ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্ভাবনা মোকাবেলা করার জন্য বীমা একটি অস্ত্র। আমরা কেউই জানি না যে, আগামীকাল কী ঘটবে । তাই আমরা একটি বীমা পলিসির মাধ্যমে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করি। বীমা মানে হল ভবিষ্যতে আসন্ন ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা। যদি কোনো বীমা কোম্পানি কোনো ব্যক্তিকে বীমা করে, তাহলে বীমা কোম্পানি সেই ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতি পূরণ করবে। একইভাবে, বীমা কোম্পানী যদি একটি গাড়ী, বাড়ি বা স্মার্টফোনের বীমা করে থাকে, তবে সেই জিনিসের ক্ষতির ক্ষেত্রে, বীমা কোম্পানি পূর্ব-নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী তার মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে বীমা কি বা বীমা কাকে বলে, বীমা কত প্রকার, বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিসমূহের তালিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।
Table of Contents
বীমা কি – বীমা কাকে বলে
বীমা হল পলিসিধারী এবং কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি যা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সহায়তার নিশ্চয়তা দেয়। বীমা নেওয়ার জন্য, আপনাকে সেই বীমা কোম্পানিকে মাসিক বা বার্ষিক বা অর্ধ-বার্ষিক সময়ের মধ্যে নিয়মিত অর্থ প্রদান করতে হবে যতক্ষণ না আপনি দুর্ঘটনার শিকার হন বা বীমার মেয়াদ শেষ হয়।
আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে বীমার অর্থ হলো- এক ধরনের সঞ্চয়, যেখানে আপনি আপনার বীমা কোম্পানিকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেবেন এবং পরবর্তীতে আপনার যেকোন দুর্ঘটনা অথবা ক্ষতি হলে বীমা কোম্পানী আপনাকে তাদের সেই প্রতিশ্রুত অর্থটি প্রদান করবে।
ধরুন, আপনি যে কোন বীমা কোম্পানিতে ৩ লক্ষ টাকার একটি জীবন বীমা করলেন। এর জন্য আপনাকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা বীমা কোম্পানি কে প্রিমিয়াম হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু প্রতি মাসে বীমা কোম্পানি কে দেওয়া এই ২ হাজার টাকার জন্য বীমা কোম্পানী আপনাকে কোন ধরনের লাভ দেবে না। বরং অনাকাঙ্খিত কোন দুর্ঘটনায় অথবা অসুখে যদি আপনার মৃত্যু হয় তাহলে তারা সেই ৩ লক্ষ টাকা আপনার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে। যা আপনার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য একটি আর্থিক সাহায্য হবে।
যদিও বীমা প্রতিটি দুঃখজনক ঘটনার পরে সাহায্য করে, তারপরেও এটি প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের জনাকীর্ণ জীবনে কখন কী ঘটবে কেউ জানে না। এমন পরিস্থিতিতে, আপনি যদি আপনার মূল্যবান জিনিসগুলি সঠিকভাবে বীমা করে থাকেন তবে এটি আপনার জন্য একটি ব্যাকআপের মতো কাজ করবে।
আজকাল প্রায় সবকিছুরই বীমা করা হচ্ছে। এবং প্রতিটি জিনিসের জন্য বীমার আলাদা নীতি আছে। যেটিতে বলা হয়েছে যে, কোন জিনিসের কতটুকু ক্ষতি হলে তারা আপনাকে কতটা ক্ষতিপূরণ দেবে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করবেন
বিমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বিমার প্রচলন প্রথম কবে শুরু হয়
বিমার উৎপত্তি প্রথম কবে হয়েছিল সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কোনো কিছু বলা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা মনে করেন যে, ৪র্থ শতাব্দীতে, ভূমধ্যসাগরের উত্তর অঞ্চলে, ইতালির জেনোয়া বন্দরকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ মিলে প্রথম বিমা ব্যবসায়ের প্রচলন শুরু করে। পরবর্তীতে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি বিমারও সম্প্রসারণ ঘটে। এ সময়ে ইউরোপের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশ, ঝুুঁকি মোকাবেলার জন্য বিমার প্রচলন শুরু করে।
বিমার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বিশ্বে যে বিমাটি সর্ব প্রথম করা হয়েছিল তা ছিল নৌবিমা বা Marine Insurance । ১৬৬৬ সালে লন্ডনে এবং ১৮৬১ সালে টালি এস্টেটে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পরে ১৮৬৫ সালে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে অগ্নিবিমা বা Fire Insurance শুরু করা হয় । পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডে “Hand in Hand” নামক Life Insurance এর উদ্ভব ঘটে। ইউরোপিয়দের উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে সাম্রাজ্য বৃদ্ধির ফলে বিমা ব্যবস্থাও সারা পৃথিবীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ শাসন আমলে, ভারতীয় উপমহাদেশে বিমা ব্যবসা প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে । ইউরোপিয়রা ১৮১৮ সালে কলকাতায় (Kolkata/Calcutta) ‘The Oriental Life Insurance Company’ নামে একটি জীবন বিমা কোম্পানির মাধ্যমে উপমহাদেশে প্রথম বিমা ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে The Indian Insurance Company Act, 1928 নামে উপমহাদেশে একটি বিমা আইন পাশ করা হয়। এ আইনটি পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে সংশোধিত এবং পরিমার্জিত করে ঘোষণা করা হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর, ১৯৫৪ এবং ১৯৫৮ সালে বিমা আইনে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। ১৯৫৭ সালে বিমা ব্যবসা ইন্ডিয়াতে জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু পাকিস্তানে তখনও বিমা ব্যবসা ব্যক্তি মালিকানাতেই থেকে যায়।
বাংলাদেশে বিমা (Insurance in Bangladesh)
১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ ‘Bangladesh Insurance Order (Emergency Provision) 1972’ জারি করা হয়। এতে ১৯৩৮ সালের বিমা আইনটিকে বাংলাদেশের বিমা আইন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং সেই সাথে ৭৫টি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করে ৫টি সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সংস্থাগুলোর নাম নিচে দেওয়া হলো-
- ১. বাংলাদেশ জাতীয় বিমা কর্পোরেশন
- ২. কর্ণফুলী বিমা কর্পোরেশন
- ৩. তিস্তা বিমা কর্পোরেশন
- ৪. সুরমা জীবন বিমা কর্পোরেশন
- ৫. রূপসা জীবন বিমা কর্পোরেশন
এরপর আরো পরিবর্তন করে ১৯৭৩ সালের ১৪ মে বিমা কর্পোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৭৩ (Insurance Corporation Ordinance, 1973) ঘোষণা করা হয়। যেখানে ৫টি বিমা সংস্থাকে ২টি সংস্থার অধীনে নিয়ে আসা হয়। এই ২ টি সংস্থা হলো- জীবন বিমা কর্পোরেশন এবং সাধারণ বিমা কর্পোরেশন।
১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে, রাষ্ট্রীয় বিমা কর্পোরেশনের পাশাপাশি বেসরকারী বিমা ব্যবসার অনুমতি প্রদান করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বেসরকারী বিমা কোম্পানি চালু রয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে বিমা ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় ও লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বমোট ৭৮টি বীমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এগুলোর মধ্যে ৩২টি জীবন বীমা এবং ৪৬টি হল সাধারণ বীমা কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে মাত্র একটি জীবন বীমা এবং একটি সাধারণ বীমার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়াও দুটি বিদেশী বীমা কোম্পানিও রয়েছে।
বীমা কত প্রকার ও কি কি
জীবন বীমা: জীবন বীমা মানে হল, যে ব্যক্তি বীমা পলিসি কিনছেন তার মৃত্যুর পরে, তার নির্ভরশীল ব্যক্তি বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবে। পরিবারের প্রধানের অকাল মৃত্যু হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংসারের খরচ চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবারের প্রধানের স্ত্রী/সন্তান/বাবা-মা ইত্যাদিকে আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা করার জন্য একটি জীবন বীমা পলিসি নেওয়া প্রয়োজন। আর্থিক পরিকল্পনায়, প্রথমে একজন ব্যক্তিকে একটি জীবন বীমা পলিসি কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য বীমা: স্বাস্থ্য বীমা সাধারনত ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। আপনি ইচ্ছা করলে সাধারণ স্বাস্থ্য বীমা করা ছাড়াও, কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্যও এই ধরনের বীমা করতে পারবেন । এই ধরনের বীমা পলিসির ক্ষেত্রে প্রদত্ত প্রিমিয়াম সাধারণত আপনার চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
হোম ইন্স্যুরেন্স: আপনি যদি আপনার বাড়ির জন্য কোনো সাধারণ বীমা কোম্পানির কাছ থেকে বীমা করান, তাহলে আপনার বাড়ি এতে সুরক্ষিত থাকে। একটি বীমা পলিসি কেনার পর, যদি আপনার বাড়ির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, তাহলে বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির ক্ষতির মধ্যে রয়েছে আগুন, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, বন্যা ইত্যাদির কারণে বাড়ির ক্ষতি। আর কৃত্রিম দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে চুরি, আগুন, মারামারি-দাঙ্গা ইত্যাদি কারণে বাড়ির ক্ষতি।
যানবাহন বীমা: বাংলাদেশের আইন অনুসারে রাস্তায় চলমান যে কোনও গাড়ির বীমা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার গাড়িটি বীমা না করে রাস্তায় চালান, তাহলে ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে জরিমানা করতে পারে। মোটর বা গাড়ির বীমা পলিসি অনুযায়ী, বীমা কোম্পানি গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেয়। যদি আপনার গাড়ি চুরি হয়ে যায় বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে গাড়ির বীমা পলিসি আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে।
শিক্ষা বীমা: শিক্ষা বীমাগুলো অনেকটা জীবন বীমা পলিসির মতো কাজ করে । এই ধরনের বীমা আপনার শিশুর ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা এবং দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে কাজে আসে। এই বীমার প্রাপ্ত অর্থ আপনার সন্তানের ১৮ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর তার উচ্চশিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই বিমার ক্ষেত্রে আপনার শিশু হলো বীমার অর্থ গ্রহণকারী, তবে মালিকানা অধিকার পিতামাতা বা আইনী অভিভাবকদের কাছেই থাকে।
বীমা কীভাবে কাজ করে
বীমা পলিসি বা বীমা নীতি হলো একটি বৈধ আইনী চুক্তি যা পলিসি ধারক বা বীমাকারী এবং বীমা কোম্পানি উভয়কেই একে অপরের প্রতি আবদ্ধ করে। এই নীতিতে বীমার সমস্ত আইনী বিষয়গুলো নথি আকারে থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি বীমা কোম্পানির কাছে বীমার অর্থ দাবি করতে পারবেন সেটাও লিখিত থাকে।
একটি উপযুক্ত বীমা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে দুর্দিনে আর্থিক সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। তাইতো বলা হয়ে থাকে যে। একটি বীমা জীবিত এবং মৃত উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সাহায্য করে।
বীমা চলাকালীন অবস্থায় বীমাদানকারী কোম্পানির থেকে আপনি অর্থের দাবি করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে বীমাদানকারী কোম্পানি আপনার কথার সত্য মিথ্যা যাচাই করার পর আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করবে।
সাধারণত যে কোন বড় বীমার অর্থের দিক থেকে প্রিমিয়াম অনেক কম হয়ে থাকে। বীমাদানকারী কোম্পানি এই ঝুঁকি নেয় তার কারণ, খুব কম সংখ্যক বীমাপ্রাপ্ত লোকেরা আসলে বীমা দাবি করেন। তাই আপনি চাইলেই অনেক কম টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ভালো একটি বীমা করতে পারেন।
আবার বিজনেস করার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বীমা নীতির প্রয়োজন হয় যেমন ধরুন, যে কোনো ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। এমন অবস্থায় তাকে এমন ধরনের বীমা বেছে নিতে হবে যা বিজনেসের সেই ক্ষতিপূরণ করতে তাকে আর্থিক সহায়তা করবে।
জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম কি
সহজ কথায় বলতে গেলে, “জীবন বীমা প্রিমিয়াম বা লাইফ ইনসুরেন্স প্রিমিয়াম” হল আপনার ভবিষ্যতের নিরাপত্তার বিনিময়ে আপনি আপনার লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানিকে অর্থ প্রদান করেন। জীবন বীমা বা লাইফ ইনসুরেন্স প্রিমিয়াম মাসিক, বার্ষিক অথবা এককালীন পেমেন্ট হতে পারে। পেমেন্ট (যাকে ডেথ বেনিফিট বলা হয়) হল জীবন বীমার মেয়াদকালের মধ্যে যদি আপনি অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান তবে লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি আপনার সুবিধাভোগীদের বীমার অর্থ প্রদান করবে।
বীমা করার আগে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক দেশের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। যার ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে এর কাজ করার সুযোগ বেশি। যে কোন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা, অর্থ জমা দেওয়া বা অন্যান্য যে কোন কাজের জন্য আপনাকে ব্যাংকে যেতে হয়। কিন্তু বীমা করার ক্কফহেত্রে ইনস্যুরেন্স এজেন্টরাই গ্রাহকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বীমা করার জন্য রাজি করান । এজন্য বর্তমানে গ্রামের অনেক কৃষক তার কৃষি পণ্য এবং গবাদি পশুর জন্য বীমা করে থাকেন।
কিন্তু বীমার মেয়াদ পূর্তির পর বা কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর অর্থ হাতে পাওয়া নিয়ে অনেক রকম নেতিবাচক অভিজ্ঞতার অভিযোগ শোনা যায় । তাই বীমা করার আগে যে কোন বীমা গ্রাহকের কিছু বিষয় খেয়াল করতে হবে। নিচে সেই রকম কিছু বিষয় দেওয়া হল –
- বীমা করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট বীমার সমস্ত শর্তাদি ভালোভাবে দেখে, জেনে এবং বুঝে নিতে হবে।
- প্রিমিয়াম জমা দেয়ার নিয়মাবলী এবং যদি কোন কারণে প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার সময়সীমা পার হয়ে যায় তাহলে কী করণীয় সেই বিষয় ভালো করে জেনে নিতে হবে।
- বীমার মেয়াদ পূর্তির পর ঠিক কত টাকা বীমা কোম্পানি প্রদান করবে এবং কতদিনের মধ্যে সেই প্রতিশ্রুত অর্থ তারা পরিশোধ করবে তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে।
- বীমার মেয়াদ পুরণ হওয়ার পর যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে গ্রাহক কী ধরনের আইনি সুরক্ষা পাবে সেটা জেনে নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সব ব্যাংকের রাউটিং নাম্বার
লাইফ ইন্সুরেন্স এর সুবিধা – বীমার সুবিধা
লাইফ ইন্সুরেন্স করার অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। এর ফলে আপনি ও আপনার পরিবার বিশেষ কোন অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা মোকাবেলা করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে পারেন। লাইফ ইন্সুরেন্সের কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো –
জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাওয়া যায়ঃ মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত সমস্যা আসতেই থাকবে । আর এই সমস্যাগুলো কখনো আপনাকে আগাম কোন সংকেত দিয়ে আসে না । এই ধরনের আকস্মিক আর্থিক সমস্যা মোকাবেলা করতে জীবন বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । একটি বীমা আপনার এবং আপনার পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে । তার থেকেও বড় কথা হল, আপনার অনুপস্থিতিতে এই বীমা, আপনার পরিবারের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করে ।
মৃত্যুকালীন সুবিধা পাওয়া যায়ঃ জীবন বিমাতে বিনিয়োগ করার কথা বললে অনেকেই বলেন যে, যদি বেঁচে নাই থাকি, তাহলে টাকা দিয়ে কি হবে? কথাটি একদিক থেকে ঠিক, বেঁচে না থাকলে, টাকা মানুষের কোন কাজে আসে না । কিন্তু আপনাকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, জীবন বীমায় বিনিয়োগ করার ফলে আপনার ও আপনার পরিবার উভয়ের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত হয়। বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুতে, বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বীমার সমস্ত অর্থ বীমাকৃত ব্যক্তির পরিবারকে পরিশোধ করে। এছাড়াও,যাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয় কমে গেছে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য জীবন বীমা যথাযথ সুবিধা সুরক্ষিত রাখে। জীবন বীমাত বিভিন্ন পলিসির মধ্যে থেকে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী মানানসই পলিসি নির্বাচন করতে পারবেন।
বীমাতে বিনিয়োগ করে ভাল রিটার্নঃ জীবন বীমা মৃত্যুকালীন সুবিধা প্রদান করার সাথে সাথে, জীবন বীমা আমাদের দীর্ঘমেয়াদী নিশ্চিত আয় প্রদান করে। জীবন বীমায় বীমাকারী ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদী বোনাস পেয়ে থাকেন, যা বীমা পলিসির নগদ মূল্যের সাথে জমা হতে থাকে। বিনিয়োগকৃত অর্থ পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অথবা বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর অর্থ হিসেবে রিটার্ন পাওয়া যায় ।
কর সুবিধা পাওয়া যায়ঃ জীবন বীমাতে আপনারা অনেক ধরনের কর সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। বীমার আয় কিংবা পলিসি লোনের জন্য কোন ধরনের কর প্রদান করতে হবে না। এছাড়াও বীমার পলিসি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোন ধরনের কর আরোপের সম্ভাবনা থাকে না।
লোন গ্রহণের সুযোগ থাকেঃ জীবন বীমাতে আপনার নামে যে টাকা জমা হবে তার উপর ভিত্তি করে আপনারা লোন নিতে পারবেন। হঠাৎ কোন আর্থিক প্রয়োজনে বীমাকারী কোম্পানি আপনাকে লোন গ্রহণের সুবিধা দিয়ে থাকে। লোনের পরিমাণ নির্ভর করে পলিসির নিয়ম বা আইনের উপর।
দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রেঃ আমরা নিয়মিত আয় করি এবং আমাদের জীবন ধারনের জন্য সেই অর্থ খরচও করি । কিন্তু আমাদের উপার্জনের পরিমাণ সব সময় একই রকম থাকে না । সামনের দিন গুলোতে আমাদের জীবনে কি ঘটবে তা আমরা কেউ জানি না । তাই আসন্ন ঝুঁকির কথা ভেবে আমাদের সঞ্চয় করে রাখা উচিত । অর্থ সঞ্চয় ও ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ গড়ে তুলতে জীবন বীমা অনেক ভালো মাধ্যম। এটা আপনার অবসর পরবর্তী জীবনে আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করবে, সেই সাথে সন্তানের বিয়ে বা পড়াশোনার মতো ভবিষ্যত লক্ষ পূরণ করতেও কাজে আসবে।
জীবনের শেষ সময়ে সুরক্ষাঃ অনেক মানুষ আছেন যারা সারা জীবন কষ্ট করার পর জীবনের শেষ ভাগে এসে একদম একা হয়ে যায় । অনেক সময় তাদের নিজের সন্তানরাই তাকে দূরে ঠেলে দেয় । শেষ বয়সে গিয়ে নতুন করে আর কোন কিছুই করার থাকে না । কিন্তু যদি আপনি দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে জীবন বীমায় বিনিয়োগ করে থাকেন থাকলে জীবনের অন্তিম পর্যায়ে যেয়ে আপনাকে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না । একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেনশনের মত সারাজীবন পেয়ে যাবেন ।
জীবন বীমার অসুবিধা
- আপনাকে জীবন বীমার প্রিমিয়াম নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।
- এই প্রিমিয়াম দেওয়ার জন্য আপনাকে কখনো কখনো আপনার মাসিক খরচ কম করতে হবে।
- আপনি যদি কাজ করতে অক্ষম বা বৃদ্ধ হন সেই ক্ষেত্রে জীবন বীমার প্রিমিয়াম আপনার জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।
- সাধারণত জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স নিজের জন্য অর্থাৎ পলিসি হোল্ডারের জন্য করা হয় না। এটি পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং নিজের বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে করা হয়।
- আপনার জীবন বীমা কোম্পানির এজেন্ট বিশ্বাসযোগ্য কিনা সেটা বীমা করার আগে ভালো করে যাচাই করে নিন।
- আপনি যদি কোন কারণে প্রিমিয়াম দিতে অসমর্থ হন অথবা পলিসি আত্মসমর্পণ করতে চান তাহলে আপনার দেওয়া সমস্ত অর্থের চেয়ে কম বা খুব স্বল্প পরিমানের অর্থ ফেরত পেতে পারেন।
বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিসমূহের তালিকা
বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিসমূহের তালিকা নিচে দেওয়া হল –
সরকারি লাইফ বীমাকারী কোম্পানি
- জীবন বীমা কর্পোরেশন
সরকারি নন-লাইফ বীমাকারী কোম্পানি
- সাধারণ বীমা কর্পোরেশন
বেসরকারি লাইফ বীমাকারী কোম্পানি
- এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (মেট লাইফ)
- গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এল আই সি)অব বাংলাদেশ লিমিটেড
- মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
বেসরকারি নন-লাইফ বীমাকারী কোম্পানি
- অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড
- জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- নর্দার্ণ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- ক্রিষ্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- ইষ্টার্ণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড
- স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
- ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
- ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
শেষ কথা
আমরা আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা বীমা কি, জীবন বীমা প্রিমিয়াম কি, জীবন বীমা কেন করবেন, বীমা কত প্রকার, জীবন বীমার সুবিধা ও অসুবিধা – এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান
ধন্যবাদ ।