ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম ২০২১

বিদেশ ভ্রমণের কথা আসলে সবার প্রথমে যে জিনিসটার কথা মাথায় আসে তা হল “পাসপোর্ট”। পাসপোর্ট শব্দটি মুলত ফরাসী ভাষা থেকে এসেছে, যা আজ সমগ্র বিশ্বেই সুপরিচিত। সুপরিচিত হওয়াই স্বাভাবিক কারণ বর্তমান সময়ে নিয়ম অনুযায়ী বিদেশে ভ্রমনের জন্য প্রত্যেক মানুষের পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। স্থল পথ, আকাশ অথবা নদীপথ, আপনি যদি পাসপোর্ট এবং ভিসা ব্যতিত কোনভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশ করেন তাহলে সেটাকে অবৈধ অনুপ্রবেশ বলে গণ্য করা হবে। আর এই অবৈধ অনুপ্রবেশের কারনে আপনাকে নানা ধরনের শাস্তি পেতে হতে পারে। তাই সব সুনাগরিকের উচিত বিদেশ ভ্রমনের পূর্বে তার পাসপোর্ট করিয়ে নেওয়া এবং বিদেশে ভ্রমনের সময় অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখা। বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে । আজকের আর্টিকেলে আমরা ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

পাসপোর্ট কত প্রকার ?

সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে পাসপোর্টেরও অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয়বস্তু একই রয়েছে। পাসপোর্ট আসলে একটি ছোট সাইজের পুস্তক বা বই যার মধ্যে পাসপোর্টধারীর এবং তার দেশের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য এবং একইসাথে পাসপোর্টধারীর বিদেশ ভ্রমণের অনুমতির তথ্য সমূহ উল্লেখ করা থাকে।

পাসপোর্ট মূলত তিন প্রকারঃ

  • হাতে লেখা পাসপোর্ট (Passport)
  • মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (Machine-Readable Passport) / এমআরপি (MRP)
  • ই-পাসপোর্ট (E- Passport)

হাতে লেখা পাসপোর্ট

হাতে লেখা Passport কে মুলত পুরনো যুগের পাসপোর্ট (Passport) বলা হয়ে থাকে। যদিও বর্তমানে অল্প কয়েকটি দেশে এখনো হাতে লেখা পাসপোর্টের প্রচলিত রয়েছে, তবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০১৫ সাল এর জানুয়ারি মাসের পর থেকে হাতে লেখা আর কোন পাসপোর্ট ইস্যু করে নি। এর পরিবর্তে নতুন পাসপোর্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে “এমআরপি তথা মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট” ।

হাতে লেখা পাসপোর্ট
হাতে লেখা পাসপোর্ট

মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি (MRP)

“এমআরপি” বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হলো এমন ধরনের পাসপোর্ট যা মেশিন বা যন্ত্র দ্বারা রিড বা শনাক্ত করতে হয়। অর্থাৎ এমআরপি পাসপোর্টে পাসপোর্টধারীর তথ্য সমূহ এমনভাবে থাকে যা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট মেশিন দ্বারাই শনাক্ত করা সম্ভব। আর এর কারনেই এই পাসপোর্ট কে বলা হয় “মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট”। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে “এমআরপি পাসপোর্ট” এর প্রচলন শুরু হয়েছে। এমআরপি পাসপোর্টের পরিচিতি পাতায় ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য সরাসরি উল্লেখ থাকে না। বরং পরিচিতি পাতার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অনেকগুলো সংকেত দেওয়া থাকে, যা দেখে সাধারনভাবে কিছুই বুঝতে পারা সম্ভব নয়। সেই জায়গাটিতে ব্যক্তির তথ্য ‘কোডেড’ (Coded) অথবা লুকায়িত অবস্থায় থাকে। ইমিগ্রেশন অফিসারেরা যন্ত্রের মাধ্যমে সেই তথ্য দেখে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে থাকেন। এ পাসপোর্টের জন্য ভুয়া বা জাল পাসপোর্টজনিত অপরাধ অনেকটাই কমে গেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন করে কেউ এমআরপি (MRP) Passport তৈরি করে নিতে পারবে না। অর্থাৎ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে বর্তমানে যাদের এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে তারা স্বাভাবিকভাবেই এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। তাদের এই মুহূর্তে ই-পাসপোর্ট নেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে যদি আপনার এমআরপি (MRP) passport এর মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে ই-পাসপোর্টের জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে।

মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি (MRP)
মেশিন-রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি (MRP)

ই-পাসপোর্ট (E- Passport)

এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বা রূপ হলো ই-পাসপোর্ট। বর্তমান পৃথিবীতে এটিই পাসপোর্টের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি যা বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ই-পাসপোর্ট, বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট নামেও পরিচিত। এই বিশেষ ধরণের পাসপোর্টে মোবাইল সিম কার্ডের মতো ছোট আকারের একটি চিপ লাগানো থাকে। চিপটি মাইক্রো প্রসেসর এবং এন্টেনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে । এই চিপের মধ্যে থাকে পাসপোর্টধারীকে চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যবলী। তথ্যের মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্টধারীর তিন রকমের ছবি, চোখের আইরিশ স্ক্যান, দশ আঙুলের বায়ো-মেট্রিক ছাপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ই-পাসপোর্টে সংযুক্ত থাকা ই-বর্ডার বা ইলেক্ট্রনিক বর্ডার প্রযুক্তির মাধ্যমে চিপের বাহিরের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো যাচাই করা যাবে। পাসপোর্টের চিপের তথ্য সমূহ যাচাই করার জন্য রয়েছে পিকেআই বা “পাবলিক কি ইনফ্রাষ্ট্রাকচার” (PKI) প্রযুক্তি। এখানে উল্লেখ্য যে, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে বাংলাদেশই সর্ব প্রথম এই সর্বাধুনিক পাসপোর্ট ইস্যু করা শুরু করেছে।

ই-পাসপোর্ট (E- Passport)
ই-পাসপোর্ট (E- Passport)

ই পাসপোর্ট করতে কি কি প্রয়োজন

ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি
  • সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২ কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
  • এপয়েন্টমেন্টের প্রিন্ট কপি
  • যদি আগের পাসপোর্ট থাকে, তাহলে সেই পাসপোর্টের ডাটা পেজের ফটোকপি
  • পেশাগত সনদ পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে)
  • নাগরিক সনদপত্র

তথ্যসূত্রঃ  Bangladesh e-Passport Portal

ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম ডাউনলোড

ই-পাসপোর্টের (E-Passport) জন্য আবেদন করার ফর্ম পিডিএফ ফরম্যাটে বা আকারে ডাউনলোড করার জন্য পাশের লিংকে প্রবেশ করুনঃ E-Passport PDF Form Downoad

ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম
ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম

ই-পাসপোর্টের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন

ই-পাসপোর্ট পাবার জন্য আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সেজন্য সবার প্রথমে আপনাকে ই-পাসপোর্ট আবেদনের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর স্ক্রিনের উপরের ডান দিকে ইংরেজি ও বাংলা দুই ধরনের ভাষা নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। যে ভাষার মাধ্যমে আবেদন করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেই ভাষাটি নির্বাচন করুন।

ই-পাসপোর্টে আবেদন করার ৫ টি ধাপ রয়েছে

  • ধাপ ১ঃ প্রথমে, বর্তমানে আপনার বসবাসরত জেলাতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না তা চেক করে দেখা।
  • ধাপ ২ঃ অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করা।
  • ধাপ ৩ঃ পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা।
  • ধাপ ৪ঃ ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রদানের লক্ষে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে উপস্থিত হওয়া।
  • ধাপ ৫ঃ পাসপোর্ট অফিস হতে ই-পাসপোর্ট কালেক্ট করা।

আবেদন ফর্ম পুরন

Bangladesh e-Passport Portal ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই ‘Apply Online‘ অথবা অনলাইনে আবেদন’ নামক একটি ট্যাব (Tab) আপনার চোখে পড়বে। এই ট্যাবে ক্লিক করলেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া স্টার্ট হবে। প্রথমেই আপনি যে জায়গায় বর্তমানে বসবাস করছেন তার কাছাকাছি কোথায় ই-পাসপোর্টের অফিস রয়েছে তা খুঁজে দেখে আপনার সবচেয়ে কাছের অফিসটি নির্বাচন করুন।

আবেদন ফর্ম পুরন

 

এবার, ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে আপনি যেতে পারবেন। পরবর্তী পেজে আপনার ই-মেইল এড্রেস প্রদান করতে হবে। নিজের পুরো নাম (জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card) অনুযায়ী) এবং মোবাইল নাম্বার প্রদান করে একটি পাসওয়ার্ড সেট করে একাউন্ট ওপেন করতে হবে। একাউন্ট ওপেন করার পর আপনার দেয়া Email Address এ একটি কনফারমেশন মেইল (Confirmation Email) যাবে। সেই ইমেইলে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার একাউন্টটি কনফার্ম করতে হবে। তারপর আবেদন ফর্মের ফাকা ঘরগুলো আপনার তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের কিছু নির্দেশাবলী

ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণ করার সময় অবশ্যই কিছু নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে। 

১) ই-পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম অনলাইনের মাধ্যমেও পূরণ করতে পারবেন আবার পিডিএফ (PDF) ফরম্যাটে বা আকারে ডাউনলোড করে নিয়ে হাতে লিখে পূরণ করে জমা দিতে পারবেন।

২) ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কোন ডকুমেন্ট অথবা ছবি সত্যায়িত করার প্রয়োজন নেই।

৩) আবেদন করার সময় আপনার নাম, জন্ম তারিখসহ সকল ধরনের তথ্য জাতীয় ‍পরিচয়পত্র(NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্রের সাথে মিল রেখে পূরণ করতে হবে।

  • বয়স ১৮ বছরের কম হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন(BRC) সনদ পত্র অনুসারে তথ্য প্রদান করতে হবে ।
  • বয়স ১৮-২০ হলে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এন আই ডি) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র অনুসারে তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • বয়স ২০ বছরের বেশী হলে জাতীয় পরিচয়পত্র(NID) থাকা আবশ্যক। আপনি যদি এনআইডি কার্ড না পেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে, জাতীয় পরিচয় পত্রের অনলাইন কপি ডাউনলোড করে নিয়ে জমা দিলেও চলবে।

৪) অপ্রাপ্তবয়স্ক আবেদনকারী (১৮ বছরের কম) অর্থাৎ যার NID কার্ড এখন হয়নি, তাকে তার পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) নম্বর বাধ্যতামূলক ভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৫) তারকা * চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরের ঘর গুলো পুরন করা বাধ্যতামূলক।

৬) অপ্রাপ্তবয়স্ক ( বয়স ১৮ বছরের নিচে) এবং ৬৫ বছরের বেশী বয়সের আবেদনকারীদের জন্য ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর। 

অতি জরুরী পাসপোর্টের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন

অনেক সময়, বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য অনেকেরই অতি জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়ে পরে। সেক্ষেত্রে মাত্র দুই কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য অতি জরুরী বা ‘Super Express’ নামক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে অতি জরুরী বা সুপার একপ্রেস এই পাসপোর্ট সেবা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা খুবই জরুরী।

১) দেশের যেকোনো জায়গা থেকে সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে। কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশ মিশন থেকে সুপার একপ্রেস পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায় না।

২) দেশের যে জায়গা থেকেই আপনি সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন না কেন, এই পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।

৩) অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার আগে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।

৪) বর্তমানে এই সেবাটি নতুন আবেদনকারিদের জন্য প্রযোজ্য নয় । অর্থাৎ আগে যাদের এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে শুধু তারাই এই অতি জরুরী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা

প্রত্যেক ব্যক্তিকে পাসপোর্ট গ্রহনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি বা টাকা পরিশোধ করতে হয়। পাসপোর্ট ভেদে এই ফি বা টাকার পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পাসপোর্টের ফি কত টাকা হবে তা পাসপোর্টের ধরণ অনুসারে অটোমেটিক নির্ধারিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ফি খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। তবে স্ব-শরীরে ব্যাংকে গিয়েও আপনি এই ফি পরিশোধ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া অথবা ঢাকা ব্যাংকে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। অনলাইনে ফি জমা দেয়ার পর আপনার অনলাইন আবেদন পত্রে পরিশোধকৃত টাকার পরিমাণ অটোমেটিক যোগ হয়ে যাবে। যদি কোন কারনে টাকার পরিমাণটি যুক্ত না হয় তাহলে অবশ্যই অনলাইন চালানের কপি অথবা যে মাধ্যমে আপনি ফি জমা দিয়েছেন সেখান থেকে ‘পেমেন্ট স্লিপ’ (Payment slip) কালেক্ট করে রাখবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা করে থাকলে ব্যাংক থেকে স্লিপ কালেক্ট করে রাখবেন এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আবেদন করার সময় তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে দেবেন।

বিভিন্ন পাসপোর্টের ফি কত টাকা

সাধারনত পাসপোর্টের ধরন এবং দ্রুততার ওপর নির্ভর করে পাসপোর্টের ফি এর পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে থাকে। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্টের জন্য নির্ধারণ করা ফি সমূহ দেওয়া হলোঃ

৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পেজের পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বা রেগুরাল পাসপোর্ট- ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৪,০২৫ টাকা মাত্র
  • জরূরী বা এমারজেন্সি পাসপোর্ট- ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৬,৩২৫ টাকা মাত্র
  • অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট- ২ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৮,৬২৫ টাকা মাত্র 

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বা রেগুরাল পাসপোর্ট- ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৫,৭৫০ টাকা মাত্র
  • জরূরী বা এমারজেন্সি পাসপোর্ট- ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৮,০৫০ টাকা মাত্র
  • অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট- ২ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ১০,৩৫০ টাকা মাত্র

৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বা রেগুরাল পাসপোর্ট- ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৬,৩২৫ টাকা মাত্র
  • জরূরী বা এমারজেন্সি পাসপোর্ট- ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৮,৩২৫ টাকা মাত্র
  • অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট- ২ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ১২,০৭৫ টাকা মাত্র

১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট

  • নিয়মিত বা রেগুরাল পাসপোর্ট- ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ৮,০৫০ টাকা মাত্র
  • জরূরী বা এমারজেন্সি পাসপোর্ট- ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ১০,৩৫০ টাকা মাত্র
  • অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট- ২ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রদানঃ ফি ১৩,৮০০ টাকা মাত্র

ই পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি

ই-পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া তে পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার যদি পুলিশ ভেরিফিকেশনের সনদ পত্র না থাকে তবে আপনি কোন অবস্থাতেই পাসপোর্ট কালেক্ট করতে পারবেন না। বায়োমেট্রিক আবেদন করার আগেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করিয়ে নিতে হবে এবং সেই সনদ পত্র আবেদনের সঙ্গে জমা করে দিতে হবে। আবেদনের যাবতীয় সব তথ্য সঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময় পরে আপনি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

অনলাইন আবেদন করার সময় যদি বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা আলাদা দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে দুই ঠিকানা তেই পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। যদি ঠিকানা একই দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে এক জায়গায় ভেরিফিকেশন করালেই কাজ হয়ে যাবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয় মূলত আপনি আবেদনের সময় যেসব তথ্য প্রদান করেছেন তা সঠিক দিয়েছেন কিনা তার সত্যতা যাচাই করার জন্য। তাই পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পূর্বে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র কালেক্ট করে রাখা ভাল।

ই পাসপোর্টের জন্য বায়োমেট্রিক আবেদন করার পদ্ধতি

পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফী পরিশোধ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরবর্তী ধাপ বায়োমেট্রিক আবেদন। এক্ষেত্রে প্রতিদিন নিজের একাউন্টে প্রবেশ করে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ডেট দেওয়া হয়েছে কিনা তা চেক করে নেবেন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের ডেট পাওয়া গেলে নির্ধারিত দিন ও সময় অনুসারে আপনাকে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ উপস্থিত হতে হবে।

বায়োমেট্রিক আবেদন করার পদ্ধতি
বায়োমেট্রিক আবেদন করার পদ্ধতি

 

বায়োমেট্রিক আবেদনের জন্য যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন

  • আবেদনপত্রের সারাংশের প্রিন্ট করা কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ)
  • জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্ম নিবন্ধন পত্রের প্রিন্ট কপি
  • পেমেন্ট এর রিসিপ 
  • আগের পাসপোর্ট ও ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি (যদি থাকে) 
  • তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যদি থাকে)
  • আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি

উপরে উল্লিখিত প্রত্যেকটি কাগজপত্র অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পর যথাক্রমে আপনার কয়েক রকমের ছবি তোলা হবে, আপনার চোখের আইরিশেরও ইমেজ তোলা হবে। আপনার দুই হাতের মোট দশটি আঙ্গুলের সব গুলোর ছাপ বা বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে।

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আবেদন সম্পন্ন হলে আপনাকে একটি ‘ডেলিভারি স্লিপ’ (Delivery Slip) দিয়ে দেওয়া হবে। এই ডেলিভারি স্লিপের তথ্যগুলো ভালোভাবে (প্রয়জনে একাধিকভার) পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার তথ্য গুলো সব ঠিক দেওয়া হয়েছে এবং স্লিপটি সাবধানে সংরক্ষণ করুন। কারণ এই স্লিপটি ব্যতিত আপনি কোনভাবেই পাসপোর্ট কালেক্ট করতে পারবেন না।

পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক

পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক বা পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানার বিষয়টা বেশ স্বস্তিদায়ক একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আপনি আপনার পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ার প্রথম থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করার জন্য আবারো ই-পাসপোর্ট এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটের মেনু বারের ডান দিকে ‘STATUS CHECK’ অথবা আবেদন পত্রের স্ট্যাটাস চেক নামক একটি অপশন দেখতে পাবেন। স্ট্যাটাস চেক করার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি অথবা বায়োমেট্রিক আবেদন করার সময় স্লিপে দেওয়া ‘অ্যাপ্লিকেশন আইডি’ এর প্রয়োজন পরবে। পাসপোর্ট রেডি হয়ে গেলে তা আপনি এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনার ফোন নাম্বারে পাসপোর্ট রেডি হয়েছে সংক্রান্ত একটি ম্যাসেজও পেয়ে যাবেন।

পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক
পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক

পাসপোর্ট সংগ্রহ

সবকিছু ঠিক থাকলে অবশেষে আপনার কাঙ্খিত পাসপোর্ট সংগ্রহ করার পালা। পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য আবারো আপনাকে সেই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। তবে অতি জরুরী বা সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্টের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আপনাকে রাজধানীর আগারগাঁও অফিসে যেতে হবে এবং অবশ্যই সঙ্গে করে ‘ডেলিভারি স্লিপ’ টি নিয়ে নেবেন। তারপর ডেলিভেরি স্লিপ পাসপোর্ট অফিসে দেখিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্টটি সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন, পাসপোর্ট কালেক্ট করার জন্য যার পাসপোর্ট তার স্ব-শরীরে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। নিতান্তই যদি যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনার দ্বারা সত্যায়িত একজন প্রতিনিধি কে পাঠাতে হবে। পাসপোর্ট কালেক্ট করার পর ভালোভাবে দেখে নিন পাসপোর্টের সবকিছু সঠিক রয়েছে কিনা।

শেষ কথা

সর্বোপরি ই-পাসপোর্ট বিদেশগামীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে। ছবি সত্যায়িত করার প্রয়োজন না থাকায় অনেকটা ঝামেলা কমে গেছে। তৈরি হয়েছে দ্রুততার সঙ্গে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করার সুবিধা। জালিয়াতি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে। এছাড়াও অধিকাংশ কাজ অনলাইনে করার সুবিধা থাকায় পূর্বের চেয়ে দূর্ভোগও কমেছে অনেকটা। তাই বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত ই-পাসপোর্ট নিশ্চিত করা।

বিডিটেকটিউনার

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment