রোবোট কি ? রোবট কিভাবে কাজ করে ?

কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই, মানব সভ্যতায় অটোমেশন প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে । যার ফলে, আজ কম্পিউটার প্রোগ্রাম করা মেশিনগুলি অনেক ক্ষেত্রে মানুষের অনেক ধরনের কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে । এই কারণেই রোবোটিক্স এখন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি স্বাধীন অধ্যয়নের বিষয়ে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে রোবট নিয়ে অনেক ধরনের গবেষণার কাজ হচ্ছে । কারণ, রোবোটিক্স হল নেক্সট জেনারেশান টেকনোলোজি । তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে রোবট কি, রোবোটিক্স কি, রোবট কীভাবে কাজ করে, রোবোটিক্সের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

রোবট কি – রোবট কাকে বলে

‘রোবট’ শব্দটি এসেছে চেক শব্দ রোবোটা থেকে, যার অর্থ হল ‘ Forced Labour বা জোর করে শ্রম’ । আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে, লেখক কারেল ক্যাপেকের একটি নাটকে রোবট শব্দটি প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল । ১৯২১ সালে, ‘RUR (Rossum’s Universal Robots)’ শিরোনামের এই নাটকটি প্রিমিয়ার হয়েছিল ।

রোবট হল অটোমেটিক কম্পিউটার প্রোগ্রাম করা মেশিন, যা এর চারপাশের পরিবেশকে অনুধাবন করতে পারে এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

রোবোটিক্স কি ?

রোবোটিক্স হল রোবট নিয়ে রিসার্চ বা গবেষণা । এটি ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি শাখা, যেখানে রোবটের ধারণা, নকশা, উৎপাদন, অপারেশন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয় । এর মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স, জৈবপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলোজি, ইলেকট্রনিক্স অন্তর্ভুক্ত ।

রোবোটিক্স, মনুষ্যসৃষ্ট যান্ত্রিক বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরি করে, যেগুলি নিজেকে নড়াচড়া বা মুভ করাতে সক্ষম । এবং এগুলোর গতি এবং আচরণ প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় । রোবটগুলিকে বুদ্ধিমান বলা হয়, যখন এগুলো তার আশেপাশের যে কোন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারে ।

রোবোটিক্স হল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিল্ডিং এবং অপারেটিং রোবটের সাথে রিলেটেড একটি ইন্ডাস্ট্রি । এটি একটি বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্র, যেখানে অনেক কমার্শিয়াল ইন্ডাস্ট্রি এবং ভোক্তাদের ব্যবহার জড়িত ।

রোবোটিক্স পরিচিতি 

আমরা যখন “রোবট” শব্দটি শুনি, তখন আমাদের প্রথম যে চিত্রটি মনে আসে তা হল, একটি রূপালী রঙের মানুষের মতো দেখতে রোবট । কিন্তু রোবটের অনেক ধরনের রূপ রয়েছে, যেমন অটোমেটিক ড্রোন এবং চালক বিহীন গাড়ি । এছাড়াও রোবট অনেক কিছুই হতে পারে এবং এই সময়টি রোবটের বিস্তারের শুরু মাত্র ।

অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী অনুসারে , আইজ্যাক আসিমভ তার বিজ্ঞান ফ্যান্টাসি ছোট গল্প ” লিয়ার “-এ রোবোটিক শব্দটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন । তার অন্য আরেকটি ছোটগল্প “রানারাউন্ড”-এ লেখক রোবোটিক্সের ৩ টি জনপ্রিয় পলিসি দিয়েছেন, যা আসিমভের রোবোটিক্সের ৩ টি আইন নামে পরিচিত ।

আসিমভের রোবোটিক্সের ৩ টি আইন নিচে দেওয়া হল –

  • রোবট যেন মানুষের ক্ষতি না করে ।
  • রোবটদের অবশ্যই মানুষের নির্দেশ মানতে হবে ।
  • কোন ধরনের নিয়ম লঙ্ঘন না করে, রোবটদের নিজেদের প্রোটেক্ট করতে হবে ।

রোবোটিক্সের একটি অর্থ অটোমেশনেও প্রয়োগ করা হয়, তবে অটোমেশন হল রোবটিক্সের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য । যেখানে রোবোটিক্স হল একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র ।

রোবট সাধারণত কঠিন কাজগুলো সহজে এবং নির্ভুলভাবে করার জন্য তৈরি করা হয় । একটি রোবট তৈরি করার জন্য মেকানিক্যাল, সফটওয়্যার এবং ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের সংমিশ্রণ প্রয়োজন । মেকানিক্যাল, সফটওয়্যার এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং রোবটকে কোনও ধরনের ত্রুটি ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম করে তোলে ।

কিছু রোবট আছে, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি এক্সটারনাল কন্ট্রোল ডিভাইসের প্রয়োজন হয় এবং কিছু রোবট আছে, যেগুলোর ভেতরেই কন্ট্রোল ডিভাইস ইনস্টল করা হয় । রোবটের কোন নির্দিষ্ট আকার বা আকৃতি নেই । একটি রোবট কি ধরনের কাজ করবে, সেই অনুযায়ী সেটিকে তৈরি করা হয় ।

আরও পড়ুনঃ মাইক্রোপ্রসেসর কি ? মাইক্রোপ্রসেসর কিভাবে কাজ করে ?

রোবটের ইতিহাস – রোবোটিক্সের ইতিহাস

আসুন জেনে নিই রোবোট কীভাবে শুরু হয়েছিল । মহান গ্রীক বিজ্ঞানী আর্কিটাস সর্বপ্রথম একটি যান্ত্রিক পাখি তৈরি করেছিলেন, যেটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য পেজিয়ন’ । এটি তৈরিতে আর্কিটাস স্টিম পাওয়ার বা বাষ্পের শক্তি ব্যবহার করেছিলেন । যার সাহায্যে এই পাখিটি উড়তে পারত, পরবর্তীতে তার এই এক্সপেরিমেন্টটি রোবটিক্সের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয় ।

১৭০০ সালের দিকে, অনেকগুলি অটোমেটা তৈরি করা হয়েছিল । এগুলোর মধ্যে কিছু অভিনয় করতে, আঁকতে, উড়তে এবং সঙ্গীত বাজাতে পারত ।

১৭৩৭ সালে জ্যাক ডি ভকানসন, একটি স্বয়ংক্রিয় বাঁশি বাদক, একজন ট্যাম্বোরিন বাদক এবং ” দ্য ডাইজেস্টিং ডাক ” তৈরি করেছিলেন । ভকানসনের তৈরি দ্য ডাইজেস্টিং ডাক, ডানা ঝাপটানোর মাধ্যমে একটি আসল হাঁসকে অনুকরণ করতে পারত । এছাড়াও এটি শস্য খেতে, হজম করতে এবং মলত্যাগ করতে পারত ।

১৭৭০ সালে, সুইস নামক এক বিজ্ঞানী একটি রোবোটিক্স পুতুল তৈরি করেছিলেন এবং এই পুতুলটির বিশেষত্ব ছিল, এটি গান বাজানো, ছবি তুলতে সক্ষম ছিল ।

১৮১০ সালে জার্মানির ড্রেসডেনে, ফ্রেডরিক কাউফম্যান প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করেন । এটি ছিল ট্রাম্পেট সহ একজন সৈনিক ।

১৮৯৮ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা প্রথম রিমোট কন্ট্রোলড রোবট বোট আবিষ্কার করেন ।

১৯২৮ সালে লন্ডনে, মডেল ইঞ্জিনিয়ার্স সোসাইটির বার্ষিক এক্সিবিশানে প্রথম হিউম্যানয়েড রোবটগুলির মধ্যে একটি প্রদর্শিত হয়েছিল । ডব্লিউএইচ রিচার্ডস দ্বারা উদ্ভাবিত, এরিক নামক রোবটটি ১১ টি ইলেক্ট্রোম্যাগনেট এবং একটি ১২-ভোল্ট শক্তি চালিত মোটর সহ একটি অ্যালুমিনিয়াম স্যুট নিয়ে গঠিত ছিল । এই রোবটটি তার হাত এবং মাথা নড়াচড়া করতে পারত । এছাড়াও এটিকে রিমোট বা ভয়েসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যেত ।

১৯২৯ সালে জাপানের ওসাকায়, গাকুটেনসোকু (জাপানি শব্দের অর্থ – প্রকৃতির আইন থেকে শিক্ষা) রোবট নির্মিত হয়েছিল । রোবটটি ডিজাইন এবং নির্মাণ করেছিলেন, বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী মাকোতো নিশিমুরা । এই রোবটটি তার মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন করতে পারত এবং এয়ার প্রেসার টেকনোলোজির সাহায্যে তার মাথা ও হাত নাড়াতে সক্ষম ছিল ।

১৯৩৯ সালে, ইলেকট্রো নামে পরিচিত হিউম্যানয়েড রোবট ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে উপস্থিত হয়েছিল । এটি ছিল 2.1 মিটার লম্বা এবং এর ওজন ছিল 120 কেজি । এটি ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে হাঁটতে পারত, প্রায় ৭০০ টি শব্দ বলতে পারত । এছাড়াও সিগারেট ফুঁকতে, বেলুন উড়িয়ে দিতে এবং মাথা ও হাত নাড়াতে সক্ষম ছিল ।

১৯৫৪ সালে, জর্জ ডেভল প্রথম ডিজিটালভাবে পরিচালিত এবং প্রোগ্রামেবল রোবট তৈরি করা হয়, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইউনিমেট’ । পরবর্তীতে এটি আধুনিক রোবোটিক্স শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে । ডেভল ১৯৬০ সালে জেনারেল মোটরসের কাছে প্রথম ইউনিমেট রোবটটি বিক্রি করেন ।

১৯৫৬ সালে, জন ম্যাককার্টি প্রথম “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” শব্দটি ব্যবহার করেন । এবং এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেশিনগুলিকে বুদ্ধিমান করে তোলে । জন ম্যাককার্টি এবং মারভিন মিনস্কি এই সেক্টরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন । এবং বর্তমানে তাদের সেই প্রচেষ্টাকে পুঁজি করে আধুনিক বুদ্ধিমান রোবট তৈরি করা হচ্ছে ।

১৯৬৯ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ভিক্টর শেইনম্যান স্ট্যানফোর্ড আর্ম আবিষ্কার করেন, যা প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত রোবোটিক আর্ম হিসেবে স্বীকৃত ।

১৯৭০ সালে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সর্ব প্রথম মোবাইল রোবট তৈরি করে, এটি তার চারপাশের বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তি দিতে সক্ষম ছিল ।

১৯৯৬ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ডক্টরেট ছাত্র ডেভিড ব্যারেট, বায়োমিমেটিক রোবট ” রোবোটুনা ” তরি করেন ।

১৯৯৯ সালে, সনি AIBO তৈরি করেছিল । এটি ছিল একটি রোবোটিক কুকুর, যা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম ছিল ।

২০০০ সালে হোন্ডা কোম্পানি, হিউম্যানয়েড প্রকল্পের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ ASIMO নির্মাণ করেছিল । ASIMO রোবটটি দৌড়াতে, হাঁটতে, মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে, মুখ, কণ্ঠস্বর এবং ভঙ্গি চিনতে সক্ষম ছিল ।

২০০৯ সালে, বিশ্বের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড রোবট, আইবিএন সিনা তৈরি করা হয়েছিল, যা কথোপকথন করতে সক্ষম ছিল । এই রোবটটি মানুষের মুখের ভাব, হাতের অঙ্গভঙ্গি এবং আরবি ভাষায় সংলাপ বুঝতে সক্ষম ছিল । এছাড়াও এটি মানুষের মুখ চিনতে ও চিহ্নিত করতে সক্ষম ছিল । এটি সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারেক্টিভ রোবট এবং মিডিয়া ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়েছিল ।

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর, রিয়াদে ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট সামিটে, সোফিয়া নামক একটি রোবটকে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছিল । সোফিয়া হল প্রথম রোবট যার একটি জাতীয়তা রয়েছে ৷

রোবটের প্রকারভেদ – রোবট কত প্রকার

নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রোবটকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায় –

ম্যানুয়াল রোবট – এই ধরনের রোবটকে ম্যানুয়ালি চালানোর প্রয়োজন হয় । ম্যানুয়াল রোবটগুলি নিজে নিজে কাজ করতে পারে না । এই ধরনের রোবট ব্যবহারকারীর কমান্ড অনুযায়ী কাজ করে । ক্রেন হল ম্যানুয়াল রোবটের একটি ক্লাসিক উদাহরণ ।

সেমি অটোনোমাস রোবট – এগুলি এমন ধরণের রোবট যা ইউজারের থেকে কিছু ইনপুট নেয় এবং বাকি কাজ নিজেরাই সম্পাদন করে । এগুলি ম্যানুয়াল রোবটের মতো নয়, কারণ এই ধরনের রোবটকে চালানোর জন্য ধাপে ধাপে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না ।

অটোনোমাস রোবট – এই ধরণের রোবট, তাদের সমস্ত কাজ সম্পূর্ণরূপে নিজেরাই করতে সক্ষম । এই ধরণের রোবটগুলি সেন্সরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মাধ্যমে রোবটের গতিবিধি সনাক্ত করতে পারে এবং গাইড করতে পারে । ফায়ার ফাইটিং রোবট অটোনোমাস রোবটের একটি খুব ভাল উদাহরণ ।

সাম্প্রতিক সময়ে, আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিতে রোবোটিক্স একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠছে । যেহেতু ইন্ডাস্ট্রিতে রোবট নিয়োগ করলে উৎপাদনশীলতা এবং কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, তাই অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এখন রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে ।

রোবট কিভাবে কাজ করে ?

যখন কোন রোবট তৈরি করা হয়, তখন বিভিন্ন কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিনের প্রয়োজন হয় এবং এটি নিম্লিখিত অংশ নিয়ে গঠিত –

  • সেন্সর সিস্টেম:-  আপনারা সবাই জানেন যে, আমাদের শরীরে ৫ টি ইন্দ্রিয় আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের সবকিছু দেখতে এবং অনুভব করতে পারি । রোবটের ক্ষেত্রে এগুলো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর রোবটের মধ্যে ইনস্টল করা হয় । এই সেন্সর গুলোর মাধ্যমে রোবট বুঝতে পারে যে, এটিকে কী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং সামনে কী ধরণের কাজ আসতে চলেছে । রোবটের ক্ষেত্রে আই সেন্সর, প্রেসার সেন্সর এবং সোনার সেন্সর ইত্যাদি ইউজ করা হয় । এগুলো ছাড়াও রোবটে অনেক ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়, যাতে এটি তার চারপাশের পরিবেশ খুব ভালভাবে অবজারভ করতে পারে ।
  • স্ট্রাকচার বডি:- যে কোনো ধরনের রোবট নির্মাণ করার আগে, এর ভৌত গঠনের সম্পূর্ণ স্ট্রাকচার প্রস্তুত করা হয় এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস বসানোর কাজ শুরু করা হয় ।
  • পাওয়ার সোর্স:- যে মানুষের কাজ করার জন্য যেমন শক্তির প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনই রোবটেরও কাজ করার জন্য শক্তির প্রয়োজন । সে কারণেই সব ধরণের রোবটে পাওয়ার সোর্স দেওয়া হয় । এই পাওয়ার সোর্সের মাধ্যমেই রোবট নিজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করে এবং সেই শক্তি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন করে ।
  • মাস্কুলার সিস্টেম: – একটি রোবট নির্মাণেও মাস্কুলার সিস্টেম ইউজ করা হয়, যাতে এটি সঠিকভাবে তার কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে ।
  • ব্রেন সিস্টেম:- যে কোন ধরনের কাজ বুঝতে এবং তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য একজন মানুষকে তার মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে হয় । একইভাবে একটি রোবটেরও মস্তিষ্কের প্রয়োজন পড়ে । প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে একটি রোবটের মস্তিষ্ক ডিজাইন করা হয় । যদি রোবটে মস্তিষ্ক ইনস্টল করা না হয়, তাহলে এটি একটি বাক্সের মতো অকেজো হয়ে যাবে ।

রোবোট তৈরিতে কি কি প্রয়োজন

বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের রোবট পাওয়া যায় । যা আলাদা আলাদা পরিবেশে আলাদা আলাদা কাজে ইউজ করা হয় । তবে প্রায় সব ধরনের রোবট তৈরি করার জন্য তিনটি মৌলিক জিনিস ব্যবহার করা হয় ।

  • মেকানিক্যাল কন্সট্রাকশন
  • ইলেকট্রনিক কন্সট্রাকশন
  • প্রোগ্রামিং

মেকানিক্যাল কন্সট্রাকশন – বিভিন্ন ধরনের রোবট, বিভিন্ন ধরনের আকৃতি এবং আকারে ডিজাইন করা হয়, যাতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায় । কারণ পানিতে সাঁতার কাটার জন্য যে রোবট তৈরি করা হবে, তার আকার নিশ্চই হাতির মত হবে না । এমন ক্ষেত্রে একটি মাছের আকৃতির রোবট এই কাজটি সবচেয়ে ভালভাবে করতে পারবে ।

ইলেকট্রনিক কন্সট্রাকশন – একটি রোবোটিক মেশিন পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শক্তির প্রয়োজন । তাই সব ধরনের রোবটে ইলেকট্রনিক সিস্টেম প্রয়োজন হয় । যে কোন পেট্রোল বা অন্য যে কোন জ্বালানী চালিত রোবট, চালু হওয়ার জন্য ইলেকট্রনিক্সের উপর নির্ভর করে ।

প্রোগ্রামিং – একটি রোবটকে দিয়ে কোন নির্দিষ্ট কাজ করাতে হলে, প্রথমে তাকে সেই কাজের জন্য নির্দেশনা দিতে হয় । তবেই রোবট সেই কাজটি করতে পারে । যে কোন রোবটকে, “কম্পিউটার প্রোগ্রামিং” এর মাধ্যমেই কোন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয় । এই প্রোগ্রামিংয়ের উপর ভিত্তি করে রোবটটি কখন, কী এবং কীভাবে করতে হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে ।

যে কোন রোবটকে সাধারণত ৩ টি উপায়ে প্রোগ্রাম করা হয়

  • রিমোট কন্ট্রোল – এই পদ্ধতিতে, কিছু কমান্ড মেশিনে প্রোগ্রাম করা হয়, যা কন্ট্রোলার থেকে কমান্ড পাওয়ার পরই রোবটটি কার্যকর করে । যেমন মানুষের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার রোবটে একটি রিমোট কন্ট্রোল ইউজ করা হয় । 
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – এআই প্রোগ্রামিং সহ রোবটগুলি, এর চারপাশের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং সামনে আসা যে কোন ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্য নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে । এই ধরনের রোবট নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে কখন, কী এবং কীভাবে করবে । এইভাবে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করার জন্য, রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয় ।
  • হাইব্রিড- এআই এবং আরসি এর সংমিশ্রনে করা প্রোগ্রামিংকে হাইব্রিড প্রোগ্রামিং বলে ।

আরও পড়ুনঃ মেটাভার্স কি ? এটা কিভাবে আমাদের পৃথিবী পরিবর্তন করবে ?

রোবটের অংশ

রোবটের মৌলিক বিল্ডিং ব্লকগুলি অনেকটা সাধারণ মেশিনের মতোই । একটি মেশিনে বিভিন্ন ধরণের আন্তঃসংযুক্ত অংশ বা উপাদান থাকে, যেগুলি বিভিন্ন সাইজের মোটর বা অন্য কোন ড্রাইভিং মেকানিজম দ্বারা চালিত হয়, এবং নির্দিষ্ট কোন অপারেশন পরিচালনা করার জন্য একে অপরের সাথে সিঙ্ক্রোনাইজেশন করে ।

একইভাবে রোবটের মৌলিক কাঠামো অনেকটা মেশিনের মতোই, তবে মেশিনের সাথে কিছু জিনিস সংযোজন করা হয়, যেগুলো এটিকে রোবট করে তোলে ।

রোবটের ক্ষেত্রে, নরমাল ড্রাইভার মোটরের পরিবর্তে সার্ভো মোটর ব্যবহার করা হয়, যা প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য ট্রান্সডুসারের তৈরি সেন্সরগুলির সাথে সুনির্দিষ্টভাবে লাগানো হয় । মেশিনের তুলনায় রোবটে বেশি অ্যাকচুয়েটর মোটর থাকে, যেগুলিতে সাধারণত একটি সিঙ্গেল ড্রাইভিং মোটর থাকে । এছাড়াও রোবটে কন্ট্রোলার রয়েছে, যা রোবটে বিভিন্ন সেন্সর এবং অ্যাকুয়েটরগুলির ক্রিয়াকলাপ কন্ট্রোল করে ।

রোবট ধাতু এবং প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে । একটি রোবটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিচে দেওয়া হল –

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা – সবচেয়ে মৌলিক স্তরে, মানুষ এবং অন্যান্য সব প্রাণী, ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া নামক একটি নীতির মাধ্যমে বেঁচে থাকে । একজন ব্যক্তি তার চারপাশে কী ঘটছে তা বুঝে, সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম । রোবটের কন্ট্রোল সিস্টেম মানুষের মস্তিষ্কের মতই ফিডব্যাক প্রদান করে । রোবটের মস্তিষ্কে নিউরনের পরিবর্তে একটি সিলিকন চিপ থাকে যাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU বলা হয়, যা আমাদের কম্পিউটারে থাকা চিপের মতো । আমাদের মস্তিষ্ক, ৫ টি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর কাজটি করে থাকে । অন্যদিকে রোবট, CPU সেন্সর নামক ডিভাইসের মাধ্যমে কালেক্ট করা ডেটার উপর ভিত্তি করে একই কাজ করে ।

সেন্সর – রোবট, সেন্সর থেকে ফিডব্যাক পায়, যা মানুষের ইন্দ্রিয়ের মত কাজ করে । যেমন ভিডিও ক্যামেরা বা লাইট ডিপেন্ডেন্ট সেন্সর চোখের মতো কাজ করে এবং মাইক্রোফোন কানের মতো কাজ করে । কিছু রোবটের স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ নেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে । রোবটের CPU, এই সেন্সরগুলি থেকে সংকেত গুলিকে রিড করে এবং সেই অনুযায়ী তার ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করে ।

ম্যানিপুলেটর – মানুষের হাতের মতো, রোবটের অনেকগুলি জয়েন্ট এবং লিঙ্ক থাকে, এগুলোকে ম্যানিপুলেটর বলা হয় ।

অ্যাকচুয়েটর – একটি রোবট হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য, একটি মেশিনের এমন একটি বডি থাকতে হবে, যা তার সেন্সর থেকে কমান্ড বা নির্দেশ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রয়োজনীয় মুভমেন্ট করতে পারে । রোবটের বডি সাধারণত মেটাল, প্লাস্টিক এবং অনুরূপ কোন উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় । এই বডির ভিতরে অ্যাকচুয়েটর নামক ছোট ছোট মোটর রয়েছে । অ্যাকচুয়েটরগুলো রোবটের শরীরের অংশগুলি মুভমেন্ট করার জন্য মানুষের পেশীগুলির মত কাজ করে । হিউম্যানয়েড রোবট গুলোর হাত এবং পা রয়েছে যা মানুষের গতিবিধি নকল বা অনুকরণ করে ।

পাওয়ার সাপ্লাই – যে কোন ধরনের মুভমেন্ট বা কাজ করার জন্য রোবটের শক্তির প্রয়োজন । মানুষ তার কাজ করার শক্তি পায় খাদ্য থেকে । অন্যদিকে বেশিরভাগ রোবট শক্তি পায় বিদ্যুৎ থেকে । যে রোবোটিক ডিভাইসগুলি স্থির অবস্থায় থাকে সেগুলোকে খুব সহজেই বিদ্যুতের সাথে প্লাগ ইন করা যায়, যেমন গাড়ির কারখানায় যে রোবটিক ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা হয় । অন্যদিকে যে রোবটগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করে, সেগুলোতে সাধারণত ব্যাটারীর মাধ্যমে শক্তি সরবরাহ করা হয় ।

আরও পড়ুনঃ

রোবট ব্যবহার করার কারণ

রোবট ব্যবহার করার অন্যতম প্রধান কারণ হল, এগুলো বেশিরভাগ সময় মানব কর্মীদের তুলনায় সস্তা । এছাড়াও কিছু কিছু কাজ রোবট দিয়ে করা খুব সহজ । আবার রোবটের মাধ্যমে এমন কিছু কাজ করা সম্ভব, যা মানুষের পক্ষে সম্পাদন করা সম্ভব না । যেমন- গ্যাস ট্যাঙ্কের ভেতরের অংশে কাজ করা, আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরীণ অংশ অন্বেষণ এবং মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো কাজ । এসব কাজে বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে । তাছাড়া, কিছু রোবট রয়েছে, যেগুলো বিপজ্জনক বা চরম তাপমাত্রার জায়গায় যেতে সক্ষম । এগুলি ছাড়াও, এমন রোবট রয়েছে, যা মানুষের জন্য দূষিত জায়গায় কাজ করতে পারে ।

রোবট বিরক্ত না হয়ে পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে একটি সিঙ্গেল কাজ বারবার নির্ভুলভাবে সম্পাদন করতে পারে । যেমন- ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং এবং পেইন্টিং কাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের রোবট ইউজ করা হয় । তাছাড়া, কিছু রোবট বিপজ্জনক পদার্থ বা অতিরিক্ত গরম জিনিস সহজেই আঁকড়ে ধরতে পারে । রোবট অসুস্থ হয় না, সেই সাথে এগুলোর ঘুম বা খাওয়ার জন্য বিরতির প্রয়োজন হয় না । এছাড়াও এদের ছুটির প্রয়োজন হয় না বা ক্লান্ত হয় না । আর তাই, মানুষের জন্য রোবটের উপকারিতা ও ব্যবহার অসংখ্য ।

রোবোটিক্স ব্যবহার – রোবটের ব্যবহার

বিভিন্ন ধরনের কাজের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের রোবট তৈরি করা হয় । যেমন- ফ্লাইং রোবট বা ড্রোন শুধুমাত্র উড়তে পারে, মাটিতে হাঁটতে পারে না । এই রোবট গ্রাউন্ডের কাজের জন্য উপযুক্ত নয় । কাজের উপর ভিত্তি করে আমরা রোবটের ব্যবহারের ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারি । নিচে রোবটের কিছু ব্যবহার দেওয়া হল –  

সামরিক রোবট – এই ধরনের রোবট পরিবহণ, গবেষণা, উদ্ধার কাজ এবং হামলার মতো সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয় ।আজকাল রোবটিক সোলজার দের নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে । সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন বন্দুক হাতে রোবোটিক সৈন্যদের সীমান্তে পাহাড়া দিতে দেখা যাবে । এছাড়াও বর্তমানে কিছু সামরিক রোবট রয়েছে, যেগুলো বোমা নিষ্ক্রিয় করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

ইন্ডাস্ট্রি রোবট – এই ধরনের রোবটগুলি বহু দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । ৫০ শতাংশের বেশী অটো ইন্ডাস্ট্রি রোবটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে । IBM-এর কীবোর্ড উৎপাদন ইউনিট ২০০৩ সাল থেকে রোবটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে । একজন মানব শ্রমিকের চেয়ে কম ব্যয়বহুল, নির্ভরযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার কাজের জন্য, রোবট মানুষের চেয়ে বেশি উপযুক্ত হয়ে উঠেছে । এ কারণে উৎপাদন খাতে রোবট সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হচ্ছে ।

কন্সট্রাকশন রোবট – এই ধরনের রোবট উৎপাদন কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । এর বাস্তব উদাহরণ হল একটি 3-ডি প্রিন্টার । যার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস, বিশ্বের প্রথম থ্রি-ডি প্রিন্টার ব্রিজ তৈরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে । এছাড়াও কংক্রিটের কাজের জন্য Demolish Robots বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । আর ভার বহন করার জন্য অটো মেশিন ব্যবহার করা হয় ।

কৃষি রোবট – কৃষিকাজে রোবটের ব্যবহার এখনো নতুন । বর্তমানে বীজ রোপন করার মতো শ্রম কাজে এই ধরনের রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে । কিন্তু বপন, হাল চাষ, ফসল কাটা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ফসলের তথ্য, ড্রোন দিয়ে কীটনাশক স্প্রে করা ইত্যাদি কাজ গুলো ধীরে ধীরে রোবটের মাধ্যমে করা হচ্ছে ।

মেডিকেল রোবট – অস্ত্রোপচারের মতো জটিল ও প্রাণঘাতী কাজে রোবট ইউজ করা হচ্ছে । জাপানে, HOSPI (Panasonic দ্বারা উদ্ভাবিত) নামে একটি রোবোটিক সিস্টেম হসপিটালে ডেলিভারির জন্য ইউজ করা হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচার করার জন্য দা ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম ব্যবহার করা হয় । বর্তমানে কিছু ন্যানোরোবটও তৈরি করা হচ্ছে যা মানুষের শরীরে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, অভ্যন্তরীণ কোষ এবং ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে ।

স্পোর্ট রোবট – বর্তমানে টেনিসে, মাঠে মার্ক করার জন্য একটি রোবোটিক মেশিন ইউজ করা হয় । বর্তমানে অনেক খেলাধুলায় মার্ক করার জন্য রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে । ব্যাটসম্যানদের দিকে বল ছুঁড়তে ক্রিকেটে রোবোটিক খেলোয়াড়দের ব্যাপকভাবে ইউজ করা হয় । একইভাবে রোবটের মাধ্যমে অন্যান্য কাজেরও প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে ।

অন্যান্য রোবট – উল্লিখিত রোবটগুলো ছাড়াও কিচেন রোবট, ওয়েটার রোবট, ন্যানোরোবট ইত্যাদিও ব্যবহার করা হচ্ছে । সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন একটি রোবট আপনার ঘরের সমস্ত কাজ করে দেবে । এছাড়াও বর্তমানে বড় বড় অনেক হোটেলে খাবার পরিবেশনের জন্য রোবট ইউজ করা হচ্ছে ।

রোবট এর সুবিধা

  • রোবট ২৪ ঘন্টা একটানা কাজ করতে সক্ষম । এটির জন্য শুধুমাত্র একটি পাওয়ার সাপ্লাই প্রয়োজন ।
  • রোবট মানুষের তুলনায় অনেক দ্রুত কাজ করতে সক্ষম ।
  • বেশিরভাগ রোবটই স্বয়ংক্রিয়, যা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে সক্ষম ।
  • মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম ।
  • তারা এমন কাজগুলিও করতে পারে, যেগুলো করার জন্য মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে । যেমন মহাকাশে অনেক রোবট পাঠানো হয়েছে যেগুলো আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেনি । এর মানে হল যে তারা মানুষের ঝুঁকি কমায় ।
  • রোবট আমাদের জন্য সবকিছু অনেক সহজ করে তোলে ।
  • রোবট মানুষের তুলনায় দ্রুত এবং নির্ভুল ভাবে কাজ করতে সক্ষম ।

রোবটের অসুবিধা 

  • রোবটের জন্য শুধু পাওয়ার দরকার, আয় নয়, এটা অনেকের চাকরিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে ।
  • মানুষ ততক্ষণ বুদ্ধিমান থাকে যতক্ষণ না তারা রোবট তৈরি করে ।
  • কিছু রোবটের নিজস্ব মস্তিষ্কও রয়েছে, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে আমাদের কথা শুনতে অস্বীকার করতে পারে ।
  • রোবট রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত অনেক ব্যয়বহুল ।
  • রোবটের মধ্যে কোন ধরনের আবেগ নেই । যার কারণে তারা অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে ।

শেষ কথা

রোবট এবং রোবোটিক্সের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর এটি কেবল নান্দনিকতার কারণে নয়, এটি দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতাও সরবরাহ করে । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে রোবট এবং রোবোটিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি । রোবোটিক্স এবং রোবট সম্পর্কে এসব তথ্যের মাধ্যমে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অটোমেশন এবং এআই এর মূল্য খুব সহজেই বোঝা যায় । বর্তমানে প্রায় সব সেক্টরে রোবোটিক্সের প্রয়োগ এটিকে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে । আজকের আর্টিকেলে আমরা রোবোটিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment