একজন মানুষ সারা জীবনে অনেক ধরনের রোগের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু রোগ খুবই সাধারণ, এবং সেগুলো দুই থেকে চার দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায় । আবার এমন কিছু রোগ আছে, যেগুলোর সম্পৃক্ততা জীবনের সাথে মৃত্যুর হাতছানি পর্যন্ত। তেমনই একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী রোগ হল হেপাটাইটিস বি। এই রোগের তীব্রতা দেখে, আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাদের সাথে হেপাটাইটিস বি কি এবং এর লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। তবে, একটি জিনিস মনে রাখবেন যে, আর্টিকেলে উল্লেখ করা হেপাটাইটিস বি-এর ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কিছুটা উপশম আনতে পারে, তবে এগুলোর সাহায্যে এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। তাই হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
Table of Contents
হেপাটাইটিস বি কি?
হেপাটাইটিস বি হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগ যে কোন বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে শিশুদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশী বলে মনে করা হয়। এই রোগে প্রধানত রোগীর লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সংক্রমণের ফলে লিভারে প্রদাহ শুরু হয়, যা সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতার কারণ হতে পারে।সেই সাথে, কিছু গুরুতর পরিস্থিতিতে, এটি মারাত্মক লিভারের ক্ষতি বা লিভার সিরোসিসের মত সমস্যা (যকৃতের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা) তৈরি করতে পারে। যদিও এই অবস্থা সাধারনত দেখা যায় না, তবে কিছু চরম ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণ রোগীর মৃত্যুও ঘটাতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
হেপাটাইটিস বি এর প্রকারভেদ – হেপাটাইটিস বি কত প্রকার
হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে ।
- Acute হেপাটাইটিস বি
- Chronic হেপাটাইটিস বি
Acute হেপাটাইটিস বি
এটি একটি খুব সাধারণ ধরনের হেপাটাইটিস বি। এতে রোগীর সমস্যা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। সেই সাথে, লিভার চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
Chronic হেপাটাইটিস বি
এই ধরনের হেপাটাইটিস বি বেশ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং অনেক সময় এটি লিভারের ক্ষতি বা লিভার সিরোসিসের মত সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম। এই ধরনের হেপাটাইটিস বি তে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের উপসর্গ দেখায় না এবং কিন্তু যখন উপসর্গ দেখা দেয় তখন অনেক বেশী দেরি হয়ে যায়। এই ধরনের হেপাটাইটিস বি সাধারনত শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আবার, কিছু প্রাপ্তবয়স্ক যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী দুর্বল, তারা সাধারনত এর শিকার হন।
হেপাটাইটিস বি এর কারণ ও ঝুঁকির কারণ
আমরা উপরে উল্লেখ করেছি যে, হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই হেপাটাইটিস বি-এর সংক্রমণের ফলে একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রভাবিত হতে পারে। এর কারণগুলি নিচে দেওয়া হল –
- সংক্রমিত সুই ইউজ করে।
- সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত বা লালার মতো শারীরিক তরলগুলির সংস্পর্শে আসলে এটি হতে পারে ।
- নাক অথবা কানে ছিদ্র করার সময়েও রক্তের সংস্পর্শে এসে ভাইরাসটি শরীরে ঢুকে যেতে পারে।
- মাদক নেয়ার সময় এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে অরক্ষিত যৌন মিলন করলে।
- সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত গ্রহন করলে।
- যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করেছেন।
- অনিরাপদ বা সংক্রমিত সূঁচ দিয়ে ট্যাটু করা।
- সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন টুথব্রাশ বা রেজার ইত্যাদি শেয়ার করলে।
- আক্রান্ত গর্ভবতী মা থেকে শিশুতে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণ – হেপাটাইটিস বি-এর উপসর্গ
প্রাথমিক অবস্থায় হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণ তেমন একটা দেখা যায় না। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখতে পাবেন –
- কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে দুর্বল অনুভব করা।
- মাঝে মাঝে অসুস্থ হওয়া
- ক্ষুধামান্দ্য বা ক্ষুধা না লাগা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি
- হালকা জ্বর
- জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যথা সমস্যা।
- বমি বমি ভাব ও বমির সমস্যা।
- ত্বকে ফ্যাকাশে ভাব।
- ঘন রঙের প্রস্রাব।
হেপাটাইটিস বি-এর লক্ষণ গুলো জানার পর চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই সমস্যার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে।
হেপাটাইটিস বি এর ঘরোয়া প্রতিকার
হেপাটাইটিস বি এর ঘরোয়া কিছু প্রতিকার নিচে দেওয়া হল –
রসুন
খাবারে নিয়মিত রসুন ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে সরাসরিও দুই বা তিন কোয়া রসুন প্রতিদিন খেতে পারেন । এভাবে দিনে অন্তত একবার রসুন খান। NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি বিশেষ উপাদান থাকে। এই বিশেষ উপাদানটির কারণে, রসুনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (যা মারাত্মক ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে), ইমিউনোমোডুলেটরি (অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি) এবং অ্যান্টিভাইরাল (ভাইরাস-ধ্বংসকারী) বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিপাকীয় ব্যাধিগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে । এই কারণে, এই উভয় প্রভাবই হেপাটাইটিস বি দ্বারা সৃষ্ট লিভারের সমস্যার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে । একই সময়ে, এতে উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রভাব কমাতে খুব ভাল কাজ করে। তবে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি সরাসরিভাবে কতটা কার্যকর, সে সম্পর্কে তেমন কোনো প্রমাণ নেই।
আদা
একটি সসপ্যানে এক কাপ পানি নিন, এরপর এতে আদার টুকরো দিন এবং একসাথে করে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। পানি ভালোভাবে ফুটানো হয়ে গেলে একটি কাপে ফিল্টার করে আলাদা করে নিন এবং ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। এরপর পানি হালকা গরম হয়ে এলে চুমুক দিয়ে সেটিকে পান করুন। এই প্রক্রিয়াটি প্রতিদিন এক থেকে দুইবার করে করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আদাতে রয়েছে হেপাটোপ্রোটেকটিভ (লিভারের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা) এবং অ্যান্টিভাইরাল (ভাইরাসের প্রভাব ধ্বংসকারী) প্রভাব । আমরা আগেই জেনেছি যে হেপাটাইটিস হল এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ, যার মধ্যে লিভারের প্রদাহ এবং ক্ষতির সমস্যা রয়েছে । এই কারণে এটি অনুমান করা যেতে পারে যে আদা, হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় ভাল কাজ করতে পারে।
গ্রীন টি
প্রথমে এক কাপ গরম পানি নিয়ে তাতে এক চা চামচ গ্রিন টি নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এভাবে 10 থেকে 15 মিনিট রেখে ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে মিশ্রণ টি পান করুন । এই প্রক্রিয়াটি দিনে এক থেকে দুইবার করতে পারেন। হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার জন্য গ্রিন টি খুব ভাল কাজ করে। আসলে, গ্রিন টি-তে Epigallocatechin Gallate নামে একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। এছাড়াও, গ্রিন টি-তে আরও অনেক ধরনের অনুরূপ উপাদান রয়েছে, যা যৌথভাবে হেপাটাইটিস বি এর সমস্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম । এই কারণে, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন টি খুব কার্যকরী বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুনঃ গ্রিন টি এর উপকারিতা
লাল জিনসিং
প্রথমে এক কাপ গরম পানি নিয়ে তাতে লাল জিনসিং টি ব্যাগ রাখুন। এরপর এভাবে 10 থেকে 15 মিনিট রেখে হালকা গরম অবস্থায় চুমুক দিয়ে পান করুন। এই প্রক্রিয়াটি প্রতিদিন এক থেকে দুইবার করে করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেড জিনসেং-এ অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব রয়েছে, যা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খুব ভাল কাজ করে । যার প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় (তথ্যসূত্র) । এমন পরিস্থিতিতে হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় রেড জিনসিংকে খুব ভাল একটি অপশন হিসেবে মনে করা যেতে পারে।
মূলার রস এবং পাতা
মূলার সবুজ পাতা এবং রস হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত উপকারী। শুধু এটিই নয়, মূলার রসে এমন উপাদান রয়েছে যে এটি রক্ত এবং লিভার থেকে অতিরিক্ত বিলিরুবিনকে দূর করতে সাহায্য করে। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্লাস মূলার রস পান করতে হবে। অথবা, এর পাতাগুলি ভালোভাবে পিষে বা ব্লেন্ড সেটির রস বের করে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে।
মধু
প্রতিদিন নিয়ম করে এক চামচ মধু খান। এটি আরও ভাল প্রভাবের জন্য দিনে ২ বার গ্রহণ করা যেতে পারে। মধুতে হেপাটোপ্রোটেকটিভ (লিভারের ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক) এবং অ্যান্টিভাইরাল (ভাইরাস-ধ্বংসকারী) উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই আর্টিকেলে আগেই বলা হয়েছে যে, এই উভয় বৈশিষ্ট্য একত্রিত হয়ে হেপাটাইটিস বি-এর সমস্যা নিরাময়ে খুব ভাল কাজ করে। এই কারণে, এটি বলা যায় যে, হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার জন্য মধু একটি ভাল অপশন ।
আখের রস
প্রতিদিন তাজা আখের রস (কুশুলের রস) পান করুন। হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় আপনি আখের রস ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আখের রসে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মতো উপাদান থাকার কারণে, আখের রস শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হেপাটোপ্রোটেকটিভ (লিভারের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা) প্রভাব প্রদর্শন করে । আমরা আগেই বলেছি যে, হেপাটাইটিস বি সমস্যায় প্রধানত লিভার আক্রান্ত হয় । এই কারণে, এটা বলা যায় যে, আখের রস লিভার সংক্রান্ত ঝুঁকি দূর করে হেপাটাইটিস বি-এর মারাত্মক পরিণতি থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
হলুদ
এক গ্লাস উষ্ণ দুধ নিয়ে তাতে এক চা চামচ হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার ধীরে ধীরে এই হলুদ দুধের মিশ্রণটি পান করুন।
আরও ভাল উপকার পাওয়ার জন্য, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন। ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির এক গবেষণা অনুসারে, হলুদের অন্যান্য ঔষধি গুণাবলীর পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব রয়েছে, যা সরাসরি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রভাব কমাতে খুব ভাল কাজ করে । তাই বলা যেতে পারে যে, হেপাটাইটিস বি এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলুদ খুবই কার্যকরী ।
হরিতকী
প্রতিদিন রাতে হরিতকী পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেই পানি পান করুন । হেপাটাইটিস বি এর সমস্যা প্রতিরোধ করতে আপনারা হরিতকি ব্যবহার করতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, হরিতকিতে অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে।এই প্রভাব হেপাটাইটিস বি কমাতে খুব ভাল কাজ করে (তথ্যসূত্র)।
লেবু বা আনারসের রস
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেট পরিষ্কার হয়। প্রতিদিন সকালে এটি পান করা জন্ডিস বা হেপাটাইটিস বি এর জন্য উপযুক্ত। এছারাও আনারসের রসও হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে উপকারী। আনারস ভেতর থেকে পাকস্থলীকে পরিষ্কার করে।
নিম পাতা
নিমের পাতার মধ্যে অনেকগুলি অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান রয়েছে, যার কারণে এটি হেপাটাইটিস প্রতিরোধে খুব ভাল কার্যকর। এটি লিভারে উৎপাদিত টক্সিনগুলি ধ্বংস করতে খুব ভাল কাজ করে। প্রতিদিন ভোরবেলায় নিমপাতার রসে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন।
অর্জুন গাছের ছাল
অর্জুন গাছের ছাল হার্ট এবং মূত্রপ্রণালী ভালো রাখতে খুব ভাল কাজ করতে পারে। এটি কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং এটির গুন এতোই বেশী যে, হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসার জন্য একটি ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
যখন হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার বিষয়টি আসে, সাধারণভাবে, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি উভয়েরই কোনো ধরনের নির্ধারিত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যেটা মেইন প্রয়োজন তা হলো, শুধু বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমানে পানি পান। এছাড়াও, এই সময়ে ডাক্তাররা বেশি করে পানি পান করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে, রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের কার্যকলাপের মাত্রা এবং অন্যান্য অঙ্গে এর কি ধরনের প্রভাব রয়েছে তা অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আবার এই পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায় যে, ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি তে ভুগছেন কি না এবং ভাইরাসটি শরীরে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে । তবে ডাক্তাররা এটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক সময় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন (তথ্যসূত্র) ।
এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা রোগীকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন:
- যখন সংক্রমণ লিভারে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পরে।
- দীর্ঘদিন লিভার সংক্রান্ত কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে।
- যখন রক্তে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মাত্রা অত্যধিক বেশী হয়ে যায়।
- যদি মহিলাটি গর্ভবতী হয়।
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয় জানার পর এখন আমরা এর প্রতিরোধ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বলব।
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ – হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের টিপস
হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য, নিচের বিষয়গুলি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ –
- বাচ্চাদের জন্মের ঠিক পরপরই তিনটি ধাপে এবং তারপর 6 তম মাস থেকে 18 তম মাসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা দিন।
- 19 বছরের কম বয়সী শিশুরা যাদের এখনও হেপাটাইটিস বি হয়নি তারাও হেপাটাইটিস বি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য টিকা নিতে পারে।
- যদি কোন গর্ভবতী মহিলার হেপাটাইটিস বি-এর প্রবলেম থাকে, তবে শিশুর জন্মের 12 ঘন্টার মধ্যে এটি সম্পর্কিত বিশেষ ধরনের টিকা নিতে হবে।
- ইমিউন গ্লোবুলিন ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের 24 ঘন্টার মধ্যে দেওয়া হলে সংক্রমণের অগ্রগতি রোধ করা যায়।
- আপনি যদি নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এটি বন্ধ করুন।
- যৌন মিলনের সময় কনডম ইউজ করুন।
- সালাদ, ফলমূল বেশি বেশি খাবেন সেই সাথে তেল-চর্বি যুক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- মাটন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাঁচা লবণ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটবেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
- দিনে দুই বেলা রটি এবং একবেলা ভাত খাবেন ।
- HBsAG পরীক্ষা করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব হেপাটাইটিস-বি এর প্রতিষেধক নিন। এতে অনেক দ্রুত রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শেষ কথা
হেপাটাইটিস বি কী এবং সময়মত সতর্কতা অবলম্বন না করলে এটি কতটা মারাত্মক হয়ে ইঠতে পারে সে সম্পর্কে এখন আপনি নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে, এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কি ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে সে সম্পর্কেও জেনে গেছেন। তবে হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন হলে সময়মতো রোগটি ঘটতে বা অগ্রসর হওয়া থেকে রোধ করা যায়। এর পরেও, যদি কেউ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন, তবে নিবন্ধে উল্লিখিত প্রতিরোধমূলক ঘরোয়া প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি আপনাদের অনেক সাহায্য করবে। সেই সাথে আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো সমস্যার সম্পূর্ণ চিকিৎসা শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শতেই সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ ডাক্তার বা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করুন।