বর্তমানে জনপ্রিয় জুম সফটওয়্যার এর ইতিকথা

বর্তমানে অনলাইন ক্লাস, ওয়েবিনার সহ প্রায় সকল দাপ্তরিক কাজে জুম সফটওয়্যার যেন নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে, করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সকলেই ঘরবন্দী। ঘরে বসেই করতে হচ্ছে সব কাজ। এমন পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালভাবে আমাদের সব কাজ সেরে নেয়ার জন্য আমরা জুম সফটওয়্যারের মতো প্ল্যাটফরমগুলো ব্যবহার করি। আজ এই জনপ্রিয় জুম সফটওয়্যার সম্পর্কে আমরা কিছু অজানা তথ্য জানবো।

মানুষ স্বভাবতই দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকতে পারে না। কিন্তু, মহামারী পরিস্থিতিতে বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে ও নিরাপদ থাকতে ঘরেই অবস্থান করতে হচ্ছে। তবুও প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে যুক্ত হতে পারছি বাসায় বসেই। ভিডিও টেলিকনফারেন্স সফটওয়্যারগুলো এক্ষেত্রে যেন আশীর্বাদ। জুম, গুগল মিট, স্ট্রিম ইয়ার্ড এক্ষেত্রে অন্যতম। এগুলোর মধ্যে সহজ কনফিগারেশন, ইউজার এফিশিয়েন্সি এবং আরও নানা কারণে জুম জনপ্রিয়তার দিক থেকে সবার শীর্ষে।

জুম সফটওয়্যারের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

২০১১ সালে জুম সফটওয়্যারটি লঞ্চ করা হয়। এটির বিটা ভার্সন মার্কেটে আসে ২০১২ সালে আগস্ট মাসে, এতে সর্বোচ্চ ১৫ জন ব্যক্তি একই সময়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে পারতো। ২০১৩ সালে এ সংখ্যাটি হয় ২৫ এ উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালেই জুম ১ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়।

২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জুমের জনপ্রিয়তা হুট করে বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতার কথা চিন্তা করে মানুষ খুব দ্রুতই এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জুম ২.২২ মিলিয়ন ইউজারের কাছে পৌঁছায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এক দিনেই জুমের ডাউনলোড হয় ২.১৩ মিলিয়ন বার। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে জুমে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে। এ থেকেই বুঝা যায়, করোনা মহামারীতে জুম ব্যবসায়িকভাবে কতটা লাভবান হয়েছে। বলতে গেলে, জুমের উত্থানই হয় মহামারীকে কেন্দ্র করে।

জুম সফটওয়্যারের বিভিন্ন সুবিধা

বর্তমানে প্রায় সকল প্ল্যাটফরম ও অপারেটিং সিস্টেমে জুম ব্যবহার করা যায়। উইন্ডোজ, ম্যাক, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম ওএস, লিনাক্স সহ সকল প্ল্যাটফরমের জন্যই রয়েছে জুমের আলাদা আলাদা ইনস্টলেশন সফটওয়্যার। জুমের ফ্রি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০০ জন পার্টিসিপেন্ট ৪০ মিনিট পর্যন্ত এক টানা মিটিং করতে পারে। পেইড ভার্সনে বিভিন্ন প্ল্যান অনুযায়ী আরও বেশি সংখ্যক পার্টিসিপেন্ট, আরও বেশি সময় ধরে মিটিং চালানো, সোশ্যাল স্ট্রিম, ক্লাউড স্টোরেজ ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়।

জুমে ভিডিও কনফারেন্স, স্ক্রিন শেয়ার, প্রেজেন্টেশান সহ ভিডিও টেলিকনফারেন্সিং এর সকল সুবিধা পাওয়া যায়। ডিভাইস ভেদে ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ডও সিলেক্ট করা যায়। এতে করে একজন ব্যবহারকারী চাইলে তাঁর ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি সলিড সবুজ রং থাকে, তবে খুব সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সেই ব্যাকগ্রাউন্ডকে বদলে দিতে পারে জুম। জুমে মিটিং রেকর্ডের সুন্দর ব্যবস্থাও রয়েছে। তাছাড়া পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড মিটিং রুম, ওয়েটিং রুম, লক মিটিং, পার্টিসিপেন্ট রিমুভ/ ব্লক ইত্যাদি সুবিধার কারণে জুম খুব সহজেই ইউজার এফিশিয়েন্সি অর্জন করেছে।

নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি

২০১৮ ও ২০১৯ সালের দিকে জুম সফটওয়্যারে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি ধরা পড়ে। তারপর জুম কর্তৃপক্ষ সেই ঘাটতিগুলো পূরণের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের জুন মাসের শুরুতে জুম ঘোষণা দেয় যে, পেইড ব্যবহারকারীরা end to end এনক্রিপশন সুবিধা পাবে। একই মাসের শেষ দিকে জুম ফ্রি ভার্সনের জন্যও একই ঘোষণা দেয়। এতে করে জুম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

প্রাইভেসি প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময় জুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উঠে, প্রায়ই বিভিন্ন ভিডিও কনফারেন্স, হোস্ট, শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড অনৈতিকভাবে সার্ভিলেন্স করে জুম কর্তৃপক্ষ। সেই ডাটা আবার ফেসবুক বা অন্য থার্ড পার্টির কাছে হস্তান্তরের অভিযোগও আনা হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে অভিযোগকারী কর্তৃপক্ষ ও জুমের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, জুম জানায় যে- তারা আর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে অপব্যবহার করবে না।

অনলাইন মিটিংয়ে জুম অ্যাপ ব্যবহার করবেন যেভাবে

জুম অ্যাপে মিটিং করতে হলে প্রথমেই আপনাকে ‘ZOOM Cloud Meetings’ নামের অ্যাপটি গুগোল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হবে। জুম অ্যাপটি ডাউনলোড করার সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, জুম নামের অনেক গুলো অ্যাপ প্লে-স্টোরে রয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন রকমের কাজ করা যায়। তাই আপনি মিটিংয়ের জন্য ZOOM Cloud Meetings অ্যাপটিই ডাউনলোড করুন।

ZOOM Cloud Meetings

জুম (Zoom) অ্যাপ ডাউনলোড করার পর ইনস্টল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে একটি অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। গুগল অথবা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জুম অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবেন।

জুম অ্যাপে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার পর প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিয়ে সাইন ইন বোতামে ক্লিক করুন। Zoom একাউন্টে লগইন করার পর আপনি স্ক্রিনে চারটি অপশন দেখতে পাবেন, এগুলো হলো- নিউ Meeting, জয়েন, শিডিউল এবং Share স্ক্রিন ।

জুম অ্যাপ

নিউ মিটিং অপশনের মাধ্যমে আপনি মিটিং স্টার্ট করতে পারবেন, এখান থেকে জুম ID, Email অ্যাড্রেস বা মিটিংয়ের নাম ব্যবহার করে যে কাউকে মিটিং এ জয়েন হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যাবে। জয়েন অপশন ব্যবহার করে অন্য কোনও মিটিংয়ে যোগদান করা যাবে, এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরবে হবে মিটিং আইডি ও পাসওয়ার্ড। মিটিংয়ের শিডিউল নির্ধারণের জন্য শিডিউল অপশন টি ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে যে কোন কিছু প্রেজেন্টেশন করার জন্য ব্যবহার করতে হবে শেয়ার স্ক্রিন অপশন । মিটিং শেষ হয়ে গেলে স্ক্রিনের নিচের ডান পাশে থাকা ‘এন্ড মিটিং’ অপশনে ক্লিক করে মিটিং থেকে বের হয়ে যেতে হবে।

শেষ কথা

মহামারীতে জুম অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা দুটিই ছিলো। তাই এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত মানুষের আস্তা ও বিশ্বাসে মূল্য জুম কতটুকু দিতে পারে।

দর্শক, জুম নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা এতটুকুই। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

বিডিটেকটিউনার

Share on:
Avatar photo

Hello Friends, I am James harden, the founder of this site. This blog provides accurate and precise information on Technology, Banking, Insurance, Tips & Tricks, Online Earning, Computer troubleshooting and much more.

Leave a Comment