঘর থেকে বের হলে চুল ঢেকে রাখুন : চুলের বৃদ্ধি এবং চুল ভাল রাখার জন্য সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেও চুলকে রক্ষা করা প্রয়োজন। তাই ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সম্ভব হলে চুলকে টুপি বা সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন।
- চুলের চিরুনি: চুল ভিজে গেলে বা ভেজা থাকা অবস্থায় কখনও চিরুনি ব্যবহার করবেন না। এর ফলে চুল গোড়া থেকে দুর্বল হয়ে যেতে পারে । এছাড়াও, সবসময় মোটা এবং প্রশস্ত দাঁতযুক্ত চিরুনি ব্যবহার করুন। এছাড়াও দিনে অন্তত দুবার চুল আঁচড়াতে ভুলবেন না। এর ফলে চুলে জট বাধবে না এবং মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল সমস্ত চুলে ছড়িয়ে পরবে।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে, বাড়িতে চুলের যত্ন নেওয়া আমরা যতটা কঠিন মনে করি আসলে বিষয়টা ততটা কঠিন নয়। এর জন্য শুধুমাত্র আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত রুটিন থেকে অল্প কিছুটা সময় বের করতে হবে। আমরা আশা করছি আজকে আলোচনা করা চুলের যত্নের পদ্ধতিগুলি থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। তবে এর সাথে সাথে চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য গ্রহণ করাও অত্যন্ত প্রয়োজন, তবেই আপনার চুল পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান
ধন্যবাদ