বিটকয়েন (Bitcoin) এমন একটি মুদ্রা বা কারেন্সী যাকে নিয়ে পৃথিবীর মানুষের আগ্রহের কোন সীমা পরিসীমা নেই। অনেকেই এই মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন, প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখেন, আবার অনেকে এর বিষয়ে অল্প কিছু জানেন, আর এমন কিছু মানুষ আছেন যারা বিটকয়েন (Bitcoin) সম্পর্কে কিছুই জানেন না, শুধু শুনেছেন। এই মুদ্রা সম্পর্কে মানুষের এত বেশী জানার আগ্রহ থাকার প্রধান কারণ, এই মুদ্রা বা কারেন্সী একদিকে যেমন দূর্লভ, অন্যদিকে বিশ্বের সবথেকে বেশি শক্তিশালি কারেন্সী।
আর বিটকয়েন (Bitcoin) আয় করা বা মাইনিং করা অনেক কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ। কিন্তু এই মুদ্রা (বিটকয়েন) আয় করা বা মাইনিং করার উপায় রয়েছে।
বিটকয়েন হল একপ্রকার ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ডিজিটাল কারেন্সী, যা কখনো কাগজে ছাপা হয় না । অনলাইনেই যার একমাত্র অস্তিত্ব, সেই বিটকয়েন নিয়ে রয়েছে অনেক অবাক করা তথ্য। বিটকয়েকেন সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা। তাহলে, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক বিটকয়েন সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য।
Table of Contents
বিটকয়েনের নির্মাতা আজও রহস্যময়
সাতোসি নাকামোটো (Satoshi Nakamoto), যিনি কিনা বিটকয়েনের ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত, তাকে নিয়ে আজও রহস্যের কোন কমতি নেই। কারণ সাতোসি নাকামোটোর ওরিজিনাল পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে এই কাজে আরও অনেকেই ছিল বলে মনে করা হয়। তাদের মধ্যে নিক, ডরিয়েন নাকামোটো, হ্যাল ফিন্নে, স্টিভেন-রাইড এরা উল্লেখযোগ্য। বিটকয়েনের ক্ষুদ্র অংশকে সাতোশি হিসেবে বলা হয়ে থাকে। অনেকগুলো সাতোশি এর সমন্বয়ে একটি বিটকয়েন তৈরি হয়।
বিটকয়েন সীমিত
আপনি কি জানেন বর্তমানে এক Bitcoin সমান বাংলাদেশের কত টাকা? ১ বিটকয়েন সমান বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকার সমান। যারা তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা রাখেন, তাদের অনেকেই জানেন একটি বিটকয়েন পেতে বা মাইনিং করতে কি পরিমাণ সময় আপনাকে অনলাইনে দিতে হবে। তার প্রধান কারণ, বিটকয়েন বা বিটিসি মাইনিং হয় খুব ধীরে এবং সামান্য পরিমাণে। তাই বিটকয়েন বর্তমান বাজারে খুবই বিরল এবং অত্যন্ত দামী। সাধারণত হ্যা-কাররাই এই বিটকয়েন ইউজ করে থাকে।
কে বিটকয়েন পাঠালো/ পাঠালেন তার পরিচয় অজানা
এটাই বিটকয়েনের সবচেয়ে বিষ্ময়কর এবং অবাক করার মত ব্যাপার যে, আপনি যদি কাউকে বিটকয়েন পাঠান বা সেন্ড করেন, তাহলে আপনি তার পরিচয় কখনই জানতে পারবেন না। আবার আপনাকে কে এই বিটকয়েন সেন্ড করলে, তার তথ্যও বিটকয়েনের ড্যাশবোর্ডে শো করবে না। আর এই কারণে ভার্চুয়াল দুনিয়ার যত অবৈধ বা ইল্লিগ্যাল কাজ আছে, তার প্রায় সব এই বিটকয়েনের মাধ্যমেই ট্রানজেকশন হয় থাকে।
বিভিন্ন হ্যা-কার, সাইবার ক্রিমিনাল এই বিটকয়েনের মাধ্যমে ট্রান্সজেকশন করে থাকে। বিটকয়েন ট্রান্সজেকশনের মাধ্যমেই বিভিন্ন চোরা-চালান এর লেনদেন সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বিটকয়েনে ক্রয় করা প্রথম জিনিস
আপনি শুনে অবাক হবেন যে বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই কারেন্সি যা প্রথম ব্যবহার হয়েছিল একটা পিজ্জা কিনার জন্য। ২০০৯ সালে বিটকয়েনের দুই প্রতিষ্ঠাতা সাতোশি নাকামোটো এবং হ্যালের মধ্যে সর্ব প্রথম যে বিটকয়েনের লেনদেন হয়েছিল তা ছিল ২৫ ডলার মূল্যের একটি মাত্র পিজ্জা কেনার জন্য। আর ওই সময় তাদের ২৫ ডলার পিজ্জা কিনতে প্রয়োজন পড়েছিল প্রায় ১০ হাজার বিটকয়েনের।
বিটকয়েনের নেটওয়ার্ক সুপারকম্পিউটার থেকেও বেশী শক্তিশালী
কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের মতে BTC বা বিটকয়েনের কম্পিউটিং ক্ষমতা বা পাওয়ার ২০৪৬,৩৬৭ ফিফ্লপ/সেকেন্ড। যেখানে আপনি ৫০০ টির মত সুপার কম্পিউটার কে একত্রিত করলে সেগুলোর কম্পিউটিং ক্ষমতা দাঁড়াবে মাত্র ২৭৪ ফিফ্লপ/সেকেন্ড । তাহলে একবার ভেবে দেখুন বিটকয়েন কতটা বেশি শক্তিশালী। এই কারনে বিটকয়েন মাইনিং এর জন্যও প্রয়োজন পরে শক্তিশালী কম্পিউটার ।
বিটকয়েনের ট্রানজেকশন অপরিবর্তণীয় থাকে
যেহেতু বিটকয়েন লেনদেন অবৈধ কর্মকান্ড বা ইল্লিগ্যাল কাজের সাথে যুক্ত, তাই বিটকয়েনে পাঠানো অর্থ থাকে অপরিবর্তণীয়। অনেকটা বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম পেপালের মতো। তাই এখানে যদি একবার ট্রানজেকশন করা হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তা আর পরিবর্তণ করা সম্ভব নয়।
বিটকয়েনের একটি বিশাল অংশ রয়েছে এফবিআই এর কাছে
সিল্ক রোডের নামতো অনেকেই জেনে বা শুনে থাকবেন। আমেরিকার টপ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যখন সিল্ক রোড বন্ধ করার জন্য অপারেশনে নামে, তখন তারা সব ধরনের অবৈধ চালান বাজেয়াপ্ত করে দেয়। যার মাধ্যমে এফবিআই হয়ে যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিটকয়েনের অধিকারী। ওয়ার ম্যাগাজিন নামের একটি প্রথম সারির ম্যাগাজিন দাবি করে যে, এফবিআই এর কাছে তৎকালীন সময়ের প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলারের বিটকয়েন রয়েছে, বর্তমানে যার মুল্য আরও অনেক বেশী।
বিটকয়েন ওয়ালেট হারানোর মানেই হল বিটকয়েন হারানো
অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট গুলোতে আপনি যেমন টাকা জমা রাখেন, ঠিক তেমনি বিটকয়েন জমা রাখতে হয় বিটকয়েনের বিভিন্ন ওয়ালেটে। যদিও বিটকয়েন ওয়ালেট গুলতে খুবই উচ্চমানের সিকিউরিটি দেওয়া থাকে, কিন্তু তারপরেও আপনি যদি একবার আপনার ওয়ালেট হারান, তাহলে কিন্তু আজীবনের জন্যই আপনি আপনার ওয়ালেটে থাকা সমস্ত বিটকয়েন হারালেন। আবার এটাও প্রায় অসম্ভব যে, কেউ আপনার বিটকয়েন ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারবে। আপনার যদি একটি বিটকয়েনের অ্যাড্রেস থাকে, তাহলে আপনি যাকে বিটকয়েন সেন্ড করবেন, তারও একটা বিটকয়েন নম্বর দেখতে পারবেন। আর সেই বিটকয়েন নম্বর বা অ্যাড্রেস এই টাকা পাঠাতে হবে ৷ একইভাবে আপনার জন্যও নির্দিষ্ট একটা বিটকয়েন নম্বর বা অ্যাড্রেস থাকবে। আপনি ইচ্ছা করলে কিছুদিন পর পর আপনার বিটকয়েন নম্বর বা অ্যাড্রেস পরিবর্তন করতে পারবেন ।
বিটকয়েনের দাম পরিবর্তণশীল
যখন থেকে বিটকয়েন বাজারে আসে, প্রায় তখন থেকেই বিটকয়েন ডিজিটাল বিশ্বে সবচেয়ে দামী মুদ্রা বা কারেন্সি হিসাবে রাজত্ব করে আসছে। কিন্তু এই বিটকয়েনের মান বা দাম ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে। এতে করে এর রাজত্ব ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে । আর সত্যি যদি কখনো এমনটা ঘটে তাহলে এর প্রভাব পড়বে বিভিন্ন ধরনের সাইবার কমিউনিটিতে এবং যারা এই মুদ্রা বা কারেন্সির উপরে নির্ভর করে।
বিটকয়েনের কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই
যাকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বে এত আলোচনা, সেই বিটকয়েনের (Bitcoin) আসলে কিন্তু কোন অস্তিত্বই নেই। মানে বিটকয়েন কেবল অনলাইন বা ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ, অফলাইনে এর কোন অস্তিত্বই নেই। আর বিটকয়েনের যে মুদ্রার ছবি আপনি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে দেখে থাকেন, তারও বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। এটা শুধুমাত্র অনলাইনেই পাবেন, আবার অনলাইনেই গায়েব হয়ে যাবে।
বিটকয়েনের (Bitcoin) বর্তমান বাজার মূল্যও অত্যাধিক রকমের বেশি। দিনে দিনে এই মুদ্রা বা কারেন্সি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করছে৷ কারণ এই কারেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করা খুব সহজ। কোন প্রকার ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পরে না, সেই সাথে আপনার পরিচয়ও ভার্চুয়াল জগতে পুরোপুরিভাবে গোপন থাকে৷
ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েবের প্রায় সকল ধরনের লেনদেন এই মুদ্রা বা কারেন্সি দিয়েই হয়ে থাকে। তাই একদিকে যেমন বিটকয়েন কিছু ভাল দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি এটি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ জগতের মানুষেরা খুব সহজেই আইনের থেকে ফাঁকি দিতে পারছে।