বদহজম এমন এক ধরনের সমস্যা, যা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে । যদি পেটের উপরের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে এটি বদহজমের কারনে হতে পারে । পরিপাকতন্ত্রের ত্রুটির কারণে বদহজমের সমস্যা দেখা দেয় । কেউ কেউ বদহজমের সমস্যা সমাধান করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান, আবার কেউ কেউ বদহজমের সমস্যা দূর করার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করেন । আপনিও যদি ভেবে থাকেন যে, কীভাবে বদহজম থেকে মুক্তি পাবেন, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে বদহজমের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
Table of Contents
বদহজম কি
পেট খারাপ হলেই বদহজম হয় । ডাক্তারি ভাষায় বদহজমের সমস্যাকে ডিসপেপসিয়া ( Dyspepsia ) বলে । এর ফলে পেট সম্পর্কিত অনেক ধরনের সমস্যা হয়, যেমন – পেটে ব্যথা, উপরের পেটে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি বোধ করা ইত্যাদি । বদহজম নিজে কোন রোগ নয়, তবে এটি অন্য কোনও গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে । যদিও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণেই বদহজমের সমস্যা হয়, তবে এটি আরও অনেক কারণে হতে পারে । বদহজমের কারণগুলি আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আলোচনা করব ।
বদহজমের কারণ – বদহজম কেন হয়
বদহজমের সমস্যা অনেক কারণে হতে পারে । নিচে বদহজমের সমস্যা হওয়ার কারণগুলো দেওয়া হল –
- অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া
- মশলাদার ও তেলযুক্ত খাবার খাওয়া
- খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া
- অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহন
- ধূমপান
- অ্যালকোহল সেবন
- বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ
- সোডার অত্যধিক ব্যবহার
- মানসিক টেনশন
- কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে, যেমন অ্যাসপিরিন এবং আইবুপ্রোফেন ।
- চিকিৎসা অবস্থা যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ের অপ্রতুলতা বা পেপটিক আলসার ।
- ডায়াবেটিস
- থাইরয়েড রোগ
- গর্ভাবস্থা
বদহজমের লক্ষণ – বদহজমের উপসর্গ
বদহজম হলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ অনুভূত হতে পারে । নীচে বদহজমের কিছু লক্ষণ দেওয়া হল –
- পেটে ব্যথা
- উপরের পেটে অস্বস্তি
- পেট ফাঁপা
- বমি বমি ভাব
- পেটে জ্বালা
- অল্প পরিমাণ খাওয়ার পর পেট ভর্তি হয়ে গেছে এমন অনুভব হওয়া
যদি বদহজমের সমস্যা অনেক বেশী তীব্র হয়, তবে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে । যদি সেগুলি দেখা দেয় তাহলে একদম দেরী না করে, যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত –
- বমিতে রক্ত
- ওজন কমে যাওয়া
- যে কোন কিছু গিলতে অসুবিধা হওয়া
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি ? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার
বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার
সমস্যা যাই হোক না কেন, প্রথম অবস্থায় ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করা যেতে পারে । কারণ, ঘরোয়া প্রতিকারগুলি একদিকে যেমন কার্যকর এবং অন্যদিকে এর কারণে আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি হয় না । তবে অবস্থার যদি অবনতি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচত । নিচে বদহজমের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার দেওয়া হল –
বেকিং সোডা – ১ গ্লাস পানিতে, আধা চা চামচ বেকিং সোডা ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে খাবার খাওয়ার ১ ঘন্টা পরে পান করুন । বদহজমের সমস্যা কমাতে বেকিং সোডা খুব ভাল কাজ করে । বেকিং সোডাকে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিডও বলা হয়, যা বদহজম এবং বুকজ্বালা কমাতে সাহায্য করতে পারে । এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড নিউট্রালাইজ করে বদহজমের সমস্যা কমাতে কাজ করে । খাবার খাওয়ার আগে কখনোই এই বেকিং সোডা মিশ্রিত পানি পান করবেন না ।
আপেল সিডার ভিনেগার – এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে, এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন ।
স্বাদ বাড়ানোর জন্য এতে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পান করুন । আপেল সাইডার ভিনেগার বদহজমের উপসর্গ যেমন পেট খারাপের সমস্যা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে । NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাবার গ্রহনের আধা ঘণ্টা আগে আপেল ভিনেগার এবং পানির এই মিশ্রণ গ্রহন করলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং সেই সাথে বদহজমের সমস্যাও কম হয় ।
দারুচিনি – একটি প্যানে ১ গ্লাস পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন ।
এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে, এর সাথে ২ থেকে ৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন । দারুচিনি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী । দারুচিনির অনেক গুনের মধ্যে একটি হল, এটি বদহজমের সমস্যা কমাতে সক্ষম । এটি দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে ।
ক্যামোমাইল চা – একটি প্যানে এক কাপ পানি গরম করে তাতে এক চা চামচ ক্যামোমাইল চা পাতা মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন । এরপর ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে পান করুন । ক্যামোমাইল পাচনতন্ত্রকে শিথিল করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । পেট সংক্রান্ত অনেক ধরনের সমস্যা এর ব্যবহারে ঠিক হয়ে যায় । এছাড়াও এটি বদহজমের সমস্যা এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য উপসর্গ যেমন গ্যাস, বমি এবং বমি বমি ভাব ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে । এটি পেট থেকে গ্যাস অপসারণ করতে এবং পেট থেকে অন্ত্রে খাদ্য বহনকারী পেশীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে ।
লেবু এবং আদা চা – এক কাপ গরম পানিতে এক টুকরো আদা এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ৫ মিনিট পর এই পানি ছেঁকে নিয়ে, এতে কিছু মধু যোগ করে হালকা গরম থাকা অবস্থায় পান করুন । বদহজমের সমস্যা কমাতে আদা ও লেবুর চা ব্যবহার করা যেতে পারে । আদা প্রাচীনকাল থেকেই বদহজম এবং এর উপসর্গ যেমন পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব, গ্যাস, বেলচিং এবং বমি ইত্যাদি সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে । অন্যদিকে লেবু একটি ক্ষারীয় খাদ্য উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয় । এটি শরীরে তৈরি হওয়া অ্যাসিডকে শান্ত করে পেটের জ্বালা কমাতে খুব ভাল কাজ করে ।
জিরা পানি – ১ গ্লাস পানিতে দুই চামচ জিরা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে এই পানি ছেঁকে নিয়ে পান করুন । ওজন কমানোর উপায় হিসেবে জিরা পানির কথা আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন । এই জিরা পানি ওজন কমানোর সাথে সাথে বদহজমের সমস্যা কমাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে । NCBI এর প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে যে, জিরাতে গ্যাস্ট্রোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটি পেট এবং অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন বদহজম, গ্যাস, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, বমি এবং বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে ।
পুদিনা – একটি পাত্রে এক কাপ পানি গরম করে তাতে কয়েকটি পুদিনা পাতা যোগ করে ফুটিয়ে নিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন । এছাড়াও আপনি নরমাল লাল চায়ের সাথে পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে পান করতে পারেন । পুদিনা পাতা বদহজম সারাতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে খুব কার্যকরী । প্রাচীনকাল থেকেই বদহজমের সমস্যা এবং এর উপসর্গ দূর করতে পুদিনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে । একই সময়ে, জার্নাল অফ ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যান্ড রিসার্চ-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুদিনাতে অ্যান্টি-স্পাসমোডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা পেটের ব্যথা উপশম করতে পারে ।
দুধ – প্রতিদিন বা বদহজমের সমস্যা হলে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করুন । বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবেও দুধ ইউজ করা যেতে পারে । NCBI প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধের অ্যান্টাসিড প্রভাব রয়েছে । তাই দুধ, পেটের জ্বালা বা অম্লতা কমানোর পাশাপাশি বদহজমের লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দিতে ভাল কাজ করে ।
মধু – ১ গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন । বদহজমের একটি সাধারণ উপসর্গ হল পেটে জ্বালাপোড়া হওয়া । কিছু ক্ষেত্রে, এই জ্বালা শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাবের কারণেও হতে পারে । এক্ষেত্রে মধু খুব কার্যকর সমাধান হতে পারে । মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব কমাতে পারে এবং সেই সাথে বদহজমের উপসর্গগুলিও কমাতে সক্ষম ।
পেঁপে – পেঁপে, বদহজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে । পেঁপেতে, পাপায়া নামক এনজাইম থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে । নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায় ।
মৌরি – ১ টেবিল চামচ মৌরি, ১ গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ছেঁকে নিয়ে অর্ধেকটা পান করুন । আর বাকি অর্ধেক পানি খাবারের আধা ঘণ্টা আগে পান করুন । মৌরি বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মৌরি (মৌরির পানি) থেকে তৈরি সিরাপ শিশুদের মধ্যে কোলিক নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে । শিশুদের কোলিকের সমস্যা বদহজমের কারণে হয়ে থাকে ।
নারকেল তেল – রান্নায় নিয়মিত তেলের পরিবর্তে নারকেল তেল ইউজ করুন । বদহজমের সমস্যা কমাতে নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে । জার্নাল অফ ফার্মেসি রিসার্চ দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারকেল তেলে লরিক অ্যাসিড রয়েছে, যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক ভাইরাসের প্রভাব কমাতে কাজ করে । এছাড়াও দিনে একবার নারকেল পানি পান করতে পারেন ।
টক দই – টকদই মানুষের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এর ফলে ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক অর্থাৎ হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় । ফলে পেট ফাঁপা ও বদহজমের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায় ।
অ্যালোভেরা – খাবারের ৩০ মিনিট আগে আধা কাপ অ্যালোভেরার রস পান করুন । ত্বকের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চই শুনেছেন । এছাড়াও অ্যালোভেরা বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে । ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার জুস পেট এবং অন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এর মধ্যে রয়েছে পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস, খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া, বমি ও বমি বমি ভাব ইত্যাদি ।
শসা – বদহজমের সমস্যায় শসা উপকারী । শসা খেলে পেট ঠাণ্ডা থাকে । শসাতে, ফ্লেভোনয়েড ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা পেটে গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে ।
তুলসি পাতা – প্রতিদিন তুলসী পাতার রস পান করুন । তুলসির পাতায় এমন পদার্থ আছে, যা গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে । এ ছাড়াও তুলসী পাতা ক্ষুধা বাড়ানোর পাশাপাশি হজমে সহায়তা করে । তুলসিতে থাকা ইউজেনল, পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে ।
বদহজম হলে কী খাবেন
বদহজমের চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের দিকে যত্ন নেওয়াও জরুরী । বদহজমের সমস্যা হলে আপনি নিম্নলিখিত খাবার খেতে পারেন –
- কম চর্বিযুক্ত বা সম্পূর্ণ চর্বিহীন দুগ্ধজাত পণ্য
- রান্না করা, টিনজাত বা হিমায়িত সবজি
- ফলের রস
- আটার রুটি
- কম চর্বিযুক্ত মুরগির মাংস
- ক্রিমি পিনাট বাটার
- পুডিং বা কাস্টার্ড
- ডিম
- স্যুপ
- কলা
- টক দই
- কাঁচা পেঁপে
বদহজম হলে যা খাবেন না
বদহজমের সমস্যায়, নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন –
- অ্যালকোহল এবং পানীয়
- কার্বনেটেড পানীয় যেমন সোডা
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং খাবার
- টমেটো বা কমলালেবুর মতো উচ্চ অ্যাসিডযুক্ত খাবার
- উচ্চ মসলাযুক্ত বা তৈলাক্ত/চর্বিযুক্ত খাদ্য
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোন ফল খাওয়া উচিত এবং কোনটি উচিত নয়
বদহজমের চিকিৎসা
বদহজমের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে এটি কি কারণে হচ্ছে তার উপর । কারণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা বদহজমের চিকিৎসা তিনটি উপায়ে করে থাকেন –
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: আপনি জেনে অবাক হতে পারেন যে, চিকিৎসকরা অনেক সময় বদহজমের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ সাজেস্ট করেন । এই চিকিৎসায় ফ্লুপেনথিক্সল ও মেলিট্রাকেইন নামে দুটি ওষুধ ইউজ করা হয় । বদহজমের উপসর্গ অনেকাংশে কমানোর জন্য এই ধরনের ওষুধ চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করে থাকেন ।
- প্রোকিনেটিক্স: কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রোকিনেটিক্স ব্যবহার করার পরামর্শ দেন । এই ধরনের ওষুধ গ্যাস, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম ইত্যাদি উপসর্গ থেকে মুক্তি দিতে পারে । সেই সাথে, এই ওষুধগুলির কারণে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যার কারণে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত এই ধরনের ওষুধ কোনভাবেই ইউজ করা উচিত নয় ।
- অ্যান্টিবায়োটিক: পেটে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির কারণে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে । এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, যেমন রিফ্যাক্সিমিন, টেট্রাসাইক্লিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন/ক্লাভুলানেট ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
- থেরাপি: মানসিক চাপের কারণেও অনেক সময় বদহজমের সমস্যা হতে পারে । এমন পরিস্থিতিতে, একজন ভাল থেরাপিস্টের সাথে কথা বলে মানসিক চাপ দূর করাও বদহজমের চিকিৎসায় ভাল কাজ করতে পারে ।
বদহজম এড়াতে আরও কিছু টিপস – বদহজমের জন্য অন্যান্য টিপস
কথায় আছে যে সতর্কতা অবলম্বন করা নিরাময়ের চেয়ে উত্তম । একইভাবে, বদহজমের সমস্যা এড়াতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে –
- খাওয়ার পরপরই ব্যায়াম শুরু করবেন না
- খাবার ভালো করে চিবিয়ে তারপর গিলে ফেলুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
- মাঝরাতে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
- ধূমপান/অ্যালকোহল সেবন করবেন না
- টেনশন করবেন না
- খাবার খাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পরে ঘুমান
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে বদহজম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । এই সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তি যদি বদহজমের প্রতিকার খুঁজে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাজে আসতে পারে । আশা করি এই আর্টিকেলে দেওয়া বদহজমের ঘরোয়া প্রতিকার এই সমস্যা কমাতে আপনাদের সাহায্য করবে । সেই সঙ্গে কীভাবে বদহজম নিরাময় করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি বদহজম হলে কী খাবেন এবং কীভাবে এই সমস্যা প্রতিরোধ করবেন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।