হালকা পেটে ব্যথা বা পেটে জ্বালাপোড়া হওয়ার মতো সমস্যা, প্রায়ই আমাদের বিরক্ত করে । যদিও প্রাথমিক অবস্থায় এটি একটি ছোটখাটো সমস্যা বলে মনে হয়, কিন্তু অনেক সময় এই সমস্যাগুলো বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে, যেমন আলসার । কিছু সতর্কতা এবং ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করে আপনি আলসার প্রতিরোধ করতে পারেন । আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাদের সাথে আলসার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব । আজকের আর্টিকেলে আমরা, আলসার কি, আলসারের কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব । ঘরোয়া প্রতিকারগুলো আলসারের লক্ষনগুলো কমাতে সাহায্য করবে, তবে এগুলোকে চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না ।
Table of Contents
আলসার কি – আলসার কাকে বলে
আলসার হল এক প্রকার ক্ষত, যা পাকস্থলীর পৃষ্ঠে অথবা ছোট অন্ত্রের (ডুডেনাম) প্রথম অংশে হয় । খাবার হজমে সাহায্যকারী অ্যাসিড, যখন পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে তখন আলসার তৈরী হয় । আলসার হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল পেটে জ্বালাপোড়া হওয়া । পেটের আলসারকে ডুওডেনাল আলসার, গ্যাস্ট্রিক আলসার, পেপটিক আলসার বা শুধু আলসারও বলা হয় (তথ্যসূত্র) ।
আলসারের কারণ – আলসার কেন হয়
আলসারের চিকিৎসা করা তখনই সহজ হবে, যখন আলসার হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যাবে । আলসারের কারণগুলো নিচে দেওয়া হল –
- পাকস্থলীর অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণে আলসার হতে পারে ।
- হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমনের কারণে আলসার হতে পারে ।
- ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ যেমন – অ্যাসপিরিন এবং আইবুপ্রোফেন এর কারণেও আলসার হতে পারে ।
- পাকস্থলীর মধ্যে ক্যানসার এবং ননক্যান্সারাস টিউমারের গঠন, যাকে জোলিঙ্গার-এলিস সিনড্রোম বলা হয় ।
- স্ট্রেস এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার আলসার সৃষ্টি করে না, তবে এগুলো আলসারের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
- নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করার কারণে আলসার হতে পারে । বয়স্কদের মধ্যে পেপটিক আলসার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল অতিমাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ।
আলসারের লক্ষণ – আলসারের উপসর্গ – ডিওডেনাল আলসারের লক্ষণ
পেটে জ্বালাপোড়া সহ ব্যথা হল, আলসার এবং পেপটিক আলসারের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ । এছাড়াও, আলসারের ক্ষেত্রে নাভি এবং স্তনের হাড়ের মধ্যের যে কোনও অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে (তথ্যসূত্র) । আলসারের লক্ষনগুলো নিচে দেওয়া হল –
- পেটের মাঝামাঝি এবং ওপরের অংশে ব্যথা হবে । মনে হবে যেন পেটের ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে । এন্টাসিড খেলে এই ব্যথা থেকে সাময়িক ভাবে কমে যাবে ।
- খাওয়ার পর আলসারের ব্যথা কখন হবে তা নির্ভর করে কোন স্থানে আলসার হয়েছে তার ওপর । গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্ষেত্রে খাওয়ার সাথে সাথেই পেটে ব্যথা শুরু হয় । আর ডিওডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে পেটে ব্যাথা হতে শুরু করে ।
- কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার জন্য পেটে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া।
আলসারের আরও কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হল –
- পেটে গ্যাস হয়েছে এমন অনুভুতি হওয়া
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- বাথরুমের সময় রক্তপাত হতে পারে
- পেট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফাঁপা
- পিঠে ব্যথা হওয়া
- প্রচুর পরিমাণে ঢেকুর ওঠা
পেটের আলসারের ঘরোয়া প্রতিকার
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা পাকস্থলীর আলসারের ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বলব । তবে মনে রাখবেন যে, ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কোন অবস্থাতেই আলসারের চিকিৎসা নয় । আলসার প্রতিরোধ করার জন্য এবং আলসারের লক্ষণগুলো কমানোর জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্যবহার করতে পারেন । আলসারের ঘরোয়া প্রতিকারগুলো নিচে দেওয়া হল –
মধু – এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ মধু এবং এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো যোগ করুন । তারপর সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ধীরে ধীরে পান করুন । প্রতিদিন এক বা দুইবার এই মিশ্রণ পান করতে পারেন ।
মধুতে গ্লুকোজ অক্সিডেস নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে । এই এনজাইমটি হাইড্রোজেন পারক্সাইড তৈরি করতে সহায়তা করে, যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) ।
রসুন – ২ বা ৩ কোয়া রসুন নিয়ে ভাল করে বেটে পেস্ট তৈরি করুন অথবা কুচি কুচি করে কেটে নিন । এরপর এটি সালাদ এবং খাবারের সাথে যোগ করে খেয়ে ফেলুন । এছাড়াও আপনি চাইলে প্রতিদিন ১ বা ২ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন ।
রসুন পেস্ট করা হলে, তা থেকে অ্যালিসিন নামক এক ধরনের যৌগ নির্গত হয় (তথ্যসূত্র) । এই যৌগটির শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং পেপটিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় (তথ্যসূত্র) ।
আদা – একটি পাত্রে এক কাপ পানি এবং এক চা চামচ আদা কুচি নিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । এভাবে ৫ মিনিট ফুটানোর পর ঠান্ডা করে অল্প পরিমাণ মধু মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পান করুন । এছাড়াও আপনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার আদা চাও পান করতে পারেন ।
অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের কারণে সৃষ্ট আলসারের লক্ষণগুলি কমাতে আদা সাহায্য করে । তবে কিছু ক্ষেত্রে, আদা আলসারের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে । তাই, আলসারের সমস্যা কমানোর জন্য আদা খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত ।
হলুদ – ১ গ্লাস গরম পানির সাথে হাফ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । এরপর এতে সামান্য পরিমাণ খাঁটি মধু যোগ করে মিশ্রণটি পান করুন । আপনি এই মিশ্রণটি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পান করতে পারেন ।
হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক এক প্রকার যৌগ রয়েছে, যা প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ প্রদর্শন করে । এই বৈশিস্ট্যের কারণে হলুদ, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে আলসার সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে (তথ্যসূত্র) ।
কলা – প্রতিদিন ১ বা ২ টি পাকা কলা খান । এছাড়াও আপনি কাঁচা কলা রান্না করে সবজি হিসেবে খেতে পারেন ।
কলা পাকা হোক বা কাঁচা হোক, আপনার পেটে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব তৈরী করে । কাঁচা কলায় ফসফ্যাটিডিলকোলিন এবং পেকটিনের মতো যৌগ রয়েছে, যা অস্থায়ীভাবে আপনার পেটের আলসারের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । অতএব, এটা বলা যেতে পারে যে, প্রতিদিন কলা খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে (তথ্যসূত্র) ।
গ্রীন টি – ১ কাপ গরম পানির সাথে ১ চা চামচ গ্রিন টি যোগ করে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন । এরপর হালকা ঠান্ডা করে তাতে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে পান করুন । কার্যকর ফলাফলের জন্য প্রতিদিন ২ বার করে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে ।
NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সবুজ চায়ে এপিগালোক্যাচিন গ্যালেট (EGCG) নামক এক ধরনের পলিফেনল থাকে । এই এপিগালোক্যাচিন গ্যালেট (EGCG) যৌগটি অ্যান্টি-আলসার কার্যকলাপ প্রদর্শন করে । এই কারণে, এটি পেটের আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
অ্যালোভেরার রস – প্রতিদিন ১ কাপ করে তাজা অ্যালোভেরার রস (পাল্প) খান । আপনি অ্যালোভেরার পাল্প বের করে জুস বানিয়েও খেতে পারেন । এই রস বা জুস প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার খাওয়া যেতে পারে ।
অ্যালোভেরার অনেক ধরনের ঔষধি গুণ রয়েছে । এর পাশাপাশি এতে অ্যালোভেরার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা আলসারের উপসর্গ যেমন টিস্যু ফোলা এবং ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে (তথ্যসুত্র) । এছাড়াও, এটিতে গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ কার্যকলাপ রয়েছে, যা পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে (তথ্যসূত্র) ।
বাঁধাকপি – একটি বাঁধাকপির কিছুটা অংশ কেটে নিয়ে জুসারে দিয়ে জুস তৈরি করুন । তারপর প্রায় ১ কাপ করে বাধাকপির রস প্রতিদিন পান করুন ।
বাঁধাকপিতে গ্লুটামিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে । এই যৌগটি, ক্ষতিগ্রস্থ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের আস্তরণকে মেরামত করতে সহায়তা করে । এছাড়াও, বাঁধাকপির অ্যান্টি-পেপটিক আলসার (ভিটামিন-ইউ) বৈশিস্ট্য রয়েছে, যা আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে (তথ্যসূত্র) ।
গোলমরিচ – এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে, আধা চা চামচ গোল মরিচের গুড়া নিন । এবার এতে সামান্য পরিমাণে মধু যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে পান করুন ।
গোলমরিচের মধ্যে ক্যাপসাইসিন থাকে, যা আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে । NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যাপসাইসিন যৌগ পেটের অ্যাসিড নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি, পাকস্থলীর শ্লেষ্মা দূর করতে সাহায্য করে । এই উভয়ই পাকস্থলীর আলসার কমাতে সাহায্য করে । তবে গোল মরিচ খেলে কিছু মানুষের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে । তাই গোলমরিচ খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
ভিটামিন-ই – প্রতিদিন আপনি ১১ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই খেতে পারেন । আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করতে পারেন । এটি প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে।
NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন-ই পেপটিক আলসারে সাইটোপ্রোটেক্টিভ (ক্ষতিকারক এজেন্ট থেকে কোষকে রক্ষা করে) এবং অ্যান্টি-আলসার প্রভাব প্রদর্শন করে, যা আলসারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে ।
করলার রস – প্রথমে ১ টি করলা ভাল করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন । এবার ব্লেন্ডারের সাহায্যে ভাল করে ব্লেন্ড করুন । এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে করলার রস বের করে নিন । এরপর আপনি এটিতে লবণ, মরিচ বা লেবু যোগ করে জুস বানিয়ে পান করুন । এইভাবে প্রতিদিন ২ বার করে করলার জুস পান করতে পারেন ।
করলার রস আলসারের সমস্যায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । করলা বহু বছর ধরে আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে (তথ্যসুত্র) । একই সাথে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাউয়ের রসে অ্যান্টি-আলসার প্রভাব রয়েছে, যা আলসারের সমস্যা অনেকাংশে কমাতে সক্ষম (তথ্যসুত্র) ।
নারকেলের পানি – প্রতিদিন আপনি এক কাপ করে তাজা নারকেলের পানি পান করুন । এছাড়াও আপনি আপনার খাবারের রেসিপিগুলিতে নারকেলের দুধ যোগ করতে পারেন । এছাড়াও নারকেল কুরিয়ে নিয়ে সালাদের সাথে মেশাতে পারেন । আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে নারকেল এবং নারকেলের পানি অন্তর্ভুক্ত করুন ।
নারকেল এবং নারকেলের পানি দুটোই অ্যান্টিউলসেরোজেনিক এবং সাইটোপ্রোটেকটিভ প্রভাব প্রদর্শন করে । এই উভয় বৈশিষ্ট্যই পেটের আলসার কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । তবে এক্ষেত্রে নারকেলের দুধ, নারকেলের পানির চেয়ে বেশি কার্যকরী হতে পারে (তথ্যসুত্র) ।
মেথি – এক কাপ পানির মধ্যে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ মেথির বীজ মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । এরপর পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে এলে চুলা বন্ধ করে দিন । এবার মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন একবার করে পান করুন ।
মেথির বীজে সাইটোপ্রোটেক্টিভ (ক্ষতিকারক এজেন্ট থেকে কোষকে প্রোটেক্ট করে) বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এছাড়াও, মেথির বীজ গ্যাস্ট্রিক মিউকোসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা অ্যান্টি-আলসার ক্ষমতা প্রদর্শন করে । তাই, মেথির বীজ আলসার প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে সহায়তা করে (তথ্যসূত্র) ।
ড্যান্ডেলিয়ন চা – ১ কাপ গরম পানির মধ্যে ১ থেকে ২ চা চামচ ড্যান্ডেলিয়ন চা যোগ করুন । এরপর ১৫ মিনিট রেখে চা ফিল্টার করে ঠান্ডা করুন । এরপর এতে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পান করুন । এই চা প্রতিদিন দুবার করে পান করুন ।
আর্টিকেলের শুরুতেই আমরা বলেছি যে, পাকস্থলীর আলসারের অন্যতম কারণ হল হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া ।এমন অবস্থায়, ড্যানডেলিয়ন চায়ে উপস্থিত অ্যান্টি-হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি বৈশিষ্ট্য, ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করতে পারে (তথ্যসূত্র) । এছাড়াও, ড্যানডেলিয়নের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে যে, এটি আলসারের তীব্রতা এবং লক্ষন কমাতে সহায়ক হতে পারে (তথ্যসুত্র) ।
মৌরি চা – প্রথমে একটি প্যানে পানি ফোটান । পানি হালকা ফুটে উঠলে, এতে ১ চা চামচ মৌরির বীজ দিন । এরপর চুলার আচ কমিয়ে দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন । এরপর মিশ্রণটি ফিল্টার করে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন ।
আলসারের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মৌরি চা ব্যবহার করা যেতে পারে । মৌরিতে অ্যান্টি-আলসার প্রভাব রয়েছে, যা আলসারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়াও, আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেথি গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী (তথ্যসূত্র) । তাই আপনি যদি এইভাবে মৌরি চা পান করেন, তাহলে আলসারের সমস্যায় উপকার পাবেন ।
পাকস্থলীর আলসারের ঘরোয়া প্রতিকার জানার পর, আলসারের ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ।
আলসার নির্ণয় করার উপায় – আলসারের টেস্ট
আপনার ডাক্তার, আলসার নির্ণয় করার জন্য এবং এর কারণ খুঁজে বের করতে আপনার পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস (কি কি ওষুধ খেয়েছেন এবং খাচ্ছেন) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন । শারীরিক পরীক্ষার সময়, স্টেথোস্কোপ দিয়ে প্রথমে আপনার পেট পরীক্ষা করবে । এরপর আপনার পেটে আলসার রয়েছে কি না, সেটা পুরপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এন্ডোস্কোপি এবং এক্স-রে করে আপনার পেটের ভেতর দেখবেন । হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ. পাইলোরি) সংক্রমণের কারণে আলসার হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত বা মল টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন ।
পেটের আলসারের ঝুঁকির কারণ
- তামাক ব্যবহার
- ধূমপান
- অতিরিক্ত মদ্যপানঅ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন বা অন্যান্য ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধের নিয়মিত ব্যবহার
- খুব অসুস্থ হচ্ছে
- লেজার চিকিৎসা
- চাপ
পেটের আলসার প্রতিরোধের টিপস – আলসার প্রতিরোধের উপায়
আলসার প্রতিরোধের টিপস নিচে দেওয়া হল –
- ব্যথা বাড়ায় এমন খাবার এবং পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- অ্যালকোহল, ক্যাফিনযুক্ত সোডা, চর্বিযুক্ত খাবার, কফি, চকোলেট এবং মশলাদার খাবারের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন ।
- গভীর রাতের স্ন্যাকস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- ধূমপান বা তামাক সেবন আলসারের চিকিৎসাকে ধীর করে দিতে পারে । তাই ধূমপান এবং তামাক সেবন এড়িয়ে চলুন ।
- স্ট্রেস লেভেল বা মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন ।
- ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মোটরিন) বা নেপ্রোক্সেন (আলেভ, নেপ্রোক্সেন) খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
- ব্যথা কমানোর জন্য Acetaminophen (Tylenol) গ্রহণ করা যেতে পারে ।
শেষ কথা
আলসারের চিকিৎসা, কারণ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানার পর, এটি প্রতিরোধ করার জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে । যদি একটি আলসারের সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করুন । তবে আপনি চাইলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া প্রতিকারগুলো ব্যবহার করতে পারেন । এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো আলসারের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে ।