ব্রণ হওয়ার সমস্যা বর্তমানে খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে । বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত, পিম্পল বা ব্রন তাদের বেশি কষ্ট দেয় । এই ব্রণ শুধু মুখের সৌন্দর্যই কমায় না, সেই সাথে অনেক সময় অসহনীয় ব্যথাও দেয় । এমন অবস্থায় অনেক মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে, কিভাবে ব্রণ দূর করবেন ? আজকের আর্টিকেলে আমরা কীভাবে পিম্পল দূর করবেন সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করব । এখানে আমরা ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি, ব্রণ হওয়ার কারণ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করব । সেই সাথে, আমরা পিম্পল দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কেও আলোচনা করব । তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন যে, আর্টিকেলে উল্লিখিত ব্রণের ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্রণের চিকিৎসা নয়, এগুলো মূলত ব্রণকে প্রতিরোধ করার উপায় । তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, ব্রণ দূর করার কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে ।
Table of Contents
ব্রণ কি – পিম্পল কি
ত্বকের সেবাসিয়াস নামক গ্রন্থি থেকে সেবাম নামে একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃশ্রিত হয়, যা আমাদের ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে । যদি কোনো কারণে সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং সেবাম নিঃসরণের পথে বাধার সৃষ্টি হয় তখন তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে । যা ব্রণ (acne) বা পিম্পল নামে পরিচিত । ব্রণ তৈরি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এর মুখ বন্ধ থাকায় তা সাদাটে দেখায় । অনেক সময় ব্রণের চারপাশে ব্যাথা শুরু হয় এবং এটি লাল রং ধারন করে । আর এতে যদি জীবাণু সংক্রমণ হয় তাহলে পুঁজ তৈরি হয় । বাইরে থেকে দেখতে এদের ছোট দেখালেও এরা ভেতরে বেশ গভীর হতে পারে । এই কারণে ব্রণ সেরে যাওয়ার পরেও অনেক সময় মুখে দাগ থেকে যেতে পারে । ১২ বছর থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত বেশীরভাগ মানুষের মধ্যেই ব্রনের সমস্যা বেশি দেখা যায় । ২০ বছর বয়সের পর থেকে নিজে থেকেই এ ব্রনের সমস্যা কমে যেতে থাকে । তবে এর ব্যতিক্রমও যে হয় না তা কিন্তু নয় । অনেকের ক্ষেত্রে ২০ বছরের পরেও পিম্পলের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং তা অনেক বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে ।
Pimples এর ধরন – ব্রণ কত প্রকার
ব্রণ সাধারণত তিন প্রকার, নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
কমেডোনিকা : এগুলো হল হালকা টাইপের ব্রণ । এই ধরনের ব্রনের মধ্যে ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস অন্তর্ভুক্ত । এতে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং ত্বকে যত বেশি পরিমাণে তেল জমতে থাকে তত বেশি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে । এই কারণে, এই ধরনের ব্রণে ব্যথা হয়ে থাকে ।
পাপুলার – পুস্টুলস : এগুলো মাঝারি আকারের ব্রণ । এই সময় ব্রণ কিছুটা ফুলে যায় । সেই সাথে এই ধরনের ব্রণে হলুদ রঙের পুঁজ জমে যাকে পুস্টুলস বলা হয় ।
নোডুলস : এই ধরনের ব্রণ সবচেয়ে বেশী মারাত্মক । ব্রণের নোডুলসের সময় অর্থাৎ পিম্পল ফুলে যাওয়ার সাথে এর ভেতরে হলুদ রঙের পুঁজও জমে থাকে ।
কিভাবে ব্রণ প্রতিরোধ করতে হয় তা জানার আগে, ব্রণ কেন হয় সে সম্পর্কে জানা জরুরী ।
পিম্পলের কারণ – ব্রণের কারণ – ব্রণ হওয়ার কারণ
ব্রণ হওয়ার কারণ নিচে দেওয়া হল –
- বংশগতি – পিম্পল বা ব্রণের সমস্যা জেনেটিক কারণে হতে পারে । যদি কারও পরিবারের কোন সদস্যের ঘন ঘন ব্রণ হয়, তাহলে পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিরও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (তথ্যসূত্র) ।
- হরমোনের পরিবর্তনের কারণে – বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয় এবং সেই কারণেও ব্রণ হতে পারে । বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় শরীরের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণের সমস্যা হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
- ওষুধের কারণে – কখনও কখনও মানসিক চাপ, মৃগীরোগ বা অন্য কোন মানসিক অসুস্থতার সাথে সম্পর্কিত ওষুধ সেবনের কারণেও ব্রণ হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
- প্রসাধনী বা কসমেটিকসের অতিরিক্ত ব্যবহার – অতিরিক্ত প্রসাধনী ইউজ করার ফলেও ব্রণ হতে পারে । অনেক মহিলা প্রতিদিন মেকআপ করে থাকেন এবং পরে ঠিকমতো মেকআপ তোলেন না, এর কারণেও পিম্পল হতে পারে (তথ্যসূত্র) । এছাড়াও মুখ ফর্সা করা ক্রিমের মত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও ব্রণ হতে পারে ।
- খাওয়ার অভ্যাস – অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিক্সের জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, খাবারের ফ্যাট, দুধ এবং মাছ ব্রণের কারণ হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
- স্ট্রেস – স্ট্রেস বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কারণেও ব্রণ হতে পারে । মানসিক চাপে থাকার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার কারণেও ব্রণের সমস্যা হতে পারে । একই সাথে, মানসিক চাপ ব্রণকে আরও বেশী গুরুতর করে তুলতে পারে ।
- জীবনযাত্রার কারণে – অতিরিক্ত ধূমপান, অ্যালকোহল পান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদির কারণে ব্রণ সৃষ্টি হতে পারে ।
ব্রণের উপসর্গ – ব্রণের লক্ষণ
নিম্নলিখিত বিষয়গুলির মাধ্যমে, আমরা ব্রণের লক্ষণগুলি সম্পর্কে জানতে পারি –
- ত্বকে দাগ ।
- ত্বকে পুঁজ জমা ।
- সাদা বা হলুদ পুঁজ সহ ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
- ত্বকে লাল ভাব
- হোয়াইট হেডস (সাদা পুঁজ সহ ছোট ফুসকুড়ি)।
- ব্ল্যাকহেডস ( গাঢ় ফুসকুড়ি )।
আরও পড়ুনঃ লো প্রেশারের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার
ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার – পিম্পল দূর করার উপায়
ব্রণ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল –
চা গাছের তেল – টি ট্রি অয়েল সাধারণত পিম্পলের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় । এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে এই তেল ব্রণের সমস্যায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করে (তথ্যসূত্র) । NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে এটি উল্লেখ করা হয়েছে । এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, টি ট্রি অয়েল ব্রণের ওষুধে যেমন ক্রিম এবং জেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় । এই কারণে, এটি মনে করা হয় যে, ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে চা গাছের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে । আধা চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ২ থেকে ৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগান । কিছুক্ষণ এভাবে রাখার পর পেস্ট শুকিয়ে গেলে নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
অ্যালোভেরা – অ্যালোভেরা জেল হতে পারে ব্রণ বা পিম্পল দূর করার ঘরোয়া উপায় । এতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ব্রণের বৃদ্ধি রোধ করে এবং সেই সাথে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও, অ্যালোভেরাতে উপস্থিত অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য, ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম । অ্যালোভেরার বিষয়ে NCBI- এর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটিতে অ্যান্টি-একনে বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সরাসরি ব্রণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম (তথ্যসূত্র) । অ্যালোভেরার পাতা থেকে তাজা জেল বের করে নিয়ে সরাসরি পিম্পলের উপরে লাগান । এভাবে প্রায় ১৫-২০ মিনিট রেখে পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন ।
গ্রীন টি – কীভাবে ব্রণ দূর করবেন, তা নিয়ে আপনার মনে থাকা প্রশ্নের উত্তর হতে পারে গ্রিন টি । এতে উপস্থিত পলিফেনল, ব্রণের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে খুব ভাল কাজ করে । এই পলিফেনল, সিবামের নিঃসরণ কমিয়ে (ত্বকের গ্রন্থি দ্বারা নির্গত তৈলাক্ত পদার্থ) ব্রণ নিরাময় করতে সাহায্য করে । এছাড়াও, গ্রীন টি তে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অত্যন্ত কার্যকরী । এই কারণে, গ্রিন টি কে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসাবে মনে করা হয় ।প্রতিদিন নরমাল চা এর পরিবর্তে গ্রিন টি পান করুন । এছাড়াও গ্রিন টি বানানোর পর টি ব্যাগটি ঠান্ডা করে ব্রণের উপর লাগাতে পারেন ।
নারকেল তেল – নারকেল তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এতে ভিটামিন-ই থাকে । এই কারণে, নারকেল তেল ব্রণ অপসারণের প্রতিকার হিসাবে খুব ভাল কাজ করে এবং ব্রণ থেকে সৃষ্ট দাগ কমাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে (তথ্যসূত্র) ।এছাড়াও, নারকেল তেল ত্বককে ময়শ্চারাইজ করার পাশাপাশি ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করতে প্রথমে কয়েক ফোটা নারকেল তেলের সাথে অল্প একটু মধু যোগ করে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন । এরপর এই মধু ও নারকেল তেলের মিশ্রণটি মুখে লাগান । কিছুক্ষণ পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
মধু এবং দারুচিনি – মধু এবং দারুচিনির গুঁড়া ব্রণ দূর করতে খুব ভাল কাজ করে । দারুচিনি এবং মধু, ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে পিম্পলের চিকিৎসায় সাহায্য করে থাকে । মধু এবং দারুচিনি উভয়েরই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এছাড়াও, দারুচিনিতে উপস্থিত সিনামালডিহাইড রাসায়নিক যৌগটিতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণের চিকিৎসায় উপকারী ভুমিকা পালন করতে পারে । একই সাথে, NCBI-এর একটি গবেষণায় বলে হয়েছে যে, মধুর অ্যাসিডিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য ব্রণের ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলার সাথে সাথে এগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম । এছাড়াও, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য, ব্রণের কারণে মুখে যে লালভাব দেখা যায় তা কমাতে কাজ করে । ৩ চামচ মধু এবং ১ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এবার এই পেস্টটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে অর্থাৎ ব্রণের উপরে লাগান । প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই পেস্ট লাগালে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় । এভাবে সারারাত মুখে লাগিয়ে রাখার পর সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন । এটি ২ সপ্তাহের মত প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন (তথ্যসূত্র) ।
জোজোবা তেল – জোজোবা তেল বহুদিন থেকে ব্রণের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । গবেষণায় দেখা গেছে যে, জোজোবা তেল ব্রণের সমস্যা দূর করতে খুব ভাল কাজ করে । অন্য একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, জোজোবা অয়েল ফেসিয়াল মাস্ক ত্বকের ব্রণের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী । যারা প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার জোজোবা তেল মাস্ক ইউজ করেন তাদের মধ্যে ব্রণের সমস্যা কম দেখা যায় (তথ্যসূত্র) । আসলে, জোজোবা তেলের মধ্যে অনেক গুণ রয়েছে যেমন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল । এগুলোর কারণে, এটি ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । জোজোবা তেল ব্রণের উপসর্গ কমিয়ে ব্রণ দূর করতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন । তুলোর সাহায্যে আপনার মুখে কয়েক ফোঁটা জোজোবা তেল লাগান । এভাবে লাগিয়ে প্রায় ১৫ – ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন ।
রসুন – ব্রণের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে আপনারা রসুন ব্যবহার করতে পারেন । রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে । এটি ত্বককে ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ।এটিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা ব্রণের সমস্যা কমাতে উপকারী ভুমিকা পালন করে । অ্যান্টি-ব্রণ জেল রসুনের হাইড্রোক্লোরিক নির্যাস (তথ্যসূত্র) থেকে তৈরি করা হয় । ৩ বা ৪ কোয়া রসুন নিয়ে ভাল করে বেটে পেস্ট তৈরি করুন । এবার রসুনের পেস্টের সাথে সামান্য মধু ও কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে মুখে লাগান । মিশ্রণটি লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে ১৫ – ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
আরগান তেল – ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে আরগান তেল ব্যবহার করতে পারেন । প্রাচীন কাল থেকে, এই তেল ব্রণ এবং পিম্পল দূর করার প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে (তথ্যসূত্র) । গবেষণায় দেখা গেছে, আরগান তেল মুখের সিবাম হ্রাস করে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে । আর্গান অয়েল সরাসরি অথবা অন্য তেলের ( যেমন – নারকেল তেল বা বাদাম তেলের ) সাথে মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে মুখে ব্যাবহার করুন ।
ক্যাস্টর অয়েল – ক্যাস্টর অয়েল ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে খুব ভাল কাজ করে । এছাড়াও, ক্যাস্টর অয়েল ত্বক সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সাথে লড়াই করে, এটি ত্বককে সুন্দর এবং নরম করতে কাজ করে । এই তেলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা পিম্পলের সমস্যা প্রতিরোধ করতে কাজ করে (তথ্যসূত্র) । কয়েক ফোটা ক্যাস্টর অয়েল এবং অ্যালোভেরা জেল ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগান । মিশ্রণটি শুকিয়ে যাওয়ার পর ১০ – ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন ।
হলুদ – হলুদের ব্যবহার ব্রণ দূর করার একটি ভাল উপায় । এর অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, এটি পিম্পলের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । এছাড়াও, হলুদে কারকিউমিন রয়েছে, যা ব্যথা উপশম করে । হলুদ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে যা ব্রণ নিরাময় করতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । এক চিমটি হলুদের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এরপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট রেখে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন ।
শিলা লবণ – শিলা লবণও পিম্পল দূর করার একটি সহজ ঘরোয়া উপায় । এতে উপস্থিত থাকা ম্যাগনেসিয়াম হরমোনের ভারসাম্য বজায় রেখে ব্রণের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও, এটি ত্বকের মৃত কোষগুলিকে পরিষ্কার করে ত্বককে সুস্থ ও কোমল রাখতে খুব ভাল কাজ করে । পানি ভর্তি একটি পাত্রে রক সল্ট রাখুন এবং তারপর তুলা দিয়ে সেই পানি নিয়ে ব্রণ আক্রান্ত স্থান ভিজিয়ে রাখুন । এভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর, একটি তোয়ালে দিয়ে ত্বক মুছে ফেলুন ।
মাছের তেল – ব্রনের প্রতিকার হিসেবে আপনারা মাছের তেল খেতে পারেন । মাছের তেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যথাযুক্ত ব্রণ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে । NCBI-তে উপস্থিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত মাছের তেল খেলে ব্রণের সমস্যায় উন্নতি দেখা যায় (তথ্যসূত্র) ।
লেবু – অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিকারের মতো, লেবুও ব্রণের সমস্যায় খুব ভাল কাজ করে । লেবুতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকলাপ প্রদর্শন করে । এই কারণেই লেবু ব্যবহার করলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে না, যা ব্রণ থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে । এছাড়াও, লেবুতে থাকা সাইট্রাস অ্যাসিড প্রোপিওনি ব্যাকটেরিয়া মাকনেসকে বাড়তে দেয় না । এ কারণে লেবুকে ব্রণের ঘরোয়া উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় । প্রথমে লেবু থেকে রস বের করে একটি পাত্রে নিন । এরপর কয়েক ফোঁটা পানি লেবুর সাথে যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন । এবার তুলোর সাহায্যে ব্রণের ওপর লেবু পানির মিশ্রণ লাগান । এভাবে ৩০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
নিম – ব্রণ দূর করতে নিমের ব্যবহার বহু বছর থেকে চলে আসছে । নিমের পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পিম্পলের সমস্যায় উপকারী (তথ্যসূত্র) । NCBI ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, নিমের ইথানল নির্যাস থেকে অ্যান্টি-ব্রণ প্যাক তৈরি করা হয় । এই প্যাকটি তৈরি করার সময় নিমের পাতার সাথে তুলসি, গ্রিন টি এবং অন্যান্য অনেক উপাদান ব্যবহার করা হয় । এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, উপরের উপাদানগুলির সাহায্যে তৈরি অ্যান্টি-ব্রণ প্যাক, প্রোপিওনিব্যাক্টেরিয়ামের পাশাপাশি স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডার্মিসের (যে ব্যাকটেরিয়া ব্রণ এবং ব্রণ সৃষ্টি করে) বিরুদ্ধে খুব ভাল কাজ করে (তথ্যসূত্র) । এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, নিম পাতাকে অনেকে ব্রণ নিরাময়ের ওষুধ হিসাবেও মনে করেন । কয়েকটি নিমের পাতা ভাল করে পিষে ব্রণের উপর লাগান । এছাড়া পানিতে নিম পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন । নিমের পাতার সাথে তুলসী এবং গ্রিন টি একসাথে পিষে মুখে লাগালে ব্রণের ক্ষেত্রে খুব ভাল উপকার পাওয়া যায় ।
মুলতানি মাটি – মুলতানি মাটি হল ব্রণ দূর করার অন্যতম ঘরোয়া উপায়গুলোর একটি । প্রকৃতপক্ষে, ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে সিবাম (তৈলাক্ত পদার্থ) উৎপাদনের কারণে ব্রণ তৈরি হয় । মুলতানি মাটি ত্বকে তৈরি হওয়া এই প্রাকৃতিক তেল শুষে নিয়ে মুখের ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে থাকে । এই কারণে, এটি মনে করা হয় যে, মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ অনেকটা কমে যায় । মুলতানি মাটি মুখের দাগ কমাতেও খুব ভাল কাজ করে, কারণ এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সক্ষম (তথ্যসূত্র) । মুলতানি মাটিতে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে এবং সেগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে । এই কারণে, মুলতানি মাটি অ্যান্টি-একনি জেল তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় । ২ বা ৩ চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক চামচ মধু এবং গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন । এরপর সেটিকে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
আপেল সিডার ভিনেগার – বাড়িতে পিম্পলের চিকিৎসার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে । ত্বকের pH স্তরের ভারসাম্যহীনতার কারণেও ব্রণের সমস্যা হতে পারে (তথ্যসূত্র) । এই কারণে, আপেল সিডার ভিনেগার ব্রণ দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয় । আসলে, আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে খুব ভাল কাজ করে । সেই সাথে আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ব্রণ কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) । আধা চা চামচ পানিতে এক চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন । তারপর এই মিশ্রণটি আপনার মুখে লাগান । এভাবে ১০ – ১৫ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।
ত্রিফলা – ব্রণ দূর করার আরও একটি কার্যকরী উপাদান হলো ত্রিফলা । এটি ব্রণ দূর করার পাশাপাশি শরীরের আরো নানা সমস্যার জন্য উপকারি । সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো ত্রিফলা বাজারে শুষ্ক ফলের মত পাওয়া যায় । অনেক কোম্পানি এটিকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করে । ত্রিফলা হল ৩ টি অর্থাৎ আমলকি, হরিতকি, বিভিতকি ফলের মিশ্রন । ত্রিফলার গুড়া রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে এই রস পান করুন । ত্রিফলার পানি পান করার পর কমপক্ষে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপর নাস্তা করুন । এভাবে যদি আপনি একটানা ৩ মাস খান তাহলে দেখবেন আপনার ব্রণের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে ।
আরও পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাক কি এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
ব্রণ প্রতিরোধে কী খাবেন আর কী খাবেন না- ডায়েট ফর পিম্পল
আমরা আর্টিকেলের উপরে অংশে বলেছি যে ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণেও ব্রণের সমস্যা হতে পারে । এ কারণে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি ব্রণ প্রতিরোধ করতে খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর দেওয়া জরুরী । এই কারণে, আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ব্রণ প্রতিরোধে কী খাবেন এবং কী খাবেন না সে সম্পর্কে বলছি ।
ব্রনের সমস্যায় কি খাওয়া উচিত –
ব্রণ থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিনের ডায়েটে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন –
- ফল
- সবজি
- আস্ত শস্যদানা
- কম পরিশ্রুত জিনিস
ব্রণের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে কি খাবেন না –
- উচ্চ চিনিযুক্ত পানীয়
- চকোলেট
- দুধ
- পরিশ্রুত জিনিস
- প্রক্রিয়াজাত পণ্য
ব্রণের চিকিৎসা – পিম্পলের চিকিৎসা
ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করার পরেও যদি আপনার ব্রণের সমস্যা দূর না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।নিচে আমরা বলছি পিম্পলের চিকিৎসা কি ধরনের হতে পারে –
- সাময়িক চিকিত্সা – ব্রণের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকরা মুখে প্রয়োগ করার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন । যদি এই ওষুধে কাজ না করে, তবে পরবর্তীতে চিকিৎসক পিম্পলের সমস্যা কমানোর জন্য অন্যান্য অপশন সাজেস্ট করতে পারেন ।
- লেজার ট্রিটমেন্ট – ব্রণের চিকিৎসার এই আধুনিক পদ্ধতিতে ব্রণের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার জন্য লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয় । এই পদ্ধতি ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে ভবিষ্যতে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতেও সাহায্য করে ।
- হোমিওপ্যাথি – ব্রণের জন্য আপারা হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট গ্রহন করতে পারেন (তথ্যসূত্র) ।
- লাইট থেরাপি – এই থেরাপি ব্রণ এবং পিম্পলের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় । আসলে, Propionibacterium acnes নামে একটি ব্যাকটেরিয়া ব্রণ তৈরির জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় । এই ব্যাকটেরিয়াগুলি নীল এবং লাল আলোর সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে মরে যায় । এর ফলে ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলি সঙ্কুচিত হয়, যা অপেক্ষাকৃত কম সিবাম উৎপাদনে করে ।তাই এটি ব্রণের জন্য একটি ভাল চিকিৎসা হিসেবে মনে করা হয় (তথ্যসূত্র) ।
আরও পড়ুনঃ চুল থেকে খুশকি দূর করার উপায়
গর্ভাবস্থায় ব্রণ কেন হয় ?
গর্ভাবস্থায় ব্রণের সমস্যা, মায়েদের এন্ড্রোজেন হরমোন এবং সিবাম উৎপাদনের কারণে হয় । বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্রণের সমস্যা ঠিক হয়ে যায়, তবে কখনও কখনও এটি তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আরও বেশী খারাপ হতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
কীভাবে পিম্পল প্রতিরোধ করবেন – ব্রণ প্রতিরোধের টিপস
আপনি কি জানেন যে, আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে ব্রণের সমস্যা এড়ানো সম্ভব ? নিচে ব্রণ প্রতিরোধ করার কিছু টিপস দেয়া হল –
- প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বার আপনার মুখ সাবান বা ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন । এতে মুখে জমে থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং মুখে তেল থাকবে না ।
- ত্বককে এক্সফোলিয়েট করলে মুখ গভীরভাবে পরিষ্কার হয় এবং এর ফলে ত্বকের ছিদ্রগুলিও ভালভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় ।
- আপনার মেকআপ ব্রাশগুলি ইউজ করার পরে ভালভাবে ধুয়ে রাখুন । এর ফলে আপনার মেকাপ ব্রাশে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারবে না ।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন । এর ফলে শরীর থেকে ময়লা দূর হবে ।
- আমরা আগেই বলেছি যে, অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ব্রণের সমস্যা হতে পারে । এ কারণে মানসিক চাপ ও টেনশন থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন ।
- বারবার মুখ স্পর্শ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন । হাতে উপস্থিত থাকা ব্যাকটেরিয়া মুখের ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে ।
- সাবধানে মেকআপ নির্বাচন করুন । কিছু মেকআপ মুখের ছিদ্রগুলিকে বন্ধ করে দেয় । এই কারণে নন-কমেডোজেনিক এবং নন-অ্যাকনেজেনিক মেকআপ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন । এই ধরনের মেকাপ মুখের ছিদ্রগুলিকে ব্লক করে না ফলে পিম্পল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস অবলম্বন করুন । আমরা আপনাদের আগেই বলেছি যে খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে ব্রণ হতে পারে। অতএব, প্রতিদিন খাবারের সময় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন ।
- ব্রণে উপরে বেশী হাত লাগাবেন না ।
- তেল ছাড়া অর্থাৎ ওয়াটার বেসড মেকআপ ইউজ করুন ।
- মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন ।
- সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিজের জন্য আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করুন ।
- রাতে সময়মত ঘুমানোর চেষ্টা করুন ।
- ঝাল-মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন ।
ব্রণ হলে কী করবেন না
- রোদে কম বের হন অর্থাৎ রৌদ্র এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন ।
- তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ইউজ করা থেকে বিরত থাকুন ।
- ব্রণে কখনোই বারে বারে হাত লাগাবেন না । ব্রণ বার বার করে খুঁটবেন না ।
- চুলে এমনভাবে তেল দেবেন যাতে সেই তেল মুখে না লাগে ।
- বেশি পরিমাণে নিরামিষ খাবার গ্রহন করুন । আমিষ খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন ।
- ডেইরি প্রোডাক্টসে হরমোনাল উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে থাকে বলে তা খুব সহজেই রক্তের সঙ্গে মিশে যায় । এ কারণেই পনির, দুধ এবং দই ইত্যাদি কম খান ।
- কোল ড্রিঙ্কস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে পাতলা চুল ঘন করবেন
ব্রণের কালো-দাগ দূর করার উপায়
অনেকেরই মুখে ব্রণ ও কালো ছোপ ছোপ দেখা যায় । এ জাতীয় ব্রণ ও কালো দাগ দেখতে পেলে প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করুন । কারণ ত্বকের সমস্যা অবহেলা করলে তার ফল মারাত্নক হতে পারে । আর এই সব কালো দাগ আপনার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিতে পারে । তাই এসব কালো দাগ ও ব্রণ দূর করার জন্য বাড়তি একটু পরিচর্যা অবলম্বন করা উচিত ।
- লবঙ্গ ভাল করে বেটে ব্রণের দাগ ও ব্রণের উপর ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন । ১ দিন পর পর টানা ১ মাস এভাবে লাগালে ব্রণের দাগ অনেকটা কমে যাবে । লবঙ্গে ঝাঁঝ থাকে বলে লাগানোর পর কিছুক্ষন ত্বকে জ্বালা অনুভব করতে পারেন, কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । কিছুক্ষণ পর জ্বালা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে । লবঙ্গ বাটার সময় এতে সামান্য একটু পানি মিশিয়ে নেবেন ।
- ২ চামচ বেসন, ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ চা চামচ কমলার খোসা বাটা ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন । এবার এটা মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে পরে মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
- আপেল এবং কমলার খোসা একসাথে বেটে নিন । এরপর এর সাথে ১ চামচ দুধ, ডিমের সাদা অংশ এবং কমলার রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে, মিশ্রনটা ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে পরে ধুয়ে ফেলুন ।
- ১ চামচ পাকা পেঁপের শাঁস ও ১ চামচ শশার রস মিশিয়ে নিয়ে মুখে মাখুন ।
- ১ টি ডিম, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং একটি গোটা লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ব্রণের দাগের উপর ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এতে ব্রণের দাগ, হাত, ঘাড়ের কালো ছোপ ইত্যাদি দ্রুত সেরে যাবে ।
- ২ চা চামচ চিনা বাদাম বাটার সাথে ২ চা চামচ দুধের সর মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন । ব্রণের দাগ দ্রুত মিলিয়ে যাবে ।
শেষ কথা
ঘন ঘন মুখে ব্রণ হওয়ার কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্যে অবশ্যই কিছুটা খারাপ প্রভাব পড়ে । ্তাই ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে উপরের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অবলম্বন করতে পারেন । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি ব্রণের দাগ কীভাবে দূর করা যায় সে সম্পর্কেও তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।