অনেক সময় আমাদের অজান্তেই শরীরে কিছু ছোটখাটো আঘাত লেগে যায়, যা থেকে পরবর্তীতে টিটেনাস হতে পারে । সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে । যার কারণে টিটেনাস সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা জরুরী । তাই, আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাদের সাথে টিটেনাস কি ? টিটেনাসের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
Table of Contents
টিটেনাস কী
টিটেনাস হল ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি (Clostridium tetani) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ । এই ব্যাকটেরিয়া, ক্ষতের মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে । এর ফলে আমাদের শরীরে একধরনের বিষ তৈরি হয়, যার কারণে শরীরের পেশী ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে । যার ফলে শরীরের পেশিতে অনেক টান পড়ে । এই ব্যাকটেরিয়াগুলি মানুষের শরীরে বছরের পর বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে । এই রোগটি উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর দেশগুলোতে বেশি দেখা যায় । ৩৩ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় ।
ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে না । তাই এরা মাটিতে স্পোর সৃষ্টি করে বেঁচে থাকে । সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য যে কোনো নোংরা পরিবেশে দুর্ঘটনার কারণে ক্ষত সৃষ্টি হলে, স্পোর পরিবেশ থেকে ক্ষতস্থানের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । দূষিত ক্ষতকে দ্রুত পরিষ্কার না করা হলে সেখানে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং সেই অবস্থায় জীবাণু স্পোর থেকে মুক্ত হয়ে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে । জীবাণুগুলো ক্ষতস্থানে টিটানোস্প্যাসমিন ও টিটানোলাইসিন নামক এক ধরনের টক্সিন তৈরি করে । এই টক্সিন রক্ত এবং লসিকার মাধ্যমে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে এর বিভিন্ন অংশকে আক্রান্ত করে ।
সাধারণত টিটেনাসের কারণে সারা শরীরে ব্যথা অনুভুত হয় । এটি বিশেষ করে চোয়াল এবং ঘাড়ের পেশীগুলিকে প্রভাবিত করে, যার কারণে মুখ খুলতে বা খাবার গিলতে সমস্যা হয় । অনেক সময় এতে ব্যক্তির চোয়াল পুরোপুরি লক (স্থির) হয়ে যায় । একারণে একে লকজাও বলা হয়ে থাকে । টিটেনাস শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে । গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসা না করা হলে টিটেনাসের সংক্রমণের কারণে মানুষ মারাও যেতে পারে । টিটেনাস ছোঁয়াচে রোগ নয়, অর্থাৎ এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে না । তবে কাটা এবং ক্ষতের মধ্য দিয়ে এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে । টিটেনাস যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে । তবে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এই রোগের সমস্যা বেশি দেখা যায় । ভ্যাকসিন গ্রহনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
টিটেনাসের প্রকারভেদ – টিটেনাস কত প্রকার
টিটেনাস সাধারণত চার প্রকার –
- Generalized Tetanus – Generalized Tetanus হল টিটেনাসের সবচেয়ে সাধারণ বা কমন রূপ । প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের টিটেনাস হয় । এই অবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হল চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া । এ ছাড়া ঘাড়ের পেশি, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে খিঁচুনি ও ব্যথা হতে পারে ।
- Localized Tetanus – লোকালাইজড টিটেনাসের ঘটনা খুব কম দেখা যায় । এতে রোগী, আহত স্থানের চারপাশের পেশীতে খিঁচুনি অনুভব করেন । যদি এই ধরনের টিটেনাসের লক্ষণগুলি বেশ হালকা, কিন্তু সঠিক চিকিৎসার অভাবে এই অবস্থা মারাত্মক রূপ ধারন করতে পারে ।
- Cephalic Tetanus – এই ধরনের টিটেনাস সাধারণত মাথা বা মুখে আঘাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত । আঘাত লাগার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে এই ধরনের টিটেনাসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে । এটি জার্নালাইজড টিটেনাসের সামান্য বিপরীত । এতে পেশির খিঁচুনি না হয়ে, ক্র্যানিয়াল নার্ভ (মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসা স্নায়ু) পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । অনেক ক্ষেত্রে, চোয়ালের পেশীতে খিঁচুনি হতে পারে ।
- Neonatal Tetanus– শিশুদের টিটেনাসের সমস্যাকে নিওনেটাল টিটেনাস বলা হয় । যদি বাচ্চাদের টিটেনাস প্রতিরোধের টিকা না দেওয়া হয় বা টিকার সমস্ত ডোজ কমপ্লিট না করা হয় তবে শিশু এই ধরণের টিটেনাসে আক্রান্ত হতে পারে ।
টিটেনাসের লক্ষণ – টিটেনাসের উপসর্গ
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া যে কোন ক্ষতের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে । এর উপসর্গ ফবা লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে । নীচে আমরা, টিটেনাসের লক্ষণগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করব –
- পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, চোয়াল থেকে শুরু করে ঘাড়, পা এবং বাহু শক্ত হয়ে যাওয়া ।
- ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশিগুলোর তীব্র সংকোচনের ফলে পিঠ ধনুকের মতো বেঁকে যেতে পারে
- সারা শরীরে ব্যথা
- জ্বর
- প্রচুর ঘাম হওয়া
- হাত এবং পায়ে বাধা
- বিরক্তি
- গিলতে সমস্যা
- ঘন মূত্রত্যাগ
- রক্তচাপ বৃদ্ধি
- হার্ট রেট পরিবর্তন
- মাথাব্যথা
- খিঁচুনি
টিটেনাসের কারণ – টিটেনাস কেন হয়
আর্টিকেলের শুরুতেই আমরা বলেছি যে, শরীরে টিটেনাস রোগ হওয়ার প্রধান কারণ হল ক্লোসাট্রিডিয়াম টেটানি নামক ব্যাকটেরিয়া । এই ব্যাকটেরিয়া মাটি এবং ধুলোর মধ্যে থাকে । কোনো ক্ষত এই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে তা শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে । এই ব্যাকটেরিয়াটি নিচে বর্ণিত যে কোন ভাবে শরীরে প্রবেশ করতে পারে –
- ধুলো, ময়লা, মল বা থুতু দ্বারা ক্ষত দূষণ
- সুই বা পেরেকের মতো ধারালো বস্তু দ্বারা আঘাত লাগলে
- পুড়ে যাওয়া ক্ষতর মাধ্যমেও টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে
- দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত এবং সংক্রমণের ফলেও টিটেনাস হতে পারে
- শিরায় ইনজেকশন ব্যবহার করা হলে
- হাড়ে ইনজেকশন দেওয়ার সময় ব্যাকটেরিয়া শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে
- অপারেশন চলাকালীন তৈরি একটি ছেদের মাধ্যমে
- আঘাতের উপরের স্তর অপসারণ করা হলে
- পোকামাকড়ের কামড় থেকে
- দাঁতে ইনফেকশনের মাধ্যমে
টিটেনাসের ঝুঁকির কারণ
টিটেনাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করা হলে তা পরবর্তীতে মারাত্মক রূপ ধারন করতে পারে । টিটেনাসের কারণে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সময়মত টিটেনাসের চিকিৎসা না করালে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে –
- ভোকাল কর্ড সংকুচিত হয়ে যেতে পারে । এর ফলে কথা বলতে এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে ।
- পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপের কারণে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে ।
- স্ট্রেস আলসার
- রোগী কোমায় চলে যেতে পারে
- উচ্চ্ রক্তচাপ
- প্রস্রাবে সমস্যা হতে পারে
- নিউমোনিয়ার সমস্যা
- শ্বাস কষ্ট হতে পারে
- ফুসফুসের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে
- অক্সিজেনের অভাবের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে
- পেশীর ক্ষতি হতে পারে
টিটেনাস রোগ কীভাবে নির্ণয় করা হয়
টিটেনাস সনাক্ত বা নির্ণয় করার জন্য কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই । টিটেনাস রোগ হয়েছে কি না, তা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির মাধ্যমে বোঝা যায় –
- শারীরিক পরীক্ষা – ডাক্তার প্রথমে টিটেনাস সম্পর্কিত বিভিন্ন উপসর্গ সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে । ডাক্তার আপনার মেডিক্যাল হিস্ট্রি এবং ওষুধ খাওয়ার বিষয়েও জিজ্ঞাসা করতে পারেন । ডাক্তাররা উপসর্গের উপর ভিত্তি করে টিটেনাস রোগ নির্ণয় করতে পারেন ।
- স্প্যাটুলা পরীক্ষা: টিটেনাস নিশ্চিত করতে, ডাক্তার আপনাকে একটি স্প্যাটুলা টেস্টের পরামর্শ দিতে পারেন । এই পরীক্ষায়, একটি স্প্যাটুলা গলার পিছনে (পোস্টেরিয়র ফ্যারিঞ্জিয়াল প্রাচীরের মধ্যে) ঢুকিয়ে চোয়ালের যে কোনও ধরণের সংকোচন চেক করা হয় ।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি ? ডায়াবেটিসের লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার
টিটেনাসের চিকিৎসা
টিটেনাস আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ এবং নবজাতক বা শিশুদের ক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ । এজন্য টিটেনাসের লক্ষণ দেখামাত্র সময়ক্ষেপণ না করে চিকিৎসার জন্য রোগীকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে । রোগীর সুস্থতা এবং চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের তীব্রতা ও রোগীর সামগ্রিক শারীরিক কন্ডিশানের ওপর । নিচে উল্লেখিত পদ্ধতির সাহায্যে টিটেনাসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে –
- রোগীর সঠিক পরিচর্যা: টিটেনাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার ও স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রাখতে হবে । এছাড়াও, চিকিৎসকরা ক্ষত স্থানের যথাযথ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন ।
- ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা: টিটেনাসের সমস্যা কি পর্যায়ে রয়েছে তা বুঝে চিকিৎসকরা হিউম্যান টিটেনাস ইমিউন গ্লোবুলিন (এইচটিআইজি) ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে পারেন ।
- অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: টিটেনাসের সমস্যা হলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারে । এগুলি টিটেনাস ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম ।
- ব্যথানাশক: টিটেনাসের কারণে পেশী ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া কমাতে চিকিৎসক ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারে ।
- টিকাদান: টিটেনাসের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রোগীকে টিটেনাসের ভ্যাক্সিন দিতে পারেন । টিটেনাস ভ্যাকসিন আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে টক্সিনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে ।
টিটেনাস প্রতিরোধের টিপস – টিটেনাস প্রতিরোধের উপায়
টিটেনাস প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায় হল টিকা । সিডিসির মতে, নিয়মিত টিটেনাস ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজেই এড়ানো যায় । এছাড়াও, টিটেনাস রোগ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে, সমস্ত বয়সের মানুষদের টিটেনাস ভ্যাকসিন সময়মতো গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
টিটেনাস প্রতিরোধের জন্য, শিশুদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ইপিআই শিডিউল অনুসারে বাংলাদেশে শিশুর ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা বা ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় । এ ছাড়াও গর্ভকালীন ও নবজাতকের টিটেনাস প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে কিশোরীদের ১৫ বছর বয়স থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর আরও পাঁচ ডোজ টিটেনাসের ভ্যক্সিন দেওয়া হয়ে থাকে । সঠিক সময়ে টিটেনাসের টিকা নেওয়া আবশ্যক ।
টিটেনাস সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে –
- ক্ষতের যত্ন : টিটেনাস সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে, যত দ্রুত সম্ভব ক্ষত স্থান ভাল করে পরিষ্কার করুন । ক্ষত, আঁচড় বা ত্বকে যে কোনো ধরনের ছোটখাটো কাটার ক্ষেত্রেও প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না ।
- পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা: টিটেনাস প্রতিরোধে রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে । বারবার সাবান বা পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে ।
- ওষুধের ব্যবহার: টিটেনাস প্রতিরোধের জন্য যদি আপনার টিকা না দেওয়া থাকে এবং আপনার যদি কোনও গুরুতর আঘাত লাগে, তাহলে সংক্রমণের বিস্তার বন্ধ করার জন্য দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করুন ।
- একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন: সমস্যা গুরুতর মনে হলে অথবা টিটেনাসের লক্ষণ দেখতে পেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন ।
টিটেনাসের কারণ কি সত্যিই মরচে পড়া লোহা
জং বা মরচে পড়া লোহা বা অন্য কোন বস্তুর সাথে আঘাত লেগে শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলেই আমরা মনে করি এই বুঝি টিটেনাস হল । সেই ভয়ে আমরা অনেকে টিটেনাসের ভ্যাকসিনও নিয়ে থাকি । আসলে আমরা ভয় পাই লোহার ওই জং বা মরচে ধরা অংশকে, রসায়নের ভাষায় যাকে বলে আয়রন অক্সাইড (Iron Oxide) । আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণা ওই মরচের কারনেই আসলে টিটেনাস হয় । আবার অনেকের ধারণা লোহায় কেটে যাওয়া মানেই টিটেনাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে । কিন্তু আসলে বিষয়টি ঠিক নয় । মূলত আয়রন অক্সাইড বা মরিচার সাথে টিটেনাসের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই অর্থাৎ টিটেনাসের কারণ লোহার মরচে ধরা অংশ বা আয়রন অক্সাইড নয় । টিটেনাস রোগের মেইন কারণ হল ক্লস্ট্রিডিয়াম টিট্যানি (Clostridum tetani) নামের ব্যাক্টিরিয়া ।
এই ব্যাকটেরিয়া শুধুমাত্র মরচে ধরা লোহার গায়েই নয়, বরং এটিকে ধুলো-মাটি থেকে শুরু করে প্রাণীদের মলেও পাওয়া যায় । শরীরের যে কোনো ক্ষত স্থান বা চামড়ার কাটা অংশের মধ্যে দিয়ে এই ব্যাক্টেরিয়া খুব সহজেই আমাদের শরীরে আক্রমণ করতে পারে । মরচে ধরা লোহা তো দূরের কথা, কোন ধরনের লোহাতে আঘাত না পেয়েও আপনার টিটেনাস হতে পারে । ধরুন আপনি আপনার বাগানে কাজ করছেন, এমন অবস্থায় আপনার শরীরের কোনো ক্ষত বা কাটা জায়গায় মাটি লেগে গেল । টিটেনাসের জীবাণু কিন্তু সেই মাটি থেকেও আপনার শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে ।
তবে গবেষকদের ধারণা, মরচে ধরা লোহা টিটেনাসের জীবাণুর (ক্লস্ট্রিডিয়াম টিটানি) বেড়ে ওঠার জন্য একটি আদর্শ জায়গা । সেই কারনেই হয়তো মরচে ধরা লোহা বা পেরেকে আঘাত পাওয়ার সাথে টিটেনাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, টিটেনাস কি, টিটেনাস কেন হয়, টিটেনাসের লক্ষণ এবং টিটেনাস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । তাই যে কোন ছোট ক্ষতকেও অবহেলা করবেন না এবং সম্ভব হলে এখনই টিটেনাসের টিকা গ্রহন করুন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।