আপনি কি টনসিলের ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান?
টনসিল শব্দটির সাথে আমরা সকলেই কম বেশী পরিচিত । সাধারনত শীতের সময় এই টন্সিলের সমস্যা বেশী দেখা যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে একটু ঠান্ডা-গরম হলেই গলা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। গলা ব্যথার সাথে অনেক সময় শুকনো কাশি থাকে, ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। এছাড়াও অনেকের গলার ভেতরে জ্বালা করে। টনসিলের সংক্রমণ হলে কথা বলতেও সমস্যা হয়। এই সমস্যা যে কোনও বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে ।
টনসিল সমস্যার সমাধানের জন্য বাজারে বিভিন্ন রকম ওষুধ এবং সিরাপ পাওয়া যায়। তবে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতেও টনসিলের ব্যথা দূর করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা টনসিলের ব্যাথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলব।
Table of Contents
টনসিল কি
টনসিল হল আমাদের শরীরের এক প্রকার গ্রন্থি বা টিস্যু বিশেষ, যা আমাদের মুখের ভিতরে জিহবার শেষ অংশে, গলার দেয়ালের দুপাশে অবস্থিত গোলাকার পিণ্ডের মত জিনিস। টনসিলকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমটি হলো প্যালেটাইন, এটি গলার দুই পাশে অবস্থিত। ২য় টি হল ফ্যারিঞ্জিয়াল, যা গলার পেছনের অংশের দুই পাশে অবস্থিত। আর ৩য় টি হলো লিঙ্গুয়াল, যা জিহবার একদম শেষ অংশে অথবা গলার শুরুর অংশে অবস্থিত।
টনসিলের প্রধান কাজ হল শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা।
টনসিলাইটিস কি
আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন, খাবারের সাথে অথবা নিঃশ্বাসের সাথে বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া এবং অনেক ধরনের ক্ষতিকারক জীবাণু শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে টনসিল এক ধরনের ফিল্টারের মত কাজ করে। অর্থাৎ বাইরের কোন ক্ষতিকারক ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া বা যে কোন পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে।
তবে কিছু কিছু সময় টনসিল নিজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। আর এই অবস্থাকেই টনসিলাইটিস বলা হয়।
আবার অনেক সময় অতিরিক্ত ক্ষতিকারক পদার্থ একসাথে জমা হওয়ার কারণে একটি শক্ত পাথরের মতন তৈরি হয়, যাকে টনসিল স্টোন বলা হয় । টনসিলাইটিস বা টনসিল স্টোন এর কারণে আপনার টনসিল ফুলে যেতে পারে, যার ফলে আপনার গলায় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অথবা নিয়মিত টনসিলাইটিস প্রব্লেম হয়ে থাকে।
টনসিলাইটিস কেন হয়
অনেক কারণে টনসিলাইটিস হতে পারে। সাধারনত আমাদের টনসিল কোন কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে টনসিলাইটিসের সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়াও শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হলে, প্রচুর পরিমাণে গরম এবং মশলাদার খাবার গ্রহন করলে, বেশি বেশী ঠাণ্ডা খাবার বা পানীয় খেলে অথবা ঠাণ্ডা লাগলে। এছাড়া সর্দি, কাশী অথবা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেও টনসিলাইটিস হয়ে থাকে।
টনসিলাইটিসের লক্ষণগুলি কি কি?
সাধারণ কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার টনসিলাইটিসের সমস্যা হতে পারে। টনসিলাইটিসের কিছু লক্ষন নিচে দেওয়া হল-
- টনসিল ফুলে যাওয়া
- টনসিলের উপর সাদা বা হলুদ দাগ
- গলা ব্যথা
- খাবার বা পানি গিলতে অসুবিধা
- গলার স্বর পরিবর্তন
- মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া
- ঠাণ্ডা
- জ্বর
- গলার চারপাশে লাল ফোলাভাব।
- ক্ষুধা কম
আরও পড়ুনঃ কানের ব্যথার কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার
টনসিলের ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
টনসিলের সমস্যা বা ব্যাথা সাধারণ ওষুধ দিয়েও সেরে যায়। আমার সংক্রমণ অতিরিক্ত হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ওষুধ বা অস্ত্রোপচার করার আগে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার টনসিলের প্রব্লেম বা ব্যাথা কিছুটা হলেও নিরাময় করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেই টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা বা সারিয়ে তোলার ঘরোয়া উপায়।
মেথি বীজ দিয়ে গার্গল করুন
এক গ্লাস পানিতে দুই চামচ মেথি বীজ নিয়ে ভালোভাবে সেদ্ধ করুন এবং যখন পানির রং হালকা বাদামী হয়ে যাবে, তখন সেই পানি দিয়ে গার্গল করুন। এটি দিনে দুই থেকে তিনবার করুন।
আমরা জানি, টনসিলাইটিস ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারাও হয়। মেথির বীজে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টনসিলাইটিস থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টনসিলের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে। সেই সাথে পেঁয়াজে টনসিলের ফোলাভাব কমাতেও সাহায্য করে।
অর্ধেক গ্লাস পানিতে একটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ পেস্ট করে মিশিয়ে নিন। এরপর পানিটি ছেঁকে নিন। পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার অল্প অল্প করে এই পানি পান করুন। দুই থেকে তিন দিন এভাবে করলে আপনার গলা ব্যাথা এবং ফোলাভাব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।
লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন
লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে টনসিলের ব্যাথা বা টনসিলাইটিস অনেকটাই কমে যায়। লবণ পানির গার্গল ভীষণভাবে কার্যকরী কারণ লবণ এবং গরম পানি উভয়েরই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন রয়েছে যা ব্যাক্টেরিয়ার বা জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে ১ চা চামচ লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রন দিয়ে প্রতিবার ৪/৫ সেকেন্ড করে কয়েকবার গার্গল করুন। দিনে কমপক্ষে ৩ থেক ৪ বার এই নিয়ম অনুসরণ করুন।
এটি আপনার টনসিলের ব্যাথা, টনসিল ফুলে যাওয়া এবং আপনার গলার ইনফেকশন কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করবে।
এছাড়া আপনার যদি টনসিল স্টোন বা টনসিলের উপরের অংশে শক্ত পাথরের মত হয়ে থাকে তাহলে এই মিশ্রণ সেটিকে গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টনসিলাইটিস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সহায়তা করে। এটিতে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা প্রদাহ হ্রাস করে।
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণটি পান করুন অথবা এর মাধ্যমে গার্গল করুন। আপনি এটি দিনে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
পুদিনার চা
কখনও কখনও টনসিলের প্রদাহের কারণ হতে পারে মুখে সংক্রমণ। এমন অবস্থায় পুদিনার চা আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। প্রকৃতপক্ষে, পুদিনা চায়ের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
এক কাপ পানিতে এক মুঠো পুদিনা পাতা পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিন এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে চা পান করুন। এই চা দিনে তিন থেকে চারবার পান করুন।
খনিজ লবণ বা রক লবন
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ রক লবণ মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার গার্গল করুন। এটি টনসিলাইটিসের সমস্যা কমাবে এবং সেই সাথে ফোলা ও ব্যথাও কমাবে।
শিলা লবনে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি টনসিলাইটিস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ধ্বংস করে এবং আপনাকে বেদনাদায়ক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
মধু
টনসিলাইটিস সমস্যা সমাধানে মধু হতে পারে একটি অন্যতম কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। মধুতে রয়েছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুন যা যে কোন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
এছাড়াও এটি আপনার টনসিলের ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে ইন্সট্যান্ট কাজ করে।
এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিনে ২ – ৩ বার সেবন করুন। অথবা গরম লাল চা এর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল উপাদান যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে যেকোন ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করতে সক্ষম। তাই টনসিলাইটিস থেকে মুক্তি পেতে মধুও হতে পারে একটি উত্তম প্রাকৃতিক ঔষধ।
গ্রিন-টি আর মধু মিশ্রন
এক কাপ পরিমাণ গরম পানিতে গ্রিন-টি এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে ১০-১২ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে গরম অবস্থায় ওই চা পান করুন। গ্রিন-টি তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সব ধরনের ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ এই মধু মিশ্রিত গ্রিন টি খেতে পারলে অনেক উপকার পাবেন।
দুধ এবং হলুদের মিশ্রণ
এক গ্লাস দুধে আধা চা চামচ হলুদ মিশিয়ে দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি কিছুক্ষন রেখে কিছুটা ঠাণ্ডা করুন। উষ্ণ গরম অবস্থায় মিশ্রণটি পান করুন। এই মিশ্রণ দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন।
টনসিলাইটিস সহ অনেক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুধ একটি ভাল প্রতিকার। এর সাথে হলুদের সংমিশ্রণ এই ঘরোয়া প্রতিকারটিকে আরও কার্যকর করে তোলে। হলুদ অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী, অ্যান্টি ব্যায়টিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি উপাদান যা গলা ব্যথা দূর করতে এবং টনসিলের সংক্রমণ কমাতে খুব ভাল কাজ করে।
রসুন
টনসিলাইটিস বা টনসিলের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে রসুন অতন্ত্য কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। কারন রসুনের মধ্যে রয়েছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টি-ভাইরাল উপাদান যা ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাসের বংশবিস্তার রোধ করতে সহায়তা করে।
দিনে কমপক্ষে ২ বার, এক বা দুই কোয়া / টুকরো কাচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন । এতে আপনি টনসিলের ব্যাথা থেকে দ্রুত আরাম পাবেন।
তবে রসুনের ঝাঁঝালো গন্ধের কারনে যদি আপনার এটি কাচা চিবিয়ে খেতে সমস্যা হয় তাহলে মধু অথবা সরিষা বা জলপাইয়ের তেল মাখিয়ে নিয়ে কিছুক্ষন মুখে রেখে চিবাতে পারেন। এতে টনসিলের ব্যথায় অনেক উপকার পাবেন।
দারুচিনি
এক চামচ দারুচিনি গুঁড়ো এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে টনসিলের প্রদাহ ও ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ধীরে ধীরে টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ কমতে শুরু করে। এই মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে দারুচিনি টনসিলের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিকে দমন করতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতা
তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণ। যা টনসিলের চিকিৎসার জন্য অতন্ত্য কার্যকর। এটি গলার ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমিয়ে টনসিল ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে।
দেড় কাপ পানিতে ১০-১৫ টি তুলসী পাতা দিয়ে ভালমত সেদ্ধ করুন। এবার তুলসী পাতার পানিটি ছেঁকে নিয়ে তার মধ্যে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে পান করুন। তুলসী ও লেবু মিশ্রিত পানি দিনে তিনবার করে দুই সপ্তাহ খেলে টনসিল পুরোপুরি ভাবে ভাল হতে পারে।
আদা
টনসিলের সমস্যা দূর করতে আদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টি- ইনফ্লামেটরি উপাদান যা টনসিলাইটিস বা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন কমাতে, টনসিলের প্রদাহ, ব্যথা বা ফোলাভাব কমাতে এবং তাৎক্ষণিক আরাম দিতে সাহায্য করে।
কিছুটা আদা ভালোভাবে কুচি করে কেটে অথবা বেটে রস করে গরম চায়ের সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করুন।
এছাড়া এক টুকরো খোসা ছাড়ানো আদা লবন মাখিয়ে মুখে রাখতে পারেন। এটি টনসিল ইনফেকশন কমাতে অতন্ত্য কার্যকরী।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে, বিকেল এবং সন্ধ্যায় গার্গল করলে টনসিলের ব্যাথায় আরাম পাওয়া যায়।
সরিষা গুঁড়া
এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ সরিষার গুঁড়া মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ভালোভাবে ফুটে ওঠার পর এটি দিয়ে গার্গল করুন। গলা সংক্রমণ, গলা ব্যথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই মিশ্রন খুব ভাল কাজ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ হওয়ায় সরিষার গুঁড়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
লেবু
লেবু হল টনসিল ইনফেকশন কমানোর একটি অন্যতম সহজ এবং কারজকরী উপায়! এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানির সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রন টি গরম গরম পান করুন অথবা মিশ্রন টি দিয়ে গার্গেল করুন।
এছাড়া লাল চায়ের সাথে লেবু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিন বার পান করুন।
লেবুতে সাইট্রিক এসিড রয়েছে, যা আপনার টনসিল ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে টনসিলকে রক্ষা করে । তাই টনসিলের ব্যাথা এবং সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত লেবুর গরম পানি সেবন করুন।
দই
আপনার টনসিল ইনফেকশন দূর করতে টক দই বা হালকা মিষ্টি দই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে। কারণ দই এ রয়েছে প্রোবায়োটিক উপাদান ।
প্রোবায়োটিক হল এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরে কোন রকমের ক্ষতি সাধন করে না, বরং তারা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে । বিজ্ঞানের ভাষায় এই ব্যাকটেরিয়া গুলোকে প্রোবায়োটিক বলা হয়।
তাই আপনার টনসিলের ইনফেকশন কমানোর জন্য টকদই অথবা হালকা মিষ্টি দই খেতে পারেন। এতে উপস্থিত থাকা প্রোবায়োটিক আপনার টনসিল ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া কে ধ্বংস করে আপনার টনসিলাইটিস ভাল করতে সাহায্য করবে।
আনারসের সরবত
এক গ্লাস পানিতে এক চতুর্থাংশ আনারস মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। এরপর এই দ্রবণটি দিনে দুবার পান করুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আনারসে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। টনসিলাইটিস, সংক্রমণের কারণে হতে পারে এবং সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এমন অবস্থায় আনারসের রস পান করলে অবশ্যই উপকার পাবেন।
তরল এবং গরম খাবার খান
টনসিলের ইনফেকশন বা টনসিলাইটিসের কারণে সাধারণত গলায় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং অনেক সময় টনসিল ফুলে যায়। এক্ষেত্রে আপনার কোনভাবেই শক্ত কোন খাবার খাওয়া উচিত হবে না। কারণ শক্ত খাবার খেলে আপনার টনসিল ইনফেকশন আরো বেড়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে আপনি তরল এবং গরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
তরল খাবার হিসেবে আপনারা গরম গরম সবজি বা মাংসের স্যুপ খেতে পারেন।
এছাড়াও ঠান্ডা পানি পান করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকতে হবে, সম্ভব হলে প্রত্যেকবার গরম পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে।
টনসিলের ইনফেকশন সাধারণতঃ ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া উষ্ণ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না।
তাই টনসিল ইনফেকশন হলে কিছুক্ষন পরপর গরম খাবার খাওয়া বা পান করার চেষ্টা করুন।এর ফলে আপনি টনসিল ইনফেকশন থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে আপনার হলুদ দাঁত সাদা করবেন
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা টনসিলের ব্যাথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানলাম। তবে অনেক সময় টনসিলের ইনফেকশন বা টনসিলাইটিস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে টনসিল স্টোন বা টনসিল পাথর বড় আকার ধারণ করে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
প্রাথমিক অবস্থায় এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিলের চিকিৎসা করলে আশা করি অনেক উপকৃত হবেন।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।
ধন্যবাদ